অনিরুদ্ধ,
চিঠিটা যখন হাতে পাবে তখন তুমি বেশ সংসারী এক পুরুষ।
সুদর্শন যুবকটা আর নেই, চামড়ার টানটান ভাবটা নেই, চিকচিক কালো চুলে ধরেছে সাদাকালো ছাপ।
ধরবেই তো, আজ থেকে ঠিক একুশ বছর পর চিঠিটা তোমার ঠিকানায় পাঠাবো।
আমিও তখন আর বাইশ বছরের সেই যুবতী নয়।
রংছটা শাড়ি ছেড়ে হালকা রঙের শাড়িতে মানানসই!
কত কিছু বদলে গিয়ে, ভুলে গিয়ে সব প্রেম,
সংসারেতেই ডুবে রই।
পুরোনো চশমাটা বদলে দিয়ে নিয়েছি মোটা ফ্রেম।
একুশ বছর পরের চিঠিতে আছে বর্তমান,
তিলতিল করে জমিয়ে রাখা আমার শতশত রাগ, মিছেমিছি অভিমান।
একুশ বছর পর বর্তমানের প্রশ্নটা করলাম-
এভাবে আমায়- যে অজুহাতে ছেড়ে গেলে তা নয় কি বেমানান?
কাছের মানুষকে কি অজুহাতে ছাড়া যায়?
আজও তোমার কাছের মানুষ আছে,
তাদেরও কি ছাড়তে পারো অজুহাতের দায়!
সবই ছিলো খামখেয়ালি, অবহেলাও বটে!
ভালোবাসা বিষিয়ে গেছে ছেড়ে যাওয়ার কীটে।
একুশ বছরে আমাকে ভুলেই গিয়েছ হয়তো,
তবে জানি, কোথাও না কোথাও আমার কাঠগড়ায় তুমি লুকোচুরি খেলছ আজও!
একুশ বছর পরের চিঠিটা আজ লিখছি কেন জানো?
সময় অনেক কিছুই বদলে দেয়-
সম্পর্ক, অনুভুতি, অভিমান।
একুশ বছর পর যদি ক্ষোভের বশে অভিশাপের লাইন উঠে আসে,
যদিও ভালোবাসায় অভিশাপের জায়গা থাকেনা!
তবে জানো তো রুহের হায় বলেও একটা কথা আছে।
জানো,
আজ থেকে রোজ প্রার্থণা করবো আমি যেন মেয়ে সন্তানের জননী হয়।
কারণ ছেলেরা যে হৃদয় ভাঙার কারিগর,
আমি চাইনা কারো অভিশাপের ছায়া আমার আপনজনের উপর আসুক।
আমার যেন ছেলে না হোক !
আর তোমার যেন মেয়ে না হোক!
অনিরুদ্ধ জানো,
মেয়েদের হৃদয় ভাঙার যন্ত্রটা বেশ ভারী, সহজেই সবাই বহন করতে পারেনা।
মেয়েরা চাইলেও ছুটে যেতে পারে না কাছের মানুষটার কাছে,
বলতে পারেনা ''আজ আমার হৃদয় ভেঙেছে''!
অনিরুদ্ধ,
কিছু অভিমান প্রকাশ না করলে এক জীবন বৃথা হয়ে যাবে,
এই চিঠিটা আমার সকল অভিমানের সাক্ষী হয়ে রবে।
আজ হয়তো চিঠিটা পেলে তুমি হেসেই উড়িয়ে দেবে,
কিন্তু একুশ বছর পর,
একুশ বছর পর-
প্রতিটা লাইন বুঝে নিবে গভীরভাবে।
বর্তমানে লিখছি চিঠি একুশ বছর পর তোমাকে পাঠাবো বলে।
লেখাঃ একুশ_বছর_পরের_চিঠি
- সরওয়ার আহমেদ
ছবি- মেঘ শোভা