মানুষের সৃষ্টি কিভাবে হল?

0 22
Avatar for Ratul007
4 years ago

মানুষের সৃষ্টি কিভাবে হল? এক এক ধর্মে এক এক ব্যাখ্যা আছে। ইসলাম কি বলে?

তবে একটু আগে থেকে দেখা যাক।

এক সময় এই পৃথিবীতে রাজত্ব করতো জীন সম্প্রদায়। তারা মানুষের মতই দেশ, রাজ্য, রাজা, প্রজাতে বসবাস করতো। কিন্তু তারাও মানুষের মতই এবং তার থেকেও খারাপ ছিল। যুদ্ধ, হানাহানি ইত্যাদি করতো। তাদের মধ্যেও নবী, রাসুল পাঠানো হত, তাদের লাইনে আনার জন্য। কিন্তু তারা তাদের ধরে ধরে হত্যা করতো।

তাদের এই অত্যাচার শেষ করার জন্য আল্লাহ্‌ তাদের একদম ধ্বংস করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। ফেরেশতা বাহিনী পাঠালেন তাদের ধ্বংস করতে। তবে যারা ভালো জীন ছিল, তাদের রেখে দেয়া হল। আমি এটা ঠিক জানি না, যে কত জনকে রেখে দেয়া হয়েছে। তবে আমরা অন্তত একজন জীনের কথা জানি, সে হল ইবলিস। কোথায় যেন শুনেছিলাম যে ইবলিস আসলে শিশু অবস্থায় ছিল, তাই তাকে হত্যা করা হয়নি। তবে বিষয়টি নিশ্চিত নই।

যাই হোক, এরপর ইবলিসকে ফেরেশতারা আল্লাহ্‌র আদেশে জান্নাতে নিয়ে গেল। সেখানে সে আল্লাহ্‌র একনিষ্ঠ দাসে পরিণত হল। খুব পরহেজগারি করতে লাগলো। এমন কোন জায়গা বাদ রাখলো না যেখানে সে আল্লাহ্‌র উদ্দেশ্যে সিজদা করতো। তার আমল দ্বারা সে ফেরেশতাদের নেতাতে পরিণত হল ও তাদের সাথেই চলাফেরা করতে লাগলো। কিন্তু সে ফেরেশতা ছিল না, ছিল জীন।

জীন আর ফেরেশতার মধ্যে পার্থক্য হল, জীনের মানুষের মত স্বাধীন ইচ্ছা শক্তি আছে। কিন্তু ফেরেশতারা আল্লাহ্‌র কথার কোন বরখেলাফ করতে পারে না।

তো ইবলিস জীন অনেক পরহেজগার দেখা গেলেও, তার মনের মধ্যে রয়ে গেছে গলদ। সে অহংকারি ছিল। কিন্তু সেটা তো আর প্রকাশ পাচ্ছে না। কারণ সে তার আশেপাশে কেবল ফেরেশতা আর আল্লাহ্‌কে দেখছে। কিন্তু আল্লাহ্‌ জানেন যে তার মধ্যে গলদ আছে। বাইরে সে অনেক পরহেজগার হলেও ভিতরে তার অন্তরে খারাপ লুকিয়ে আছে। কিন্তু সেটা সে বের না করলে তো আর তাকে এর জন্য দায় দেয়া যায় না।

কিন্তু আল্লাহ্‌ তো জীন জাতিকে ইচ্ছা দিয়েছেন, কাজেই তাদের কর্ম দ্বারা তাদের বিচার করতে হলে তাদের পরীক্ষা নিতে হবে। অন্য জীনরা তো খারাপ কাজ করে তাদের পরীক্ষা দিয়ে ফেলেছে। কিন্তু ইবলিসের তো কোন পরীক্ষা নেয়া হয়নি। কারণ জান্নাতে তো আর কোন আপদ বিপদ নেই। যা চায় সব পায়।

তো আল্লাহ্‌ তার জন্য পরীক্ষার বেবস্থা করলেন। তিনি মানুষ সৃষ্টির ঘোষণা দিলেন। এর আগে আল্লাহ্‌ বলেছিলেন যে তিনি পৃথিবীতে আবার খলিফা (ধরে নেই রাজা) নিয়োগ দিবেন। ইবলিস শুনে মনে মনে খুশি। সে ধরে নিল সেই খলিফা হতে যাচ্ছে। কিন্তু মানুষ তৈরির পর তার মনে খটকা লাগা শুরু হল। সে পরে গেল এক টেনশনে।

মানুষকে তৈরি করার পর যখন আল্লাহ্‌ ঘোষণা দিলেন যে সবাইকে (ফেরেশতা ও ইবলিস) মানুষের সামনে সিজদা করতে, তখন ব্যাপার নিশ্চিত হয়ে গেল যে কে খলিফা হতে যাচ্ছে। ইবলিসের এটা মোটেও পছন্দ হল না।

আল্লাহ্‌র একনিষ্ঠ দাস সর্বদা আল্লাহ্‌র সমস্ত সিদ্ধান্ত একবাক্যে মেনে নিতে তৈরি থাকবে। কিন্তু সে সেটা না করে ঘার তেরামি শুরু করল। যুক্তি দিতে থাকল যে মানুষ তার থেকে নিম্ন মানের, তাকে সম্মান দেখানো সে যুক্তিযুক্ত মনে করে না। সিজদা করলো না তো করলোই না। যদিও সে সামনা সামনি আল্লাহ্‌কে দেখছে। বুঝতে পারছে আল্লাহ্‌র সামনে এমন বেয়াদবির শাস্তি কি হতে পারে, তারপরও সে তার জায়গায় অটল।

এরপর যা হওয়ার তাই হল, আল্লাহ্‌ তাকে শাস্তির ঘোষণা শুনিয়ে দিলেন। তাতেও তার কিছু যায় আসে না, তার অহংকার এর থেকে বড় তার কাছে আর কিছু না। সোজা কথা আল্লাহ্‌ যে পরীক্ষা নিলেন তাতে সে ফেল করলো। বুঝে শুনেই ফেল করলো। তার পক্ষে পাস করাই সম্ভব ছিল না।

এখান থেকে শিক্ষণীয় যে আমরা অনেক সময় অনেক আমলে মগ্ন থাকি ও মনে করি আমি তো আল্লাহর অনেক বড় বান্দা, কিন্তু যদি আমাদের অন্তরে ব্যাধি থাকে তাহলে আল্লাহ্‌ এমন কোন পরীক্ষা আমাদের সামনে পেশ করতে পারেন যা আমাদের ভিতরের খবর বাইরে ফাঁস করে দিবে। পরীক্ষা খুব নিখুঁত হবে।

তো মানব জাতি ইবলিসের জন্য একটি পরীক্ষাও ছিল বটে। তো এরপর ইবলিস শপথ নিল যে আমি তো ধ্বংস হয়েছি, তো যাদের জন্য হলাম তাদের আমি দেখে নিব। অর্থাৎ মানুষকে সাথে করে টেনে জাহান্নামে নিয়ে যাবো।

প্রথম মানব আদম (আঃ) এবং হাওয়া (আঃ) তখন জান্নাতে বসবাস করছেন। আল্লাহ্‌ তাদের একটি গাছের ফল খেতে মানা করলেন। কিন্তু ইবলিস চালাকি করে ভুল বুঝিয়ে তাদের সেই ফল খাওয়াল। ভুল বুঝতে পেরে আদম (আঃ) ও হওয়া (আঃ) আল্লাহ্‌র কাছে ক্ষমা চাইলেন। এখানে তারা ইবলিসের মত একগুয়ে ছিলেন না। তারা অহংকারী ছিলেন না বরং নম্র ছিলেন, ক্ষমা প্রার্থী ছিলেন। তাই আল্লাহ্‌ তাদের মাফ করে দিলেন। তবে বললেন জান্নাতে এখন থাকা যাবে না, পৃথিবীতে নেমে যেতে হবে।

অনেকেই মনে করেন, তাহলে আল্লাহ্‌ আর তাদের মাফ করলেন কোথায়? দেখুন, আল্লাহ্‌ তো আগেই নির্ধারণ করেছেন যে মানুষকে তিনি খলিফা বানাবেন পৃথিবীতে। তাহলে তাদের পৃথিবীতে পাঠাতে হবে এটা তো নির্ধারিত ছিল। কেবল সেটা কখন হবে, সেটার জন্য আল্লাহ্‌ তাদেরও একটি পরীক্ষা দিলেন যে একটি গাছের ফল খেতে মানা করলেন। সেটা যে তারা ভুল করবে, আল্লাহ্‌ সেটাও জানেন। এবং এর মাধ্যমেই নির্ধারিত হল যে কখন তারা পৃথিবীতে আসবেন।

শয়তানকেও আল্লাহ্‌ মানুষের সাথে পৃথিবীতে পাঠালেন। মানুষের জন্য সে পরীক্ষা স্বরূপ। অর্থাৎ আল্লাহ্‌ যাদেরই ইচ্ছা শক্তি দিয়েছেন, তাদেরই তিনি পরীক্ষা নেন যে সেই ইচ্ছা শক্তি ও যুক্তি দিয়ে তারা কি নির্ধারণ করে। সেই অনুযায়ী তিনি তার সৃষ্টিকে পুরস্কার বা শাস্তি দিবেন।

মানুষ ছিল ইবলিসের জন্য পরীক্ষা, ইবলিস হল মানুষের জন্য পরীক্ষা। সেই থেকে ইবলিস মানুষের পিছনে লেগে আছে। ইবলিসেরও বংশধর আছে। তারা অনেকেই ইবলিসের মত খারাপ। আবার অনেকে ভালো।

জীনদের মধ্যে যারা ভালো, আর মানুষদের মধ্যে যারা ভালো তারা জান্নাতে যাবে আর বাকিরা জাহান্নামে যাবে।

এই ছিল বেসিক কাহিনী। যারা ইসলাম সম্পর্কে ভালো মত জানে না, তাদের শুনে কল্পকাহিনী মনে হতে পারে। কিন্তু কোন কারণ নেই এমন মনে করার। অন্তত নিজে নিজে মহাবিশ্ব তৈরি হয়ে, এরপর এমিবা তৈরি হয়ে, এরপর অন্য জীব তৈরি হয়ে মানুষ তৈরি হওয়ার কল্প কাহিনীর থেকে কম কাল্পনিক মনে হওয়া উচিৎ।

কাজেই উপরের ঘটনা থেকে বুঝা যায় যে মানুষ তৈরির অনেক আগে থেকেই পৃথিবী ছিল। এবং এখানে অন্যরা বসবাস করতো। কাজেই পৃথিবী আল্লাহ্‌ ঠিক কবে তৈরি করেছেন, এখানে আরও কাদের তিনি বসবাস করতে পাঠিয়েছেন, সেটা আমাদের জানা নেই।

আরও বুঝা যাচ্ছে, মানুষকে অনেকটা এলিয়েনের মত পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে। স্পেস শিপ জাতীয় কিছু বা টেলিপোর্ট জাতীয় কিছু দিয়েও পাঠানো হতে পারে, আল্লাহ্‌ ভালো জানেন।

কাজেই মাটি খুরে আমরা যে সব প্রত্নতত্ত্ব বের করে দাবী করছি যে মানুষ এভাবে এভাবে তৈরি হয়েছে, সেখানে গলদ থাকার কারণ এর থেকে বুঝা যাওয়া উচিৎ। আল্লাহ্‌ কত কিছু সৃষ্টি করেছেন, কবে কোনটি করেছেন। কোনটি সমূলে ধ্বংস করেছেন, আর কোনটির কিছু আলামত রেখে দিয়েছেন, তার কিছুই আমরা জানি না।

কিন্তু এটা মোটামুটি নিশ্চিত যে আমরা জানি না মহাবিশ্ব কেন তৈরি হল, বা কিভাবে তৈরি হল। কাজেই এই বিষয়ে গাঁজাখুরি থিউরির উপর আত্মবিশ্বাস স্থাপনের আগে ইসলাম কি বলে সেটা ভালো মত স্টাডি করা দরকার।

9
$ 0.00
Avatar for Ratul007
4 years ago

Comments