#চার বছরের প্রেমিক কে ছেড়ে বিয়ে করে অনেক সুখে আছি।
ভালোবাসার মানুষটি জীবন থেকে চলে গেলে বা ভালোবাসার মানুষটাকে হারিয়ে ফেললে নাকি জীবনে বাঁচা যায় না।
এই কথাটি আজকাল হাস্যকর মনে হয়।
আমি যখন ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে পড়ি তখন সিয়াম নামে একটা ছেলেকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবেসে ফেলি। সিয়াম ও আমাকে প্রচুর ভালোবাসতো। কখনো ভাবিনি আমি সিয়াম ব্যতিত অন্য কারো সঙ্গে আমার বিয়ে হবে। সিয়াম কে নিয়ে কলেজের ক্যাম্পাসে প্রতিটা দেয়ালে, বেঞ্চে ছোট ছোট করে দুজনের নাম লিখতাম।কলেজের আনাচে কানাচে মিন মিন করে লম্বা সময় ধরে গল্প করতাম।একসাথে ক্লাস করতাম তবে আলাদা বসে আর মাঝে মাঝে তার দিকে তাকিয়ে থাকতাম আর সে মুচকি হাসতো। কলেজ শেষে একই সাথে বাসায় ফিরতাম। রাত ভর চিঠি লিখতাম পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায়।
সম্পর্কটা অনেক গভীরতা থাকলে ও রাগ- অভিমান, ঝগড়া হতো রোজ। কখনো কোন কারনে আমাকে ছোয়ার চেষ্টা
করেনি, পাশা-পাশি বসলেও হাত ধরতে সাহস পাইনি।
তখন ২০০৪ সাল, বন্যার্ত পুরো এলাকা। সেদিন সিয়াম আর আমি শেষ নৌকা করে ঘুরতে যাই। বিকালে বাসায় ফিরে আসি। এসে দেখি বাসায় অনেক মেহমান। ছোট ফুপুসহ পরিবার, যেন বিয়ে বাড়ি। দাদা আমাকে ফ্রেশ হতে বললো।আমি চুপচাপ ফ্রেশ হয়ে দাদার রুমে চলে যাই।
দাদা কথায় কথায় আমাকে বার বার বলছে আমি বড় হয়ে গেছি। বিয়েটা দেওয়া দরকার।আমি সোজা বলে উঠি আমার দ্বারা এখন বিয়ে করা সম্ভব না। কিন্তু, দাদা আমাকে বলে দেয় ফুপু আমাদের বাসায় আসছে ৫ বছর পর। হয়তো আবার ইতালি থেকে কবে আসবেন কোন শিওরিটি নেই। ওনার বড় ছেলে রাহাতের সাথে আমার বিয়ে পাকা বাবা-মা পরিবার সবাই সম্মতি। আমি শুনে ভেঙ্গে পড়ি কারণ সিয়াম চাইলেও পারতো না আমাকে বিয়ে করতে।
তবুও আমি পরের দিন দেখা করি সিয়ামের সাথে। সিয়াম সব কিছু শুনে আমাকে বললো, "তুমি বাবার পছন্দেই বিয়েটা করে নাও, আমার নিজের পড়াশোনার খরচই আমার বাবা চালায়, তার মধ্যে তোমাকে আমি কীভাবে আমার জীবনে নিয়ে আসবো"। আমি ভীষন কষ্ট পাই সিয়ামের এই অজুহাত দেখে। কড়া নজরে চেয়ে থাকি, কি অদ্ভুত ভাবে সহজেই বলে চোখের আড়াল হয়ে গেলো। সে দিন খুব গালি দিয়েছিলাম, পেছন থেকে কাদঁতে কাদঁতে ফিরে এসেছিলাম ।
আমি বাসায় ফিরে চেষ্টা করি অনেক বাবা-মাকে ম্যানেজ করতে। দু'দিন না খেয়ে বিছানায় শুয়ে থাকি, হাত কেটে রক্তাক্ত করি। নিজেকে পৃথিবী থেকে সড়িয়ে দিতে যা যা করার সবই করি। কিন্তু পারিনি। আমাদের মধ্যে ভালোবাসা অনেক গভীর ছিলো। কিন্তু সেদিনের পর আমি আর কোন ভালোবাসা খুজে পেলাম নাহ। সেই দিন আমি ব্যর্থ হয়ে ছিলাম। মেনে নিতে বাধ্য হয়ে ছিলাম বাবার কথা নিরুপায় হয়ে। আমি বিয়ে করে ১৮ দিনের মধ্যেই ইতালি চলে আসি।
এখন আমি সংসার করছি। সব মেনে নিয়ে সংসার করছি স্বাভাবিক ভাবেই স্বামী - সন্তান নিয়ে ভালোই আছি। যার সাথে প্রতিটা প্রতিশ্রুতি ছিলো আজ পূর্ণ হচ্ছে ঠিকই তবে মানুষটা মাত্র ভিন্ন। মনের মধ্যে যার জন্য একটা জায়গা ছিলো আজ অন্য কেউ বসবাস করছে দিব্যি। হ্যা, মানুষ বদলায় ভালো মানুষের সংস্পর্শ পেয়েই বদলায়।নিশ্চিন্ত ঘুমের জন্য একটি বিশ্বস্ত কাধই যথেষ্ট।
এখন আর আমার স্বপ্নে সিয়াম আসে না, আমি আর চুপ করে চোখের পানি মুছি নাহ। আমি যাকে পেয়েছি উপর ওয়ালা আমার ভাগ্যে যাকে রেখেছে আমি তাকেই নিয়ে সুখে আছি।
যে কপালে সিয়ামের চুমু থাকার কথা ছিলো সেখানে আজ প্রতিনিয়ত চুমু দিয়ে যাচ্ছে আমার স্বামী। মনে রাখবেন যে যায় উপর ওয়ালার ইশারায় যায়। যা ঘটে ভালোর জন্যই ঘটে। যার ভাগ্য যেখানে আছে সেখানেই হবে কোন না কোন কারনে।
সুখ যদি উপর ওয়ালা আপনার জন্য বরাদ্দ করে রাখে কেউ না কেউ এসে পরিপূর্ণ করে দিবে। কেউ না কেউ হুট করে নতুন করে বাঁচতে শেখাবে হয়তো আজ বা নয়তো কাল।
Good