মি. অটারসন পেশায় একজন আইনজীবী। খুব গম্ভীর এবং কড়া মেজাজের ভদ্রলোক তিনি। মুখে তার সচরাচর হাসি দেখা যায়না। লোকজনের সঙ্গে কখনো গায়ে পড়ে মেলামেশা করেন না। তার বন্ধু বান্ধবের সংখ্যা কম। কিন্তু যারা তার বন্ধু তাদের প্রতি তিনি খুবই হৃদয়বান সহনশীল এবং আন্তরিক। তার একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু মি. রিচার্ড এনফিল্ড সম্পর্কে তারা আত্মীয় দুজনেই শহরের খুব পরিচিত ব্যক্তিত্ব।
ছুটির দিন রোববারে দুজনে একসঙ্গে মাঝেমধ্যে সন্ধ্যা ভ্রমণে বের হন। এরকমই এক রোববারে লন্ডনের ছোট কিছু ব্যস্ত রাস্তায় তারা ঘুরতে বেরিয়েছেন। আজ রাস্তায় তেমন ভিড় নেই। দুজনেই তারা নিঃশব্দে চুপচাপ হাঁটছেন।
পূর্ব দিকে রাস্তার একপাশে শেষ মাথায় একটি অদ্ভুত বাড়ির সামনে এসে তারা দাঁড়ালেন। বাড়িটি দোতলা কিন্তু দরজা-জানলা নেই বললেই চলে। রংহীন ফ্যাকাশে দোতলাটা প্রমাণ করে বাড়িটি বহুদিন অব্যবহৃত। নিচের তলায় ভাঙাচোরা মলিন একটি দরজা। দরজায় না আছে কলিংবেল, না আছে কড়া। দেখে মনে হয় গত এক যুগেও এখান দিয়ে কোনো লোক আসা-যাওয়া করেনি।
আটারসন ও এনফিল্ড বিপরীত দিকের রাস্তা ধরে যাচ্ছিলেন। বাড়িটির সামনে এসে এনফিল্ড হাতের ছড়ি তুলে বললেন, 'এই দরজাটি তুমি কি কখনো ঠিকভাবে লক্ষ করেছ?' আটারসন মাথা ঝাঁকালেন - হ্যাঁ, তিনি ইতিপূর্বে দেখেছেন।
আমার মনের মধ্যে কিন্তু গেঁথে আছে দরজাটি। সে এক দুঃখজনক ঘটনা, এক অদ্ভুত স্মৃতি আমার জীবনের!
আটারসন বললেন, 'তাই নাকি? কি সেই ঘটনা?'
'সবটাই সোনাই তোমাকে।'
হাঁটতে-হাঁটতে এন্ড ফিল্ড বলতে শুরু করলেন সেই ঘটনা।
একদিন শীতের রাত্রে ঘন কুয়াশার আবরণ আচ্ছন্ন করে রেখেছে লন্ডন শহরকে। কাজ শেষ করে ফিরছি। রাত্রি তখন গভীর। রাস্তার পর রাস্তা নিঃশব্দ, নীরব, নিঝুম। ল্যাম্পপোস্টের আলো ছাড়া কিছু চোখে পড়ে না। মানুষজনের চিহ্নমাত্র নেই। আশা করছি হয়তো একটা পুলিশ-টুলিশ দেখা যাবে। ক্লান্ত-শ্রান্ত আমি হেঁটে যাচ্ছি। এমন সময় চোখে পরলো দুটি মূর্তি। একজন বেঁটে মতো লোক খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ছুটছে পূর্ব দিকে। উল্টোদিক থেকে ছুটে আসছে আট-দশ বছরের একটি মেয়ে।
দুজনেই এসে রাস্তার মাঝখানে ধাক্কা খেলো। হায়, এর পরেই ঘটল সেই ভয়াবহ ঘটনা।
লোকটা নির্বিকারভাবে মেয়েটিকে পায়ের নিচে মারতে লাগল। মেয়েটি ভয়ে চিৎকার করছে। লোকটা মানুষ নয়, যেন এক হিংস্র জন্তু। চেহারা তার কুৎসিত। আমি দৌড়ে গিয়ে লোকটার শার্টের কলার চেপে ধরলাম। ইতিমধ্যে মেয়েটির চিৎকারে কয়েকজন লোক এসে জড়ো হয়েছে রাস্তায়। তাদের মধ্যে মেয়েটির আত্মীয়রাও রয়েছে।
লোকটি নির্বিকার। আমার দিকে একবার শীতল চোখে তাকালো সে। ভয়ঙ্কর তার দৃষ্টি। কিন্তু কলার ছাড়িয়ে নেবার কোন চেষ্টা তার নেই। এরই মধ্যে একজন ডাক্তার এলেন। মেয়েটিকে পরীক্ষা করে জানালেন, তার আঘাত তেমন মারাত্মক নয়। তবে ও ভয় পেয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছে।
ঘটনা কিন্তু এখানেই শেষ নয়। ক্ষুদ্রাকৃতি বিভৎস সেই লোকটির প্রতি আমাদের সকলেরই ঘৃণাও রাগ হচ্ছিল। লোকজন তার ওপরে মহাক্ষিপ্ত। ডাক্তার ও লোকটাকে প্রায় মারতে যায় আর কি!
খুদে লোকটা কিন্তু শান্ত র্নির্বিকার ভাবে সব দেখছিল।একেবারে আস্ত জানোয়ার যাকে বলে। ধীর-স্থিরভাবে সে বলল,
ঘটনাটির জন্য আমি দুঃখিত। এই দুর্ঘটনার সুযোগ নিয়ে আপনারা যদি কোন কিছু দাবি করেন আমি দিতে রাজি আছি। আপনারাই বিচার করুন এবং আমাকে মুক্ত করুন।
সকলে মিলে ঠিক করা হল যে, লোকটি মেয়েটির আত্মীয়দের একশ পাউন্ড ক্ষতিপূরণ দেবে। লোকটি এতে রাজী। কোনো উচ্চবাচ্য করল না। তারপরের ঘটনাটি ওই দরজা নিয়ে। লোকটি আমাকে স্তম্ভিত করে দিয়ে ওই দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। পকেট থেকে চাবি বের করল। তারপর,,,,,
এরপরের কাহিনী পরের পর্বে দেয়া হবে। আপনারা যদি গল্পের বাকি অংশ পড়তে চান তাহলে প্লিজ সাবস্ক্রাইব ও কমেন্ট করে জানাবেন।
গল্পটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
Onek onek dhonnobad apu eto sundor ekta golpo amaderke upohar dewar jonno.