University in the Middle Ages-মধ্যযুগীয় বিশ্ববিদ্যালয়

0 18
Avatar for Rumelchow
3 years ago

University in the Middle Ages-মধ্যযুগীয় বিশ্ববিদ্যালয়

বিশ্ববিদ্যালয় (University) : আধুনিককালে সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে
বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে যে ধারণা প্রচলিত, সে ধারণা এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠা লগ্নে ছিল
। বিশ্ববিদ্যালয় বা University ল্যাটিন শব্দ 'Universitas' হতে উদ্ভূত। এর অর্থ,
কোন একটি সংগঠন বা সংস্থার কাঠামাে বিশেষকে বুঝায়।
একাদশ এবং দ্বাদশ শতাব্দীতে বিশ্ববিদ্যালয়কে ছাত্র-শিক্ষকের সম্মিলিত একটি
বিশেষ সমাজ বা সংস্থা বলা হতাে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলাে এক একটি পরিচালন সংস্থা যা
মঠস্কুল, ক্যাথড্রাল স্কুল এবং তুলনামূলকভাবে সমকক্ষ সাধারণ স্কুলের সংস্করণ
বিশেষ। পৃথকভাবে ছাত্ররাও নিজেদের মধ্যে 'Universitas' গঠন করতাে। একে
গিল্ড (Guild) বলা হতাে। এই Guild বা Universitasগুলাে ছাত্রদের নিজ দেশ ও
জাতির নামে পরিচিতি লাভ করতাে। যেমন- ফ্রান্সের ছাত্ররা Nation of France
নামে আখ্যায়িত হতাে। আবার এর ব্যতিক্রম ছিল; যেমন, Normandy, England,
Picardy নামে কয়েকটি Guild মধ্যযুগে বিদ্যমান ছিল।
পরবর্তীতে এ ধারণার পরিবর্তন ঘটে বিভিন্ন আদর্শিক ধ্যান-ধারণা বিকাশের
সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম, শিক্ষার ধরন ও মান-এর নানাবিধ পরিবর্তন ঘটে এবং
‘বিশ্ববিদ্যালয়’ শব্দটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়।
৭.২৩ বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্মেষ
Rise of University
পুরানাে ধর্মীয় কুসংস্কারগুলাে থেকে মুক্তি লাভের প্রয়াসে মধ্যযুগে ইউরােপীয়
মনােবিজ্ঞানভিত্তিক চিন্তা গড়ে তুলল। এছাড়া মধ্যযুগের দার্শনিক সম্প্রদায়ের
রীতিনীতিও তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থায় প্রভাবান্বিত হয়। অনেকের মতে তাদের
দর্শনতত্ত্বকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ।
আবার অনেকেই মনে করেন, মুসলমানদের সার্বিক সাফল্যের যুগে বিশেষ করে,
“স্পেনীয় মুসলিম উন্নতি” ইউরােপীয়দের উপর প্রভাব বিস্তার করে। স্পেনের খ্যাতি
সম্পন্ন শিক্ষাবিদগণকে সমকালের শিক্ষা ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে বিবেচনা করা
হতাে। ফলে তাদেরকে কেন্দ্র করেই কালক্রমে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠে।
মধ্যযুগে খ্রিস্টধর্মের প্রচার ও প্রসারে সন্ন্যাসী সম্প্রদায় বিশেষ ভূমিকা পালন
করেছিল। সন্ন্যাসবাদের (Monasticism) শিক্ষা পদ্ধতি সাধারণ লােকের উন্নতি
সাধনে বিশেষ সহায়তা করে। ফলে সন্ন্যাসবাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে
বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠে।
দ্বাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে ইতালিতে বলােগনা বিশ্ববিদ্যালয় (Bologna
University) প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ইউরােপের আদি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে খ্যাত।
আইন শাস্ত্র শিক্ষাদানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ছিল। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত
পণ্ডিত ইরনেরিয়াস (Irnerious) রােমান আইনের শিক্ষক ছিলেন। একই সময়ে
ধর্মযাজক গ্রাটিয়ান (Gratian) ধর্মীয় আইন-কানুন শিক্ষা দিতেন। ১১৫৮ খ্রিস্টাব্দে
প্রথম ফ্রেডারিখ কর্তৃক এই বিশ্ববিদ্যালয় সনদ লাভ করে।
মধ্যযুগে ইউরােপে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয় ছিল প্যারিসে। Notre Dame.
এর ক্যাথেড্রাল স্কুলকে কেন্দ্র করে প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠে। ১১৮০ খ্রিস্টাব্দে
সম্রাট সপ্তম লুই ও পােপ এর সনদ দান করেন। মন্ত্রিসভার সদস্য ও পাদ্রীসহ অসংখ্য
শিক্ষার্থী এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক রজেউলিন (Raseulin), অ্যাবেলার্ড প্রমুখ
পণ্ডিতবর্গের শিক্ষাদানের নৈপুণ্য এবং চিন্তার মৌলিকতার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল।
বিশ্ববিদ্যালয় গঠনে প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয় সর্বপ্রথম যে আইন-কানুন বা সংবিধান প্রণয়ন
করেছিল, পরবর্তী পর্যায়ে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলাে সে আইন-কানুন অনুসরণ
করেছিল। সেজন্য একে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের এবং মধ্যযুগের 'sinai' রূপে আখ্যায়িত
করা হয়।
প্রথমে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মতত্ত্ব এবং দর্শন শাস্ত্রে শিক্ষাদান করা হতাে। তেরাে
শতকে প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রধানত কলা, ধর্মতত্ত্ব ও ক্যানন আইন-এই তিনটি
বিভাগের শিক্ষাদান সীমাবদ্ধ ছিল।
দ্বাদশ শতাব্দীর শেষ দিকে ইংল্যান্ডে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় (Oxford
University) প্রতিষ্ঠিত হয়। ইতিহাসে ‘
দ্বিতীয় এরিস্টটল’ নামে খ্যাত মহামান্য সম্রাট
আলফ্রেড (Al-Fred)-এর রাজত্বকালে সম্ভবত এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
অল্পকালের মধ্যেই অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় সুনাম অর্জন করেছিল। ফলে এর ছাত্র
সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় আবাসিক
সমস্যার সৃষ্টি হয়। অনেকে মনে করেন এই আবাসিক সমস্যার কারণে পরবর্তীকালে
ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় (Cambridge University) গড়ে উঠে। এই সকল
farfansta qyte contra Palencia, Salamanca 478 Valladolid
পর্তুগালের Lisbon বিশ্ববিদ্যালয়-এর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য।
মধ্যযুগে শাসক অভিজাতগােষ্ঠী এবং যাজক সম্প্রদায়ের পৃষ্ঠপােষকতায়
বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বিপুল হারে বৃদ্ধি লাভ করে। যে সকল সনদপাপ্ত প্রতিষ্ঠান
বিশেষ সুযােগ-সুবিধা লাভ করতাে, তাদের সংখ্যা দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পেতে লাগল।
এমনিভাবে পঞ্চদশ শতাব্দীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা পঞ্চাশে উন্নীত হয়।
আবিষ্কার হওয়া ছিল উল্লেখযােগ্য” (মূল: অধ্যাপক জর্জ এইচ স্যাবাইন। অনুবাদ : ৬,
ersity
বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রধানত বক্তৃতা ও আলাপ আলােচনার মাধ্যমে শিক্ষা দেয়া হতাে।
অবশ্য চিকিৎসা শাস্ত্রে হাতে কলমে শিক্ষা দেয়ার প্রচলন ছিল। নির্ধারিত বিষয়ের পাঠ
শেষে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতাে। মৌখিক ও লিখিত উভয়ভাবেই পরীক্ষার প্রচলন ছিল।
সেই সময় শিক্ষার মাধ্যমে ছিল ল্যটিন ভাষা।
মধ্যযুগের বিশ্ববিদ্যালয়গুলাের পাঠ্যক্রম দুটি পর্যায়ে বিভক্ত ছিল; যথা : ট্রিভিয়াম
(Trivium) এবং কোয়াড্রিভিয়াম (Quadrivium)। প্রাথমিক পর্যায়ে চার অথবা পাঁচ
বছরে ছাত্রদের সাধারণত তিনটি বিষয়ে (Trivium) পাঠ গ্রহণ করতে হতাে; যথা :
ব্যাকরণ, সাহিত্যতত্ত্ব ও যুক্তিবিদ্যা । সমাপনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে Bachelor of
Arts ডিগ্রি দেয়া হতাে। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদেরকে তিন/চার বছর Master of Arts
ডিগ্রি লাভের জন্য অধ্যয়ন করতে হতাে। এ সময় তার পাঠ্য বিষয় ছিল চারটি-যথা :
গণিত, জ্যামিতি, জ্যোতির্বিদ্যা ও সংগীত। প্রত্যেক পরীক্ষার্থীকে তার নির্বাচিত বিষয়ের
উপর ভিত্তি করে শ্রেষ্ঠ কর্ম’ (Master piece) হিসেবে একটি গবেষণামূলক প্রবন্ধ
লিখতে হতাে। এই থিসিসের (Thesis) উপর ভিত্তি করে এম. এ (Master. Arts)
উপাধি দেয়া হতাে। কলা বিষয়ক উপাধি ছিল এম. এ। চিকিৎসা বিজ্ঞানে দেয়া হতাে
ডক্টর উপাধি। আবার আইন ও নীতি শাস্ত্রের উপরও ‘ডক্টর’ উপাধি দেয়া হতাে।
পরবর্তীকালে এই উপাধি “পি. এইড ডি'-তে রূপান্তরিত হয়। এই সমস্ত ডিগ্রি
প্রাথমিক স্তরের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না এবং নিয়মিত উচ্চ পর্যায়ে শিক্ষা গ্রহণের জন্য
এর প্রয়ােজন ছিল। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর বিশেষ যােগ্যতার উপর গুরুত্ব দেয়া হতাে।
পঁয়ত্রিশ বয়সের কম বয়সের শিক্ষার্থীকে এক্ষেত্রে যােগ্যতার আওতায় গণ্য করা হতাে
। শিক্ষকতার জন্য পি. এইচ. ডি ডিগ্রিকে উপযুক্ত বলে বিবেচিত হতাে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য তালিকায় দাঁতে, এরিস্টটল, টিসিয়ান প্রভৃতি পণ্ডিত
প্রবরদের গ্রন্থরাজি অন্তর্ভুক্ত ছিল। ইবনে সিনা, আল-রাজী এবং ইবনে রুশদ প্রমুখ
খ্যাতনামা মুসলিম জ্ঞানী ব্যক্তিদের গ্রন্থও পাঠ্য তালিকাভুক্ত ছিল। বিশেষ করে
চিকিৎসা সংক্রান্ত গ্রন্থের জন্য তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালসমূহ মুসলিম পণ্ডিত ব্যক্তিদের
এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক জর্জ এইচ স্যাবাইনের উক্তি প্রণিধানযােগ্য। তিনি বলেন,
এর উপাদানগুলাে মূলত প্রাচীন জ্ঞান-বিজ্ঞানের
গ্রন্থরাজির পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে বিকশিত হয়, বিশেষত এরিস্টটলের রচনারাজির
পুনরুদ্ধার ও তার সাথে যুক্ত আরবি ও ইহুদি পণ্ডিতদের ব্যাপক বিশ্লেষণের একাংশের
উপর নির্ভরশীল ছিল।
“এই সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়

হিমাংশু ঘােষ : ১৮৮৮/১৯৯৩ : ২২৯)।
গ্রিস ও রােমের যে প্রাচীন সংস্কৃতি খ্রিস্টধর্মের প্রভাবে বিলুপ্ত হয়েছিল; চর্তুদশ
শতকে ইতালিতে প্রাচীন গ্রিক ও ল্যাতিন শিল্প-সাহিত্য ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের যে
পুনরুভ্যুদয় ঘটেছিল-এই পুনরাবির্ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলাের ভূমিকা ছিল অপরিসীম।

1
$ 0.00
Avatar for Rumelchow
3 years ago

Comments