সেদিন হুট করে নিউজফিড ঘাটতে ঘাটতে দেখি,আমার স্বামীর ছবি কোন এক মেয়ের প্রোফাইলে ভেসে উঠছে।সন্দেহ বসত আইডিটায় ঢুকলাম,ঢুকে দেখি ওই মেয়ের সাথে এটাচ করা অনেক গুলো পিক তার।
দেখে তো হাত পা কাঁপতে শুরু করলো।
এই তো এক মাস ও হয় নাই রাগ করে তাকে আমি ছেড়ে এসেছি।
বাবা মা চাচ্ছিলো তাকে ছেড়ে আমি যেন অন্য কারো সাথে সংসার করি।
আর তাতেই এত কিছু ঘটে গেলো।
জানি দোষ আমারো ছিলো,আমার এভাবে ওকে ছেড়ে আসা ঠিক হয়নি।
কিন্তু তাই বলে ও আমাকে ভুলে এই এক মাসেই অন্য কাউকে নিজের জীবনের সাথে জড়িয়ে নিবে?
হাত পা অবশ হয়ে আসছিলো আমার।
মেয়েটাকে ওদের এটাচ পিকে কমেন্ট করলাম,
আমি তাকে মেসেজ করার অপশন পাচ্ছিনা।
সে যেন আমাকে মেসেজ দেয়।
মেয়েটা আমাকে মেসেজ দিলো,রিকুয়েস্ট দিলো।
আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম,প্রোফাইল পিকের ছেলেটা কি হয় আপনার?
সে প্রথমে বলতে চাইলোনা।
আমিও আর তেমন জোর করলাম না।
পরে আপনি আপনিই সে আমাকে বল্লো,
ও আমার হাসবেন্ড।
খোদার কসম তখন মনে হচ্ছিলো,কেউ আমার কলিজাটা টেনে টেনে ছিঁড়ছে।
আমি তাকে বললাম,লিমিটের মধ্যে থেকে কথা বলুন।
সে উত্তর দিলো,আমার বরকে আমি বর বলবো এতে লিমিটের মধ্যে থাকতে হবে কেন?
আপনি আর ভুল করেও ওর নাম নেয়ার চেষ্টা করবেন না।
আমি ওকে ভালবাসি।
ও আমার ভালবাসা।
আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম,ও আপনাকে ভালবাসে?
সে উত্তর দিলো,আমি ওর জীবন।
ও আমাকে খুব ভালবাসে।
যেহেতু মেয়েটা আমাকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট দিয়েছে,তাই আমি তার আইডিতে ফ্রেন্ডস করা সব কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম।
হঠাৎ করে,
আমার সামনে আমার বর আর ওই মেয়ের ভিডিও কলের একটা শট চলে এলো।
মেয়েটা শট টা পোস্ট করে ক্যাপশন দিয়েছে,
আমার বর টা।
আর কত যে পিক ফ্রেন্ডস করা আমার বরের ওর আইডিতে।
একজন স্ত্রীর এই শট আর ক্যাপশন দেখার পর,আর তার স্বামীর ছবি কোন এক পরনারীর সাথে দেখার পর কি অবস্থা হতে পারে একটা বার ভেবে দেখুন।
আমার কলিজায় রক্তক্ষরণ হচ্ছিলো ততক্ষণে।
আমি চিৎকার করে কাঁদছিলাম তখন,বুক ফাটা আর্তনাদে ছটফট করছিলাম।
দিশা না পেয়ে সরাসরি আমার বরকে শট টা সেন্ড করে মেসেজ দিলাম।
কিন্তু তার এমন রিপ্লাইয়ের জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।
আমি ডিভোর্স চাই। বন্ধুর সাথে বাণিজ্য মেলায় ঘুরতে গিয়েছিলাম! মূখ্য উদ্দেশ্য ছিলো মেলা ঘুরে দেখা, কোন কেনাকাটা করা নয়। মেলায় সারাদিন ঘুরলাম, খাইলাম। ফিরার সময় বন্ধু বলে দাড়া বউয়ের জন্য কিছু কিনে নেই। বলে সে কেনাকাটা করতে লাগলো।
তার মতোও আমিও কেনাকাটা করতে লাগলাম, পকেটে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় বন্ধুর কাছ থেকে ধার করলাম। তার মতো আমিও বউয়ের জন্য শাড়ি কিনলাম, মেকআপ বক্স কিনলাম, এক জোড়া জুতাও কিনলাম। বউয়ের জন্য চকলেট ও নিলাম।
এসব কিনতে আমার প্রায় ৫ হাজার টাকা খরচ হলো। সবই বন্ধুর নিকট থেকে ধার করে আনা। দুজন ফিরার পথে গাড়িতে বসে গল্প করছিলাম কে বউয়ের জন্য কি কিনে নিয়ে যাচ্ছি।
গাড়িতে বসে চিন্তা করলাম, বউয়ের জন্য এতো কিছু নিয়ে যাচ্ছি নিশ্চই সে অনেক খুশি হবে, সে কত্তো খুশি হবে এটা ভাবে আমিও খুশী হতে লাগলাম। অতঃপর বন্ধুর কাছে থেকে বিদায় নিয়ে আসলাম, বললাম তোর টাকা আগামী সপ্তাহে বেতন পাওয়ার পর দিয়ে দিবো।
গান গাইতে, গাইতে ঘরে ঢুকলাম।
হায় সোহাগি বউ, আরে ও লক্ষী বউ এই গানটা।
অতঃপর ঘরে ঢুকে কয়েক বার বউ বউ করে ডাকলাম, কোন জবাব পেলাম না। হঠাৎ মা এসে ধমক দিয়ে বললেন কিরে কি বলছিস কাকে ডাকছিস ?
তারপর হঠাৎ মনে পড়লো আমারতো বউই নাই, আমি কার জন্য কি নিয়ে আসলাম? মাকে বললাক মা বই বই করছি। আমি বই পড়বো তো। শপিং ব্যাগ দেখে মা বললেন ঐসব কি? আমি মাকে বললাম মা ওসব আমার এক বন্ধুর আমানত।
বন্ধুকে ফোন দিয়ে বললাম শালা তুই বউ পেলি কোথায়, সে বলে সেও নাকি ভুল করে ওসব কিনে নিয়ে এসেছে। আসলে তারও বউ নাই। কিন্তু সে ওসব নাকি তার ভাইয়ের বউকে দিয়ে দিয়েছে। আমার তো ভাইয়ের বউ নাই আমি কাকে দেই??
যাকিছু কিনেছিলাম সবকিছু পরের দিন বন্ধুকে ফেরত দেই। এবং তাকে বলে আসি তুই আর কোনদিন আমার কাছে টাকা ফেরত চাইবি না