তথ্য প্রযুক্তি যত বিকশিত হচ্ছে কাজের সুযোগও তত বাড়ছে। একটা সময় যেসব কাজ কম্পিউটার ছাড়া কল্পনাও করা যেত না, সেসব কাজই এখন অনায়াসে করা যাচ্ছে মোবাইল ফোনে।
আজ আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো এমনই একটি মোবাইল এপ্লিকেশন নিয়ে। যেগুলো দিয়ে আপনি করতে পারবেন গ্রাফিকসের কাজ, ব্যানার, পোস্টার, লোগো ডিজাইন সহ অসংখ্য অসংখ্য কাজ৷
আমি আজ যে এপ্লিকেশনটার কথা বলবো সেটি হচ্ছে ক্যানভা (Canva)।
ক্যানভা:
গ্রাফিকস ডিজাইন বিশেষ করে লোগো তৈরি, ইন্সটাগ্রামের জন্য ছবির লেআউট, ব্যানার, পোস্টার, ইউটিউব ভিডিও এর জন্য ইন্ট্রো, কারো জন্মদিন বা বিবাহের জন্য নিমন্ত্রণপত্র ইত্যাদি বানানোর জন্য এটি অনন্য ও অসাধারণ একটি এপ্লিকেশন।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হচ্ছে এ এপ্লিকেশনে এসব কাজ করার জন্য আপনাকে গ্রাফিকস ডিজাইন না জানলেও চলবে৷ কি শুনতে অদ্ভুত লাগছে! শুনতে অদ্ভুত লাগলেও এটা সত্যি। তবে হ্যা, আপনাকে এই এপ্লিকেশনটি ব্যবহারের জন্য হতে হবে সৃজনশীল।
ক্যানভা কিভাবে ব্যবহার করবেন?
১. আপনার কাজকে সহজ করার জন্য ক্যানভাতে রয়েছে ষাট হাজারের বেশি টেম্পলেট। এছাড়া নিজেই করতে পারবেন নিজের ডিজাইন। আর আগেই বলেছি যে এ এপ্লিকেশনে এসব কাজ করার জন্য আপনাকে গ্রাফিকস ডিজাইন না জানলেও চলবে৷
শুধু তাই নয়, কোনো ধরনের টিউটোরিয়াল বা ড্রয়িং জানারও প্রয়োজন নাই। শুধু নিজের ক্রিয়েটিভিটি কাজে লাগিয়ে নিজেই বানিয়ে ফেলুন আপনার মাস্টারপিস কাজটি৷
২. সঠিক জায়গায় সঠিক ছবি ব্যবহার করুন: লোগো, ব্যানার, পোস্টার, কার্ড যেকোনো কাজেই আপনাকে ব্যবহার করতে হতে পারে ছবি৷ এ ছবির জন্য ক্যানভা আপনাকে দিবে তাদের নিজেদের সরবরাহকৃত অসংখ্য ছবি, ইলাস্ট্রেশন। আবার চাইলে আপনি আপনার নিজের ছবি ব্যবহার করেও আপনার কাজটি করতে পারবেন৷
৩. ছবিতে লেখা যোগ ও সম্পাদনা: লোগো সহ অন্যান্য কাজে লেখা যুক্ত করার জন্য ক্যানভা আপনাকে দিচ্ছে ৫০০ এর বেশি ফন্ট। সাথে আছে লেখার সাইজ, কালার, স্পেসিং ও পজিশন ঠিক রাখার অনন্য সব সুযোগ।
৪. প্রফেশনালের মতোই সম্পাদনা করুন আপনার ছবি: ক্যানভাতে রয়েছে ছবি সম্পাদনার অনন্য সব অপশন। এসব অপশনের মধ্যে রয়েছে ফিল্টার, ব্রাইটনেস বাড়ানো-কমানোর সুযোগ, ছবিতে লোগো যুক্ত করা ইত্যাদি।
এসব অপশনের মাধ্যমে আপনি নিজেই আপনার ছবিটিকে একজন প্রফেশনালের মতো সম্পাদনা করতে পারবেন।
৫. নিজের কাজ অন্যকে জানান: ক্যানভাতে কাজ তো করলেন, তো সে কাজটা রেখে দিলেই হবে? মানুষকে তো জানাতে হবে? এজন্য ক্যানভাতে রয়েছে দুইটি অপশন।
প্রথমত, সরাসরি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন ইন্সটাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমেইল ইত্যাদিতে শেয়ার করতে পারবেন দ্বিতীয়ত নিজের গ্যালারিতেও সংরক্ষণ করে রাখতে পারবেন।
এখন আলোচনা করবো ক্যানভার কিছু ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য নিয়ে। যা ক্যানভাকে সমজাতীয় অন্যান্য এপ্লিকেশন থেকে ভিন্নতা দিয়েছে।
চলুন দেখে নেওয়া যাক:
ক্যানভা দিয়ে তৈরি করুন সোশ্যাল মিডিয়ার কন্টেন্ট:
ফেসবুকে নিজেকে একটু ভিন্নভাবে উপস্থাপন করতে চান? চান আপনার কাভার পিকটা সবার থেকে একটু আলাদা হোক, তাহলে ব্যবহার করুন ক্যানভা।
ক্যানভাতে রয়েছে ফেসবুক কাভার পিক, ফেসবুক পোস্ট তৈরি করার দারুণ দারুণ সব টেম্পলেট। অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন ইন্সটাগ্রাম, পিন্টারেস্ট, হোয়াটসঅ্যাপ, ইউটিউব, টুইটার, ব্লগ ইত্যাদির জন্যও রয়েছে দারুণ সব টেম্পলেট।
এছাড়া ছবি কোলাজ করার জন্যও রয়েছে বিভিন্ন স্টাইল। সাথে টেক্সট ব্যবহার করার অপশন তো আছেই।
ব্যবসায়িক কাজে ক্যানভা:
ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে একটি কথা বলা হয় যে, প্রচারেই প্রসার। আর প্রচারণার জন্য প্রয়োজন নিজের প্রতিষ্ঠানের একটি নাম, সে অনুযায়ী একটি সুন্দর লোগো , একটি এড্রেস কার্ড। সোশ্যাল মিডিয়ার বর্তমান যুগে এ উপাদানগুলো খুব জরুরি।
অনেকেই নিজে পারেন না বলে অতিরিক্ত খরচের ভয়ে প্রফেশনালদের কাছে যেতে চান না। কিন্তু আপনার যদি একটি স্মার্টফোন থাকে আর তাতে থাকে ক্যানভা। তবে নিজেই বিনে পয়সায় বানিয়ে ফেলুন নিজের লোগো, নিজের এড্রেস কার্ড।
আপনার যদি সৃজনশীলতা থাকে, উদ্যম থাকে তবে ক্যানভাকে ব্যবহার করতে পারেন আপনার আয়ের উৎস হিসেবে।
কিভাবে? বলছি, আপনি ক্যানভা দিয়ে লোগো বানিয়ে, এড্রেস কার্ড, ব্যানার, পোস্টার, ওয়েডিং কার্ড, বার্থডে কার্ড বানিয়ে আজই ব্যবসায় নেমে পড়ুন। এ ব্যবসায় কিন্তু অর্থের অভাব নেই। একেকটি ব্যানার, পোস্টার আপনি বিক্রয় করতে পারবেন ৫০০ থেকে ১০০০ টাকায়৷
তবে আর দেরি কেন? এখনই নামিয়ে ফেলুন ক্যানভা, আর শুরু করে দিন আপনার সৃজনশীলতার চর্চা।