প্রেমে পড়া বারন

2 6

# প্রেমে পড়া বারন

# পার্ট - ৮

রেহান ভাইয়ের সাথে কথা বলার পরে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম!!

সকালে আম্মুর গলা শুনে ঘুম ভাঙলো।আম্মু এতো উচ্চস্বরে কেন কথা বলছে??.

ঘুম হালকা হতেই কানে আসলো

- বিয়ের দিনও কেউ এভাবে পড়ে পড়ে নিশ্চিন্তে ঘুমায়! এই জীবনে দেখিনি!! এবার যদি না উঠিস হিয়া!!

এই যা তো.... তোর আব্বুকে ডেকে আন..।

আম্মুর কথা শুনে মনে পড়লো - আজকে আমার বিয়ে!!

তড়িঘড়ি করে উঠে বসলাম। দেখি দিয়া আর আম্মু দাঁড়িয়ে। আম্মুর চোখেমুখে বিরক্তি।

- এবার উঠে উদ্ধার করেন আমাকে! বিয়ের দিনেও উনারে ১০ জনে ডেকে তুলতে পারে না।

আমি আশেপাশে ভালো করে তাকিয়ে বললাম - আম্মু, তোমরা তো দুইজন, বাকি আটজন কই?

আম্মু আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে, রাগে বিড়বিড় করতে করতে চলে গেলো।

মাঝেমধ্যে আম্মু যখন রেগে যায় তখন আরেকটু রাগিয়ে দিতে আমার খুব মজা লাগে।

- তোর কপাল ভালো আজকে তোর বিয়ে। না হলে আম্মু যা রেগে আছেন!! কতক্ষণ ধরে ডেকে যাচ্ছে, তোর উঠার নাম নেই।

তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিচে আয়।

দিয়াও চলে গেলো।

আজ বিয়ে!!

মনে পড়তেই হাত পা যেন জমে আসছে!

বিয়ের করা এতো ঝামেলা!! ধুর, এই আধ মণের বিয়ের ড্রেস পড়ে সারাদিন সঙ সেজে বসে থাকা.... অনেক বিরক্ত লাগছে আমার। আমি কখন এই আজাব থেকে বের হবো !!!

প্রাণ টা হাঁসফাঁশ করছে।।

ঘরোয়া আয়োজন বললেও আমি তো দেখছি লোকজনের অভাব নেই!

এতো লোক কোথা থেকে আসলো!!

রেহান ভাই কিছু সময় পাশে বসে ছিলো, তারপর উঠে কার সাথে কথা বলায় ব্যস্ত।

দিয়া,মাহি আপু সবাই ব্যস্ত। এদিকে আমার অবস্থা খারাপ!! ওয়াশরুমে যাবো তার উপায় নেই।

কাউকে সামনে দেখতে না পেয়ে, এদিক সেদিক তাকিয়ে মাহি আপুকে দেখে, ইশারা করতেই কাছে আসলো।।

(রাইবাদিনী ননদিনী! পাইছি তোমারে,অনেক তো মজা করছিলা আমারে নিয়া!

এখন তোমারে একটু খাটিয়ে শোধ টা নিয়েই নিবো)

- কিছু লাগবে তোর?

- তোমরা সবাই কই থাকো? এই দিকে আমার দম বেরিয়ে আসছে। আর কত সময় এভাবে থাকতে হবে?

- কত সময় এভাবে থাকতে হবে! সেটা নিয়ে ভাবছিস? নাকি কখন কবুল বলবি তার জন্য তড় সইছে নাহ?

ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো মাহি আপু।

- উফফফ! তুমি সারাক্ষণ পারোও!

ওয়াশরুমে যাবো কিভাবে?

- ওহহহ! আচ্ছা আয় আমার সাথে।

- এই লেহেঙ্গা পড়ে হাঁটা যাচ্ছে না তো! এটাতো একটু ধরে রাখতে হবে।

- তাইতো!

অই,দিয়া....

- হে,কি হয়েছে? বলো।

- হিয়া ওয়াশরুমে যাবে, একটু হেল্প কর।

মাহি আপু আর দিয়া লেহেঙ্গা সামলাতে সামলাতে নিয়ে গেলো।

ওয়াশরুমের গ্লাসে নিজেকে ভালো করে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছি - উফফফ! কি সুইট লাগছে আমাকে!!

- অই হিয়া! ওয়াশরুমে ঢুকে ঘুমিয়ে পড়ছিস?

মাহি আপু তাড়া দিচ্ছে। ধুর!

নিজেকে বউ বউ দেখতে কত্ত সুন্দর লাগছে!! ইচ্ছে তো হচ্ছে নিজেকে একটা চুমু খেতে!!

হাতে একটা চুমু দিয়ে আলতো করে গালে ছুঁয়ে দিলাম।

আপুর তাড়ায় ওয়াশরুম থেকে বের হলাম।

- আপু,আমার কেমন যেন লাগছে!

- কেমন লাগছে?!!

- জানি না, হাত- পা জমে আসছে। মনে হয় অজ্ঞান হয়ে যাবো!

- লক্ষী বোন আমার,এতো টেনশন নিচ্ছিস কেন?

এই জন্য এমন হচ্ছে।

- দেখো, আমি ঘেমে যাচ্ছি!

- এসির মধ্যে থেকেও!

আয়, তুই বস এখানে। তোকে ঠান্ডা শরবত করে দিচ্ছি।ভালো লাগবে।

আপু আমাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।

আমি মনে মনে হাসছি। খাটো খাটো!

খুব মজা করেছিলা দুজনে! বেকুব বানিয়ে ছেড়েছো!

বিয়ে পড়ানোর সময় কবুল বলতে গিয়ে আমার ভীষণ কান্না পাচ্ছিলো। আমি সেই নিজের বাড়িতে থাকবো।বাবা-মাকেও ছেড়ে দূরে যেতে হচ্ছে না।আমি যাকে মনে মনে চেয়েছিলাম, সে-ই মানুষই এসেছে আমার জীবনে। তাকেই আপন করে নিচ্ছি, তবুও কান্না পাচ্ছিলো।

বিয়ে জিনিস টা কেমন! কবুল বলার সাথে সাথে আরেক জন মানুষের জীবনের সাথে আজীবনের জন্য জড়িয়ে যাওয়া! কত দায়িত্ব গ্রহণ করা!

নিজের ব্যক্তিগত স্বাধীন জীবন কাউকে প্রবেশাধিকার দেয়া। কতকিছু মাথায় আসছে!!

বিয়ের পর্ব সমাধান হলো!

অবশেষে আমি উনাকে পেলাম।

রাতে মাহি আপু, দিয়া আমাকে রেহান ভাইয়ের রুমে দিয়ে, চলে গেলো।।

রুমটা খুব সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো।

এই রুমটা আমার অপরিচিত নয়।কতবার এসেছি এই রুমে। তবুও একটা অস্বস্তি হচ্ছে।

প্রায় আধাঘন্টা পরে রেহান ভাই রুমে আসলো।উনাকে দেখে বুকের ভেতর সেই হাতুড়ি পিটানোর শব্দ শুনতে পাচ্ছি।

হাত-পা ঝিমঝিম করছে।

রেহান ভাই আর আমি! একটা রুমে!!

আমরা স্বামী-স্ত্রী! ভাবতেই আমার... উনি কি বলবেন এখন?

আমি তো কথা খুঁজে পাচ্ছি না।

- এভাবে স্ট্যাচু হয়ে আছিস কেন? ঠিক আছিস তো?

উনার কথা শুনে বুকের উপর থেকে একটা পাথর সরে গেছে যেন।

- হুম ঠিক আছি।

রেহান ভাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি চোখ নামিয়ে নিলাম।

- তোকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে।

উনার কথায় একটু লজ্জা পেলাম। চোখ নামিয়ে নিলাম।

- জামাইকে সালাম করতে হয়,সেটাও জানিস না?

এইরে... মাহি আপু কি কি যেন বলেছিলো!

হা! সালাম করতে বলেছিলো বোধহয়! ভুলেই গেছি।।

তড়িঘড়ি করে সালাম করতে উঠতে গিয়ে পড়েই যাচ্ছিলাম।

- আরে আস্ত,আস্তে!

টুপ করে সালাম করে নিলাম।

- আরে, আরে সালাম করতে হবে না।এমনি বললাম।। তুই এতো এ্যাভনরমাল বিহেভ করছিস কেন??

Take it easy!

তুই ফ্রেশ হয়ে আয়।একসাথে নামাজ পড়বো।

ফ্রেশ হয়ে দুজন একসাথে নামাজ আদায় করলাম। অন্যরকম একটা প্রশান্তিতে মন ভরে গেলো।

বেডের একপাশে বসে আছি। রেহান ভাইও এসে একটা বালিশে হেলান দিয়ে বসলেন।

- ওখানে বসে আছিস কেন? এখানে আয়।

আমিও বাধ্য মেয়ের মতো উনার পাশে গিয়ে বসলাম।

রেহান ভাই আমার হাতটা টেনে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিলেন।

উনার স্পর্শে অদ্ভুত একটা অনুভূতি হচ্ছে আমার।

- ওইদিন আমার কথায় খুব কষ্ট পেয়েছিলি?

- হুম।

হালকা মাথা নেড়ে জবাব দিলাম।

- আমি নিজেই বুঝতে পারছিলাম না কি করবো।

সবাই কিভাবে রিয়েক্ট করবে। কিন্তু যে দিন ইশতিয়াককে দেখলাম তোর পিছনেই বেশি ঘুরঘুর করছে, আমার খুব রাগ হচ্ছিলো।

- আপনি জেলাস ছিলেন?

- হা ছিলাম। তোর পাশে অন্যকাউকে সহ্য করতে পারবো না, সেটা অনেক আগেই বুঝতে পেরেছি।কিন্তু..

- কিন্তু কি?

- বিবেক বাধা দিচ্ছিলো। মনে হচ্ছিলো আমার আর তোর মাঝে অনেক গ্যাপ। জেনেশুনে তোকে অসম একটা সম্পর্কে জড়াতে ইচ্ছে করছিলো না।

রেহান ভাইয়ের কথাগুলো শুনে আমিও স্বাভাবিক হয়ে গেলাম। ভয়,অস্বস্তি অনেক টা কেটে গেছে।

- ওহহহ...

এখন বুঝি বয়স কমে সমান হয়ে গেছে?

- তা কমেনি আবার!! ১০ বছর কমে গেছে!

-হুহ!!

অনেক রাত হয়ে গেছে গল্প করতে করতে।

রেহান ভাই বললো - সারাদিন তো অনেক ধকল গেলো। চল ঘুমাই।

- হুম।

আমিও সায় দিলাম।

আমি যখন বালিশটা ঠিক করে শুতে যাবো, তখন উনি বললেন

- সত্যিই ঘুমাবি?

এ কথা শুনে উনার দিকে ফিরে তাকিয়ে বললাম - হা। আপনিই তো বললেন!

- আচ্ছা ঠিক আছে ঘুমা।

আমি শুতে যাবো উনি হাতটা টেনে উনার বুকে টেনে নিলেন আমাকে!!

- ওখানে ঘুমাতে কে বললো তোকে!.

- তো, কোথায় ঘুমাবো?

- এখানে।

বলে আমাকে বুকে জড়িয়ে নিলেন।

- উফফ।এভাবে কেউ ধরে রাখলে আমি ঘুমাতে পারি না।

- এখন থেকে এভাবেই ঘুমাতে হবে!

বলেই কপালে একটা চুমু দিলেন!!

- কি, করছেন কি?

- আমার বউকে আমি দিলাম, তোর কি সমস্যা?

চুপচাপ ঘুমা।

বলেই চোখ বন্ধ করে নিলেন।।

উনার এতোটা কাছে আমি। উনার প্রতিটি হার্টবিট শুনতে পাচ্ছি। উনার নিঃশ্বাস ছুঁয়ে যাচ্ছে আমায়...

পরদিন সকালে আম্মু,ফুপি,মাহি আপু নাস্তা তৈরি করছে। আমিও গেলাম।

ডাইনিং এ আব্বু,রিয়াদ ভাইয়া,আরিফ,দিয়া বসে নাস্তা করছে।

- রেহান কই রে?

- রেহান ভাই তো ঘুমাচ্ছে।

আব্বুর কাশি শুনে গিয়ে তাড়াতাড়ি পানি দিলাম। ভীষম খেয়েছেন।

মাহি আপু রিয়াদ ভাইয়ার মুখে, রিয়াদ ভাই মাহি আপুর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আবার আম্মুর দিকেও তাকাচ্ছে।

দিয়া খিক করে হেসে মুখ হাত চেপে হাসি থামিয়ে দিলো।।

আমি বুঝতে পারলাম না কি হচ্ছে এখানে।

এদিকে রেহান ভাইও সিঁড়ি দিয়ে নেমে এসেছে।

- অইতো, রেহান ভাই এসে গেছে।

বলেই মাহি আপু মুখ টিপে হাসছে।

এতোক্ষনে বুঝলাম।।

আমি রেহান ভাই বলেছি বলেই আব্বু ভীষম খেয়ে গেছেন!

বিয়ে হলেও যেন কিছুই বদলায়নি এই বাড়ি আমার কাছে নতুন নয়।ছোট্ট বেলা থেকেই এই বাড়ির প্রতিটি কোনা আমার চেনা।

শুধু আমার নিজের রুমটা ছাড়তে হয়েছে!!

রুমে এসে দেখি রেহান ভাই বই পড়ছেন।

আমি যে আসলাম উনি তাকিয়েও দেখেননি।

আমি ড্রেসিং টেবিলের সামনে গুছিয়ে রাখছি।

গ্লাসে দেখলাম উনি আমার পেছনে এসে দাঁড়িয়েছেন।

ঘুরে দাঁড়িয়ে বললাম - কি?

- তোর মাথায় কি আছে?

মাথায় হাত দিয়ে বললাম- কই? কিছু নেই তো।

- এইজন্যই!!

- এজন্যই কি?

- তোর মাথায় যে কিচ্ছু নেই এই জন্যই...

- কি... বলবেন তো!!

- আমি তোর ভাই লাগি?

- অহহ!

- এতো দিনের অভ্যাস।

- এতো দিনের অভ্যাস!! সবার সামনে কি একটা লজ্জায় পড়তে হলো, তোর গাধামির জন্য!

- আমি কি ইচ্ছে করে বলেছি নাকি!!

- আর একদিন যদি মুখ ফসকেও বের হয়,তবে দেখিস!

- কি করবেন?

- কি করবো?

রেহান ভাই আরেকটু কাছে এসে বললেন - দেখিস কি করি!

চলবে....

1
$ 0.00

Comments

অসাধারন যা বলার ভাষা রাখে না। অনেক রোমান্টিক একটা গল্প। ধন্যবাদ লেখককে

$ 0.00
4 years ago

গল্পটি খুব সুন্দর হয়েছে। এটি পড়ে আমার খুব ভালো লাগলো। আপনি খুব সুন্দর করে গল্প লিখেছেন। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

$ 0.00
4 years ago