সিট খালি নাই

2 17
Avatar for R_P_Emon
4 years ago
বাড়ির সামনে একটা সুপারমার্কেট আছে। পুরো সুপারমার্কেট কয়েকজন রমণীদের দ্বারা পরিচালিত। এখানে কোনো পুরুষ কর্মকর্তা বা কর্মচারী নেই। 

দিনে পাঁচবার যাই সেখানে। কাউন্টারে একটা মেয়ে থাকে, নাম অ্যামিলি। যেমন চুল তেমন হাসি। তাঁর হাসি দেখে মনে হয়। আরও কয়েক কেজি মুড়ি কিনে নিয়ে যাই!

মনে মনে আমি পানি খেয়ে ফেলেছি কিন্তু তাঁকে বলতে পারছি না। আজকালকার মেয়েদের এক সমস্যা। যাদের প্রেমিক নেই তাঁরা বলে, স্যরি। আই হ্যাভ অ্যা বয়ফ্রেন্ড!  

আর যাদের প্রেমিক আছে তাঁরা বলে, স্যরি! সিট খালি নাই! 

সিট খালি নাই নিয়ে একটা গল্প মনে পড়ল। দশম শ্রেণিতে থাকতে একটা মেয়েকে ভালো লাগল। হটাৎ তাঁর সাথে একদিন বাসে দেখা। পুরো বাস খালি। শুধু আমি আর সে। ভাবলাম আল্লাহ নিজের হাতে আমাকে এই পরম সুযোগ করে দিলেন ভালোবাসি বলার জন্য। 

আমি বলেও ফেললাম, জুই, তোরে তো আমার ভাল্লাগে! মানে আই লাভ ইউ! 

জুই সাথে সাথে বলল, স্যরি জয় ভাইয়া। সিট খালি নাই! 

আমার খুব রাগ হলো। আমাকে ভালো লাগেনি তুই না বললেই পারতি। তুই কি বাস না টেম্পো? তোর সিট আসে কোথা থেকে? নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে গালে দিলাম এক থাপ্পড়! 

তারপরে কী হয়েছিল সেটা বলা যাবে না! 

.

দশ টাকার একটা নোটের মধ্যে আই লাভ ইউ লিখে সুপারমার্কেটে চলে গেলাম। কিনলাম একটা চিপস। রোজকার মতো অ্যামিলির মুখে সেই হাসি। দুপুরবেলা লোকজন একটু কম থাকে। তাই আমি বেশি দুপুরবেলাতেই যাই। 

প্রতিদিন টাকা দেওয়ার পর একবার নোটের এপাশ ওপাশ দেখে নেয়। জাল কি না। আজকে টাকার এপাশ ওপাশ দেখল না! তাই আমি মনে করিয়ে দিলাম। 

‘ টাকাটা চেক করলেন না যে! জালও তো হতে পারে! '

সে মিষ্টি হেসে বলল, চেক করে ফেলেছি স্যার। তাছাড়া আপনি আমাদের রেগুলার কাস্টমার। আপনি জাল টাকা দেবেন না জানি। 

‘ এটা কেমন কথা? রেগুলার কাস্টমাররা জাল টাকা দেয় না? '

‘ না, দেয় না। যারা দূর দূর থেকে আসে। তাঁরাই চালবাজি করতে চায়। '

‘ তাও আপনার টাকাটা চেক করা উচিত। এটা আপনার কর্তব্য! ' 

মেয়েটা আর কোনো কথা না বাড়িয়ে দশ টাকার নোটটা চেক করল। তারপর বলল, চেক করেছি স্যার। এটা আসল নোট। 

‘ ভালো করে চেক করেননি তো! ' 

‘ ভালো করেই চেক করেছি স্যার। এটা আসল নোটই! '

মনে মনে ভাবলাম। মেয়ের বোধহয় চোখে সমস্যা। বেশিরভাগ সুন্দরী মেয়েদের চোখের সমস্যা থাকে। বললাম, কিছু মনে করবেন না। আপনি কি চোখে কম দেখেন? 

মেয়েটা দারুণ পেশাদারী। 

নিজের হাসি সচল রেখে বলল, না স্যার। আমার চোখে কোনো সমস্যা নেই। আমি ভালো দেখি। 

‘ তাহলে! ' 

‘ তাহলে কী? '

‘ তাহলে আপনি চোখে দেখেন? '

‘ জি স্যার, দেখি! '

‘ ওহ, আপনি ইংলিশ পড়তে পারেন না? ' 

এই কথা বলে পড়লাম আরেক বিপদে। মেয়ে তো ইংরেজিতে কথা বলা শুরু করে দিয়েছে! আমি আর না প্যাঁচিয়ে বললাম, দশ টাকার নোটে লেখা ছিল আই লাভ ইউ! মানে আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি অ্যামিলি! 

রোবটের মতো হাসি অনবদ্য রেখে সে জবাব দিল, ধন্যবাদ স্যার! কিন্তু সিট খালি নাই! 

সিট খালি নাই শুনে আমার রক্ত মাথায় উঠে গেল! 

জিজ্ঞেস করলাম, সিট খালি নাই মানে? তুমি কি বাস না ট্রেন? তোমার সিট আছে না কি? 

দুয়েকজন ভদ্রমহিলা এগিয়ে আসলেন। এখনো কেউ আমাকে কিছু বলেননি।  

অ্যামিলি উত্তর দিল, সিট খালি নাই মানে আই হ্যাভ অ্যা বয়ফ্রেন্ড স্যার! 

‘ এটা বলো, সিট খালি নাই এটা আবার কেমন কথা! '

‘ স্যরি স্যার! কিন্তু আসলেই আমার সিট খালি নাই! '

আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না। মারলাম এক থাপ্পড়! না থাপ্পড় দিয়ে আমি দৌড় দিইনি। ভদ্রমহিলারা পুলিশ ডেকেছেন। পুলিশ এসে আমাকে থানায় নিয়ে গেল। 

জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য একজন মহিলা পুলিশ এলেন! মধ্যবয়সী একজন মহিলা। গাট্টাগোট্টা নাকমুখ। মটু পাতলুর মটুর মতো। তবে গলা নরম করেই জিজ্ঞেস করলেন, একটা মেয়ে মানুষের উপর হাত তুলতে আপনার লজ্জা করল না? 

‘ নিজেদের বাস ট্রেন বলতে মেয়েদের লজ্জা করে না? ' 

‘ মানে? '

‘ মানে খুব সোজা। আমি মেয়েটাকে ভালোবাসি বললাম। আর সে বলল সিট খালি নাই! তাঁর প্রেমিক কি সারাক্ষণ তাঁর কুলে বসে থাকে? সিট খালি নাই আবার কী? '

‘ এজন্য থাপ্পড় মারলেন? '

‘ জি, এজন্যই মারলাম! '

‘ সাব্বাশ, এবার কদিন জেলখানার ডাল পরোটা খান! ' 

কদিন থাকলাম থানায়। থানা থেকে বের হয়ে দেখি বাড়িতে বিশাল আয়োজন! চমকে গেলাম অনেকটা। তবে মাস্তান মাস্তান অনুভূতি হচ্ছে! কী একটা ব্যাপার। আমি ছাড়া পাওয়ার খুশিতে বাড়িতে এত বড়ো আয়জন! 

তবে মা বলল অন্য কথা। বাড়িতে এত লাইট কেন জিজ্ঞেস করার পর উনার উত্তর, তোর বাপে তোর যন্ত্রণায় অস্থির। তোর এত যখন মেয়েদের সাথে ঝগড়া করার শখ। এবার পার্মানেন্টলি একটা মেয়ে এনে দেবে। তারপর কর যত ইচ্ছা ঝগড়া! 

এই কথা শুনে খুশি হব না দুঃখ পাব বুঝতে পারছি না। প্রেমিকার কথা ভেবে লুকিয়ে কত শাড়ি কিনে রেখেছি। কাউকেই দেওয়া হলো না। এবার সরাসরি বিয়ে! আল্লাহ ভরসা। যা করার তিনি করবেন। আমি বিয়েতে রাজি হয়ে গেলাম। 

মেয়ে কে? কার সাথে বিয়ে হচ্ছে এসব কিছুই জানার চেষ্টা করলাম না। 

বাসর ঘরে ঢুকে দেখি বউ মোটামুটি দেখতে খারাপ না। মোটা মোটা গাল। নাক চ্যাপ্টা। যাহোক এখন নাক খাড়া হলেও বিয়ে করে ফেলেছি। জিজ্ঞেস করলাম, মেয়েদের সাথে আমার ঝগড়া হয় বলে আব্বা আমাকে বিয়ে করিয়ে দিল। যাতে বাইরে আর ঝগড়া না হয়। তোমাকে বিয়ে দিয়ে দেওয়ার কারণ কী? দয়া করে মিথ্যা কথা বলো না। আমি তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছি। মিথ্যা বললেই আমি ধরে ফেলব। 

বাসর ঘরে স্বামীর মুখে প্রথম প্রশ্ন এরকম হবে সে মনে হয় ভাবতে পারেনি। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, এতদিন সিট খালি ছিল না! এখন খালি হয়েছে! তাই বিয়ে দিয়ে দিয়েছে! 

এই কথা শুনে আমার অবস্থা এখন কেরোসিনের মতো হয়ে গেছে! জড়োসড়ো হয়ে বসে আছি! দাঁতে দাঁত কামড়ে ভাবছি, সত্য বলার কারণে তাঁকে বাহবা দেব! না নিজেকে বাস, ট্রেন, গোরুর গাড়ি হিসেবে উপস্থাপন করার কারণে অত্যাচার করব? বুঝতে পারছি না! 

| সিট খালি নাই 
Sponsors of R_P_Emon
empty
empty
empty

2
$ 0.00
Sponsors of R_P_Emon
empty
empty
empty
Avatar for R_P_Emon
4 years ago

Comments

২০১০ সালের বিশ্বকাপের ব্রাজিল দলে নেইমারকে রাখার জন্য পেলের নেতৃত্বে প্রায় ১৪ হাজার মানুষের স্বাক্ষর করা একটি চিঠি পাঠানো হয় ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশনের কাছে এবং সব থেকে অবাক করার বিষয় হলো তার আগে নেইমারের ব্রাজিলের হয়ে অভিষেক হয়ইনি, উল্টো নেইমারের সান্তোসের সিনিয়র দলে খেলার অভিজ্ঞতাও ছিলো মাত্র ১০/১১ মাসের!

$ 0.00
4 years ago

ok

$ 0.00
4 years ago