এক টুকরো সুখ

0 14
Avatar for Safwan
Written by
3 years ago

একটি ইসলামিক শিক্ষনীয় গল্প

🌸.. এক টুকরো সুখ.. 🌸

✍🍀

👉( পর্ব- ৭)

.......

আজ আদনান যখন খাবার টেবিলে এসে বাবাকে কথাটা জানালো সেখানে মারিয়া ও ছিল। আদনান কথাটা বলেই মারিয়ার দিকে তাকালো ওর রিয়েকশান দেখার জন্য। না মেয়েটাকে দেখেই একবারো মনে হয়নি খবরটা শুনার পর ওর একটু হলেও খারাপ লাগছে। আচ্ছা মেয়েটা এমন কেন?

ওর কি অনুভূতি শক্তি নেই নাকি ও অনুভূতি শূন্য?

ভালোবাসা ভালোলাগা মানুষের থাকতে পারে কিন্তু ওর সেরকম কিছু নেই মনে হয়?

ও কি আসলেই রক্তে মাংসে গড়া কোন মানুষ নাকি কোন জড় বস্তু?

মেয়েটার কোন আবেগ নাই । কোন চাওয়া পাওয়া নাই। আজ অবদি কখনো কোনদিন মুখ ফুটে নিজের জন্য কারো কাছে কোন কিছু চায়না। যতক্ষণ আমি নিজে থেকে কিছু এনে দিই । আর নয়তো মা সব কিনে দিবে। জোর করা ছাড়া কোথাও খুব বেরুতে পর্যন্ত চায়না এ কেমন মেয়ে?

আজকের সময়ে ও এমন মেয়ে দুনিয়াতে আছে ওকে না দেখলে হয়তো জানতামই না।

মানুষের কত স্বপ্ন থাকে কত ইচ্ছে থাকে ও কখনো কিছু প্রকাশ করেনি। কখনো ওকে মন খুলে ওকে একটু হাসতে পর্যন্ত দেখিনি। শুনেছি অতিরিক্ত কষ্ট পেলে মানুষ এমন পাথরে পরিণত হয় ওর ও কি এমন হয়েছে?

এটা ও ঠিক মেয়েটার উপর এই বয়সে ও কম যায়নি। এতসব সহ্য করেও ও এখনো অনেক স্বাভাবিক আছে যেখানে আমি সামান্য কষ্টে নিজেকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছি। ওর জন্যইতো আজ আমি স্বাভাবিকভাবে জীবন কাটাচ্ছি।

হ্যা ওর চাওয়া পাওয়া আছে কোন কিছুর জন্য আবদার আছে তবে তার সবটা শুধু ওর ছেলেমেয়ের জন্য। সেদিন বাচ্ছাদের জন্যই আমার জন্য বাড়িতে যুদ্ধ ক্ষেত্র তৈরি করেছে।

এতদিন একসাথে একি রুমে থাকছি হ্যা হয়তো স্বামি স্ত্রীর সম্পর্ক নেই তারপরো তে আছি। এরকম থাকতে থাকতে তো মানুষের মাঝে ভালোলাগা তৈরি হতে পারে যেমন আমার হচ্ছে ওর জন্য। আমার জন্য কি ওর মনে একটু ও জায়গা হয়নি এখনো?

আমার ওকে ছেড়ে থাকতে কষ্ট লাগছে আর ওকে দেখে মনে হচ্ছে ওর কোন মাথাব্যথা নাই আমার যাওয়ার কথা শুনে।

এদিকে মারিয়া খাওয়া শেষে ডাইনিং গুছিয়ে কিচেন রুমে এসে দরজা আটকে অনেকক্ষণ কেঁদেছে। এতক্ষণ অনেক কষ্টে সবার সামনে নিজেকে পুরোপুরি স্বাভাবিক রেখেছে। এখন আর পারছেনা। আর এখন এদিকে কেউ আসবেনা জানে সবাই যার যার রিমে আছে। তাই ইচ্ছেমত মন খুলেকাঁদছে। চেখের পানি আটকাতে গিয়েও পারছেনা।

খাবার টেবিলে উনি যখন বললো উনাকে একমাসের জন্য অফিসের কাজে দেশের বাহিরে যেতে হবে সেইমুহূর্তে আমার মনে হয়েছে কেউ আমার বুকে পাথর চাপা দিচ্ছে। দম বন্ধ হয়ে আসছিলো আমার। নিজেকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করেছি। কারো সামনে নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করতে চাইনি। বিশেষ করে উনার সামনে। উনি যদি একটুও বুঝতে পাীতেন তাহলে ভাবতেন মেয়েটা এক নম্বরের ছ্যাচড়া। কি দরকার নিজেকে ছোট করা।

আচ্ছা ধর্মমতে উনিতো আমার স্বামি। আমি কি উনাকে বলবো আপনি যাবেন না?.

আজব কি ভাবছি আমি? উনি আমার স্বামী? স্বামী স্ত্রীর কোন সম্পর্ক আছে নাকি? উনার উপর আমার কোন অধিকার নেই। যদি আমি উনাকে নিষেধ করি সেটা হবে অনধিকার চর্চা। আর অনধিকার চর্চা দেখাতে গিয়ে উনার কাছ থেকে না শুনতে হয় তখন আরো কষ্ট হবে। শুধু শুধু নিজের আত্মসম্মান নষ্ট করার কি দরকার?

যাক না উনি হয়তো কাজটা অনেক ইম্পর্টেন্ট আমি আটকাবোনা। উনি তো আমাকে পছন্দ করেনা আমি কেন উনার কাছে ছোট হবো। থাক না এভাবে যেভাবে আছি আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো আছি।৷ এর থেকে বেশি ভালো থাকার আশা করাটা বোকামি।

নিজেকে সামলে নিয়ে দরজা খুলে দিয়ে কল ছেড়ে ভালো করে চোখে মুখে পানি দিয়ে নিজেকে আগের মত স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছি।

তারপর কফি বানিয়ে নিয়ে পিছন ঘুরতেই মাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে অনেক বড় ধাক্কা খেলাম। মা কি কিছু বুঝে ফেলেছে নাকি?

মা আপনি এখানে? কখন আসলেন?

এইমাত্র আসলাম।

কিছু লাগবে নাকি?

আরে না কিছু লাগবেনা। দেখলাম কিচেনে লাইট জ্বলছে তাই দেখতে এলাম। কিন্তু তুই এখানে এতক্ষণ কি করছিস?

আপনার ছেলের জন্য কফি বানাচ্ছিলাম তো তাই। বলে কোনরকমে মাকে পাশ কাটিয়ে চলে আসলাম। আর একটু থাকলেই মা বুঝে ফেলতো।

মা মনে মনে বললো, ,তুই না বললে ও আমি বুঝিরে। নিজেকে কেন কষ্ট দিচ্ছিস এভাবে। কারো সামনে নিজকে প্রকাশ করতে চাস না। কেউ হয়তো বুঝেনা কিম্তু আমি সব বুঝতে পারি। আমি তো মা। বয়স তো আর এমনি এমনি বাড়েনি। যাক আল্লাহ তোদের ভালো রাখুক এ বলে নিজের ঘরের দিকে আগালো।

মারিয়া দরজার বাহিরে থেকে রুমে উঁকি দিলো আদনান কি করছে দেখার জন্য। উনি নামাজ পড়ছে। তার মানে ইশার নামাজ খাবার আগে পড়েনি। বারবার বলেছি আযানের সাথে নামাজ পড়ার জন্য। যত ব্যস্ততাই থাকুক না কেন সবকিছুর আগে নামাজ। কিন্তু কে শোনে কার কথা?

যাক তাও ভালো নামাজ তো পড়ছে এটাই সবচেয়ে বড় কথা। আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।

আল্লাহ তুমি তোমার সকল বান্দাকে হেদায়েত দান করো। সবাইকে সঠিক পথে চলার তৌফিক দাও। তোমার রহমতের ছায়াতলে আমাদের সবাইকে আশ্রয় দিও।

কফিটা টেবিলের একপাশে রেখে মারিয়া গিয়ে শুয়ে পড়লো। আদনান নামাজ শেষ করে কফি খেতে খেতে বললো ঘুমিয়ে পড়েছো?

মারিয়া ভালোমতো ওড়না মাথায় পেছিয়ে উঠে বললো না। কিছু বলবেন? মারিয়া আদনানের সামনে এখনো ওইভাবে ফ্রী হয়ে চলতে পারেনা।

আদনান বললো না মানে আগামী পরশু আমার ফ্লাইট।

ও আচ্ছা আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু মনে মনে বলছে প্লিজ আপনি যাবেন না। আমার কষ্ট হবে।

আর কিছু বলবেন?

কেন ঘুম আসছে?

জী ঘুম আসতেছে। আসলে মারিয়া আদনানের সামনে থেকে নিজেকে আড়াল করতে চাইছে। এতক্ষণ কান্নার ফলে চোখমুখ ফুলে গেছে। আর এ ব্যাপারটা উনার নজরে পড়লে নানরকম জবাবদিহিতার মুখে পড়তে হবে। যেটা মারিয়া এখন মোটেও চাইছেনা।

আদনান মনে মনে হতাশার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো যেটা শুধু সে নিজেই শুনতে পেয়েছে।

বললো,,,, আচ্ছা তুমি ঘুমাও বলে নিজেও শুয়ে পড়লো। কেন একবার কি তুমি নিষেধ করতে পারতে না আমাকে। অবশ্য নিষেধ করবে কেন আমি চলে গেলে তোমার কি?

কষ্ট তো আমার হবে তোমাকে ছাড়া থাকতে।

দেখতে দেখতে যাওয়ার দিন ঘনিয়ে এলো। আজ রাত আটটায় আদনানের ফ্লাইট। মারিয়া নিজেই আদনানের আদনানের জামাকাপড় থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় সব জিনিস প্যাক করে দিয়েছে। কোন কিছু বাদ রয়েছে কিনা বারবার চেক করে দেখেছে। না সব ঠিকই আছে।

মাগরিবের নামাজ পড়েই বেরিয়ে পড়লো ওরা এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে।। বাবা-মা আর আদিব রুশা ও গিয়েছে এয়ারপোর্টে আদনানকে বিদায় জানাতে।যাওয়ার সময় ও আদনানের মনে একটু আশা ছিলো মারিয়া তাকে যেতে দিবেনা। ওকে আটকাবে হয়তোবা বলবে আপনার না গেলে কি হয়না?

কিন্তু না আদনান যখন বললো আমি যাচ্ছি। ভালো থেকো। বাবা-মা আর বাচ্ছাদের খেয়াল রেখো।

তখন মারিয়া বললো জী আপনি চিন্তা করবেন না আমি খেয়াল রাখবো। আপনিও ভালো থাকবেন। সাবধানে যাবেন। ফি আমানিল্লাহ্।

আদনান ও আল্লাহ হাফেজ বলে বেরিয়ে পড়লো। থাক না ও যখন চাইছেনা আটকাতে আমি কেন যাবোনা? ওর যখন একা থাকার ইচ্ছে থাকুক। দেখি কতদিন নিজেকে এভাবে লুকাতে পারে। আমি তো একটু হলেও বুঝি।

আদনানরা বেরিয়ে যাওয়ার পর থেকে মারিয়া একনাগাড়ে কেঁদে যাচ্ছে। আজ ও কাঁদবে মন খুলে কাঁদবে।আর যে সহ্য করতে পারছেনা। আমি কেন উনাকে আটকালাম না?

কিসের জড়তা আমার?

হ্যা আমার ভয় হয় আবার কাউকে ভালোবাসতে। আবার কাউকে হারানোর ভয়। হাসান কেও তো ভালোবেসেছি কিন্তু আল্লাহ আমার কাছ থেকে ওকে নিয়ে গেছে। আদনান ও যদি হারিয়ে যায়?

হে আল্লাহ আমি কি বলছি এসব ? আল্লাহ ক্ষমা করো আমাকে? না চাইতে মুখ দিয়ে এই সময়ে আমার মুখ থেকে এরকম কথা আসলো কিভাবে। আল্লাহ আপনি উনাকে রক্ষা করুন। উনার যাত্রা সফল করুন।

মা বাবা ফিরে আসলো কিছুক্ষণ পরে। খাওয়া দাওয়া করে সবাই ঘুমিয়ে পড়লো। কিন্তু মারিয়া সারারাত ঘুমাইনি। নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে আদনানের জন্য দোয়া চাইছিলো। আল্লাহ যেন উনাকে সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে নিজ গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে। কারন হাসান সেদিন এভাবে গিয়ে ফিরে আসেনি। সেইজন্য মারিয়ার আদনান কে নিয়ে ভয় হচ্ছে।

সারারাত জেগে থাকার পর ভোরের দিকে মারিয়া একটু ঘুমিয়ে ছিলো। কিছুক্ষণ পরে মা এসে দরজায় নক করলো। মারিয়া তাড়াতাড়ি করে উঠে দরজা খুলে দিলো।

মা ওর দিকে তাকিয়ে বললো কিরে চোখ এমন লাল হয়ে আছে কেন? রাতে ঘুমাসনি নাকি?

না মা তেমন কিছুনা বলে মায়ের দিকে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকালো।

মা বুঝতে পেরেই একটু হেসে বললো আদনান ফোন করেছে ও ঠিকমতো পৌঁছে গেছে।

মারিয়া মনে মনে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করলো। ওদিকে মায়ের কথাতে ও লজ্জা পেয়েছে মা ওর মনের কথা বুঝতে পেরে গেছে ভেবে তার জন্য।

কিন্তু একটু খারাপ লাগলো কথাটা শুনে। উনি তো আমাকে একবার ফোন করে জানাতে পারতেন খবরটা। সারারাত আমি টেনশনে ছিলাম উনার কি একবারো মনে হয়নি আমার কথা?

এতই কি পর আমি উনার কাছে?

চলবে......

2
$ 0.00
Avatar for Safwan
Written by
3 years ago

Comments