বাখরখানি যেভাবে তৈরি হয় : বাখরখানি তৈরিতে লাগে ময়দা, চিনি, সয়াবিন তেল ও লবণ। ময়দাকে খামি করে পিঁড়ির ওপর রেখে বেলুন দিয়ে বেলে এরপর সামান্য ময়দা ও তেল ছিটিয়ে দেয়া হয়। এভাবে পাতলা ও লম্বা হওয়ার পর সেটাকে গুটিয়ে ফেলা হয় এবং একটি বাখরখানির সমপরিমাণ খণ্ড খণ্ড করে আবার বেলুন দিয়ে বেলে ছোট রুটির মতো করা হয়। এরপর বাখরখানিরবাকেরখানি- বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের কাছে অতি পরিচিত একটি নাম। বিশেষ করে পুরানো ঢাকাবাসীর কাছে আজও এটি একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার। । পরিচিতি : বাকরখানি ময়দা দিয়ে তৈরি রুটি জাতীয় খাবার বিশেষ। ময়দার খামির থেকে রুটি বানিয়ে তা মচমচে বা খাস্তা করে ভেজে বাকরখানি তৈরি করা হয়। চারশ বছরের পুরনো ঢাকায় বাকরখানি খাবারের ইতিহাসও অনেক দীর্ঘ আর বৈচিত্রে ভরা। অনেক ধরনের বাকরখানি পুরনো ঢাকায় তৈরি হয় সেই বহুকাল আগে থেকে। সাধারণ বাকরখানি ছাড়াও চিনির তৈরি বাকরখানি, পনিরের বাকরখানি পাওয়া যায় । মাঝখানে ধারালো ছুরি দিয়ে কয়েকটি দাগ কেটে সামান্য তেল মাখিয়ে তন্দুরে দেয়া হয়। ১০/১৫ মিনিট উত্তপ্ত তন্দুরে থাকার পর প্রস্তুত হয় সুস্বাদু বাখরখানি। বাখরখানির মাঝখানে দাগ কাটার কারণ হচ্ছে বাখরখানির ভেতরের অংশ যেন কাঁচা না থাকে, সবটা যেন ভালোভাবে হয়। বাখরখানি আরো মুখরোচক করতে অনেকেই ময়দার সঙ্গে পনির, ছানা ও মাংসের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে থাকে। সাধারণত বাখরখানি খেতে হয় মাংস, মাংসের ঝোল, কাবাব, কোপ্তা, পনির ও চা বা দুধ দিয়ে থাকে । বাকরখানিকে আবার অনেকে শুখা (শুকনো) রুটিও বলে থাকে । বাখের খনি নামের পেছনে রয়েছে এক প্রেমের করুন ইতিহাস : । জনশ্রুতি অনুসারে, জমিদার আগা বাকের তথা আগা বাকির খাঁর নামানুসারে এই রুটির নামকরণ করা হয়েছে। নবাব মুর্শিদ কুলী খাঁর দত্তক ছেলে আগা বাকের। প্রখর মেধার অধিকারী আগা বাকের যুদ্ধবিদ্যাতেও পারদর্শী ছিলেন। রাজধানী মুর্শিদাবাদের নর্তকী খনি বেগম এবং আগা বাকের পরস্পরের প্রেমে পড়েন। কিন্ত উজিরপুত্র নগর কোতোয়াল জয়নাল খান ছিল পথের কাঁটা, সে খনি বেগমকে প্রেম নিবেদন করলে তিনি জয়নাল খানকে প্রত্যাখান করেন। প্রত্যাখ্যাত হয়ে জয়নাল খনি বেগমের ক্ষতির চেষ্টা করে এবং খবর পেয়ে বাকের সেখানে যান ও তলোয়ারবাজিতে জয়নালকে হারিয়ে দেন। অন্যদিকে জয়নালের দুই বন্ধু উজিরকে মিথ্যা খবর দেয় যে, বাকের জয়নালকে হত্যা করে লাশ গুম করেছে। উজির ছেলের হত্যার বিচার চায়। নবাব মুর্শিদ কুলী খাঁ পুত্র বাকেরকে বাঘের খাঁচায় নিক্ষেপ করার নির্দেশ দেন। অবশেষে বাকেরের হাতে মারা যায় বাঘ। ইতিমধ্যে জয়নালের মৃত্যুর মিথ্যা খবর ফাঁস হয়ে গেছে ও সে জোর করে খনি বেগমকে ধরে নিয়ে গেছে দক্ষিণ বঙ্গে। উদ্ধার করতে যান বাকের খনি বেগমকে। পিছু নেন উজির জাহান্দার খান। ছেলে জয়নাল খান বাকেরকে হত্যার চেষ্টা করলে উজির নিজের ছেলেকে হত্যা করেন তলোয়ারের আঘাতে। এই অবস্থাতে জয়নাল খনি বেগমকে তলোয়ারের আঘাতে হত্যা করে। বাকেরগঞ্জে সমাধিস্থ করা হয় খনি বেগমকে। আর বাকের সবকিছু ত্যাগ করে রয়ে গেলেন প্রিয়তমার সমাধির কাছে –দক্ষিণ বঙ্গে। বাকের খাঁর নামানুসারেই বাকলা-চন্দ্রদ্বীপ (পটুয়াখালি-বরিশাল) অঞ্চলের নাম হয় বাকেরগঞ্জ। ঐতিহ্যবাহী বাকরখানি রুটির নামের পেছনেও রয়েছে বাকের-খনির প্রেমের ইতিহাস। অবশ্য নামকরণের ব্যাপারে অন্য আরেকটি জনশ্রুতি রয়েছে। সে অনুযায়ী, মির্জা আগা বাকের ঢাকায় বাকরখানি রুটি প্রচলন করেন। তিনি বৃহত্তর বরিশালের জায়গীরদার ছিলেন। তার প্রেয়সী ছিল আরামবাগের নর্তকী খনি বেগম। তাদের মধ্যে গভীর প্রেম ছিল বলে কথিত আছে। পরবর্তীতে আগা বাকের ২য় মুর্শিদ কুলি খাঁর কন্যাকে বিয়ে করেন। কিন্তু খনি বেগমের স্মৃতি তিনি ভুলে যান নি। তার আবিস্কৃত এবং প্রিয় খাদ্য বিশেষভাবে তৈরি রুটির নাম তার প্রেমকাহিনীর উপর ভিত্তি করেই নামকরণ করা হয়েছিল বাকের-খনি রুটি। সময়ের পরিক্রমায় এই নাম কিছুটা পরিবর্তন হয়ে বাকরখানি নাম ধারণ করে। জনশ্রুতি মেনে নিলে ধরে নিতে হয়, বাকরখানির সৃষ্টি আঠারো শতকের মাঝামাঝি সময়ে। এখনো ও যদি কেউ বাকরখানি না খেয়ে থাকে আজকের পর খেয়ে নিবেন তাহলেই বুঝতে পারবেন এতদিন কি মিস করেছেন । কুড়মুড়ে বিস্কিট সাইজের রূটি । একটু জোরে চেপে ধরলেই ভেঙেচুড়ে পড়ে যায় । আর তরতাজা মুড়মুড়ে বাকরখানি মুখে দেয়ার পর মাখনের মতোই গলে মিলিয়ে যায় । সময়ের বিবর্তনে চায়নিজ, থাই, বার্গার, আমেরিকান বার্গার, ফাস্টফুড প্রভৃতি রসালো খাবারের আবির্ভাবে ভিড়ে হারিয়ে যেতে বসেছে আমাদের পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বাখরখানি। অনেক বাখর খানির দোকান ও বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু এখনো ঢাকাইয়াদের এটি প্রিয় খাবার ! ঘিয়ে ভাজা, পনির, মিষ্টি, বাদাম, কালোজিরা সহ আমাদের বাকেরখানি এখন পাওয়া যাচ্ছে ৮টি স্বাদের বাকেরখানির সমাহার, গতানুগতিকতার পাশাপাশি রয়াছে নিজেদের উদ্ভাবিত আরও ৪ টি পদ, যা আপনাকে চমৎকৃত করবে। ইয়া নাবাবি বাকেরখানির মৌলিক বৈশিষ্ট্য - * সম্পূর্ণ ডাল্ডা মুক্ত * সহজে ভেঙ্গে গুড়া গুড়া হয়ে যায় না * দাঁতে ও তালুতে আটকে থাকে না * স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে তৈরি নাস্তার জন্য একটি পুষ্টিকর খাবার ৮টি বাকেখানি - * নকশী বাকেরখানি * চকো বাকেরখানি * চীজই বাকেরখানি * সুইটেন বাকেরখানি * কিমা বাকেরখানি * কালোজিরা বাকেরখানি * বাদাম বাকেরখানি * ঘিয়ে ভাঁজা বাকেরখানি
0
13