আমরা এখন বসে আছি অফিসার্স হাউজের দোতলার বসার ঘরে। আসে পাশে বেশ কজন মানুষ আছে। আমার পাশে একটু অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে বসে আছে অনু। অনু নামের পূর্ণ রূপ আনোয়ার হোসেন। আমার দীর্ঘ সময়ের বন্ধু। কালের বিবর্তনে আনোয়ার অনু হয়ে গেছে। তার পাশে অনেকটা খোশ মেজাজে বসে আছে রাব্বি। কারণ কিছুক্ষন আগে ব্যপক খাবার দাবার হয়েছে। আর খাসীর রেজালার বাটিটা রাব্বি প্রায় একাই সাবাড় করেছে।
আমাদের ঠিক সামনেই একজন বলিষ্ট মানুষ বসে আছেন। সারা জীবন পুলিশের চাকুরী করার কারণেই বোধহয় তাকে কিছুটা বদমেজাজী মনে হচ্ছে। নীরবতা ভেঙে তিনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, তা বাবা তুমি কি কর?
আমি বললাম, সবে মাত্র পাশ করেছি। এখনো কিছু করছি না আংকেল।
_ তো কি করবে বলে ভাবছো?
_ বাবার ছোট খাটো ব্যবসা আছে কুমিল্লায়। ভাবছি সেটায় একটু মনোযোগ দিব।
_ ও আচ্ছা।
আলোচনার এই পর্যায়ে কন্যার আগমন। চা নিয়ে মেয়ে ঘরে ঢুকেছে। মেয়ের সাথে মেয়ের মা। মেয়ে আমাদের সামনে চা রাখলো।
বলিস্ট মানুষটি কন্যাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন। বললেন, আমার মেয়ে।
আমি মেয়ের চেহারা দেখলাম। একজন মানুষ এতটা রুপবতী হয় কি করে? টানা টানা চোখ। এ চোখের দিকে তাকালে মনে হয় হৃদপিন্ডের অনুরণ অনেক খানি বেড়ে গেছে। মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো। আমার মনে হলো এ হাসি যেন আমার পাঁজর ভেদ করে হৃদপিন্ডে গিয়ে আঘাত করলো। এই অনুভুতি অনেক আগেও একবার হয়েছিল আমার। ভেবেছিলাম আর হবে না। কারণ সে কথা রাখেনি। কিন্তু বিঁধিবাম আবার হল।
কন্যা বাবার পাশে বসলো। রাব্বি বলল, কেমন আছেন আপনি?
কন্যা জবাব দিল, ভালো।
আমি বললাম, সরি আপনার নামটি যে জানা হলো না।
কন্যা মুখের মৃদু হাঁসি বৃস্তৃত করে বলল, আমি অনামিকা হাসান অনু।
আমি রাব্বির দিকে তাকিয়ে হাসলাম। রাব্বিও প্রতি উত্তরে হাসলো। আমি আনোয়ারের দিকে তাকিয়ে বললাম, আনোয়ার কিছু বলবি?
সে মাথা নারিয়ে বললো, না।
খানিক কথপোকথনের কিছুক্ষন পর কন্যা ভিতরে চলে গেল। সাথে কন্যার বাবা মা ও। এখন কক্ষে আমি রাব্বি আর আনোয়ার। রাব্বি আমাকে বললো, মেয়ে কেমন লেগেছে?
আমি বললাম, রুপবতী মেয়ে। ভালো তো লাগবেই। একটাই সমস্যা মেয়ের বাবা পুলিশের লোক। আমি পুলিশের লোক পছন্দ করিনা।
আনোয়ার বললো, দোস্ত তুই বস। আমি বাথরুমে যাব।
রাব্বি বলল, আমি ও যাব। খাবার দাবার একটু বেশিই হয়ে গেছে।
আমি বললাম, যা।
আমি একা বসে বসে প্রায় ঠান্ডা হয়ে যাওয়া চায়ে চুমুক দিচ্ছি। এমন সময় মেয়ের বাবা এসে আমার পাশে বসলেন। আমি একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম।
তিনি আমাকে বললেন, তা বাবা কিছু মনে করো না তোমাকে সোজাসুজি কিছু কথা বলি।
আমি বললাম, না না ঠিক আছে আংকেল, বলেন।
_ বাবা আমার মেয়ে কেমন লেগেছে?
_ অনামিকা পছন্দ হওয়ার মতো মেয়ে। যে কারো ভালো লাগবে। আমার তো ভালো লেগেছে। কিন্তু বিয়ে তো করবো আনোয়ার। ওর সাথে কথা বলা ছাড়া তো বলতে পারছি না তার কেমন লেগেছে?
_ একটা সমস্যা হয়েছে বাবা। আসলে আমার মেয়ে তোমাকেই পছন্দ করেছে।
আমি এতটা অবাক হলাম যে কিছুই বলতে পারলাম না। উনি কি আমার সাথে দুষ্টামি করছেন? দুষ্টামী তো হবু শালা বা শালী করে। ওনি করবেন কেন? আর আমি তো মেয়ে দেখতে আসি নাই। মেয়ে তো আনোয়ার দেখতে এসেছে। আমার মনে হলো আমি স্বপ্ন দেখছি। খেয়ে দেয়ে সোফায় ঘুমিয়ে পড়েছি। আমি হাতে চিমটি কাটলাম। না আমি ব্যথা পাচ্ছি। তার মানে আমি ঘুমিয়ে নেই।
উনি আবার বললেন, আমি চাই বিয়ে আজ রাতেই হবে। কাজী খবর দেয়া হয়েছে। তুমি যদি পালিয়ে যাবার চেষ্টা কর তোমার নামে এত গুলো মামলা হবে যে তুমি জীবনে বাইরের আলো বাতাস দেখবেনা।
আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না। আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা চারপাশে কি ঘটছে? রাব্বি আর আনোয়ারকে আমি এই পুরোটা সময় দেখিনি। ওরা কোথায়? তাহলে ওরা কি আগে থেকেই জানতো? আমার মাথা ঘুরছে। কিছুই ভাবতে পারছি না।
ঘন্টা দুয়েক পর আমি নিজেকে বাসর ঘরে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় আবিষ্কার করলাম। আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারছিনা অনু নামের মেয়েটি যাকে কিনা আমি কিছুক্ষণ আগেও চিনতাম না, তাঁকে আমার সাথে জোর করে বিয়ে দিয়ে দেয়া হয়েছে। ভুল বললাম, আমাকে তার সাথে জোর করে বিয়ে দিয়ে দেয়া হয়েছে। আমি জানতাম না একটা ছেলেকেও ভয় দেখিয়ে বিয়ে দেয়া যায়। মেয়ের বাবা আমাকে ফাঁসানোর সব উপায় আগেই বের করে রেখেছিলেন মনে হয় । বিশ লক্ষ টাকা দেনমোহর করেছেন। যাতে আমি ইচ্ছা করলেও তাহার কন্যাকে ছাড়তে না পারি।
রাগে আমার পা কাঁপছে। অনু অপ্রস্তুত হয়ে বিছানায় বসে আছে। আমি ওর দিকে তাকিয়ে ভীষন কঠিন কণ্ঠে বললাম, তোমার বাবা যা করেছে তাতে তোমাকে আমি কখনো স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে পারবো না। আমি যেদিন বিশ লক্ষ টাকা উপার্জন করবো সেদিন তোমার থেকে মুক্তি কিনে নেব।
বলেই আমি ওপাশ ফিরে শুয়ে গেলাম।
কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছে না। অনুর ফুপিয়ে কান্নার শব্দ পাচ্ছি। কি করব আমি? বাবাকে কি বলব? কিভাবে বলব? আর মাকে? মা আমাকে কতদিন ধরে বিয়ের জন্য বলছেন, আমি রাজি হয়নি। বলেছিলাম বিয়ে করব না। এখন আমি নিজে নিজে বিয়ে করে ফেলেছি। মাকে কি করে বলব? এসব চিন্তা করতে করতে এক সময় নিজের অজান্তেই ঘুমিয়ে গেলাম।
ঘুম ভাঙলো সকাল ১১ টায়। অনু নেই পাশে। আমি উঠে সোজা তাদের বাসা থেকে বের হয়ে আসলাম। কেউ বাসা বাঁধা দিল না। টং থেকে একটা বেনসন এন্ড হেজেস কিনলাম। বেনসনটা জ্বালিয়ে একটা রিক্সা নিয়ে বাসায় আসলাম।
তারপর প্রায় এক মাস হয়ে গেছে। কিছু পরিবর্তনও এসেছে। প্রতিদিন ঘুম ভেঙে অনুর কলে। আমি অনেক ধমক আর খারাপ ব্যবহারের পরও কাল আসা বন্ধ হয়নি। ব্লক লিস্টে ফালানোর পরও লাভ হয় নি। নতুন নম্বর দিয়ে কল দিয়েছে। এক সময় বিরক্ত হয়ে আর ব্লক দেইনি। আনোয়ার আর রাব্বি আমার সাথে দেখা করেনি। ফোন ও ধরে না। বাসায় গেলে কেউ দরজা খোলে না। অনেক কষ্ট করে ওদের বেদম প্রহারের ইচ্ছাটা দমন করেছি।
আজ সকালেও ঘুমের ১২ টা বাজালো অনু। ফোন ধরতেই বলল, এখনো ঘুমাচ্ছ?
আমি বললাম, হুম।
ও বললো, একটু ভার্সিটিতে আসবে?
আমি জিজ্ঞেস করলাম, কেন?
ও উত্তর দিল, আমার বান্ধবীরা তোমাকে দেখতে চেয়েছে। প্লিজ একটু আসো না।
আমি বললাম, দেখ অনু আমি তোমাকে আগেও বলেছি এখনো বলছি আমি তোমাকে মেনে নিতে পারি নি। আর পারবোও না কোনদিন। আমাকে এইসব বলার জন্য আর ফোন করবা না। বলেই আমি ফোন কেটে দিলাম।
ছাত্রের বাসা থেকে বের হয়ে দেখি ৮ টা বেজে গেছে। নিকুঞ্জ থেকে আমার বাসা খুব একটা দূর না। এই পথটা আমি হেটেই যাই। আমি হাটতে শুরু করলাম। আমি জানি একটু পিছনে একটা কালো রঙের করেলা জি টি আমাকে অনুসরণ করছে। আমি আরো ভালো করে জানি এতে কে রয়েছে। গত কয়েক দিন থেকেই এমন করে। আমাকে বাসা পর্যন্ত অনুসরণ করে। আজব মেয়েতো কত কিছু বললাম তাও পিছু নেয়। কি করে আমার টিউশনীর সময় জেনেছে কে জানে?
আজ অবশ্য আকাশে মেঘ করেছে। সামান্য বাতাস ও বইছে। অদ্ভুত অবস্থা। শীতকালে বৃষ্টি হবে কেন? আবহাওয়ার যে অবস্থা, তাতে তো মনে হয় কদিন পর আমাদের দেশ হয়ে যাবে আরব দেশের মতো। আমরা রিক্সার বদলে উটের পিঠে চড়বো।
আমি হাঁটার গতি কিছুটা বাড়িয়ে দিলাম। গাড়িটা আমার একটু সামনে এসে থামলো। এইটা অবশ্য নতুন। আগে এরকমটা কখনো করেনি। আমি দাঁড়ালাম। অনু গাড়ি থেকে নামলো। আজ সে একটা নীল শাড়ি পরে এসেছে। হাতে কাঁচের চুরি। কপালে কালো টিপ। মেয়েদের ক্ষেতে ঠিক আমার যেমনটা পছন্দ। কাছে এসে বললো, আমি কি তোমার সাথে একটু হাটতে পারি?
আমি বললাম, কেন হাটতে চাও?
সে বলল, কাল আমার জন্মদিন। তোমার তো কাল টিউশনী নেই। আর আমি বললে তো তুমি বের হবে না। তাই আজ একটু হাঁটি তোমার সাথে?
আমি বললাম, রাস্তা আমার না। সরকারী রাস্তা যে কেউ হাটতে পারে। বলেই আমি হাটতে শুরু করলাম।
সে আমার সাথে আসছে। আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। হালকা বাতাসও বইছে।
একটু পর সে বললো, আমি কি তোমার হাতটা একটু ধরতে পারি।
আমি বললাম, না। কেন ধরতে চাও? আমি তোমার কে? আমি তো বলেছি তোমাকে আমি কখনো মেনে নিতে পারবো না। তবু এমন করছো কেন?
ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ওর চোখ দিয়ে কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো। গলার স্বর জড়িয়ে সে বলল, You are my Husband.
আমি বললাম, আমি সেটা মানি না।
বলেই আমি চলে আসলাম। হাটতে হাটতে মনে হল একটু হাত ধরতে দিলে কি হতো? মেয়েটার কালকে জন্মদিন। এতটা রূঢ় না হলেও পারতাম।
ঘরে ডুকেই মনে হলো মোম খুঁজে রাখা দরকার। বৃষ্টি হলেই কারেন্ট চলে যায়। আমি টেবিলে মোম আর ম্যাচ রাখলাম। এমন সময় দরজায় টোকা পড়লো। আমার ঘরটা হচ্ছে ছাদে। ওপাশটা ছাদ বলেই এই বাসাটা ভাড়া নিয়েছি। আমি একই থাকি। একটা রুম, একটা রান্নাঘর আর একটা বাথরুম এই নিয়েই আমার সংসার। রাতে বাসার কেউ ছাদে উঠে না। তাহলে কে আসলো? বাসার মালিক। তিনি এত রাতে কেন আসবেন? কি জানি?
আমি দরজা খুললাম। আমার চোয়াল ঝুলে পড়লো। অনু দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে। এই মেয়ে এখানে কি করে?
আমি বললাম, কেন এসেছো?
ও কিছুই বললো না।
আমি বললাম, চলে যাও। গেট বন্ধ হওয়ার পর আমি কিন্তু আর তোমাকে চিনবো না।
সে বলল, চিনতে হবে না।
আমি বললাম, সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে সোজা বাসায় চলে যাও।
তার চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে। আমার এবার তার জন্য মায়া লাগতে শুরু করেছে। এমনেই মেয়ে মানুষের কান্না পুরুষের দুর্বল জায়গা। তার উপর সুন্দরী হলে তো কথাই নেই।
সে কান্না জড়ানো কণ্ঠে বলল, যাবো না।
বলে সে ছাদের পাশে একটা বসার জায়গা আছে সেখানে গিয়ে আমার উল্টো পাশে ঘুরে বসলো। এমন সময় বৃষ্টি শুরু হল। চোখের পলকে অনু ভিজে একাকার হয়ে গেলো। আমি কি করবো বুঝতে পারলাম না। এভাবে ভিজলে এই মেয়ের অসুখ বাঁধবে। আমি পড়লাম বিপাকে।
আমি একটা ছাতা নিয়ে গেলাম। ওর মাথার উপর ছাতা ধরে বললাম, ঘরে চলো।
সে বলল, না যাব না।
আমি বললাম, এভাবে ভিজলে জ্বর উঠবে।
সে এবার উঠে দাঁড়ালো। আমার অনেকটা কাছে এসে। বলল, উঠুক। আমি মরে যাই। তাহলে তো তোমার সব ঝামেলা শেষ। তুমি ভালো থাকবে।
আমি দেখলাম সে ঠান্ডায় কাঁপছে।
আমি বললাম, প্লিজ ঘরে চলো।
সে আবার বলল, না।
মেয়েরাও অদ্ভুত। একটু আগে এই মেয়ে আমার হাত ধরতে চেয়েছিল। এখন আমি বলছি আর আমার উপর অভিমান দেখাচেছ।
আমি এবার ছাতাটা বন্ধ করে পাশে রাখলাম। এরপর ওকে কোলে তুলে নিলাম। প্রথমে একটু হাত পা ছোড়াছুড়ি করলেও যখন বুঝলো আমার সাথে পারবে না তখন শান্ত হয়ে গেল। আমি ওকে ঘরে নিয়ে নামালাম। বললাম, ভেজা কাপড় গুলো বদলে নাও। আমি কাপড় দিচ্ছি বাথরুমে যাও। আমি আমার একটা টি শার্ট আর টাউজার বাথরুমে দিয়ে আসলাম। এবার বললাম যাও, নাহয় ঠান্ডা লেগে যাবে।
অনু বলল, না।
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো। আচ্ছা বিপদে পড়া গেল। আমি ওর হাত ধরে বাথরুমে নিয়ে গেলাম। বললাম, বদলে নাও।
সে বলল, না।
আমি বললাম, কেন?
অনু আবার ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। বললো, বাবার ভুলের সাজা আমি কেন পাচ্ছি? একটা মেয়ে আর কি করবো আমি? তুমি বোঝোনা একটা মেয়ের কাছে তার স্বামীই সব।
তার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না। আমার সব রাগ কোথায় যেন উবে গেছে। ইচ্ছা করেও রাগ করতে পারছি না ওর উপর।
আমি ওর কাছে গেলাম। অনেকটা কাছে। যতটা কাছে গেলে ওর নিশ্বাস অনুভব করা যায়।
বললাম, সরি। মেয়ে আমি আর কখনো তোমাকে কষ্ট দিবো না। দুহাতে তার গালের পানি মুছে দিলাম। আমার কি হলো জানিনা, আমি ওর ঠোঁটে আলতো করে চুমু খেলাম।
তারপর কি হলো? সব জানতে হয় না। বাচ্চারা ঘুমাতে যাও।
খুব সকাল বেলা আমার ঘুম ভাঙলো ফোনের শব্দে। দেখলাম অনু আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে। ঘুমন্ত অবস্থায় ওকে আরো সুন্দর লাগছে। কি নিষ্পাপ চেহারা। আমি ওর হাতটা আস্তে করে সরিয়ে রেখে উঠলাম। ফোন আমার না, অনুর বাজছে। টেবলের উপরে রাখা ওর ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করলাম। মা লেখা আছে। নম্বরটা পরিচিত মনে হচ্ছে। আরে এত আমার মায়ের নাম্বর। আমার মা অনুকে ফোন করবে কেন?
হঠাৎ আমার কাছে সব পরিষ্কার হয়ে গেল। তার মানে কি মা জানে? তারাই কি এসব করেছে? আমাকে বিয়ে করানোর জন্য সবাই নাটক করেছে?
আমার মেজাজ খারাপ হতে শুরু করেছে।
আমি খাটে গিয়ে বসলাম। অনুর ঘুম ভেগেছে। আমার দিকে তাকিয়ে হাসি দিল। তারপর উঠে বসলো। আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার ঠোঁটে আলতো চুমু খেয়ে বলল, জামাই সাহেব এত তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙে গেল কেন?
আমি অবাক হয়ে আবিষ্কার করলাম, আমার আর রাগ লাগছে না। বরং মনে হচ্ছে অনেক ভালো লাগছে। এতটা ভালো তো কখনো ছিলাম না।
অনু উঠে রান্নাঘরে গেল। কিছুক্ষণ পর এক চা নিয়ে ঘরে ঢুকলো। আমার হাতে চায়ের কাপ দিল। আমি চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে ভাবলাম বাহ মেয়েটা তো বেশ ভালো চা বানায়।
আমি বললাম, এক কাপ কেন? তুমি খাবে না?
সে বলল, এক কাপে কি দুজনের হবে না?
আমি হাসলাম। বললাম, হবে।
ওর দিকে তাকিয়ে আছি। ও হাসছে। সে হাসি যে হাসি আমার পাঁজর ভেদ করে হৃদপিন্ডে গিয়ে আঘাত করে। আমি মনে মনে বললাম, মেয়ে এতদিন কোথায় ছিলে???
কিছু কথাঃ
এই গল্পের অনেক ভুল আছে। তবে আমি ভুলে ভরা মানুষ। ভুল তো হবেই। আর কিছু ভুল শুদ্ধ করতে ইচ্ছা করে না। কিছু ভুল নাহয় থেকেই গেল। কি ক্ষতি তাতে?
গল্পের নাম_ শুরুতেই ভুল হয়েছে। নামেই ভুল।কেন? কারণ মেঘমালা বিশাল মেঘরাশিকে বুঝায়। সেটা এক টুকরো হবে কি করে?
গল্পের কাহিনী_ কাহিনীটা সম্পূর্ন কাল্পনিক। অবশ্য এরূপ কাহিনী কল্পনাতেই সম্ভব। কেউ কেউ বলবে অর্থ হীন কাহিনী। হোক না কিছু কাহিনী অর্থহীন।
বানান_ বানানে আমি ভীষন রকমের কাঁচা। তাই সেটা তে ভুল থাকবেই। এতে কিছু করার নেই।
গল্প সংক্রান্ত কিছু কথাঃ
কয়েকদিন আগে আমার কাছে একটি ইনবক্স আসে। সেখানে অপরিচিত একজন লিখলো আপনার ব্লগ ঘুরে আপনার লেখাগুলো পরে আসলাম। আমি তো আপনার লেখার ফ্যান হয়ে গেলাম। আচ্ছা আপনি এমন মন খারাপ করা গল্প লেখন কেন? একটা ভালোবাসার গল্প লিখেন, যেন পরে মনটা ভালো হয়।
ম্যাসেজ পরে ভালো লাগলো। আমার ও ফ্যান আছে?!!!
দুদিন চেষ্টা করে মনে হল ভালোবাসার গল্প বলতে যা বুঝায় তা আমি লিখতে পারি না। তবু আমার এক মাত্র ফ্যান(!!!!) এর মন রক্ষার্থে চেষ্টা করলাম।
বি দ্রঃ এই গল্পের লেখক গল্প লিখতে পারে না। ইহা তাহার লেখক হইবার ভান মাত্র।
সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ গল্পটি কিছুটা ১৮+ সুতরাং বাচ্চারা দূরে থাকো। ( এখন লিখে লাভ কি? যে পড়ার সে তো পরেই ফেলেছে। গল্পের প্রথমে এটা লেখার দরকার ছিল।)
বাহ্, চমৎকার