বই পড়া
বই পড়া মানুষের প্রিয় শখ, বই মানুষের চিরন্তন বিশ্বস্ত সঙ্গীও বটে। বই মানুষের জীবনকে করে তোলে আধুনিক ও বিজ্ঞানমনস্ক। মানুষের অভ্যাসগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উত্কৃষ্ট হচ্ছে বই পড়া। জ্ঞানীর আজন্ম জ্ঞান সাধনার ফসল হচ্ছে বই। নানাকালের মানুষ তাদের বিচিত্র অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানোপলব্ধি অনাগতকালের মানুষের আনন্দ জোগানোর জন্য লিপিবদ্ধ করে যান বইয়ে। বই পড়ার মাধ্যমে আমরা মুহূর্তেই পরিচিত হতে পারি সেই জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার সঙ্গে। তৈরি করে নিতে পারি আমাদের ভবিষ্যত্ চলার পথ। বই পড়ার মাধ্যমে একটি জাতির মনন নির্ভর করে তার আগামীর পথ নির্ধারণের জন্য। একটি ভালো বই মানুষের নিঃসঙ্গতা ঘোচানোর এবং নির্মল আনন্দলাভের এবং আত্মার পরিশুদ্ধির একমাত্র উপায়। শুধু নিঃসঙ্গতা দূরীকরণ নয়, বই পড়ার মাধ্যমেই বিকাশ ঘটে সভ্যতা ও সংস্কৃতির। উন্নত জাতি গঠনে বই পড়ার বিকল্প নেই। বই মানুষকে সৃষ্টিশীল ও আনন্দপ্রিয় করে তোলে। পৃথিবীর মহান মানুষের জীবনালেখ্য দেখলে জানা যাবে, তঁাদের সাধনায় বই জিনিসটি ছিল সবার আগে।
নবান্ন উত্সব
বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী উত্সবের মধ্যে উলে্লখযোগ্য উত্সব হলো নবান্ন উত্সব। বাংলার কৃষিজীবী সমাজের শস্য উত্পাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে যেসব আচার-অনুষ্ঠান ও উত্সব পালিত হয়, নবান্ন উত্সব তারই একটি অংশ। নবান্ন' শব্দের অর্থ নতুন অন্ন'। নবান্ন উত্সব হলো নতুন আমন ধান কাটার পর সেই ধান থেকে প্রস্তুত চালের প্রথম রান্না উপলক্ষে আয়োজিত উত্সব। সাধারণত অগ্রহায়ণ মাসে আমন ধান পাকার পর এই উত্সব অনুষ্ঠিত হয়। কোথাও কোথাও মাঘ মাসেও নবান্ন উদ&যাপনের প্রথা রয়েছে। নতুন চালের তৈরি খাদ্যসামগ্রী কাককে নিবেদন করা নবান্নের একটি বিশেষ লেৌকিক প্রথা। লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, কাকের মাধ্যমে ওই খাদ্য মৃতের আত্মার কাছে পঁেৌছে যায়। এই নৈবেদ্যকে বলে কাকবলি'। অতীতে পেৌষ সংক্রানি্তর দিনও গৃহদেবতাকে নবান্ন নিবেদন করার প্রথা ছিল। একসময় বাংলার প্রতি ঘরে ঘরে যেন পিঠা-পায়েসের ধুম পড়ে যেতো। আমন্ত্রণ জানানো হতো আত্মীয়-পরিজনকে। দেশের নানা জায়গায় আয়োজন করা হতো পিঠামেলার। নবান্ন উত্সব আমাদের জাতীয় চেতনার ফসল। এ উত্সব আজকাল আর শুধুই গ্রামে পড়ে নেই; শহরের নামী-দামি জীবনেও এর প্রভাব রয়েছে। নবান্ন উত্সব বাংলার মানুষের কাছে এক অতি আপন সংস্কৃতি, যা বাঙালি মননের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।
একটি লোকজ মেলা
বাংলাদেশ গ্রামপ্রধান দেশ। গ্রামবাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অন্যতম প্রধান উপকরণ লোকজ মেলা। জাতি-ধর্ম-বর্ণ একাকার হয়ে মুখরিত হয় মেলাপ্রাঙ্গণ। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে লোকজ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মেলার প্রধান আকর্ষণ লোকজ বিভিন্ন উপাদানের প্রাচুর্য। এখানে দেশীয় খাবারের মধ্যে রয়েছে মুড়ি, মুড়কি, খই, নানা রকমের গুড়, বাতাসা, ছানা, সন্দেশ, মণ্ডা, মিঠাই, দই প্রভৃতি। কুমারদের হাতে বানানো ছোট ছোট নানা ধরনের তৈজসপত্রের মধ্যে উলে্লখযোগ্য নানা রকমের মাটির তৈরি পশুপাখি, মাটির ব্যাংক, লবণের পাত্র, মটকা, নানা রকমের মাটির পুতুল, খেলনাসামগ্রী। এ ছাড়া কামারের তৈরি দা, ছুরি, বঁটি, পানের বাটা থেকে শুরু করে ব্যবহারিক জীবনে প্রয়োজন এমন অনেক কিছু। হস্তজাত বস্ত্রশিল্পের দোকানে পাওয়া যায় সুতি কাপড়, রেশম কাপড়, কাতান, জামদানিসহ নানা রকম শাড়ি, লুঙ্গি, থেকে শুরু করে হাল আমলের থ্রি-পিস, ছেলেদের পাঞ্জাবি সবই। তবে এই দোকানগুলোর সবচেয়ে আকর্ষণীয় জিনিস হলো নকশিকঁাথা। আসবাবপত্রের দোকানে পাওয়া যাবে গতানুগতিক ধারার বাইরের নানা রকম ডিজাইনের বা খোদাই করা কাঠের আসবাব। যেমন দরজা, খাট প্রভৃতি। এসব দোকানে নানা রকম অলংকৃত বাদ্যযন্ত্রও পাওয়া যায়। যেমন সারিন্দা, ঢোল প্রভৃতি। মেলায় পুতুল নাচের ব্যবস্থা থাকে। একপাশে বিশাল মঞ্চে বিভিন্ন ধরনের লোকসংগীত যেমন জারি, সারি, ভাটিয়ালি, ভাওয়ালি, মুর্শিদি, লোকনৃত্য, লোকনাট্য, যাত্রাপালা পরিবেশিত হয়। লোকজ মেলা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মেলায় আধুনিক পণ্যের পাশাপাশি গুরুত্ব পায় লোকজ সংস্কৃতি, লোকজ গান। এ মেলা আমাদের প্রাণের মেলা। লোকজ মেলা আমাদের জাতীয় জীবনেরই একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ
I love reading book