নীলখাম

4 14

বাবার বন্ধুর ছেলের বিয়েতে গিয়ে ঘটনাক্রমে আমার সাথে নীলার বিয়েটা হয়ে যায়।আমি কেবল মদনের মতো নির্বাক বিমুর্ষ,নিলিপ্ত ছিলাম।সব যেনো নাটক,থুরি সিনেমা।আর সিনেমার ঘটনাচক্র হচ্ছে সব আমার সাথেই।বিয়ে খেতে এসেছি,এখন নিজেরি বিয়ে হয়ে যাচ্ছে।যদিও আমি কিছুটা মত ছিলাম,যাকে নিজের চেয়েও বেশী ভালোবেসেছি,সে কিনা আমাকে ছেড়ে অন্য কারো নিড়ে পাড়ি জমায়।নীশি নামক কোনও এক ঝড় আমার মনে গেঁড়ে বসেছে।এমন কোনও দিন নেই,এমন কোনও রাএি নেই যার বিরহের তাপে নিজেকে পোড়াঁই।কিন্তু আর কতোদিন,কার জন্য নিজেকে শেষ করছি। "দুধ কলা দিয়ে পোষা কোনও এক বিষধর সাপের জন্য"

না তা আর হতে দেওয়া যাবেনা।তাই এমন হুট-হাট বিয়েতে রাজী হয়েছিলাম।বাবাকে মনে মনে ধন্যবাদ দিলাম। Pappa Your are great pappa.

বিয়েটা নাটকীয় ভাবে সম্পর্ন্ন হলো।বাসর-রাতে নীলা প্রকান্ড ঘোমটা দিয়ে বসে আছে।কিন্তু আমার ওদিকে কোনও ভু-ক্ষেপপ নেই।মাথায় তখন নীশি নামক কোনও এক সাইক্লোন এপার ওপার চক্কর দিচ্ছে।নিজেকে নিজে প্রশ্ন করছি।আমার সাথে কেনো এমনটা হলো?

আমি নব-বধূর দিকে একবারও তাকায়নি।চুপচাপ বিছানায় এসে শুয়ে পরলাম।

এভাবে দিন যায় মাস আসে। বিয়ের এই কয়েক-মাসে অনেক কিছু হয়েছে।

যেমন ধরুন,আমার বউটা মানুষ নয়,যেনো একটা তোতাপাখি।

বাসর-রাতে ঘটনা বলি।আমিতো চুপ-চাপ শুয়েছি।তো পরেরদিন।কাঁচের গ্লাস ভেদ করা সূর্যের আলোর ছটায় ঘুম ভাঙ্গলো।আমি চোখ কচালাতে কচলাতে ওপাশ ফিরে যা দেখলাম চোখ আমার হাঁসের ডিম হয়ে গেলো।

নীলা বাঁথরুম থেকে এসে।আমার চুলের স্পার্ইক নিয়ে স্পিকারের মতো করে,ধেই ধেই করে গান গাইছে।আমার গানের তালে তাঁলে কোমড় দুলিয়ে নাঁচচে।আবার মাঝে মাঝে আমার দিকে তাকাচ্ছে।আমি মরার মতো ঘুমের ভং ধরে বসে আছি।কিন্তু এর পরে যা দেখলাম তা দেখার জন্য নিজেই নিজের গায়ে চিমটি কাটলাম "নীলা আমার টি-শার্ট আর জিন্স পরেছে"মনে মনে বলছি এরকমও কি হয়।তারপর ড্রেসিংটেবিল থেকে আমার কাছে এসে মাথা ঝুঁকিয়ে বলছে আপনার নাঁকটা খুব কিউট।তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে নিচে আসুন।তারপর রুম থেকে ধেই ধেই করে নেঁচে নেঁচে চলে গেলো।আমি টেরা চোখে তাঁকিয়ে বিছানা থেকে লাফ দিয়ে উঠে গেলাম।গায়ে আবার চিমটি কাটলাম।এটা কি স্বপ্ন নাকি সত্যি।না সবি সত্যি।

এভাবেই দিন হয়ে কখন যে বিয়ের তিন-মাস পার হলো বুজতেই পারিনি।আমাদের মাঝে কোনও দাম্পত্য জীবন নেই।ফিজিকালি কিছু নেই।সে থাকে নিজের মতো,আমি থাকি আমার মতো।

কোনও এক সকাল-বেলায় কাঁথার নিচে গুটি-সুটি দিয়ে ফেসবুকিং করছিলাম।সে কাথা সরিয়ে দিয়ে ভেউ..আমি ভয় পেয়ে গেলাম।পরে বিরক্তির চাপ নিয়ে...

"কি হয়েছে টা কি"?

আপনি কাঁথার নিচে কি করছেন।কোনও চুরি টুরি করার প্ল্যান করছেন না তো?কাথার নিচে শুয়ে শুয়ে।

আমি ভ্রু কুচকে বললাম আমাকে আপনার চোর মনে হয়?

চোরের গায়ে কি লেখা থাকে যে সে চোর?এমন হলেতো চোরকে ধরার জন্য পুলিশের দরকার পরতো না।গায়ের লেখা দেখে চোর সনাক্ত করে পাট্টাম দিতো!তাই কিভাবে বলবো আপনি চোর নাকি ভালো মানুষ।I mean,আপনি কাঁথার নিচে শুয়ে শুয়ে হয়তো আমার গহনা চুরি করার ফন্দি আটঁতে পারেন।দাদি বলতো চোরেরা এভাবে কাথাঁর নিচে প্ল্যান করে।তাই দাদির থিউরি অনুযায়ী আপনি প্ল্যান করছেন হয়তো চুরি করার।এমন তো হতেও পারে, এটাতো অবান্তর নয়।

প্লিজ থামবেন আপনি।

কেনো থামবো?অবশ্য আপনার ফিগার দেখে মনে হয়বা আপনি চোর।

তাইলে কিসের মতো মনে হয়?

হৃত্বিক রোশান দ্যা বলিউড হিরোর মতোন।উফ হট,ড্যাসিং লুকক।মাই ফেবারিট এক্টর।উনার মতো মনে হয়।

নীলার কথা শুনে আমার মুখ হা হয়ে গেলো।

জানেন নীল পান্জাবি পরলে আপনাকে খুব হট লাগে।যেদিন বিয়েতে নীল পান্জাবি পরে এসেছিলেন সেদিন আপনাকে কি জোসটাই না লেগেছিলো।আমি আপনাকে আড়চোখে সেদিন দেখছিলাম আর দেখছিলাম । জানেন হৃত্বিক রোশানকে বিয়ে করবো বলে ছোটও থেকেই স্বপ্ন দেখতাম।স্বপ্ন সত্যি হলো আপনাকে দেখে।কখনো ভাবিনি আপনার মতো বাংলাদেশি হৃত্বিক রোশান পেয়ে যাবো।কিন্তু আমার খুব রাগ হয়?

কেনো কেনো?

ওই যে বৌ-ভাতের দিন কচি কচি মেয়েরা আপনার পাশে ঘেষার চেষ্টা করছে।চান্স নেওয়ার চেষ্টা করছে।আর আপনি ও হেঁসে হেঁসে ফিল্মি স্টাইলে কথা বলেছেন ওই সিনটা দেখে।ইচ্ছে করছিলো মেয়েগুলোর চুলের মুঠি ধরে বলি "বেয়াদব মেয়ে,বেহায়া মেয়ে,ছেলের বাজারে কোনও ছেলেকে কথা বলার জন্য খুজে পাসনি?আমার হৃত্বিক রোশানকেই খুজে পেতে হলো? তারপর দিতাম এক ঘা।

আস্তে আস্তে।তারপর কি করতে?

তারপর মেয়েগুলোকে তাড়িয়ে আমি আপনার সাথে রোমান্স করতাম, পাশ থেকে বেজে উঠতো "মেরি রুহু কা - পারিন্দা ফরফরাহে,লেকিন শুকনো ক্যা জাজিরা মিল ন্যা পায়ে"

থাক থাক।আর বলতে হবেনা।বুজেছি আমি।তোতাপাখি একটা,কথার গাড়ি স্টার্ট হলে সেটা চলতেই থাকে।ফাজিল মেয়ে একটা।

সেদিন বাইরে থেকে এসে রুমে ঢুকতেই এক পা পিছলে গেলাম।তারপর খানিকটা আড়াল হলাম।নীলা একটা হলুদ শার্ট পরেছে।চোখে সানগ্লাস। আর স্টিচ পেন্ট পরেছে।আমি নীলার বডি-লেঙ্গুইজের দিকে হা করে তাকিয়ে আছি।

আমি শুভকে খুব ভালোবাসি।এই আকাশ, তবে শুনো।আমার বুক চিরে ওই দু অক্ষরের নাম থাকবে সেটা হলো শুভ।ওই বাতাস জেনে রেখো।আমার ভালোবাসা হীরে ডায়মন্ড স্বর্ণ,সবার চেয়ে খাটি।চৌধুরি সাহেব "আমি মেয়ে গরীব হতে পারি"কিন্তু আমার ভালোবাসা গরীব নয়।আমার ভালোবাসা কেনার মতো কোনও সামর্থ্য আপনার নেই "চৌধুরী সাহেব"

লাস্ট কথাটা শুনে হাসি আর চেপে রাখতে পারলামনা অজান্তেই হেসে ফেললাম। আমার আগমনের উপস্হিতি টের পেয়ে নীলা একটু লজ্জা পেলো।এতো হাসার কি হলো?

না না কি আবার হবে কিচ্ছু হয়নি।

আপনি কিচ্ছু দেখেননি তো?

একদমি না।

তাইলে হাসছেন কেনো?

আপনার ভালোবাসা কেনার সামর্থ্য আমার নেই তাই হেসেছি।নীলা এবার রাগী রাগী ভাব নিয়ে তাকালো।চোখের ভাষা দেখে মনে হচ্ছে।এই বুজি কাঁচা খেয়ে নিবে আমাকে।

মাস পেরিয়ে বছর এলো।এরি মাঝে নীশি নামক ভূতটা কিছুটা সরে গেলো।নীলার দুষ্টুমি, মিষ্টি পাগলামি,আর খুনসুটি খুব ভালোই লাগতো।নীলার বয়স মাএ ২০।আর আমার ২৬।খুব প্রাণবন্ত, চঞ্চল, যৌবনের তারণ্যে উজ্জল মেয়ে নীলা।এভাবে বছর পেরিয়ে নতুন বছরে পা রাখলাম।আশে-পাশের প্রতিবেশীরা কানা-ঘুষা করে,এতোদিন হলো বিয়ে হয়েছে।এখনও কোনও বাচ্চা-কাচ্চা হলোনা।আসলে আমি কখনও নীলার কাছাকাছি আসিনি বা নীলাও আসার চেষ্টা করেনি।কোনও এক অদৃশ্য দেওয়াল কাছে থেকেও অনেক দূরে রাখার চেষ্টা করছে।তাছারা নীলার বয়স অনুযায়ী সে খুব ছোটও।সে কি বুজবে স্বামী-স্তীর সুখের জন্য একটা সন্তান নেওয়া কতোটা গুরুত্বপূর্ণ? এখন তাকে এসব নিয়ে কথা বলতে গেলে দেখা যাবে সে নিচে গিয়ে মা কে গিয়ে সব বলে দিবে তারপর লজ্জায় আমার দু কান কাটা যাবে।এভাবেই নীলার সাথে কোনও এক অদৃশ্য দেওয়ালের আলাদা সওা হিসেবে সংসার করতাম।যতদিন না নীলা সেক্সুয়ালি এডাল্ট হয়, আমি তার কাছাকাছি আসবোনা।ভালো বন্ধু হয়ে থাকবো।নীলা তার ভালো লাগা কিংবা খারাপ লাগা,পছন্দ অপছন্দ সব শেয়ার করতো।অফিসে থাকলে কম করে হলেও ৫/১০বার ফোন দিবে।অফিস থেকে আসতে দেরী হলে বলবে এই যে হৃত্বিক রোশান কোন মেয়ের দিকে তাকিয়েছেন,আমি জানি তো আজকে কোনও এক মেয়ের সাথে ঘুরতে গিয়েছিলেন।তাই এতো দেরী হলো,এবং সেদিন সে অভিমান করে রাএে ভাত খাইনি।অনেক কষ্ট করে রাগ ভাঙ্গালাম।অথচও যে শুভ কোনওদিন কারো ইগোকে পাওা দেয়নি।অনেক কষ্ট করে বুজালাম যে অফিসের কাজের জন্য লেট হয়েছে।

আরেকদিন অফিস থেকে এসে আমার শাটের বোতামে একটা মেয়ের চুল পাওয়া যায়।বিষয়টা আমিও জানিনা।কিভাবে এই চুল এলো।কিন্তু কি করে নীলাকে বুজাই।সেদিন আমাকে বলেছিলো "আমার মাঝে কিসের কম আছে"যার কারণে অন্য মেয়ের সাথে রাত কাটাঁতে হলো, কথাটা বলার সাথে সাথে নীলার আঁচল আর ব্লাউজ খুলে ফেলে দেয়।দেখো, আমার মাঝে কিছু কম আছে কিনা? সেদিন নীলার শরীরের দিকে তাকিয়ে নিজেই খুব লজ্জা পাই।কিভাবে বুজাবো,?আমি কোনও মেয়ের সাথে রাত কাটাইনি।সে আমাকে ভুল বুজছে।হয়তো বাসের জ্যামে ভুলবশত কোনও এক মেয়ের চুল আটঁকে গিয়েছিলো।কিন্তু নীলা তা মেনে নিলোনা....

বিয়ের পাঁচবছর পর জানতে পারলাম নীলা অন্তঃস্বওা।তার মানে কোনও নতুন অতিথি আসতে চলেছে।পিচ্ছির কোলে আরেক পিচ্ছি।নীলার মুখে হাসির ছোপ গাঢ়ো ভাবে ফুটে উঠেছে।নীলাকে দেখে বুজলাম মেয়েরা সবচেয়ে বেশী খুশী হয়,তখন,যকন সে মা হয়.....

#নীলখাম

#পর্বঃ০১

3
$ 0.00

Comments

Wow this post. Thank you very much for your writing. I am very excited to read out this post. I am always with you.

$ 0.00
3 years ago

tnx

$ 0.00
3 years ago

অসাধারণ হয়েছে। যার গল্পের প্রথম পর্বই এতো সুন্দর হয় তার প্রতিটা গল্পই অনেক সুন্দর হয়। নেক্সট প্লীজ

$ 0.00
3 years ago

গল্পটি পড়ে খুবই রোমান্টিক লাগলো। আমার কাছে রোমান্টিক গল্প করতে খুবই ভালো লাগে ধন্যবাদ লেখককে। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

$ 0.00
3 years ago