#আখলাক চুলায় তরকারি বসিয়ে আগুনটা একটু কমিয়ে দিয়ে বাথরুমে ঢুকলাম। বের হতে দেরী হচ্ছিল তাই খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম— তরকারিটা পুড়ে যায় কিনা। মেয়ে দুইটা পাশের রুমে কাগজ নিয়ে খেলছিলো। গলা উঁচিয়ে বড়জনকে ডাকলাম, এলো ছোটজন। ভাঙ্গা ভাঙ্গা কথা শিখেছে কেবল। বললো - "আম্মু ডাকো?" বললাম ,"আপুকে বলো আম্মু ডাকে",। কিছুক্ষণ পর এসে আবার সেই একই কথা, "আম্মু ডাকো?" আবার বোনকে ডাকতে পাঠালাম। কয়েকবার এরকম আসা যাওয়া আর প্রশ্নোত্তর পর্ব চললো। বড়জনকে এর মধ্যে কয়েকবার বলেছে, "আপু! আম্মু ডাকে।" মেয়েটা তাও এলো না। বের হয়ে দেখি তরকারি পুড়ে শেষ। বড়টা চুলা বন্ধ করতে শিখেছে। চুলাটা বন্ধ করে দিলেই হতো। এমন ভয়ঙ্কর রাগ হলো আমার! যোহরের আজান হয়ে গেছে। কত কাজ বাকি। মেয়েটাকে চিৎকার করে বকে মাইর ও দিয়ে ফেললাম। ওর কান্না দেখে ছোটটাও কেঁদে দিল। দুইটা নিষ্পাপ বাচ্চা আমার আগ্রাসনে কুঁকড়ে গিয়ে কাঁদছে । নিজেকে কেমন ডাইনি মনে হলো। দুইটা অসহায় বাচ্চাকে নিজের ভয়ংকর রাগের সাক্ষী বানালাম! কিছুক্ষণ এস্তেগফার করলাম। দুইজনকে আদর করলাম । মনে ভাবনা এলো , এই বাজে আচরণ টা আমি আর কার কার সাথে করতে পারতাম? আমার শাশুড়ি, ননদ কিংবা অন্য যে কোনো কেউ হলে, শুধু হয়তো ভদ্রভাবে বলতাম "আপনাকে ডেকেছিলাম। আপনি মনে হয় শুনতে পাননি।" যদি আমার বাচ্চাটা অনেক বড় হতো তাহলে হয়তো মেজাজ বুঝে তার সাথে কথা বলতাম। কিন্তু ও অনেক ছোট আর দূর্বল বলেই আমি এতটা নির্দয় , অন্যায্য আচরণ করে পার পেয়ে গিয়েছি। আসলে মানুষ নরম মাটিতেই আঁচড় কাটতে আরাম পায় , শক্ত মাটি খোচাতে গেলে নিজের নখেই আঘাত লাগবে যে! এটা যদি আমার একার রোগ হতো তাহলে এখানে নিজের গোনাহের ফিরিস্তি শুনিয়ে এত কথা বলতাম না। কিন্ত পরিচিত অনেক মাকেই দেখি নিজের অশান্তির কারনে দিশা না পেয়ে বাচ্চাদেরকে লঘু পাপে গুরুদন্ড দিয়ে বসেন।পরে আবার একা একা ঘুমন্ত বাচ্চার মুখের দিক তাকিয়ে কাঁদেন। মূল্যহীন কান্না। ভয়টা তখনই বুকে কাঁপন তোলে, যখন দেখি আমার কোন ভুল আচরণের প্রাকটিস ওদের মধ্যে ডেলিভারী হয়ে গিয়েছে। আমার প্রতিটা আচরণ ওদের আখলাকের অংশ হয়ে গিয়েছে। ওদের কথা বলার স্টাইলটাও আমারি মতো। ওরা যেন আমার আখলাকের আয়না! নিজেকে অনেক বেশী পরিশুদ্ধ করার সময় চলে যাচ্ছে। ওরা যখন আমার জন্য দোয়া করবে—
"( রব্বির হামহুমা কামাল রব্বায়ানী সগীরা")
তাদেরকে তেমনি ভাবে রহম করুন যেমনিভাবে আমাকে শিশু কালে প্রতিপালন করেছেন। তখন এই অধৈর্য, অন্যায্য, অভদ্র আচরণের প্রতিদানে আল্লাহ কি দিবেন আল্লাহূ আ'লাম। আজ এই মুহূর্তে আমি আমার মাবুদের কাছে বোনদেরকে সাক্ষী রেখে তাওবা করছি , আমার ধৈর্যের, হাসিমুখের, ভদ্রতার, আখলাকে হাসানার সাক্ষী হবে আমার সন্তানেরা, ইনশাআল্লাহ।
অনেক গুরুত্বপূর্ণ আর শিক্ষামুলক কথা বলেছেন৷ বাচ্ছারা আসলে যা দেখে আর শুনে সেটাই আয়ত্ব করে নেয়৷ তাদের সাথে খারাপ ব্যাবহার করলে তারা খারাপ শিখবে আর ভালো ব্যাবহার করলে ভালোটাই শিখবে৷ অনেক ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটি পোস্ট করার জন্য৷ এরকম আরও শিক্ষনীয় পোস্ট করে আমাদের জানার সুযোগ দিবেন আশা করছি৷