ক্লাস ৯ এ পড়া হ্যাংলা ছেলেটি বয়সের তুলনায় খানিকটা লম্বা , দুই চোখের কিনারায় কিছু সপ্ন উড়ে বেড়ায় সারাক্ষন , চোখের দিকে তাকালেই বুজা যায় সেটা । বাবা চট্রগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান আর তার ছেলে পরিক্ষায় নিয়মিত গোল্লা নিয়ে ফেরে। ক্লাসে মন নেই , পড়া লেখায় অনিহা , পরিক্ষার আগের রাতে বন্ধুর বাসায় লুকিয়ে রাখা গিটার নিয়ে গান গাইতে ছুটে যাওয়া । বাবা বুজে গেলেন এই ছেলে কে দিয়ে আর যাই হোক পড়াশোনা হবে না । মেজাজি এই ভদ্রলোক রাগের মাথায় ছেলেকে বের করে দিলেন ঘর থেকে । বাবা জানতেন না অনেক গুলো বছর পরে দেশের কোটি মানুষ তাকে চিনবে , গিটারে ঝংকার তুলে গাইবে “বাবা কত কত দিন দেখিনা তোমায়” । সেই ছেলেটার নাম মাহফুজ আনাম ( মঞ্চ নাম জেমস ) ভক্তরা যাকে ভালবেসে গুরু নামে ডাকে । বাবাকে কখনো গানটা শুনাতে পারেনি জেমস , বাবা ততদিনে চলে গেছেন না ফেরার দেশে । ঘর ছাড়ার পরে উঠেছিলেন আজিজ বোডিং এ । ফিলিংস নামক একটি ব্যান্ডের হয়ে পারফর্ম করতেন তখন । বোডিংয়ের ছোট্ট একটি কামরায় চাষ বাস হত গানের । সেখানেই জন্ম হতে লাগল বাংলাদেশের সংগীত ইতিহাসের অন্যতম তারকাদের মধ্যে একজনের । জেমসের ক্যারিযার এ আজিজ বোডিং এর অবদান অনেক । গান লেখা হচ্ছে , কোরাসে(কোরাস : অনেক শিল্পী একত্রে যে গান গায় তারই নাম কোরাস)গান গাইছেন দলের সদস্যরা ,বোডিং এর কামরা ভরে যাচ্ছে সস্তা সিগারেটের ধোয়ায় , চলছে গানের চর্চা। আর এর মাঝেই সময় গরিয়েছে প্রকৃতির নিয়মে। গানের জন্যে চট্রগ্রাম ছেড়ে ঢাকায় এলেন জেমস ৯০ দশকের শুরুতে. “জেল থেকে বলছি “ এলবাম দিয়ে সংগীত জগত মোটামোটি কাপিয়ে দিলেন জেমস। তার ভরাট গলায় গাওযা গান গুলো লুফে নিল সবাই । বস্তি থেকে পাঁচ তারকা হোটেল সব জায়গায় শুধু জেমসের গান । ১৯৯৫ সালে এল প্রিয় আকাশি, এই গানটা ছিল সেই সময়ের ছেলেদের কাছে নেশার আরেক নাম তারপর গল্পটা এগিয়ে যাওয়ার একটির পর একটি হিট গান উপহার দেওয়ার , নতুন নতুন মাইল ফলক তৈরি করার । মীরাবাঈ , পাগলা হাওয়ার তোড়ে , যদি কখনো ভুলে যাই , মা ,বাবা ,অথবা বাংলাদেশ অথবা লিখতে পারিনা কোন গান এসব এ তখন মুগ্ধ হয়ে আছে তরুন প্রজন্ম । এর মধ্যে একদল লোক বলতে লাগল ব্যান্ডের নামে জেমস বাংলা গানের ধারনাটাকেই নাকি নষ্ট করে দিচ্ছেন তাদের জন্যই তিনি নিয়ে এলেন শামসুর রাহমানের সুন্দরীতমা কবিতা থেকে আমি তারায় তারায় রটিয়ে দেব গানটি । কিছুদিন ব্যক্তিগত ঝামেলায় গানে মন দিতে পারেননি । বিরতি কাটিয়ে ফিরলেন তবে বাংলা নয় হিন্দি গানে, গ্যাংস্টার সিনেমায় জেমসের গাওয়া ভিগি ভিগি গানটি আলোড়ন তুলেছিল বলিউডে। টপচার্টে শীষে ছিল অনেকদিন । তিনি আরও প্লেব্যাক করেছেন লাইফ ইন এ মেট্রো সিনেমার আলভিদা সহ আরো অনেক গানে। অনেক দিন তার নতুন গান করা হয় না তাই পুরোনো গান গেয়েই মঞ্চ মাতাচ্ছেন নগরবাউল জেমস। ফুটফুটে দুটি কন্যা সন্তানের পিতা তিনি , মেয়েদের নিয়ে স্ত্রী থাকেন আমেরিকায় , সময পেলে তিনি ও উড়াল দেন সেখানে । আশি নব্বই দশকের ছেলেদের এমনকি এই শতাব্দির শুরুর সময়টাতেও কিশোর বা তরুন ছিলেন তাদের কাছে জেমস একটি অদ্ভুদ উন্মাদনার নাম, বুকের ভেতরে পুষে রাখা এক আবেগের নাম। এখনো জেমস কোন কনর্সাটে গিটারের ঝংকার তুলে গেয়ে উঠেন পাগলা হাওয়ার তোড়ে এর পরের লইনটা তাকে আর গাইতে হয় না । আমাদের সংগীত আকাশের সবচেয়ে উজ্জল নক্ষত্রদের একজন মাহফুজ আনাম জেমস ।
Much better. Your post has been very nice.