পরীক্ষা শুরুর পর পরই শুরু হয় মহামারি করোনাভাইরাসের আক্রমণ। বন্ধ হয়ে যায় ক্যাম্পাস। আর এভাবেই দীর্ঘ সাড়ে পাঁচ মাসের বেশি সময় পার হয়েছে। সেই পরীক্ষা না হওয়ায় চরম হতাশায় দিন কাটছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের সমাপনী বর্ষের শিক্ষার্থীদের।
[bad iframe src]
হতাশার কথা জানিয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, গত ১৮ মার্চ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ। পরিস্থিতি বিবেচনায় পরবর্তী নময়ে সেটা অনির্দিষ্টকালের জন্য করা হয়েছে। এমন সময় ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ হয়েছিল যখন বিজ্ঞান অনুষদের বিভাগগুলোর ফাইনাল পরীক্ষা চলছিল। অনুষদের সব বিভাগের তিনটি বা চারটি করে পরীক্ষা বাকি আছে। এই পরীক্ষাগুলো শেষ হলেই তাদের গ্র্যাজুয়েশন শেষ হবে। এমন অবস্থায় পরীক্ষা আটকে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম হতাশা দানা বেঁধেছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বিজ্ঞান অনুষদ অনেক বেশ ধীর গতিসম্পন্ন। গত বছর এই অনুষদের গণিত বিভাগের ফলাফল দিতে সাত মাস সময় লেগেছিল। এত দিনেও তিন-চারটি পরীক্ষার জন্য গ্র্যাজুয়েশন শেষ করতে না পারায় আজ চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীরা চরম হতাশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে তারা এই বাকি পরীক্ষাগুলো নেওয়ার দাবি জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা। তারা জানায়, এরই মধ্যে তারা বিজ্ঞান অনুষদের ডিনের কাছে একটি দরখাস্ত দিয়েছে। কিন্তু অনেকদিন পার হলেও কোনো অফিশিয়াল দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়নি।
[bad iframe src]
জানা যায়, বিজ্ঞান অনুষদের আটটি বিভাগে তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা শুরু হলেই তা লকডাউনের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে সেই পরীক্ষা আর অনুষ্ঠিত হয়নি। বিভাগগুলো হলো পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ, গণিত বিভাগ, রসায়ন বিভাগ, পরিসংখ্যান বিভাগ, তাত্ত্বিক পদার্থ বিজ্ঞান, বায়োমেডিকেল ফিজিক্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগ, ফলিত গণিত বিভাগ ও থিওরেটিক্যাল অ্যান্ড কম্পিউটেশনাল কেমিস্ট্রি বিভাগ।
গণিত বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শরীফ হাসান রিফাত এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা চরম হতাশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। মাত্র কয়েকটি পরীক্ষার জন্য এখনো গ্র্যাজুয়েশন শেষ করতে পারিনি। এ জন্য কোনো চাকরি বা উচ্চ শিক্ষার জন্য কোথাও আবেদন করতে পারছি না।’
[bad iframe src]
শরীফ হাসান রিফাত আরো বলেন, ‘আমরা জানি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেশকে পথ দেখায়, কিন্তু এত দিনেও এই শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে কোনো দিক নির্দেশনা কিংবা ফয়সালা না আসা আমাদের জন্য হতাশাজনক। এগুলো নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিভাগ এবং অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেসবুক গ্রুপগুলোতে তাদের হতাশার কথাগুলো লেখালেখি করছে।’
জানা যায়, বিজ্ঞান অনুষদের পরীক্ষাগুলো অনুষ্ঠিত হয় কার্জন হলের হল রুমে। অনেক প্রসারিত এ হল রুমে যথেষ্ট স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে বলে অভিমত শিক্ষার্থীদের। এ ছাড়া প্রতিটি বিভাগের রয়েছে নিজস্ব হল রুম। এগুলোকে অনায়াসে পরীক্ষার জন্য কাজে লাগানো যায় বলেও মত দেয় তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনা পরীক্ষার নিজস্ব পিসিআর ল্যাব এবং মেডিকেল সেন্টার রয়েছে। এসব সুযোগ থাকার পরও এত দিনে বিজ্ঞান অনুষদের শেষ বর্ষের বাকি পরীক্ষাগুলোর ব্যবস্থা কিংবা বিকল্প ব্যবস্থা করে একটা সমাধান দিতে না পারায় শিক্ষার্থীরা চরম হতাশাগ্রস্ত এবং ক্ষুব্ধ। স্বায়ত্তশাসিত একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত শিক্ষার্থীদের এ সমস্যাগুলো নিরসনে গভীরভাবে চিন্তা করা এবং জোরালো ভূমিকা নেওয়া।
এ বিষয়ে বিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক ডা. তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমাদের পরীক্ষা নিতে কোনো অসুবিধা নেই। ফলাফলও দ্রুত দিতে পারব। কিন্তু আমার শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে এসে থাকবে কই? আমি বা আমার বিভাগের চেয়ারম্যানরা বিভাগীয় বিষয়গুলো নিয়ে সবকিছু করতে পারবেন, কিন্তু তাদের হলে থাকার বিষয়ে তো কিছুই করতে পারব না।’
done