জিবন গল্প

0 12
Avatar for Sadiasapa
4 years ago

দিন শেষে আসলেই কি আমরা সুখী?

রিফাত কান্তি সেন | প্রকাশিত: ০৫:১৮ পিএম,

সুখের কোনো বিশেষায়িত সংজ্ঞা নেই। একে ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না। অনেকটাই উপলব্ধির বিষয়। আমরা কি আসলেই সুখী হতে চাই? হয়তো সারাজীবন এ প্রশ্ন থেকেই যাবে। তাতেও প্রকৃত সুখ খুঁজে পাওয়া যাবে না। সুখ খুঁজতে গিয়ে হয়তো অসুখেও ভুগতে হতে পারে।

যদি ছোটবেলায় ফিরে যাই, তবে আমরা এভাবে সুখ খুঁজতাম। যখন স্কুলে যেতাম; ঠিক তখন মনে হতো পৃথিবীর সব সুখ মনে হয় আমাদের। সকালে ঘুম থেকে উঠে গ্রামের মাঠ চষে বেড়ানো। স্কুলে গিয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা। স্কুল পালানোর পায়তারা। পকেটে সামান্য দু’-চারটি টাকা হলে বুক ফুলিয়ে বলা, ‘আজ সারাটা দিন আমার’। বাটার বন আর বাকি টাকা দিয়ে বুট-বাদাম খেয়ে বন্ধুদের সাথে জম্পেস আড্ডা দেওয়া। আহা, স্কুল পালানোর দুরন্তপনা অসাধারণ এক সুখকর স্মৃতি।

বিজ্ঞাপন

চাহিদা বলতে কোনো একটি মাঠে খেলতে পারলেই চাহিদার ষোলোকলা পূর্ণ হতো। প্রয়োজন ছিল না দামি শার্ট, দামি প্যান্ট, আধুনিকতার ছোঁয়াও গায়ে লাগেনি। নাড়া (খড়) ক্ষেতে বিকেল বেলা খেলতে পারার মাঝেই লুকিয়ে ছিল সব সুখ। ছিল না কে ধনি, কে গরিব- তার বৈষম্য। বন্ধু-বন্ধুই। ছিল না কোনো প্রেসটিজ ইস্যু। শিক্ষিত-মূর্খ ছিল না বিভেদ। কার কোন ধর্ম, তা নিয়েও ছিল না মাথাব্যথা।

গাদা গাদা বই পড়ার এত সময় ছিল না। প্রকৃত সুখ তো খুঁজে পেতাম সবুজ-শ্যামল মাঠের বুকে ঘুরে বেড়ানোয়। বর্ষায় কাঁদাযুক্ত মাঠে ফুটবল নিয়ে মেতে ছিলাম। বাড়ি থেকে বলতে হয়নি পড়তে বসো। ইচ্ছে হলে পড়তাম, না হলে দূর ছাঁই, এত সময় কই? লুকোচুরি খেলতাম আমার এক প্রিয় বন্ধু আলমগীরের (চিকু) সাথে। আলমগীর লেখাপড়া না করলেও সে তো আমার খেলার সাথী। বয়সে হয়তো কিছুটা ছোট, তাতে কি? আমরা তো খেলায় আনন্দ খুঁজতাম। সুতরাং আমরা সমান-ই। সমান চোখে দেখতাম।

কে এতো বড় হতে চায়? বড় বড় মানুষ হলে না-কি সুখ বেশি। লোকের মুখে শুনতাম। তবে আবার ভাবনার জগতে ছুটে গেলে নিজে নিজে বলতাম, ‘অত বড় হয়ে কী হবে? সুখ তো ওই গাঁয়ে, হারিকেনের আলোর মাঝে লুকিয়ে আছে।’ দিন দিনই বড় হচ্ছি, সুখগুলো লুকাচ্ছে। আহা, আবার ভাববেন না যেন অর্থ-বিত্তে বড় হচ্ছি। বয়স বাড়ছে এই আর কি

তবে সে সুখ এখন আর খুঁজে পাই না। সেই দুরন্তপনা এখন আর আমাকে ডাকে না। চারিদিকে শুধু স্বার্থপরতার গল্প। কে কাকে ঠকিয়ে বড় হবে সে চিন্তায় ব্যস্ত। প্রজন্ম তৈরি হচ্ছে, একা খাও-একা বাঁচো নীতিতে। আর হবেই বা না কেন?

সেদিন দেখলাম, এক ভদ্রমহিলা তার সন্তানকে স্কুলের গেইটে দাঁড়িয়ে বলছে- ‘শোন, গতকাল তোর খাবার ওরা খেয়ে ফেলেছে। আজ ভুলেও ওদের খাওয়াবি না। একা খাবি।’ আমি ভাবলাম, আহা রে! ছেলেটার সুখগুলো সব ধুলায় মিশিয়ে দিলো। বয়সে বড় হয়ে সে যখন বড় কোনো অফিসার হবে, তখন সে একা খাও-একা বাঁচো নীতিই অনুসরণ করবে। দূর ছাঁই, আমি তো সুখী।

কিছুদূর যাওয়ার পরই দেখলাম আরেক দৃশ্য। সন্তানকে একজন শেখাচ্ছেন, যার-তার সাথে বন্ধুত্ব করবি না। যে দেখবি ভালো পড়া পারে, তাকে বন্ধু বানাবি। আহা রে, বেচারার সুখটা মাটিতে মিশিয়ে দিলো। সব পড়া পারা বন্ধু কি ভালো বন্ধু হতে পারে? শেষ বেঞ্চের শিক্ষার্থীও তো ভালো বন্ধু হতে পারে। আর যা-ই হোক, সে কিন্তু সারাদিন পড়ালেখা নিয়েই ব্যস্ত নয়, সে জিপিএ-৫ নয়, সে কোনরকম পাসের জন্যই ছোটে। অন্ততপক্ষে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে অন্যায় পথ তো সে অবলম্বন করবে না।

আচ্ছা, এ যুগে মানুষ সুখ কোথায় খোঁজে? দিন দিন আমি কেমন যেন সুখ খুঁজতে গিয়ে অসুখে ভুগছি। সবাই বলে ভালো একটি চাকরি করলে নাকি ঘরে সুখ আসবে। চাকরিটা হতে হবে সরকারি। আচ্ছা, তবে কি সোনার হরিণ পেলে সুখ মিলবে?

দূর, কে এসবে সুখ খোঁজে। আমি তো সুখ খুঁজি মনের ভেতরে। আমি তো সুখ খুঁজি মানুষের মাঝে। আমি তো সুখ খুঁজি অন্যের চোখের জল মুছে দেওয়ার মাঝে। আমি তো সুখ খুঁজি অনাহারীর মুখে দু’মুঠো অন্ন জোটানোর মাঝে। আমি সুখ খুঁজি ভালোবাসার মাঝে, প্রকৃতির মাঝে।

রবীন্দ্র কিংবা নজরুল নয়, আমি ‘আমিই’ হতে চাই। এর মাঝেই সুখের সন্ধান করি। লোকে পাগল বলবে, বলুক না। তাতে কী! পাগলের সুখ তো মনে মনে। আচ্ছা একবার ভাবুন তো, আপনি বড় অফিসার। জীবনে অনেক বড় কিছু হয়ে গেলেন। গাড়ি-বাড়ি সব কিছুই দামি আপনার। দুর্ভাগ্য আপনি সময়ের জন্য প্রকৃতির আলো-বাতাসের সংস্পর্শে আসতে পারছেন না। এতটাই ব্যস্ত যে, আপনি রক্ত-মাংসে গড়া মানুষ; সেটাই ভুলে যান মাঝে মাঝে। তবে কি এতে সুখ মেলে?

আমি সুখ দেখেছি একজন দিনমজুরের মাঝে। সারাদিনের তীব্র খাটুনির পর রাতে নুন-ভাত খেয়ে শান্তির ঘুমে আচ্ছন্ন সে। জীবনের প্রকৃত সুখ তো তার কাছে। গাড়ি-বাড়ি দামি না হলেও মিষ্টি ঘুম ধরা দিচ্ছে তার কাছে। পাড়া-প্রতিবেশীর খবরও নিতে পারছে। প্রকৃত সুখ তো তার কাছেই ধরা দিয়েছে। আপনি তো কৃত্রিম সুখের পেছনে ছুটছেন।

সুখ খুঁজতে অনেকেই বিলেতে পারি জমান। সেখানে গেলে না-কি সুখ পাওয়া যায়। মস্ত মস্ত দালানের ভিড়ে সত্যিই কি সুখের সন্ধান মেলে? কামীনি রায় ‘সুখ’ কবিতায় লিখেছেন-
‘নাই কিরে সুখ? নাই কিরে সুখ?
এ ধরা কি শুধু বিষাদময়?
যাতনে জ্বলিয়া কাঁদিয়া মরিতে
কেবলি কি নর জনম লয়?’
প্রকৃত সুখী মানুষ তো সে, যে কি-না নির্মল বাতাসের মাঝে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে পারে- ‘আমি ভালো আছি, তুমি ভালো থেকো।’

তবে এ ভালো থাকার মানুষগুলো দিন দিনই যান্ত্রিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে। এখন আর কেউ কৃষক হতে চায় না, শ্রমিক হতে চায় না, থাকতে চায় না গ্রামে। শহরের টানে, জীবিকার সন্ধানে ছুটে যায় ইট-পাথরের শহরে। সেখানে সুখের সন্ধান করতে গিয়ে অসুখের তাড়নায় ধুঁকে ধুঁকে মরতে হয়।

তবু লোকে সুখ খোঁজে। ভালোবাসায়ও সুখ আছে। সে সুখ খুঁজতে গিয়ে মান্না দে গেয়েছিলেন, ‘সবাই তো সুখী হতে চায়/তবু কেউ সুখী হয়, কেউ হয় না/জানি না লোকে যা বলে, সত্য কী না/কপালে সবার নাকি সুখ সয় না/সবাই তো সুখী হতে চায়।’

ভালোবাসার মাঝে যে সুখ লুকিয়ে আছে, তা-ও স্বার্থপরতার কাছে মাঝে মাঝে হার মেনে যায়। কখনো সংসারে অভাব, কখনো বা চাহিদা মেটানোর তাগিদ। সব মিলিয়ে হাঁপিয়ে ওঠা এক জীবন। যে জীবনে সুখের চেয়ে দুঃখের ঘানি বেশি টানতে হয়। অতঃপর যখন সুখ এসে সত্যিই ধরা দেয়, ঠিক তখন নতুন কোনো অসুখে সেই সুখটাও বিনষ্ট হতে চলে। সুখ খোঁজার জন্য দুঃখকে বরণ করতে যেন মহাব্যস্ত গোটা পৃথিবী।

গোটা পৃথিবী এখন বৈষম্যের চাদরে ঢাকা। যে যেভাবে পারছে; সেভাবেই বৈষম্যের সৃষ্টি করছে। সুখের সন্ধান করতে গিয়ে অন্যের জান-মাল নিয়েও ছিনিমিনি খেলছে। নীতি-নৈতিকতার বড়ই অবক্ষয়। সবাই শুধু গাড়ি-বাড়ির পেছনে ছুটতে গিয়ে সত্যিকারের সুখটাকে জলাঞ্জলি দিচ্ছে। তবু আমরা সুখের জন্য দুঃখের বীণায় সুর তুলছি অবিরত। তবুও বসুন্ধরায় নেমে আসুক সুখ- এমনটাই এখন স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা।

এসইউ/জেআইএম

জীবনের-গল্প


আরও পড়ুন
হঠাৎ সাবেক প্রেমিক-প্রেমিকাকে স্বপ্নে দেখছেন কেন?

 

স্মৃতি ও সম্প্রদায়

শিশুরা যেভাবে খাঁচায় বন্দি হচ্ছে

বিজ্ঞাপন

পরবর্তী খবর


মাইগ্রেন নিয়ে চিন্তিত? প্রতিকারের উপায় জেনে নিন

ডা. হিমেল ঘোষ | প্রকাশিত: ০৪:৩০ পিএম, ০৪ মার্চ ২০২০

মাথাব্যথা নিয়ে আমরা কম-বেশি সবাই বিভিন্ন সময়ে ভোগান্তিতে পড়ি। মাথাব্যথার একটি বিশেষ ধরন হলো মাইগ্রেন। মাইগ্রেন শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে গ্রিক শব্দ ‘হেমিক্রেনিয়া’ থেকে। যার অর্থ হলো- মাথার একদিকে ব্যথা। তবে মাইগ্রেনে মাথাব্যথা মাথার একদিকে হয় বলে প্রচলিত হলেও অনেক সময় ব্যথা পুরো মাথায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ১১% বয়স্ক মানুষ মাইগ্রেনজনিত মাথাব্যথায় ভুগছেন। সাধারণত ২০-৩০ বছর বয়সে এ রোগ শুরু হয়।

কারণ: মাথার ভেতরে রক্ত চলাচলের তারতম্যের কারণে মাইগ্রেন হয়। মস্তিষ্কের বহিরাবরণে বিদ্যমান ধমণিসমূহ মাথাব্যথার শুরুতে স্ফীত হয়ে যায়, এতে মস্তিষ্কে স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ ব্যাহত হয়। প্রথমে মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল কমে গিয়ে চোখে সব অন্ধকার মনে হয়, পরে রক্ত চলাচল হঠাৎ বেড়ে গিয়ে প্রচণ্ড মাথাব্যথার অনুভূতি তৈরি হয়। তবে মাইগ্রেন চোখের কোনো সমস্যার জন্য হয় না। নিউরোভাস্কুলার এ অসুখে মাথাব্যথার জন্য সেরোটোনিন নামক নিউরোট্রান্সমিটারের অত্যধিক উপস্থিতি দায়ী। তবে মাইগ্রেনের কারণ সম্পর্কে এখনো পুরোপুরি জানা সম্ভব হয়নি। এটি বংশগত বা অজ্ঞাত কোনো কারণে হতে পারে। সাধারণত পুরুষের চেয়ে নারীর এটি বেশি হয়। নারীর ঋতুস্রাবের সময় এ ব্যথা আরও বাড়ে।

ঝুঁকি: চকলেট, আঙুরের রস, কফি ও পনির জাতীয় খাবার বেশি খেলে মাইগ্রেন হতে পারে। এছাড়া দুশ্চিন্তা, ব্যায়াম, অতিরিক্ত ভ্রমণ, অনিদ্রা, দীর্ঘদিন জন্মবিরতিকরণ ওষুধ খাওয়া, দীর্ঘক্ষণ টেলিভিশন দেখা, মোবাইলে কথা বলায়ও হতে পারে। তবে কম্পিউটারে কাজ করা, অতি উজ্জ্বল আলো, শব্দ, গন্ধ ও বাতাসের চাপের তারতম্য মাইগ্রেনের ঝুঁকি বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়।

লক্ষণ: মাইগ্রেনের প্রধান লক্ষণ হলো মাথাব্যথা, যা মাথার একপাশ থেকে শুরু হয়ে সমস্ত মাথায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। পাশাপাশি চোখের পেছনে ব্যথার অনুভূতিও তৈরি করতে পারে। মাথাব্যথা শুরু হলে তা কয়েক ঘণ্টা এমনকি কয়েক দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। মাথাব্যথার সাথে বমিভাব বা বমি এবং চোখে ঝাপসা দেখাও যুক্ত হতে পারে। বিরক্তিবোধ, শব্দ ও আলো ভালো না লাগা, কোনো কাজে মনোযোগ নষ্ট হওয়া, অতিরিক্ত হাই তোলা, অতিরিক্ত তৃষ্ণা, ঘনঘন প্রস্রাব, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি উপসর্গ মাথাব্যথার দু’একদিন আগেই শুরু হতে পারে।

প্রতিকার: কিছু নিয়ম মেনে চললে মাইগ্রেনের তীব্রতা অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব। বাঁধাকপি, মাশরুম, চেরি, খেজুর, ডুমুর, অরগান মিট, চিংড়ি, আদা-চা প্রভৃতি খাবার মাইগ্রেনের স্থিতি ও পুনরাবৃত্তি প্রতিরোধ করে। তিল, আটা, বিট প্রভৃতি ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার, ঢেঁকি ছাটা চালের ভাত, আলু, বার্লি প্রভৃতি ম্যাগনেসিয়ামযুক্ত খাবার, সবুজ, কমলা, হলুদ রঙের শাক-সবজি ইত্যাদি মাইগ্রেন প্রতিরোধক।

সতর্কতা: বেশি সময় ধরে টিভি, কম্পিউটার ব্যবহার না করা, উচ্চশব্দ ও কোলাহলপূর্ণ পরিবেশ এড়িয়ে চলা, তীব্র রোদ ও ঠান্ডা পরিহার করা, কম বা অতিরিক্ত আলোয় কোনো কাজ না করা, প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া ও পরিমিত ঘুম প্রভৃতি নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন মাইগ্রেন পুনরাবৃত্তি প্রতিরোধ করে। মাথাব্যথা শুরু হয়ে গেলে বিশেষত বমি হলে প্রচুর পানি পান করা, ঠান্ডা কাপড় মাথায় জড়িয়ে রাখা, বিশ্রাম করা ইত্যাদি মেনে চললে মাথাব্যথার তীব্রতা হ্রাস পায়। পাশাপাশি চকলেট, অ্যালকোহল, ডিম, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, পেঁয়াজ, টমেটো, সাদা রুটি, আপেল, কলা, চীনাবাদাম, চা, কফি, কোমলপানীয়, টক জাতীয় ফল, আইসক্রিম প্রভৃতি খাবার পরিহার করতে হবে।

চিকিৎসা: বেশি মাথাব্যথা হলে এবং বারবার মাথাব্যথার আক্রমণ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কিছু ওষুধ বারবার মাথাব্যথার আক্রমণ ঠেকাতে আবার কিছু ওষুধ মাথাব্যথা কমাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। প্রয়োজন অনুসারে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এসব ওষুধ সেবনের পাশাপাশি পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও মানসিক চাপ পরিহার করার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনযাপন করা সম্ভব।

এসইউ/পিআর

চিকিৎসা



ফেসবুকে ভিডিও দেখে মাকে খুঁজে পেলেন

২০১৮ সালের ডিসেম্বরে স্ট্রোক করেন রতনের মা নূরজাহান বেগম। পরের সময়গুলোতে তিনি বাসাতেই থাকতেন। রতন ও তার পরিবার মায়ের সুস্থ্যতার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে।

২০১৯ সালের জুনের কোনো একদিন হুট করে বাসা থেকে বেরিয়ে যায় রতনের মা। এরপর চলতে থাকে মাকে খুঁজে পাওয়ার প্রাণপণ চেষ্টা। কিন্তু শত চেষ্টার পরও রতন ফিরে পাননি তার মাকে। এরপর থেকে নির্ঘুম রাত কাটতে থাকে রতন ও তার পরিবারের

মাকে ফিরে পাবার আশায় দিন কাটতে থাকে। হাঠাৎ একদিন ফেসবুকে এক ভিডিওতে রতনের মায়ের ছবি দেখেন এক প্রতিবেশী। রতনকে জানায় তার হারিয়ে যাওয়া মাকে খুঁজে পাওয়া গেছে। রয়েছেন আপন নিবাস বৃদ্ধাশ্রমে।

তাৎক্ষণিকভাবে রতন যোগাযোগ করে ভিডিও নির্মাতাদের সঙ্গে। ছুঁটে যায় আপন নিবাস বৃদ্ধাশ্রমে। সেখান থেকে তার মাকে তারা বাসায় নিয়ে আসে। আপন মানুষটিকে ফিরে পেয়ে বাঁধ ভাঙার উল্লাসে মেতে ওঠেন রতন ও তার পরিবার।

এর আগে গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর আপন নিবাস বৃদ্ধাশ্রমে যায় বার্জার। নতুন আসবাব ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম দিয়ে আপন নিবাসের ঘরগুলো সাজিয়ে দেয় নতুন করে। নতুন ঘরে মানুষগুলো যেনো একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারেন। এই পুরো প্রক্রিয়ার ভিডিও নিজেদের ফেসবুক পেইজে শেয়ার করে। সেই ভিডিও’র মাধ্যমেই মাকে খুঁজে পান রতন।

মাকে ফিরে পাওয়ার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে রতন জানান, ‘মাকে পাওয়া গেছে, এই বিষয়টি শোনা মাত্রই আমি বার্জারের সাথে যোগাযোগ করি। তারাই আমাকে আপন নিবাস বৃদ্ধাশ্রমের ঠিকানা দেন ও আমাকে সেখানে নিয়ে যান। আমরা আপন নিবাসে হাজির হওয়া মাত্রই মা আমার ভাইয়া ও আমাকে দেখে চিনে ফেলেন। মাকে বাসায় নিয়ে আসতে পেরে আমি অনেক আনন্দিত।

হাসপাতালের আবর্জনার স্তূপ এখন ফুলের বাগান

জেলা প্রতিনিধি | ঝিনাইদহ | প্রকাশিত: ০৩:৪৪ পিএম, ০৩ মার্চ ২০২০

‘কিছুদিন আগেও হাসপাতালের সামনের জায়গাটি পরিত্যক্ত ছিল। সেখানে ছিল ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। সারাক্ষণ ভনভন করত মশা-মাছি। সেই পরিবেশ সুন্দর করার চিন্তা থেকে সেখানে করা হয়েছে ফুলের বাগান। পরিত্যক্ত সেসব জায়গা এখন বাহারি ফুলে ভরে গেছে।’ কথাগুলো বলেন ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের জুনিয়র মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. জাকির হোসেন। তিনি গতবছরের ১৬ এপ্রিল এ হাসপাতালের দায়িত্ব নেন।

ডা. জাকির হোসেন বলেন, ‘হাসপাতালের সামনে পরিত্যক্ত জায়গায় ময়লা-আবর্জনা ফেলতেন রোগীরা। সেখান থেকে জন্ম নিতো মশা-মাছি। এমনকি দুর্গন্ধও ছড়াতো। প্রতিদিন হাসপাতালে যেতে-আসতে এসব আমার চোখে পড়তো। এমন পরিবেশ রোগীদের হাসপাতালে প্রবেশের পর অস্বস্তিতে ফেলতো।
তিনি বলেন, ‘গতবছরের শেষ দিকে আমি সিদ্ধান্ত নেই, হাসপাতালের সামনের পরিবেশ সুন্দর করব। যেমন ভাবা তেমন কাজ। নিজ উদ্যোগে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহযোগিতায় ফুলের বাগান গড়ে তুলি।’

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বাগানটিতে গোলাপ, গাঁদা, জবা, ডালিয়া, ক্রিসমাসসহ ২০ প্রজাতির ফুলগাছ আছে। এ ছাড়া হাসপাতালের মসজিদের পাশেই আছে একটি ভেষজ বাগান। হাসপাতালের যে নালা দিয়ে ময়লা পানি যেত, তার ওপরে স্লাব বসানো হয়েছে। সাজানো হয়েছে ফুলের টব

স্থানীয় মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘পরিত্যক্ত জায়গায় বাগান প্রশংসার দাবি রাখে। প্রতিটি হাসপাতালে এমন দৃষ্টিনন্দন ফুলের বাগান রোগী ও হাসপাতালের জন্য খুব দরকার।’

রোগী ও তাদের স্বজনরা বলেন, ‘আগে হাসপাতালের ভেতরে প্রবেশ করলেই নাকে ওষুধ ও ময়লার গন্ধ লাগত। এখন হাসপাতালের ভেতরে ঢুকলেই বাহারি ফুলের ঘ্রাণ পাই। মনটা ভালো হয়ে যায়।’

সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আয়ুব আলী বলেন, ‘হাসপাতালের জুনিয়র মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. জাকির হোসেনের আন্তরিকতা, সদিচ্ছা, আর্থিক সহযোগিতা ও পরিকল্পনায় হাসপাতালের সামনের পরিত্যক্ত জায়গায় এ ফুলের বাগান গড়ে তোলা হয়।’

তিনি বলেন, ‘বাগান করার পর হাসপাতালের চিত্র পাল্টে গেছে। গন্ধযুক্ত জায়গা থেকে ফুলের সুবাস ছড়াচ্ছে। প্রতিদিন বহিঃর্বিভাগে ২ হাজার রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। তারা বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করেন। কর্মচারীরা নিয়মিত ফুলগাছের যত্ন নেন।’

আব্দুল্লাহ আল মাসুদ/এসইউ/এমএস

ফুল-চাষ


 

হাসপাতাল


বিজ্ঞাপন

পরবর্তী খবর


অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে বঙ্গবন্ধুর ভাষা আন্দোলন

বঙ্গবন্ধু নিজেই ভাষাসৈনিক ছিলেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন, কিন্তু অনেকদিন সামনে আনা হয়নি এ ইতিহাস। ষড়যন্ত্র করে ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অবদানকে ষড়যন্ত্রকারীরা অস্বীকার করতে চেয়েছিল। জ্ঞানপাপীর দল জানে না ইতিহাস মোছা যায় না, ইতিহাস নিজের শক্তিতেই ভেসে উঠবে। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ প্রকাশের পর ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর বৃহৎ অবদান স্পষ্ট হয়। সেখানে বঙ্গবন্ধু নিজেই উল্লেখ করেছেন ভাষা আন্দোলনের ঘটনাক্রম ও তাঁর ভূমিকা।

বঙ্গবন্ধু ভাষা আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন শুরু থেকে। ১৯৪৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান সংবিধান সভায় ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বাংলা ভাষাকেও রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানান। কিন্তু কেবল উর্দুকেই রাষ্ট্রভাষা করতে চায় মুসলিম লীগ। বঙ্গবন্ধু ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র ৯১ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, ‘আমরা দেখলাম, বিরাট ষড়যন্ত্র চলছে বাংলাকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্রভাষা উর্দু করার। পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ ও তমুদ্দুন মজলিস এর প্রতিবাদ করল এবং দাবি করল, বাংলা ও উর্দু দুই ভাষাকেই রাষ্ট্রভাষা করতে হবে। আমরা সভা করে প্রতিবাদ শুরু করলাম। এই সময় পূর্ব পাকিস্তান মুসলীম ছাত্রলীগ ও তমদ্দুন মজলিস যুক্তভাবে সর্বদলীয় সভা আহ্বান করে একটা ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করল।’

বিজ্ঞাপন

সংগ্রাম পরিষদ গঠন হলে শেখ মুজিবসহ নেতা-কর্মীরা কাজে নেমে পড়লেন। বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘জেলায় জেলায় আমরা বের হয়ে পড়লাম। আমি ফরিদপুর, যশোর হয়ে দৌলতপুর, খুলনা ও বরিশালে ছাত্রসভা করে ঐ তারিখের তিনদিন পূর্বে ঢাকায় ফিরে এলাম। দৌলতপুরে মুসলিম লীগ সমর্থক ছাত্ররা আমার সভায় গোলমাল করার চেষ্টা করলে খুব মারপিট হয়, কয়েকজন জখমও হয়। এরা সভা ভাঙতে পারে নাই, আমি শেষ পর্যন্ত বক্তৃতা করলাম।’

ভাষা আন্দোলনের সময় প্রতিদিনের বিষয় ছিল পুলিশের হামলা। আন্দোলন দানা বাঁধলে ১১ মার্চ শেখ মুজিবসহ ৭০-৭৫ জনকে জেলে পাঠানো হয়। কিন্তু দমানো গেল না আন্দোলন। ১৫ মার্চ তাদের মুক্তি দেওয়া হয়। ১৬ মার্চ সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় সাধারণ ছাত্রসভায় বঙ্গবন্ধু সভাপতিত্ব করেন। পরবর্তীতে অনেক প্রবীণ নেতা মন্ত্রিত্বের লোভে আন্দোলন ত্যাগ করলেও বঙ্গবন্ধুসহ অন্যরা আন্দোলন চালিয়ে গেলেন।

১৯৫১ সালে খাজা নাজিমুদ্দীন ঘোষণা দেন, ‘উর্দুই হবে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা’। বঙ্গবন্ধু তখন জেলে। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র ১৯৬ পৃষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘বারান্দায় বসে আলাপ হল এবং আমি বললাম, সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন করতে। আওয়ামী নেতাদেরও খরব দিয়েছি।...আবার ষড়যন্ত্র চলছে বাংলা ভাষার দাবিকে নস্যাৎ করার। এখন প্রতিবাদ না করলে কেন্দ্রীয় আইনসভায় মুসলিম লীগ উর্দুর পক্ষে প্রস্তাব পাস করে নেবে।...খবর পেয়েছি আমাকে শীঘ্রই আবার জেলে পাঠিয়ে দিবে, কারণ আমি নাকি হাসপাতালে বসে রাজনীতি করছি।’

বিজ্ঞাপন

১৯৭ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, ‘পরের দিন রাতে এক এক করে অনেকেই আসল। সেখানেই ঠিক হল আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা দিবস পালন করা হবে এবং সভা করে সংগ্রাম পরিষদ গঠন করতে হবে। ছাত্রলীগের পক্ষ থেকেই রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের কনভেনর করতে হবে। ফেব্রুয়ারি থেকেই জনমত সৃষ্টি করা শুরু হবে।’

সিদ্ধান্ত মোতাবেক রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্দোলনের দিন ধার্য করা হয়। বঙ্গবন্ধুর বিশ্বাস ছিল জনগণও এগিয়ে আসবে ভাষা আন্দোলনে। কারণ জনগণ জানে রাষ্ট্রভাষা না হলে জনগণকে দাসত্বের শেকল আবার পরতে হবে। বঙ্গবন্ধু জেলে থাকলেও আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত নেতাকর্মীদের সাথে তার যোগাযোগ হতো নিয়মিত। বঙ্গবন্ধুকে তারা খোঁজ-খবর দিতো, বঙ্গবন্ধু পরামর্শ দিতেন। এরমধ্যে তাঁকে ফরিদপুর জেলে পাঠানো হয়েছে ঢাকা থেকে। তিনি ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র ২০৩ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, ‘২১শে ফেব্রুয়ারি আমরা উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা নিয়ে দিন কাটালাম, রাতে সিপাহিরা ডিউটিতে এসে খবর দিল, ঢাকায় ভীষণ গোলমাল হয়েছে। কয়েকজন লোক গুলি খেয়ে মারা গেলে। রেডিওর খবর। ফরিদপুরে হরতাল হয়েছে, ছাত্র-ছাত্রীরা শোভাযাত্রা করে জেলগেটে এসেছিল। তারা বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছিল, ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’, ‘বাঙালিদের শোষণ করা চলবে না’, ‘শেখ মুজিবের মুক্তি চাই’, ‘রাজবন্দীদের মুক্তি চাই’, আরও অনেক স্লোগান।’

ভাষার মিছিলে গুলিতে শহিদ হওয়া নিয়ে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘মুসলিম লীগ সরকার কত বড় অপরিণামদর্শিতার কাজ করল। মাতৃভাষা আন্দোলনে পৃথিবীতে এই প্রথম বাঙালিরাই রক্ত দিল। দুনিয়ার কোথাও ভাষা আন্দোলন করার জন্য গুলি করে হত্যা করা হয় নাই। জনাব নূরুল আপনি বুঝতে পারলেন না, আমলাতন্ত্র তাঁকে কোথায় নিয়ে গেল।...আমি ভাবলাম, দেখব কি না জানি না, তবে রক্ত যখন আমাদের ছেলেরা দিয়েছে তখন বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা না করে আর উপায় নাই। মানুষের যখন পতন আসে তখন পদে পদে ভুল হতে থাকে।’

অনশনের কারণে বঙ্গবন্ধুকে জেল থেকে মুক্তি দিতে সরকার বাধ্য হয়। অসুস্থ বঙ্গবন্ধু গ্রামের বাড়িতে চলে যান। জেল থেকে বের হয়ে তিনি জেনেছেন, একুশে ফেব্রুয়ারি গুলি হওয়ার খবর গ্রামে-গঞ্জে পৌঁছে গেছে। ছোট ছোট হাটবাজারেও হরতাল হয়েছে। দেশের লোক আন্দোলনে অংশ নিয়েছে। এখন রাষ্ট্রভাষা বাংলা ছাড়া উপায় নেই। কেবল তা-ই নয়, যারা বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে বলেছে তারাও ভয় পেয়ে চুপ হয়ে গেছে। জনমতের বিরুদ্ধে যেতে শোষকরাও ভয় পায়। কিন্তু শোষকরা থামেনি। ভাষা আন্দোলন নিয়ে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী বিবৃতি দিলে মুসলিম লীগের পত্রিকায় বিকৃতি করে ছাপা হয়। বঙ্গবন্ধু ২১২ নম্বর পৃষ্ঠায় লিখেছেন, ‘এদিকে মুসলিম লীগের কাগজগুলি শহীদ সাহেবের বিবৃতি এমনভাবে বিকৃত করে ছাপিয়েছে যে মনে হয় তিনিও উর্দুই একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হোক এটাই চান। আমি সাধারণ সম্পাদক হয়েই একটা প্রেস কনফারেন্স করলাম। তাতে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করতে হবে, রাজবন্দীদের মুক্তি দিতে হবে এবং যাঁরা একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ হয়েছেন তাঁদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দান এবং যারা অন্যায়ভাবে জুলুম করেছে তাদের শাস্তির দাবি করলাম। সরকার যে বলেছেন, বিদেশী কোন রাষ্ট্রের উসকানিতে এই আন্দোলন হয়েছে, তার প্রমাণ চাইলাম।’ এতকিছুর পরেও পাকিস্তান সরকার ভাষা আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে চেয়েছিল। তখন সরকার দাবি করেছিল, কলকাতা থেকে হিন্দু ছাত্ররা ঢাকায় এসে পায়জামা পরে ভাষার জন্য আন্দোলন করেছে। বঙ্গবন্ধু একাধিক প্রেস কনফারেন্স করেছিলেন ভাষা আন্দোলন নিয়ে বিভ্রান্তি দূর করতে। অনেক আন্দোলন-সংগ্রাম শেষে শাসকরা বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা মর্যাদা দিতে বাধ্য হয়।

১৯৭১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় উপস্থিত জনতার উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু। তিনি বলেন, ‘আজ মহান একুশে ফেব্রুয়ারি। শহিদ দিবসে আপনারা এখানে এসেছেন, ১২টা ১ মিনিটের সময় আমি মাজারে গিয়েছি, সেখান থেকে সোজা এখানে চলে এসেছি। বাঙালিরা বহু রক্ত দিয়েছে। ১৯৫২ সালে যে রক্ত দেয়া শুরু হয়েছে সে রক্ত আজো শেষ হয় নাই, কবে হবে তা জানি না। আজ শহিদ দিবসে শপথ নিতে হবে, যে পর্যন্ত না ৭ কোটি মানুষ তার অধিকার আদায় করতে না পারবে সে পর্যন্ত বাংলার মা-বোনেরা বাংলার ভাইয়েরা আর শহিদ হবে না, গাজী হবে।’

বঙ্গবন্ধু জানতেন শিগগিরই জনগণকে লড়তে হবে। তাই মানুষকে বারবার বলেছেন প্রস্তুত থাকতে। কারণ তিনি ছিলেন দূরদর্শী নেতা। বঙ্গবন্ধু একাত্তরের শহিদ দিবসে বলেছেন, ‘আজকে শহিদ দিবসে আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ ঘরে ঘরে আপনারা দুর্গ গড়ে তোলেন। আমরা সকলের সহানুভূতি, ভালোবাসা চাই।’ এ বক্তব্যের মাসখানেক পরেই বাঙালিদের ওপর ইতিহাসের নিকৃষ্টতম হত্যাকাণ্ড চালায় পাকবাহিনী। বাঙালিরাও গড়ে তোলে ঘরে ঘরে দুর্গ। লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয় বাংলার স্বাধীনতা। ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা আন্দোলনে বাঙালিরা উজ্জীবিত হয়েছিল। ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। তাঁর নেতৃত্বেই এসেছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা।

2
$ 0.00
Avatar for Sadiasapa
4 years ago

Comments