আমার প্রিয় শিক্ষক
প্রথমেই বলে নিতে হয় আমার এই ছোট্ট জীবনে যত জন শিক্ষক আমি পেয়েছি সবার প্রতি আমার অশেষ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা রয়েছে।তাদের মধ্যে থেকে নির্দিষ্ট করে কাউকে প্রিয় হিসেবে বাছাই করা আমার জন্য যেমন কষ্টকর তেমনি দুরূহ। তো পরীক্ষার প্রশ্নোত্তর স্বার্থে আমাকে করতে হচ্ছে।
প্রিয় শিক্ষক হওয়ার কারণ: এই প্রেক্ষিতেই বলছি এনায়েত স্যার ছিলেন আমার সেই প্রিয় শিক্ষক যাকেে আমি প্রথম শ্রেণী হতে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পেয়েছি। স্যারের যেে গুণটি আমাদের আকৃষ্ট করত তা হচ্ছে গভীর কৃতিত্ব বোধ। তিনি প্রথম হতেে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত সকল ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সন্তান তুল্য স্নেহ করতেন। কোন কারণে মন খারাপ থাকলে কিংবাাা শরীর খারাপ থাকলে তিনিি ক্লাসে এসেই তাা ধরে ফেলতেন। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব কথা শুনতেন। সমাধান তার হাতেে থাকলে তিনি তা ব্যবস্থা করতেন।
শিক্ষক হিসেবে তিনি ছিলেন অনন্য। তিনি ছিলেন গণিতের শিক্ষক। এমনিতেই বিষয়টি নিরস তারপর আবার কারো কারো অংকে মাথা থাকে না। আমার ছিল সেই অবস্থা। কিন্তু আশ্চর্য হতাম বাসায় শত চেষ্টা করেও যে অংকটা বুঝতে পারতাম না সে অঙ্কটা স্যারের হাতে পড়লে কোথাও আর দুর্বলতা থাকতো না। অথচ বাবাকে তো ভয়ে কোন অংকের কথা বলা হতো না। কারণ একবার বুঝিয়ে দেবার পর না বুঝলে বাবা রেগে অস্থির হয়ে যেতেন। এটা দিয়ে হবে না, দোকানদারি ও পারবে না ইত্যাদি শুরু করতেন । বলতে দ্বিধা নেই এনায়েত স্যার কে প্রথম জীবনে না পেলে আমার অংক বিচটা কোন দিনই কাটতো না। নিজের প্রশংসার কথা নিয উক্তিতে শুনতে কটু হলেও সত্য যে ,এখন যে কজন ছাত্র অংক ভালো জানে ও বোঝে আমি তাদের মধ্যে একজন।
তার বৈশিষ্ট্য: এনায়েত স্যারের আর একটি বিরল বৈশিষ্ট্য ছিল। তিনি দুর্বল ছাত্র কে বেশি ভালবাসতে। সাধারণত অন্যদের ক্ষেত্রে এ বিষয়টিতে ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যায়। দুর্বল ছাত্র-ছাত্রীদের স্যারদের অনীহা ও বিরক্তির কারণ হয়ে থাকে। কিন্তুুু এনায়েত স্যার তাদের বিষয়ে আরো সহানুভূতিশীল ছিলেন। পিতা-মাতাা যেমন রুগ্নন দুর্বল সন্তানদের প্রতি বেশি স্নেহ দেখায় তেমনি দুর্বল ছাত্রদের প্রতি এনায়েত স্যারের দৃষ্টি।
তার ব্যক্তিগত স্বভাব: এনায়েত স্যারের একটা ব্যক্তিগত স্বভাব আমার কাছেে খুবই মজার ছিল। তাহলো তার শুচিবাই। অকারণেই বারবার নাকে রুমাল ব্যবহার করতেন। বিশেষ করে ব্ল্যাকবোর্ডের লেখার সময় অন্য দিকে তাকিয়ে সরসর করে লিখে যেতেন। লেখা শেষ করে চক রেখে হাত মুছে নিয়ে তারপর বুঝাতেে শুরু করতেন। যেন পাথর কেটেে তৈরি করার মত। যে পথ তিনি নির্মাণ করেন তা সর্বসাধারণের জন্য। হঠাৎ কোথাও তার কোনো তো রুটি থাকত না।
একদিনের এক মজার ঘটনা মনে পড়ে। স্যার ক্লাসে এসে কিছু না বলে বসে পড়লেন। আমরা ভাবছি ব্যাপার কি। এমন সময় তিনি উঠে দাঁড়ালেন। সক হাতে নিয়ে ব্ল্যাকবোর্ড লিখলেন ঠান্ডা লেগে স্বর বসে গেছে। কথা বলতে পারছিনা কেউ কিছু জিজ্ঞেস করবে না। আমরা হাসাহাসি শুরু করলাম। স্যার রেগে গেলেন, কিন্তু কথা বলতে পারছেন না। আমাদের হাসি আরো দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেল। স্যার এবার কিছু না বলে নীরবে ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ পর বেত হাতে নিয়ে আবার ক্লাসে বসলেন। তখন সব ঠান্ডা। বেত ব্যবহার করতে হলো না।
প্রিয় শিক্ষক হিসেবে এনায়েত স্যারের স্মৃতি চিরদিন আমার চিন্তা ও বিশ্বাসকে শ্রদ্ধাবনত করে রাখবে।