মাঝির সংসার
________________
ও মাঝি ভাই কই যাও- কে ডাকছো বাহে,
শাকের আঁটি মাথায় নিয়ে- কে আমারে ডাহে?
আমায় নিয়ে যাবে নাকি- তোমার ভাঙ্গা না'য়
পাতলা মাথায় মাঝি এ'বার- এ'পারেতে চায়।
ও মাঝি ভাই বলতো দেখি- তোমার ক'খান পোনা
দু'খান মেয়ে এ'খান ছেলে- সে তো আমার সোনা।
দুষ্ট বেশি মুষ্টি ও তার শক্ত ও কম না-
এই বয়সে বইঠা ধরে- কামায় ক'য়েক আনা।
ও মাঝি ভাই বলছোটা কি- বিদ্যান কি বানাবা না?
কি যে বলেন বাহে-
ক্ষিদের জ্বালায় সোনার পেটে কোলা'ব্যাঙে ডাহে।
মেয়ে আমার বড় হইছে তেরো বছর পার,
মেলা টাকা পণ দেওয়া তো আমার কাছে ভার।
ও মাঝি ভাই বয়স অল্প বিয়ে দিবে কেন?
কি যে বলেন বাহে-
গরীব বলে সব বয়সে আড় চোঁখে যে চাহে।
মেয়ে তোমার বড় হইছে- বিয়ে দাও না কেন
গ্রামের ছেলেরা নষ্ট হচ্ছে- তুমি কি তা জানো?
নীচু আমি ছোট আমি- কাজের বেলা ও তাই,
সুখের ছোঁয়া এই ভুবনে কে'বা নাহি চায়।
কষ্টে মাঝি কেঁদে ফেলে শান্ত নদীর জল-
বইঠা খানিক পরতে থাকে ছলাৎ ছলাৎ ছল।
বৌ টা আমার রুগ্ন খুবই টিবি ধরা পরে,
মাঝে মাঝে মুখ দিয়ে তার- রক্ত খানিক ঝরে।
ডাক্তার মশা'ই বড়'ই কসা'ই- টাকা নিয়ে আসো;
নও তো তোমার বউকে মাঝি- ওঝা দিয়ে ঝাড়।
মা মারা যায় ছোট কালে বা-জান করে বিয়ে-
জীবন যুদ্ধে নামছি বাহে দুঃখ-কষ্ট নিয়ে।
দুঃখ-কষ্টে বোনটা বাহে ও পারে দেয় পারি,
ভাইটা আমার ছোট ছিল- বুঝতো না সব ভারি।
একদিন এক কুকুর বাহে- কামড় মারে পা'য়
সেই থেকে যে ভাইটা আমার- ঘেউ ঘেউ করে যায়।
জীবন প্রদীপ তাঁর যে বাহে- নিভছে তারাতাড়ি।
সেই শোকেতে বুকটা আমার- আজ ও থাকে ভারি।
বেঁচে আছি সুখে আছি আমার সংসার নিয়ে-
অনেক কাল তো পার করেছি- ভাঙ্গা নৌকা দিয়ে।
লেখক খানিক স্তব্ধ হয়ে আকাশ পানে চায়-
কখন জানি জল এসে যায়; জোড়া চোঁখের কোনায়।
ও মাঝি ভাই কষ্ট অতি জীবন যুদ্ধে হা'য়,
ধন্য আমি পার হয়েছি তোমার ভাঙ্গা না'য়।
লেখক: রাকিবুল হাসান 🌿