খাদ্য ভেজাল

7 32
Avatar for Sonik63
3 years ago

মানুষের মৌলিক চাহিদার (খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য) মধ্যে খাদ্য একটি প্রধান ও অন্যতম মৌলিক চাহিদা। জীবন ধারণের জন্য খাদ্যের কোনো বিকল্প নেই। সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রতিটি মানুষের প্রয়োজন বিশুদ্ধ ও পুষ্টিকর খাদ্য। আর এ বিশুদ্ধ খাদ্য সুস্থ ও সমৃদ্ধশালী জাতি গঠনে একান্ত অপরিহার্য। কিন্তু বাংলাদেশে বিশুদ্ধ খাবার প্রাপ্তি কঠিন করে ফেলছে কিছু বিবেকহীন ব্যবসায়ী ও আড়তদার। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও এদের নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খাচ্ছে।

২০০৪ সালের ১ অক্টোবর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে গলবিল এলাকায় ক্যান্সার সৃষ্টির জন্য ফরমালিনকে দায়ী করে। টেক্সটাইল কালারগুলো খাদ্য ও পানীয়ের সঙ্গে মিশে শরীরে প্রবেশের পর এমন কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নেই যার ক্ষতি করে না।

দেখতে পাচ্ছি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে রোগীদের লম্বা লাইন। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের ‘বিষাক্ত খাদ্য জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি’ শীর্ষক সেমিনারে বলা হয়, শুধু ভেজাল খাদ্য গ্রহণের ফলে দেশে প্রতি বছর প্রায় ৩ লাখ লোক ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৫০ হাজার, কিডনি রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ। এ ছাড়া গর্ভবতী মায়ের শারীরিক জটিলতাসহ গর্ভজাত বিকলাঙ্গ শিশুর সংখ্যা দেশে প্রায় ১৫ লাখ।

একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিষক্রিয়া কার্যকর থাকে। যা রান্না করার পরও অটুট থাকে। তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের মুখরোচক খাবার ও ফলমূল আকর্ষণীয় করে ও দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করার জন্য ক্ষতিকর কার্বাইড, ইন্ডাসট্রিয়াল রঙ, ফরমালিন, প্যারাথিয়ন ব্যবহার করা হয়। এগুলো গ্রহণের ফলে কিডনি, লিভার ফাংশন, অ্যাজমাসহ বিভিন্ন প্রকার জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। ভেজাল খাবারের কারণে যে রোগগুলো দ্বারা মানুষ বেশি আক্রান্ত হয় তাহলো অ্যালার্জি, অ্যাজমা, চর্মরোগ, বমি, মাথাব্যথা, খাদ্য বিষক্রিয়া, অরুচি, উচ্চরক্তচাপ, ব্রেন স্ট্রোক, কিডনি ফেলিউর, হার্ট অ্যাটাক প্রভৃতি।

হাট বাজার ঘুরে কেমিক্যালমুক্ত মাছ মেলে না কোথাও। এর মধ্যেই ক্ষতিকর পিরহানা মাছ, রাক্ষুসে মাগুর, জীবনহানিকর পটকা মাছের দেদার বাজারজাত চলছে। বাধা দেয়ার যেন কেউ নেই। মাঝে মাঝে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের ঝটিকা অভিযানে বিষাক্ত মাছ জব্দ ও বিনষ্ট করা হয়। কিন্তু মাছে ক্ষতিকর কেমিক্যাল প্রয়োগ মোটেও বন্ধ করা যাচ্ছে না

রাজধানীতে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে শত শত বেকারি কারখানা। কালি-ঝুলি মাখা প্রতিটি কারখানার ভেতরে-বাইরে কাদাপানি, তরল ময়লা-আবর্জনাযুক্ত নোংরা পরিবেশ। দুর্গন্ধের ছড়াছড়ি। আশপাশেই নর্দমা ময়লার স্তূপ। মশা-মাছির ভনভন আর একাধিক কাঁচা-পাকা টয়লেটের অবস্থান। কারখানাগুলো স্থাপিত হয়েছে টিনশেড বিল্ডিংয়ে। বহু পুরনো চালার টিনগুলো স্থানে স্থানে ছিদ্র থাকায় বৃষ্টির পানি অনায়াসেই কারখানা ঘরে ঢুকে। এতে পিচ্ছিল কর্দমাক্ত হয়ে থাকে মেঝে, কাদাপানি ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায় খাদ্য-সামগ্রীতে, কারখানাগুলোতে পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা নেই, দম বন্ধ হওয়া গরম থাকে রাত-দিন গরমে ঘামে চুপসানো অবস্থায় খালি গায়ে বেকারি শ্রমিকরা আটা-ময়দা দলিত মথিত করে। সেখানেই তৈরি হয় ব্রেড, বিস্কুট, কেকসহ নানা লোভনীয় খাদ্যপণ্য। অভিযোগ আছে উৎপাদন ব্যয় কমাতে এসব বেকারির খাদ্যপণ্যে ভেজাল আটা, ময়দা, ডালডা, তেল, পচা ডিমসহ নি¤œমানের বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করা হয়। কেক ও ব্রেড তৈরির জন্য সেখানে পিপারমেন্ট, সোডা ও ব্রেকিং পাউডার রাখা হয়েছে পাশাপাশি।

অধিক মুনাফার আশায় একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী মসলায় কাপড়ে ব্যবহৃত বিষাক্ত রঙ, দুগন্ধযুক্ত পটকা মরিচের গুঁড়া (নি¤œমানের মরিচ) ধানের তুষ, ইট ও কাঠের গুঁড়া, মটর ডাল ও সুজি ইত্যাদি মেশাচ্ছেন। বাংলাদেশ স্টান্ডার্স অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই) ও কনজিওমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশে (ক্যাব) অনুসন্ধানে এ তথ্য বেরিয়ে আসে। ভেজাল মসলা কিনে ক্রেতারা শুধু প্রতারিতই হচ্ছেন না, এতে তৈরি হচ্ছে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি। কারণ ভেজাল মসলায় মেশানো ক্ষতিকর খাদ্যদ্রব্য ক্যান্সার, কিডনি ও লিভারের রোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী। অনুসন্ধানে জানা যায়, ভেজাল মসলা উৎপাদনকারী গুঁড়া মরিচের সঙ্গে একশ্রেণীর ব্যবসায়ী মেশাচ্ছেন ইটের গুঁড়া। হলুদে দেয়া হচ্ছে মটর ডাল, ধনিয়ায় সমিলের কাঠের গুঁড়া ও পোস্তদানায় ব্যবহৃত হচ্ছে সুজি। মসলার রঙ আকর্ষণীয় করতে বিশেষ ধরনের কেমিক্যাল রঙ মেশানো হচ্ছে।

বাজারের কলা, আম, পেঁপে, পেয়ারা থেকে শুরু করে আপেল, আঙুর, নাশপাতিসহ দেশি-বিদেশি প্রায় সব ফলেই মেশানো হচ্ছে বিষাক্ত কেমিক্যাল। সাধারণ ফল-মূলের উজ্জ্বল রঙ ক্রেতাদের নজর কাড়ে, সেগুলো বিক্রিও হয় বেশি দামে। তাই অপরিপক্ব ফল পাকাতে ক্যালসিয়াম কার্বাইড এবং তা উজ্জ্বল বর্ণে রূপান্তর করার জন্য অধিক ক্ষার জাতীয় টেক্সটাইল রঙ ব্যবহার হচ্ছে অবাধে। ফল গাছে থাকা পর্যায় থেকে বাজারে বিক্রি করা মুহূর্ত পর্যন্ত এক একটি ফলে ছয় দফা কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়।

এখানেও ঢুকে পড়েছে ভেজালের বিষবাষ্প। লবণের বদলে মেশানো হচ্ছে সেই ইউরিয়া। কারখানায় ভাজা মুড়ির সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে আড়তদারদের প্ররোচনায় গ্রামের সহজ সরল বউ-ঝিরাও মুড়িতে মেশাচ্ছেন এই বিষ। প্রতিযোগিতার বাজারে মুড়িকে লম্বা, সাদা, ফাঁপানো ও আকর্ষণীয় করতে মুড়ি বেপারি এবং আড়তদাররা শ্রমিকদের সার সরবরাহ করছেন। তাদের প্ররোচনায় না বুঝে ঘরে ঘরে মুড়ি শ্রমিকরা লবণের বদলে চালে ইউরিয়া মিশিয়ে মুড়ি তৈরি করছেন।

ফলমূল, দুধ, মাছে ফলমালিন-কার্বাইডের বিষ, অন্যান্য খাদ্যপণ্যও ভেজালমুক্ত রাখা যায়নি। এমকি জীবনধারণের জন্য সবচেয়ে জরুরি ‘পানি’ পর্যন্ত নিরাপদ থাকছে না। যত্রতত্র নকল কারখানা বানিয়ে পুকুর ডোবা এবং ওয়াসার পানি বিশুদ্ধকরণ ছাড়া বোতলজাত করেই বিশুদ্ধ মিনারেল পানি বলে বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে। প্লাস্টিক জার (বড় আকারের বোতল) ভরা পানি বাসা-বাড়ি, অফিস-আদালতে পৌঁছানোর মাধ্যমেও জমে উঠেছে দূষিত পানির রমরমা ব্যবসা।

শুধু ভেজাল দিয়ে ক্ষান্ত হচ্ছেন না এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী, এবার নকল দুধ উৎপাদন ও বাজারজাত করছেন তারা। এ দুধ সংগ্রহে কোনো গাভীর প্রয়োজন পড়ে না, কষ্ট করে গড়ে তুলতে হয় না গবাদি পশুর খামারও। ছানার পানির সঙ্গে কেমিক্যাল মিশিয়ে সহজেই তৈরি করা হচ্ছে এমন ‘বিষ’। পরে ‘খাঁটি দুধ’ হিসেবে তা চালান হয়ে আসছে রাজধানীতে। দীর্ঘ সময় সতেজ রাখতে এতে মেশানো হচ্ছে ফরমালিন।

খাবারে ভেজাল আজ কোনো গোপনীয় ব্যাপার নয়। সরকারের পাশাপাশি নাগরিকদের মধ্যেও বৈধতা পেয়েছে। মহাসমারোহ প্রায় সব ধরনের খাদ্যপণ্য মরণব্যাধির নানা ধরনের বিষাক্ত পদার্থ মেশানো হচ্ছে। কিন্তু আমরা অনেকে জানিই না ফরমালিন, কার্বাইড কী? কী এর অপকারিতা? কী ধরনের রোগ হতে পারে রাসয়নিক পদার্থগুলোর প্রভাবে? সবচেয়ে আলোচিত ‘ফরমালিন’। এটা এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ যা ফল, মাছ ও মাংসে মিশিয়ে পচন রোধ করা হয়। মূলত জীবাণুনাশক ও প্রাণীর মরদেহ সংরক্ষণের কাজে ব্যবহার করা হয় এটি। ব্যাকটেরিয়া নাশক হওয়ায় কসমেটিক তৈরিতেও এটি ব্যবহার করা হয়। বাজারের ৮৫ শতাংশ মাছেই বরফের সঙ্গে বিষাক্ত ফরমালিন মেশানো হচ্ছে।

16
$ 0.00
Avatar for Sonik63
3 years ago

Comments

It's a very big problem. For this now a days we suffer from many deceases. We need to get some step against bad food. Stop beaker to sell bad food. Because it is very harmful for our body.

$ 0.00
3 years ago

আসলেই ভেজাল খাদ্যে অভস্থ আমরা সবাই😒

$ 0.00
3 years ago

টপিকটা ভাল ছিল।আসলে বর্তমানে খাদ্যে ভেজাল মেশানটা অভ্যাসে পরিনত হয়ছে।আমরা যেই খাবার খাই না কেন দেখা যাবে সেই খাবারেই ভেজাল মেশান।যার জন্য দায়ী বাজারে মনিটরিং এর অভাব আর ব্যবসায়ীদের খারাপ মনভাব।আর এসব খাবার ধিরে ধিরে আমাদের পুরো শারীরকে ভিতর থেকে নিস্তেজ করে দিচ্ছে।এটি প্রতিরোধে প্রয়োজন সঠিক তদারকি।ধন্যবাদ এই টপিক এ লেখার জন্য

$ 0.00
3 years ago

সাবসক্রাইব ব্যাক করবেন প্লিজ

$ 0.00
3 years ago