"ভাবতে পারো যা ভালো লাগে,
তোমার প্রিয় শহর,
কিংবা তোমার দেখা প্রিয় প্রহর।
খাবে,ঘুরবে, দেখবে
যা আসে সবসময় তোমার চিন্তায়,
সেখান থেকে তুমি যেতে পারবে চার জায়গায়
সামনে (রাইট-লেফট)
পেছনে (ডানে-বামে)।
শেষ দুইয়ের প্রথম অক্ষর।
পৃষ্ঠার নিচের দিকে কিছু লিখা আছে,,,
"ইথান তুমি খুব ভালো করে জানো, আজ পর্যন্ত তোমার বাবা আমাকে কখনো কোনো কাজে সফল হয়ে দেখাতে পারেনি৷ আমি তোমার বাবার চেয়েও তোমাকে বেশি ভরসা করি। আমি এখন আমার মৃত্যুর শেষ নিঃশ্বাস শুনছি। আর হ্যাঁ, তুমি সবসময় কালোহুঁড়ি থেকে দূরে থাকবে। আর এ চিরকুটটা তোমার জন্য লিখে রাখছি৷ উপরের লিখা ছোট্ট ছড়াটা তোমার জন্য। চিন্তা কর উত্তর পেয়ে যাবে৷ ভালো থেকো ইথান৷"
ইথান তার দাদার মৃত্যুর আগ মুহূর্তে লিখে যাওয়া চিরকুট পড়ে শোনাল বাংলাদেশ থেকে আশা তার বন্ধু আবিদ কে পড়ে শোনাল।
.
আবিদ থাকে বাংলাদেশে। এখানে সান ফ্রান্সিসকোতে বেড়াতে এসেছে তার মামার বাড়িতে। তার মামা পুরো পরিবার নিয়ে এখানেই থাকে৷ তার মামা যে বাড়িতে থাকে সে বাড়ির মালিক রবার্ট মারা গিয়েছে প্রায় সপ্তাহ খানেক হলো মারা গেছে বললে ভুল হবে আসলে তাকে খুন করা হয়েছে। কিন্ত কেন? কি কারণে তা কেউ জানে না৷
.
ইথান হলো রবার্টের নাতি। ইথানের বয়সটা আবিদের মতই। আবিদ সান ফ্রান্সিসকোতে এসেছে দুদিনের মত হলো৷ এর মাঝে ইথানের সাথে তার একটা ভালো বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে। বন্ধুত্বটা আরো ভালো জমে উঠেছে।
(ইথানের কামরায় বসে আছে আবিদ আর ইথান)
"আচ্ছা ইথান তোমার মতে তোমার দাদাকে কে মারতে পারে, মানে এমন কাউকে তোমাদের পরিচিত কেউ?"-(আবিদ ইথানের দিকে তাকিয়েই প্রশ্নটা করল, কিন্তু তাকে দেখে মনে হচ্ছে না সে নিশ্চিত হয়েই প্রশ্ন করছে৷ )
" না আমারতো এরকম কাউকেই সন্দেহ হচ্ছে না।"- (ইথান সরাসরি জবাব দিয়ে দিল।)
"একদম কাউকেই না! তোমার কি একবারের জন্য এমন মনে হয়নি যে দাদার খুনের পেছনে পরিচিত কারো সহায়তা বা সে জড়িত? হতে পারে অতীতে ঘটে যাওয়া এমন কিছু যা তুমি জানো না। "(আবিদ প্রশ্নটা আবার করল। )
" আসলে আমার দাদু খুব সোজা সহজ সরল মানুষ ছিলেন৷ তিনি আগে কোনো একটা কোম্পানিতে জব করতেন। আমার জানামতে তিনি পরিশ্রমি ও সৎ ছিলেন। তিনি সবার সাথে বন্ধুসূলভ আচরণ করতেন৷ আর তিনি কারো কোনো সময় ক্ষতি করেন নি আমি যতদূর জানি৷ " -(ইথান উত্তরগুলো স্বাভাবিক ভাবেই দিল৷ )
" তবে আমার কেমন জানি মনে হচ্ছে তোমার দাদার খুনের সাথে এমন কেউ জড়িত যাকে তুমি চেন।"- (আবিদ ইথানের দাদা রবার্টের লিখে যাওয়া শেষ চিরকুটটার উপর চোখ বুলোতে বুলোতে বলল)
" তুমি কি আমাকে আরেকটু পরিষ্কার করে বিষয়টা বুঝিয়ে বলতে পারবে, আবিদ।-"(ইথান তার টেবিল গোছানো বন্ধ করে আবিদের সামনে এসে বসল)
" চিরকুটের এ লাইনটা দেখ, এখানে লিখেছে 'তুমি সবসময় কালোহুঁড়ি থেকে দূরে থাকবে ' এর মানে বুঝতে পারছ। "-(আবিদ কথাটা একটু জোরালো কন্ঠে বলল)
'কালোহুঁড়ি' 'কালোহুঁড়ি' ইথান কয়েকবার শব্দটা উচ্চারণ করল।
" ওহ্ হ্যাঁ মনে পড়েছে, কালোহুঁড়ি। লোকটা আমার বাবার বয়সী। লোকটা সবসময় একটা কালো হুড় পরে থাকত তাই তাকে আমি কালোহুঁড়ি বলি৷ অনেক ভালো মানুষ। আমার এ জন্মবার্ষিকীতে একটা হাতঘড়ি গিফট করেছিল৷ আমার দাদুর সাথে সে একান্তে অনেক সময় কাটাত। আমার দাদা খুন হওয়ার আগের দিনও সে আমাদের বাসায় এসেছে এমনকি যেদিন খুন হয়েছে সেদিন-ও। "-(ইথান তার মোবাইল বের করে লোকটার ছবিও দেখাল আবিদকে৷)
" আচ্ছা লোকটার সাথে তোমার দাদুর কোনো সমস্যা, কিংবা তোমার পরিবারের কারো সাথে কিছু হয়েছিল? "-(আবিদ ইথানের দিকে তাকিয়ে জানতে চাইল)
" না তেমন কিছু নয়। তবে দাদু খুন হওয়ার দুদিন আগে লোকটার সাথে দাদুকে একটু চওড়া গলায় কথা বলতে দেখেছি। তারপর থেকে দাদুকে বেশ চিন্তিত দেখেছি। তবে সেটাতো খুন হতে পারে এমন পর্যায়ের সমস্যা ছিল না৷ "(ইথান)
" আমার ধারণা এ লোকটাই তোমার দাদুর খুনের সাথে জড়িত। তোমার দাদু তোমাকে সাবধান করেছে তার ব্যাপারে। তোমার দাদুর সাথে এমন কিছু ঘটেছে যেটার কারণে সে ঐ ব্যাক্তি হতে ভরসা হারিয়ে ফেলেছে৷ তার কারণে তোমার ক্ষতির শঙ্কা করছে। আর এখানে তোমাকে আরেকটা মেসেজ দিয়ে গেছে৷ এমন একটা কিছু যেটা শুধু তোমাকে ভরসা করে দিয়ে যেতে চেয়েছে। কি এমন জিনিস যার ফলে তোমার বাবাকেও বিশ্বাস করতে পারছে না। "(আবিদ আঙুল দিয়ে মাথায় মৃদু টোকা মারছে)
" হ্যাঁ পড়ে তো এমনি মনে হচ্ছে। আরেকটা বিষয় এখানে ছড়া লিখে যাওয়ার কি মানে? "-(ইথানের কাছে পুরো বিষয়টা কেমন যেন ঘোলাটে মনে হতে লাগল৷ )
" তোমার দাদু বেশ বুদ্ধিমান তিনি এমন একটা ক্রিপ্টেক্স দিয়ে গেছেন জীবনের শেষ মুহূর্তে৷ এর একটাই কারণ শুধু মাত্র যাকে উদ্দেশ্য করে লিখা সেই বুঝতে পারবে ছড়ার মানেটা। অন্য কেউ নই। এখানে ইথান তোমাকে উদ্দেশ্য করে লিখা হয়েছে৷ আর ছড়াটা এমন একটা মেসেজ যার মাধ্যমে তোমাকে সেই জিনিসটার কাছে আমাদের নিয়ে যাবে যা তোমাকে খুব গুপ্ত ভাবে দিতে চাই তোমার দাদু।"(আবিদ চিরকুটটা নিয়ে ছড়াটা পড়া শুরু করে দিয়েছে৷ )
'ভাবতে পারো যা ভালো লাগে,
তোমার প্রিয় শহর,
কিংবা তোমার দেখা প্রিয় প্রহর।
খাবে,ঘুরবে, দেখবে
যা আসে সবসময় তোমার চিন্তায়'
আবিদ ছড়ার লাইনগুলো পড়ল। " তোমার চিন্তায় কি আসে? প্রিয় শহর? প্রিয় প্রহর? যেখানে তোমার ইচ্ছা করে, ঘুরতে ইচ্ছে করে, এমন কি কিছু দেখার প্রত্যাশা করো। যেগুলো সবসময় তুমি ভাব, তোমার কল্পনাই আসে। এ ধরনের কি হতে পারে ইথান যা তুমি তোমার এ ইচ্ছার কথা তোমার দাদু জানত। "- (আবিদ ইথানের সামনে চিরকুট ধরল। )
" এখন তো তেমন কিছুই মনে পড়ছে না৷ আমি আমার সব ইচ্ছার কথা দাদু কে বলেছি। এখন এখান থেকে কোনটাকে দাদু বোঝাচ্ছে বুঝতে পারছি না। "(ইথান)
" তোমাকে তোমার দাদু ভাবতে বলেছে৷ চিন্তা করে দেখ। "-(আবিদ)
" নাহ্ আমার তো তেমন কিছু মনে পড়ছে না৷ ) -(ইথান)
"আমি যদি তোমাকে বলি তুমি কোন জায়গায় যেতে বেশি পছন্দ কর , সেখানে পরিবেশ তোমার ভালো লাগে, তোমার জীবনের কিচু সুন্দর মুহূর্ত তুমি কোথায় অতিবাহিত করতে চাও? "-(আবিদ ইথানকে প্রশ্ন করল। ).
" লস এঞ্জেলসে আমার একটা পছন্দের হোটেল আছে ওখানেই। লস এঞ্জেলস শহর আমার ভালো লাগে৷ আর আমার ইচ্ছে আমি লস এঞ্জেলসে একটা সূর্যাস্ত দেখব। "(ইথান)
'সেখান থেকে তুমি যেতে পারবে চার জায়গায়'
আবিদ ছড়ার লাইনটা পড়ার পর প্রশ্ন করল
" তার মানে আমি ধরে নিতে পারি। তোমার প্রিয় শহর লস এঞ্জেলস। আচ্ছা তোমার প্রিয় হোটেলের পাশে কি চারটা জায়গায় যেতে পারবে এমন কি কোনো রাস্তা আছে? "(আবিদ)
"হ্যাঁ, হ্যাঁ। হোটেল টা একটা রাস্তার মোড়ের পাশে অবস্থিত। আর সেখান থেকে চারটা জায়গায় যাওয়া সম্ভব। আমি বুঝতে পেরেছি দাদু কিসের কথা বলেছে৷ " (ইরান।)
"কিসের?" (আবিদ জানতে চাইল)
সামনে (রাইট-লেফট)
পেছনে (ডানে-বামে)।
শেষ দুইয়ের প্রথম অক্ষর।
এবারে শেষের লাইন তিনটি ইথান পড়ল৷ তার মুখে হঠাৎ করে হাসির রেখা ফুটে উঠেছে।
চলবে....