সেই রাত্রে আটারসন ঘরে ফিরলেন খুব গম্ভীর ও চিন্তিতভাবে। তেমন কিছু খেতেও পারলেন না। কেমন এক অস্বস্তি লাগছে তার। এমনিতে রোববারে অনেক রাত পর্যন্ত তিনি পড়াশোনা করেন। পাশের বাড়ির গির্জার ঘণ্টা শুনে ঘুমাতে যান বিছানায়, গভীর রাতে।
আজ খাওয়া-দাওয়ার পাঠ চুকিয়ে তাড়াতাড়ি চলে এলেন চেম্বার রুমে। আলমারি খুলে একটি ফাইল বের করলেন। ফাইলের উপর লেখা আছে ডাক্তার জেকেরের উইল।
আটারসন উইলখানা বের করে খুব মন দিয়ে পড়তে লাগলেন। হেনরি জেকিল এর মৃত্যু ঘটলে তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি তার বন্ধু এবং শুভানুধ্যায়ী অ্যাডওয়ার্ড হাইড সব পাবেন। শুধু তাই নয় যদি কোন অজ্ঞাত কারণে জেকিল নিরুদ্দেশ হয়ে যান এবং তিন মাসের মধ্যে তার কোন খবর না পাওয়া যায় তাহলে হাইডই তার উত্তরাধিকারী হবেন।
আটারসন এই উইলটা পছন্দ করেননি। উইলের শর্তগুলো তার কাছে অদ্ভুত মনে হয়েছে। ডাক্তার জেটির তার মক্কেলই শুধু নন, একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুও। বন্ধু কেন যে এরকম বিচিত্র উইল করেছেন আটারসন এর কাছে তা বোধগম্য নয়। উইলটাকে পাত্তা দেননি বলে মন দিয়ে পড়ে দেখেন নি। আজকে প্রথম তিনি হাইডের কিছুটা পরিচয় পেলেন। এনফিল্ড এর মুখে হাইডের বর্ণনা শুনে আরো চিন্তিত হলেন তিনি। এর মধ্যে নিশ্চয়ই কোন গভীর ষড়যন্ত্র আছে। উইলটা আলমারিতে রাখতে রাখতে আটারসন ভাবলেন, মনে হয়েছিল এটা নিছক পাগলামি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ডাক্তার জেকিল কি কোন বিপদের জালে জড়িয়ে পড়েছেন?
এইসব ভাবতে ভাবতে আলো নিভিয়ে তিনি গায়ে কোড চাপালেন। ক্যাভেন্ডিশ স্কোয়ারে বন্ধু লিওনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। ল্যানিয়ন তার এবং জেকিল দুইজনেরই প্রিয় বন্ধু। উইলটির ব্যাপারে ল্যানিয়নের কিছু জানা থাকতে পারে।
ড. ল্যানিয়ন তখন খাওয়া সেরে বিশ্রাম নিচ্ছেন। আইনজীবী আটারসনকে দেখে খুবই খুশি হলেন। তারা ছাত্রজীবনের পুরনো বন্ধু। পরস্পরের প্রতি তারা খুবই শ্রদ্ধাশীল। একে অপরের সঙ্গ খুব পছন্দ করেন। টুকিটাকি আলাপ-আলোচনার পর আটারসন তার আসল বিষয় পড়লেন।
ল্যানিয়ন - তুমি আর আমি বোধহয় হেনরি জেকিল এর সবচেয়ে পুরনো বন্ধু, তাই না??
হ্যাঁ, তবে আজকাল তার সাথে দেখা হয় না।
আশ্চর্য! তোমরা শুধু বন্ধুই নও, এক পেশার মানুষ। দুজনেই ডাক্তার। কিন্তু দেখা হয়না কেন?
ড. ল্যানিয়ন বললেন, তা ঠিক। কিন্তু গত ১০ বছর ধরেই জেকিল এর সঙ্গে আমার যোগাযোগটা কমে এসেছে। ও একটু বেশিমাত্রায় কল্পনাপ্রবণ। শেষ দিকে ওর মাথায় গন্ডগোল দেখা দিতে শুরু করে। সে আজগুবি আজগুবি তথ্য নিয়ে বৈজ্ঞানিক যুক্তি তর্ক করত। এই ধরনের পাগলামী আমার সহ্য হতো না। পুরনো দিনের কথা মনে করে আমি যোগাযোগের চেষ্টা করলেও ওর দেখা পাওয়া মুশকিল।
'যাক, ব্যাপারটা তেমন কিছু নয়।'
আটারসন বুঝলেন, দুই বন্ধুর হয়তো মতের গোলমাল রয়েছে। তাই সম্পর্ক কিছুটা খারাপ। ল্যানিয়ন কথা বলতে বলতে রাগে লাল হয়ে উঠেছিলেন। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পরে আটার সন জানতে চাইলেন। আচ্ছা, হাইড বলে জেকিল এর কোন বন্ধুকে তুমি চেনো?
হাইড? কই, কখনো তো এর নাম শুনিনি।
এইটুকু তথ্য সংগ্রহ করে আইনজীবী ফিরে এলেন তার বাসায়। সারা রাত বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করতে লাগলেন। নিঃশব্দ রাত্রি। বাইরে দু-একটা ল্যাম্পপোস্টে আলো জ্বলছে। এনফিল্ড যে ঘটনাটি বলেছে ঘুরে-ফিরে সেই কথাই মনে হতে লাগলো। একটা নির্জন অন্ধকার মাঠে মানুষরূপী একজন বিশালকায় শয়তান একটি মেয়েকে পায়ে দলে দলে যাচ্ছে। এইরকম একটা দুঃস্বপ্ন তিনি বারবার দেখতে লাগলেন। আবার কখনো দেখলেন, তার বন্ধু সুসজ্জিত বিছানায় শুয়ে সুখস্বপ্নে বিভোর। আর সেই শয়তান দরজা খুলে ঘরে প্রবেশ করল।
চলবে,,,,
আপনাদের উৎসাহ পেলে এরপরের গল্পটুকু আমি আপনাদের কাছে শেয়ার করব। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে। যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে এবং পরবর্তী গল্পটি পড়তে চান প্লিজ কমেন্ট বক্সে জানান
আর হ্যাঁ আমাকে সাবস্ক্রাইব করতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ ♥️