Tomar nisa

0 11

তোমার_নিসা

পর্ব - ৬

.

.

"আসবে,মেসেজ চোখে পড়লে অবশ্যই আসবে।সেসব নিয়ে তুই ভাবিস না।"

বলতে না বলতেই জেলের বাহির থেকে প্রণয়ের চাচাতো ভাই সামির বললেন,

"প্রণয়!"

সামিরকে দেখে প্রণয়ের যেন প্রাণ ফিরে এলো। দু'লাফে সামিরের বরাবর দাঁড়িয়ে জেলের এপাশ থেকে বলল,

"ভাইয়া,তুমি এসেছ?ভাবি আসে নি?আমি তো তোমাকে একা আসতে বলিনি, ভাবিকে সহ আসতে বলেছিলাম।"

"হ্যাঁ হ্যাঁ, এসেছে। তোর ভাবিও এসেছে।কী কারণে তোরা এখানে সেটা তো আমরা জানি না, তাই টেম্পোরারি একটা বেলের কাগজ এনে ওসিকে তোর ভাবি দেখাচ্ছে।অন্তত দিন সাতেকের একটা বেল পাবি।এর মাঝে যে মামলাটা দিয়েছে সে যদি উঠিয়ে নেয় তাহলে বেল কেটে গেলেও দ্বিতীয়বার আর তোকে এখানে আসার প্রয়োজন পড়বে না।"

"ওহ্। "

"হুম,তো কী কারণে আসতে হলো এখানে?আর কে-ই বা করেছে অভিযোগ?"

"ভাইয়া, আগে বের হয়ে নি এখান থেকে তারপর সেসব কথা পড়ে বলব।"

এরই মাঝে এক দারোগা এসে জেলের তালা খুলে দিয়ে বলল,

" বের হোন সবাই।"

প্রণয়,নিলয় ও মুহিত দ্রুত জেল থেকে বেড়িয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। প্রণয় বলল,

"ভাইয়া চলো।"

"যাব...কোথায় যাব?"

"আমাদের সাথে নিসার বাড়িতে।"

পেছন থেকে কাগজপত্র ভাজ করতে করতে প্রণয়ের ভাবি নিতু এসে বললেন,

"ভাবি সবকিছু করল কিন্তু সেই ভাবিকে ছোট্ট একটা ধন্যবাদ না দিয়ে উল্টো ভাবিকে ফেলে ভাইকে নিয়ে চলে যাওয়ার কথা হচ্ছে?"

"ভাবি উকিল বলেই তো করেছে নয়তো কি করত।তাই ভাবিকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করব না।ভাবি তো আপনই পর না।"

"সেটাও কথা কিন্তু যাবে কোথায় সেটা তো বলো।কারণ তোমার সাথে আমার কিছু জরুরী কথা আছে মামলার বিষয়ে।"

"আসলে ভাবি,আমি নিসার বাড়িতে যাচ্ছি।"

"মামলাটা নিসার পরিবার করেছিল না?"

সামির চমকে উঠলেন নিতুর কথা শুনে।বললেন,

"কী বলছ কী নিতু? নিসার পরিবার মামলা করে প্রণয়কে জেলে পাঠিয়েছে? এত বড় সাহস তাদের আমার ভাইকে জেলে পাঠিয়েছে?

"হুম, সেরকমই তো শুনে এলাম নিসার মামার থেকে। আর এও শুনে এলাম প্রণয় না-কি নিসাকে গায়ে হলুদের স্টেজ থেকে পালিয়ে নিয়ে এসেছিল গতকাল রাতে। আর রাতটা না-কি প্রণয়ের ফ্ল্যাটে ওরা একসাথেই থেকেছে। নিসার পরিবার রাত থেকে বহু খোঁজাখুঁজির পর অবশেষে সকাল বেলা নিসার সন্ধান পায় প্রণয়ের ফ্ল্যাট থেকে।"

নিতুর কথাগুলো শুনে সামিরের ভ্রু দুটো কিঞ্চিৎ পরিমাণ কুচকে গেল।বলল,

"কথাগুলো যে বললে এগুলো কি আদৌ সত্য নিতু?আমার তো মনে হয় না প্রণয় আর নিসাকে নিয়ে এতটা গভীর ভাবনায় যাওয়া ঠিক হবে। আরেকটা কথা হলো এই জেলখানায় তুমির নিসার মামাকে আবার কোথায় পেলে?"

"আরে এই থানার ওসি মিঃ আরমান হলেন নিসার আপন মামা।তো সেই আমাকে এই কথাগুলো বললেন।"

"ওহ্।"

বলেই সামির প্রণয়ের দিকে তাকালেন।বললেন,

"তোর ভাবি যে কথাগুলো বলল সেগুলো কি সত্য প্রণয়?তুই নিসাকে নিয়ে গতকাল পালিয়ে গিয়েছিলি?"

মাথা নিচু করে প্রণয় বলল,

"হুম ভাইয়া।নিসাকে নিয়ে আমি পালিয়ে গিয়েছিলাম, কিন্তু বিশ্বাস করো এছাড়া আমার করার কিছুই ছিল না। নিসার পরিবার জোর করে ওকে বিয়ে দিতে চেয়েছিল।এদিকে নিসা সেই বিয়ে করতে নারাজ।বারবার আমাকে হুমকি দিচ্ছিল আত্মহত্যা করবে বলে।সেই সময়ে আমি কি করতাম বলো। আর তুমি তো জানো নিসাকে আমি ঠিক কতটা ভালোবাসি। কিন্তু তারপরও.....তারপরও আমি চেয়েছিলাম নিসা অন্যজনকে বিয়ে করে সুখী হোক। আমার মত বেকার যুবকের জন্য ঘর থেকে পালিয়ে নিজের জীবন নরক না করে তুলক।কিন্তু নিসাই যে মানছিল না,তাই বাধ্য হয়েই ওকে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলাম।"

সামির কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। বেশ কিছুটা সময় পার হবার পর বললেন,

"নিসা যত যাই বলুক না কেন,তোর এই কাজটা করা মোটেও ঠিক হয়নি প্রণয়।তোর এই কাজটা করার আগে অন্তত একবার আমাকে কিংবা তোর ভাবিকে জানানোর প্রয়োজন ছিল।"

পাশ থেকে মিতু বললেন,

"সামির, আমাদের এই মুহূর্তে এসব কথা বাদ দিয়ে আগে থানা থেকে বের হওয়া উচিৎ। বাহিরে গিয়েও তো এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে পারব।"

মুহিত বলল,

"হ্যাঁ ভাবি,এখান থেকে যত দ্রুত বের হবো আমাদের জন্য তত মঙ্গল।"

সামির আর কথা না বলে থানা থেকে বেড়িয়ে গেল।পেছন পেছন বেড়িয়ে গেল প্রণয়সহ সকলেই।সামিরের নিয়ে আসা গাড়ির কাছে দাঁড়াতেই প্রণয় বলল,

"ভাইয়া!"

"নিসার বাড়ি যেতে হবে?"ভারী গলায় বললেন সামির।

"হুম।"

এইটুকু বলেই প্রণয় চুপ হয়ে গেল। এদিকে সামির প্রণয়ের নিরবতা দেখে বললেন,

"আরও কিছু বলার থাকলে বলে ফেল।মানুষের কাছ থেকে শোনার চেয়ে তোর থেকে শোনাও মঙ্গলজনক।"

প্রণয় কি বলবে বুঝতে পারছে না।তারপরও বুকে দম নিয়ে এক নিঃশ্বাসে বলল,

"ভাইয়া,আজ সকালে আমি নিসাকে বিয়ে করে ফেলেছি।"

সামিরের সাথে সাথে নিতুও হা হয়ে রইলো প্রণয়ের কথা শুনে।তাদের মুখের ভাষা যেন এক সেকেন্ডের জন্য হারিয়ে ফেলেছে দু'জন। চোখ পাকিয়ে নিতু বললেন,

"কী বলছ কী প্রণয়?তোমার কি মাথা ঠিক আছে?"

"ভাবি এছাড়া আমার আর কোনো রাস্তা ছিল না।আমি নিসাকে হারাতে পারব না ভাবি,কিছুতেই হারাতে পারব না।"

সামির বললেন,

"নিসার পরিবার কি জানে?মানে সকালে যে পুলিশের দলবল নিয়ে এসেছিল তারা, তখন কি তাদের সব বলে দিয়েছিলি? "

প্রণয় বলল,

"তখন পর্যন্ত তো কিছুই জানত না তারা।আর না আমরা কাউকে বলেছি তবে এখন নিসার থেকে সব জেনে গিয়েছে কি-না সেটা বলতে পারব না।"

"এতবড় একটা সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে ভবিষ্যতের কথা ভাবা উচিৎ ছিল তোর।তুই নিজেই একটা স্টুডেন্ট। নিজের খাবার খরচই জোগাতে পারিস না,বউয়ের খরচ কীভাবে জোগাবি?শুধু যে খাওয়ার খরচ সেটাও তো না... ওষুধপত্র,কাপড়-চোপড়,বাড়িভাড়া ইত্যাদি। ওহো তারউপর আবার বউয়ের পড়ালেখার খরচও তো আছে!কীভাবে সামাল দিবি ভেবে দেখেছিস?"

প্রণয় কোনো কথা বলছে না,চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। এদিকে সামির প্রণয়ের নিরবতা দেখে বললেন,

"গাড়িতে উঠ।"

"কেন ভাইয়া?"

"বিয়ে যখন করেই ফেলেছিস,ওই পরিবার নামক জেলখানায় বউকে তো আর একা রাখা যাবে না।পাশে তোকে পেলেও মনে সাহস পাবে। আর মানুষের যে কটুকথা ছিড়ি, অল্প বয়সের মেয়েটা সেই কথার ধাঁর একা বহনও করতে পারবে না।"

সামিরের কথা শুনে প্রণয়ের চোখেমুখে মুহূর্তের মাঝে হাসির ঝলক ফুটে উঠল। সেই হাসি দেখে নিতু বললেন,

"না হেসে দ্রুত গাড়িতে উঠেন দেবরজি। আমার জা কে তো বিপদ থেকে মুক্ত করতে হবে তাই না?"

সামির এবার লজ্জায় মুখ টিপে হেসে দ্রুত গাড়িতে বসে পড়ল।

.

.

চলবে...

1
$ 0.00

Comments