চাঁদপুর শহরে একটুকু দূরে আমাদের গ্রাম। গ্রামের নামটি খুবই সুন্দর শেখদী। এই গ্রামটিকে তিন দিকে থেকে ঘিরে রেখেছে ডাকাতিয়া নদী। ডাকাতিয়া নদী কে কে না চেনে। হা এই ডাকাতিয়া বিধৌত আমাদের গ্রামটি আজো সবুজ শ্যামল। আমি কখনো শৈশব পেরোইনি ।অবাধ্য স্বাধীনতা ছিলো আমাদের। নদী ছুঁয়ে ঘুরে বেড়াতাম সারা গ্রাম। পাখির কলরব, নদীতে মাল্লা মাঝির দাঁড়টানা, চড়াই, শালিক ছানার পেছনে ছোটা,আর ধানের ক্ষেতের আলে হাঁটা ছিলো আমাদের প্রতিদিনের কাজ। আকাশে মেঘ দেখলেই থমকে যেতাম। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতাম দিগন্তরে। ভাবতাম মেঘগুলো কোথায় ভেসে যায়। কোথায় মেঘের ঠিকানা। কখনো ইচ্ছে জাগতো মেঘের ,রাজ্যে হারিয়ে যেতে। প্রকৃতির মাঝে নিজেকে সঁপে দিতে, কিন্তু পারতাম না, আমার বাবা ইউসুফ খান ছিলেন সৎ নিষ্ঠাবান এবং ধার্মিক মানুষ। সামাজিক নিয়মকে তিনি মর্যাদা দিতেন এবং নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলতেন। আর ছবি আঁকার কথা বলছো। 50 বছর আগে আমাদের সমাজে ছবি আঁকার বিষয়টি ছিলো অভাবানীয় ব্যাপার। মুসলিম সমাজের ঘোর বিরোধী ছিলো। কখনো তো একুশ শতকের কোন কোন পরিবারের ছবি রাখাই হয় না। অথচ ইসলামের শিল্পের মর্যাদায় অপরিসীম। আমাদের পাড়া থেকে অনেক দূরে ছিল ইস্কুল। আমরা পায়ে হেঁটে স্কুলে যেতাম পথে পড়তো পটুয়া আর কুমারদের বাড়ি। তারা পট হাড়ি পাতিল তৈরি করতো। পটের গায়ে আঁকাতো নানা ধরনের ছবি। স্কুলে যাওয়া আসার পথে অপরিসীম কৌতূহল নিয়ে এই ছবি দেখতাম। বাড়ি এসে বসলাম ছবি আঁকা নিয়ে। তখনই আমার স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেয়, আমিও আঁকাআঁকি শুরু করি । 1 955 সালে আমি স্কুলের ছাত্র। তখন ঢাকা থেকে প্রকাশিত আল্লামা পত্রিকা চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। আমি গোয়ালের ছবি এঁকে পাঠাই ওখানে। তুমি শুনে অবাক হবে,মফম্বল চাঁদপুর শহরের হাসান আলী স্কুলের ছাত্র ক্ষুদে আঁকিয়ে হাশেম খানই প্রতিযোগিতার প্রথম পুরস্কার লাভ করে।
1
11
Nice