পৃথিবী জুড়ে চলছে মহামারী। যে মহামারীতে পুরো পৃথিবী দাঁড়িয়ে গেছে এক কাতারে। প্রতিদিন শয়ে শয়ে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। মৃত্যুর মিছিলটাও ক্রমশ বাড়ছেই। ফলে পৃথিবীতে চলছে এক লড়াই,মহামারীর বিরুদ্ধে বেঁচে থাকার লড়াই।
তবে মানুষ বাঁচানোর লড়াইয়ে যারা লড়ছে,সে মানুষেরাই আবার লড়ছে মানুষের বিরুদ্ধে, মানুষকে হত্যায়।
সেটি কখনো চীন-ভারত সীমান্তে, কখনো আমেরিকায় জর্জ ফ্লয়েড হত্যা ও বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনে, হংকংয়ের বিক্ষোভে, আবার কখনো আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে যুদ্ধের দামামার শব্দে।
আমি এখানে তুলে ধরবো তেমনই করোনা মহামারীর মধ্যেও ঘটে যাওয়া কিছু সংঘাত,সংঘর্ষের খবর।
চীন-ভারত খণ্ড যুদ্ধ:
গত ৫ মে দ্বন্দ ও সংঘাতে জড়িয়ে এশিয়ার দুই পরাশক্তি চীন ও ভারত। এর মধ্যে চীনেই সর্বপ্রথম করোনা শনাক্ত হয়। পরবর্তীতে সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে। যদিও চীনের অবস্থা এখন স্থিতিশীল তবে করোনায় পর্যদুস্ত ভারত। প্রতিদিনই দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, সেই সাথে ঘটছে মৃত্যুও।।
আর এসবের মধ্যেই দেশ দুটি তাদের লাদাখ সীমান্তে মুখোমুখি দ্বন্দ- সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। যার চূড়ান্ত পরিণতি দেখা যায় জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে।
যদিও চীন এ ব্যাপারে কোন তথ্য প্রকাশ করেনি। কিন্তু ভারতীয় সূত্র অনুযায়ী , জুনের এই সংঘাতে ২০ জন ভারতীয় সেনা (১ জন অফিসার সহ) মারা যান।অন্যদিকে চীনের ৪৩ জন সেনা (১জন অফিসারের মৃত্যু সহ) হতাহত হয়।
বর্ণবাদ বিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল আমেরিকা:
চীন ভারত যখন সীমান্তে সংঘাতে জড়িয়ে,ঠিক তখন পৃথিবীর আরেক প্রান্তে যুক্তরাষ্ট্র উত্তাল জর্জ ফ্লয়েড হত্যা ও বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনে।
আমেরিকার মিনিয়াপোলিসে পুলিশের নির্মমতার শিকার হয়ে আফ্রিকান-আমেকিান জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনায় হঠাৎ উত্তাল হয়ে করোনায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু দেখা আমেরিকা।
মে মাসের ২৫ তারিখে জর্জ ফ্লয়েড মারা যান। ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর ২৬মে থেকে দেশটিতে শুরু হয় বিক্ষোভ।
মিনিয়াপোলিস অঙ্গরাজ্য থেকে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে
দেশটির করোনাভাইরাসের মূলকেন্দ্র নিউইয়র্কেও৷ আর এ শহরটিতে তখন চলছিলো লকডাউন উঠানোর মাত্র প্রথম ফেজ৷
কিন্তু শহরটি জুড়ে প্রতিবাদের আগুন এমনভাবে ছড়িয়ে পড়ে যে শহরটি যে করোনায় ফ্লয়েড হত্যার আগেও করোনাভাইরাসের আতঙ্কে গৃহবন্দী ছিল বুঝার উপায় ছিলো না।
পরবর্তীতে এ বিক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১০০টিরও বেশি শহরে।
হংকং আন্দোলন, আবারও চীন:
হংকংয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই চলছে গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন।মে মাসে হংকংয়ের আইনসভাকে এড়িয়ে চীনের পার্লামেন্ট পাশ করে জাতীয় নিরাপত্তা আইন।
যে আইনে আন্দোলন, প্রতিবাদ রুখতে আরও কড়া ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। আর এই আইন নিয়ে রীতিমতো চিন্তিত হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থীরা।
যার প্রভাব দেখা যায় জুনের চার তারিখে। এদিন জাতীয় নিরাপত্তা আইনের বিরুদ্ধে ও তিয়ানমেন স্কয়ারে গণহত্যার বর্ষপূর্তিতে রাস্তায় নামে হাজার হাজার মানুষ।
যদিও সেখানকার প্রশাসনের করোনার সংক্রমণের আশংকায় নির্দেশনা ছিলো, আটজনের বেশি লোক একসাথে জমায়েত হতে পারবেন না।
আবার এশিয়া, এবারও দুই বৈরি প্রতিবেশীর লড়াই:
চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস ইউরোপ, আমেরিকা ঘুরে আবার ফিরে এসেছে এশিয়াতেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আশংকাও ছিলো এমন, ইউরোপ আমেরিকার পর করোনা ভাইরাসের কেন্দ্র হবে এশিয়া।
কিন্তু তাতেও থামেনি এশিয়ার দেশগুলোর যুদ্ধের মনোভাব। ভারত চীনের পর নিজেদের সীমান্তে সংঘাতের শংকায় আছে দুই বৈরি প্রতিবেশী আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া।
ওয়ার্ল্ডওমিটারের সবশেষ তথ্যানুযায়ী, আর্মেনিয়ায় এখনো দেশটিতে প্রায় ১১ হাজার করোনা রোগী রয়েছে, অন্যদিকে আজারবাইজানে করোনা রোগী রয়েছে ৮ হাজারেরও বেশি।
এর মধ্যেই নাগোরনো কারাবাখ নামে বিতর্কিত একটি অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মুসলিম অধ্যুষিত আজারবাইজান এবং ক্রিস্টান অধ্যুষিত আর্মেনিয়া যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে।
এই বছরের ১০ই জুলাই থেকে আর্মেনিয়ার উত্তর-পশ্চিমে তাভুশ সীমান্তে দুই দেশের সৈন্যরা ট্যাংক এবং কামানের মত ভারী অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করছে।
আর এতে দুই দেশেরই সৈন্য মারা যাচ্ছে।
শুধু কি তাই,দুপক্ষের গোলাগুলিতে, বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতেও গোলাবর্ষণে সাধারণ মানুষও মারা যাচ্ছে।
পৃথিবী জুড়ে যখন চলছে মহামারী, ছোট্ট এক ভাইরাসে কাবু হয়ে প্রতিনিয়ত মানুষ হারাচ্ছে প্রাণ, জীবন হয়ে গেছে সংকটাপূর্ণ। তখনও সীমান্তে সীমান্তে সংঘাত, বর্ণ দোষে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু, অধিকারের দাবিতে রাস্তায় মানুষের বিক্ষোভ প্রশ্নবিদ্ধ করে আসলেই কি সবার উপরে মানুষ সত্য?