আমি একজন বাংলাদেশি। আমার বাসা ময়মনসিংহ বিভাগের ময়মনসিংহ সদরে। কিন্তু পড়াশুনার কারনে আমাকে ঢাকা থাকতে হয়। তো যখন থেকে আমাদের দেশে করোনা রোগের আক্রমণ শুরু হয় প্রায় তখন থেকেই সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেয়। তাই ১৮ মার্চ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। প্রথম দফায় ছুটি ছিল ১৮-৩১ মার্চ পর্যন্ত। তাই আমি মাত্র এক সপ্তাহের জন্য বাসায় আসার জন্য ঢাকা ত্যাগ করি। কারণ, তখনো দেশে রোগের তেমন প্রাদুর্ভাব না থাকায় রোগটিকে গুরুত্বের সাথে না নিয়ে এক সপ্তাহের জন্য ঢাকা ত্যাগ করি। আসার সময় সাথে করে কিছুই আনি নাই। আর আজ সেই ঢাকা ত্যাগের তিন মাস পূর্ণ হলো।
সত্যি কথা বলতে ঢাকা যাওয়ার পর কখনো এত সময়ের জন্য বাসায় আসা হয় নাই। আমি সবসময় নিজের মতো করে থাকতে পছন্দ করি তাই পরিবারের অতিরিক্ত বিধিনিয়ম আমার কখনোই পছন্দ না। কিন্তু এই করোনার জন্য গত তিনমাস যাবত বাসায় বসে আছি। ঢাকায় টিউশন করিয়ে নিজের খরচ চালাতাম। কিন্তু করোনার জন্য সব বন্ধ।
বাসায় এসে নিজেকে মনে হচ্ছে পাখির খাঁচায় বন্দি কোনো পাখি। যে মুক্ত আকাশে উড়তে চায় কিন্তু পায়ে শিকল বাঁধা। এই হোম কোয়ারেন্টাইনে থেকে অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে।
মানুষের সাথে সোস্যাল মিডিয়ায় যোগাযোগ বেড়েছে। অনেক সুখ-দুঃখের কাহিনী আছে। গত দুইমাস এ পরপর দুইজন ব্যাচমেট এর মৃত্যুর খবর পেয়েছি। যা একান্তই কাম্য নয়। সে মুহূর্তে তাদের একনজর দেখতেও পাইনি। এটাই খুব কষ্টের। আরো অনেক পরিচিত মানুষের মৃত্যুর সংবাদ পাচ্ছি। এসবের মধ্যেও ভালো হচ্ছে পরিবারের সাথে আমাদের সময় ভালো কাটছে। পরিবারের বাইরে থাকার দরুন পরিবারের কারো সাথে তেমন একটা সময় কাটানো হয় না। কিন্তু এই হোম কোয়ারেন্টাইনে পরিবারের সাথে অনেক সময় ব্যয় করা যায়।
বাসায় এসে অনেক নতুন নতুন খাবার রান্না করেছি। কিছু রান্না ভালো হয়েছে আবার কিছু খাবার তো নিজেই খেতে পারিনি।
এখন সময় কাটে গল্পের বই পড়ে। আমার ডিটেক্টিভ বই পড়তে খুব ভালো লাগে। তিন গোয়েন্দা, মাসুদ রানা, ফেলুদা, বোমকেশ এগুলো অনেক বই পড়েছি বাসায় থেকে। পরিবারের সবার সাথে গল্প করে সময় কাটে।
বাসায় আছি এখনো সুস্থ আছি কিন্তু কতদিন থাকবো তা জানি না। তাই সবাই বাসায় থাকুন, পরিবারকে সময় দিন, সুস্থ থাকুন।
সবাই সবার জন্য প্রার্থনা করুন যাতে এই দুঃসময় খুব শীঘ্রই শেষ হয়ে যায় আর আমরা করোনা মহামারী থেকে মুক্তি পাই।
তোমার হোম কোয়ারেন্টাইন এর সাথে আমার হোম কোয়ারেন্টাইন এর অনেক মিল রয়েছে। কিন্তু আর কতদিন থাকতে হবে জানিনা।