অপরিচিতা২

0 12
Avatar for Sadia16
4 years ago

*** অপরিচিতা* পর্ব-২***

১ম পর্বের পর থেকে--

আমিঃ শুভ সকাল ম্যাডাম।

মরিয়মঃ( খানিকটা লজ্জা পেয়ে) শুভ সকাল।

আমিঃ রাতে ঘুমটা ভালো হয়নি আপনার তাইনা?

মরিয়মঃ ঘুম ভালোই হয়েছে, মেয়েকে পাশে নিয়ে ঘুমিয়েছি যে।

আমিঃ ওহ আর মেয়ের বাবা যে পাশে ঘুমিয়ে ছিলো তার জন্য কিছু হয়নি বুঝি( মজা করে বললাম)

মরিয়ামঃ( ইশরে কি লজ্জায় ফেলে দিলো আমাকে, কি দরকার ছিলো কথাটা বলার) সেতো হবেই,

আমিঃ তাই নাকি।

মরিয়মঃ হ্যা তাই।

আমিঃ আচ্ছা আপনার পরিবারে কে কে আছে। কোথায় থাকেন আপনি?

মরিয়মঃ আমার বাসা ঢাকায়। এখানে একটা বাসা ভারা নিয়ে থাকি। বাবা নেই। মা আর ছোট বোন কে নিয়ে থাকি।

আমিঃ ওহ ভালো।

মরিয়ম এর সাথে কথা বলতে বলতে রাসেল খাবার নিয়র হাজির হলো। তারপর আমি আর মরিয়ম খেয়ে নিলাম। অফিসে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে আমার-

আমিঃ তো আমি অফিসে চলে যাব এখন, আপনি মেয়ের দিকে খেয়াল রাখিয়েন। আমি আসার পর আপনি বাসায় যাবেন।

মরিয়মঃ ওকে,

এরপর আমি অফিসে চলে গেলাম রাসেল কে নিয়ে।

********************-*************

এদিকে মরিয়ম তার ডিউটির পাশাপাশি মেয়েটিকে দেখাশুনা করতেছে। বিকেলবেলা মেয়েটির পাশে বসে মরিয়ম ভাবতরছে- (আমার কেনো জানিনা রেদোয়ানের দিকে তাকালে সব গুলিয়ে যায়। মনের মধ্যে ভালোলাগা কাজ করে। তবে কি আমি ওকে ভালোবেসে ফেললাম। ভালোবাসার মানুষের কাছাকাছি থাকলেই তো এমন হয়।)

মরিয়ম এভাবে মেয়েটির পাশে হেলান দিয়ে ভাবতেছে।

আমি সন্ধাবেলা অফিস থেকে কোয়াটারে না গিয়ে হাসপাতালে গেলাম। কোয়াটারে বলে দিয়েছি কয়েকমাস কোয়াটারে ফিরব না। হাসপাতালে এসে কেবিনে গিয়ে দেখি মরিয়ম এক ধ্যানে কি যেনো ভাবতেছে। আমি যে কেবিনে এসেছি ওদিকে তার খেয়ালই নেই-

আমিঃ কি ব্যাপার মিস মরিয়ম কি এত ভাবছেন আপনি?

(হঠাৎ করে কারো গলার আওয়াজ শুনে মরিয়ম ধরফরিয়ে উঠে বসলো)

মরিয়মঃ কক-কই কিছু না তো। কখন আসলেন আপনি?

আমিঃ পাঁচ মিনিট হলো আসছি আমি। আপনি তো ধ্যানমগ্ন হয়ে ভাবতেছেন। তা মনের মানুষকে নিয়ে ভাবছিলেন বুঝি?

মরিয়মঃ ( এ লোকটা মনোবিজ্ঞানি নাকি , বলার আগেই সবকিছু বুঝে যায়) আরে নাহ এমনিতেই।

আমিঃ ওহ। তো বাসায় যাবেন না?

মরিয়মঃ হ্যা যাব একটুপরে।

আমিঃ ওকে।

** এভাবেই কেটে গেলো ১৫ টি দিন। ১০ দিন পর মেয়েটির নাম রাখা হয়েছে। আমি ও মরিয়ম মিলে নাম রেখেছি অপরিচিতা। অবশ্য আর একটা নামও দিয়েছি রাফিয়া জান্নাত। অপরিচিতার জন্মের পর থেকে ওর দেখাশুনা লালনপালন আমি আর মরিয়ম দুজনেই করতেছি। এই কয়েকদিনে দুজন দুজনার খুব ভালো বন্ধু হয়ে গেছি। তবে আমি তাকে বন্ধুর থেকেও বেশি কিছু মনে করি। খুব ভালোবেসে ফেলেছি ওকে। এটাও বুঝি যে মরিয়ম ও আমাকে ভালোবাসে। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা দুজন দুজনার হওয়ার।

** আজকে অফিস থেকে ফিরতে একটু দেরি হয়ে গেছে। সন্ধা সাতটার দিকে হাসপাতালে পৌছেঁ গেলাম। আকাশটাও আজ মেঘলা অনেক । মনে হচ্ছে যেকোন সময় বৃষ্টি আসতে পারে। কেবিনে গিয়ে দেখি অপরিচিতাকে ফিডারে করে দুধ খাওয়াচ্ছে মরিয়ম-

আমিঃ কখন ঘুম থেকে উঠছে আমার মেয়েটা।

মরিয়মঃ একটু আগেই। যাও ফ্রেশ হও তুমি।

( আপনি থেকে তুমিতে নেমে এসেছি, এখন শুধু আই লাভ ইউ বলা বাকি হিহি)

আমিঃ তুমি বাসায় যাবে না?

মরিয়মঃ যেতে তো ইচ্ছা হয়না মেয়েকে ছেড়ে।

আমিঃ( দুষ্টুমির ছলে) শুধু মেয়েকে ছেরে যেয়ে ইচ্ছা হয় না, নাকি মেয়ের বাবাকেও হুম?

মরিয়মঃ( তোমাকেও তো ছেড়ে যেতে ইচ্ছা করেনা। এই কয়েকদিনে অনেক ভালোবেসে ফেলেছি তোমাকে) যা ভাব তাই।

আমিঃ ওকে তুমি মেয়েকে সুয়ে দিয়ে রেডি হও, আকাশ খুব মেঘলা করেছে। যেকোন সময় বৃষ্টি আসতে পারে।

মরিয়মঃ ওকে।

আমিও ফ্রেশ হতে বাথরুমে গেলাম। ফ্রেস হয়ে এসে দেখি মরিয়ম রেডি।

আমিঃ সাবধানে তারাতারি যেও। বৃষ্টি আসতে পারে।

মরিয়মঃ কেউ যদি আমাকে বাসায় রেখে আসতো তাহলে খুব ভালো হতো।

( এ তো মেঘ না চাইতেই জল। আমিও তো চাই তোমার কাছাকাছি থাকতে, তোমাকে প্রতিদিন বাসায় রেখে আসতে)

আমিঃ ওকে চলো। তার আগে কাউকে অপরিচিতাকে দেখার জন্য বলে যেতে হবে।

মরিয়মঃ হুম আমি সোমাকে বলতেছি ও এসে থাকবে।

( সোমাও একজন নার্স)

আমিঃ ওকে। চলো।

সোমাকে অপরিচিতাকে দেখতে বলে আমি আর মরিয়ম বাহিরে আসলাম। আমি কার নিয়ে আসার জন্য পার্কিং এ গেলাম( এখন অফিসে যাওয়া আসার জন্য কারটি নিজেই ড্রাইভ করে নিয়ে আসি)

গাড়ি নিয়ে এসে মরিয়ম কে তুলে নিয়ে চললাম ওর বাসার দিকে-

আমিঃ একটা কথা বলব তোমাকে?

মরিয়মঃ হ্যা বলো কি বলবা?

আমিঃ অপরিচিতাকে আমার কোয়াটারে নিয়ে যেতে চাইতেছি,

মরিয়মঃ কেনো?

আমিঃ ওখানে থাকবে হাসপসতালে থাকার থেকে আমার কোয়াটারে থাকাই ভালো হবে।

মরিয়মঃ নাহ। আমি তো আর তোমাত কোয়াটারে যেতে পারব না। আর আমার মেয়েকে ছেরে আমিও থাকতে পারব না। ও শুধু তোমার একার মেয়ে না আমারো মেয়ে।

আমিঃ হুম জানি আমি। তুমিও যাবা আমার কোয়াটারে, আমি যখন বাসায় ফিরব তখন তুমি বাসায় আসবা নহয়।

মরিয়মঃ আমার চাকরি আছে । আমি তো হাসপাতাল ছেরে ওখানে গিয়ে থাকতে পারব না, এখানেই অনেক ভালো আছে,

আমিঃ ওকে।

কথা বলতে বলতে মরিয়মের বাসার কাছে চলে আসলাম-

আমিঃ এসে গেছি তোমার বাসায়।

মরিয়ম গাড়ি থেকে নামলো-

মরিয়মঃ চলো বাসায়, ডিনার করে যাবেখন।

আমিঃ আজ না। অন্যদিন করব। বাই শুভ রাত্রি।

মরিয়মঃ শুভ রাত্রি বাই।

মরিয়ম কে বাসায় নামিয়ে দিয়ে আসার সময় বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো। কিছুক্ষনের মধ্যে হাসপাতালে ফিরে আসলাম। গাড়ি পার্ক করে কেবিনে চলে গেলাম। কেবিনে ঢুকে দেখি সোমা অপরিচিতাকে কোলে নিয়ে বসে আছে-

আমিঃ সোমা অনেক কষ্ট দিলাম তোমাকে,

সোমাঃ আরে কি বলেন এগুলা। কই কষ্ট পেলাম।

( হাসপাতালে থাকতে থাকতে সবার সাথেই একটা ভালো সম্পর্ক হয়ে গেছে)

আমিঃ ওকে তুমি এখন যাও।

সোমা অপরিচিতাকে সুইয়ে দিয়ে চলে গেলো। আমিও ডিনার করে সুয়ে পরলাম।

*** এভাবেই চলতে লাগলো দিনগুলো। দেখতে দেখতে ৯ মাস অতিবাহিত হয়ে গেলো। অপরিচিতাও বড় হতে লাগলো। আমার আর মরিয়মের মাঝেও খুব ঘনিষ্ট সম্পর্ক হয়ে গেছে। কিন্তু কেউ কাউকে ভালোবাসার কথা বলরে পারছিনা।

*** এদিকে অপরিচিতার কথা বাসায় জানিয়েছি। বাসায় সবাই খুশি এভাবে একটা মেয়েকে নিজের মেয়ে হিসাবে মানুষ করতেছি বলে। মা আর ভাবি অপরিচিতাকে দেখতে চাইতেছে। আমি বলে দিয়েছি আর ছয়মাস পরে দেখা হবে। আমিও অপরিচিতার জন্মের পর থেকে ছুটি নিয়ে বাসায় যাইনি নয়মাস হয়ে গেলো।

** একদিন রুপনগর সিমান্তে ডিউটিরত সিপাহিদের নিয়ে আলোচনা করার সময় মরিয়ম ফোন দিলো আমাকে। আমি ফোন কেটে দিলাম। আলোচনা শেষে ফোন ব্যাক করলাম-

আমিঃ হ্যা বলো,

মরিয়মঃ কোথায় তুমি? কখন আসবা এখানে?

আমিঃ (মরিয়মের কথা শুনে মনে শুনে ওকে অনেক খুশি মনে হচ্ছে) এইতো ডিউটিতে।

মরিয়মঃ আসার সময় মিষ্টি নিয়ে আসবা।

আমিঃ কেনো? কি হবে মিস্টি দিয়ে? আর তোমাকে এত খুশি খুশি লাগছে কেনো?

মরিয়মঃ কথাটা শুনলে তুমিও খুশি হবা , কিন্তু এখন বলব না, আগে আসো তারপর বলব। আর অবশ্যই মিষ্টি নিয়ে আসবা।

আমিঃ ওকে।

ডিউটি শেষ করে ৫-৬ কেজি মিষ্টি নিয়ে সন্ধার পর হাসপাতালে ফিরলাম। কেবিনে ঢুকার সাথে সাথে মরিয়ম আমাকে দেখে ছুটে এসে জড়িয়ে ধরলো।

( আমি তো রিতিমত টাস্কি খেয়ে গেলাম। এই প্রথম ভালোবাসার মানুষটা জড়িয়ে ধরেছে, এক অন্যরকম ফিলিংস হচ্ছে,। )

আমিঃ এই যে ম্যাডাম এবার তো ছারুন, আর তোমার এত খুশির কারনটা কি হুম?

মরিয়মঃ( কিছুটা লজ্জা পেয়ে সরে গেলাম) আজ আমাদের মেয়ে কথা বলেছে, আমাকে মা বলেছে, আর তোমাকে বাবা। জানো। আজ আমি খুব খুশি।

আমি মরিয়মের কথা শুনে খুব খুশি হয়ে গেলাম। আমার মেয়ে আমাকে বাবা বলে ডেকেছে।

আমি মরিয়মের হাতে মিষ্টির কার্টুন ধরিয়ে দিয়ে অপরিচিতার কাছে গেলাম। গিয়ে মেয়েকে জরিয়ে ধরে চুমু দিতে লাগলাম, আদর করতে লাগলাম। তাকিয়ে দেখি মরিয়ম মুচকি মুচকি হাসতেছে আমার কান্ড দেখে।

*** অপরিচিতাকে সুইয়ে দিয়ে মরিয়মকে গিয়ে বললাম-

আমিঃ যাও সবাইকে ডেকে এনে মিষ্টি খাওয়াও।

মরিয়মঃ হ্যা এইজন্যই তো মিষ্টি আনতে বলেছিলাম।

মরিয়ম সবাইকে ডাকতে বের হওয়ার সময় হুট করে পা স্লিপ খেয়ে পরে যেতে লাগল। আমি ছুটে গিয়ে ওর বাম হাত ধরে টান দিয়ে আমার দিকে নিয়ে আসলাম। ও এসে সোজা আমার বুকে পরলো আর ঠোঠটা আমার ঠোঠে। হঠাৎ করে এভাবে লিপ কিস হয়ে যাবে ভাবতে পারিনি। দুজনে অবাক হয়ে দুজনের চোখের দিকে তাকিয়ে আছি। আমি তো ওর চোখের দিকে তাকিয়ে পুনরায় মায়ায় পরে গেলাম। এভাবে কিছুক্ষন থাকার পরে মরিয়ম একটা মুচকি হাসি দিয়ে কেবিন থেকে বেড়িয়ে গেলো। আমি তো ওর হাসি দেখে আবারো প্রেমে পরে গেলাম।

( তোমার এই হাসিটুকু দেখার জন্য সব করতে পারব)

কিছুক্ষন পর মরিয়ম সবাইকে নিয়ে এসে মিষ্টি খাওয়াতে লাগলো।

সবাই যখন শুনলো যে কিসের জন্য মিষ্টি খাওয়ানো হচ্ছে তখন সবাই খুব খুসি হয়ে গেলো।

সবাই চলে যাওয়ার পর-

আমিঃ রাত তো অনেক হলো বাসায় যাবে কখন?

মরিয়মঃ আজ বাসায় যাব না ফোন করে দিয়েছি। আজ আমার মেয়ে আর তার বাবার কাছে থাকব।

( কথাটা বলেই মরিয়ম লজ্জায় মুখটা নিচু করলো)

""

"""

"""""( চলবে)

( গল্পটি কেমন হচ্ছে অবশ্যই জানাবেন, সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ সবাইকে)

1
$ 0.00
Avatar for Sadia16
4 years ago

Comments