বউ যখন অতিরিক্ত রোমান্টিক

5 8

গল্পঃ বউ যখন অতিরিক্ত রোমান্টিক।😍

পর্বঃ ৭

এভাবেই আনন্দের সাথে কেটে গেল আমাদের আরো বাকি চার দিন।

আজ আমাদের দেশে ফেরারপালা।

প্লেন থেকে নামার পর,,,

আমাদের অফিস কর্তৃক পাঠানো বাস দিয়ে।

প্রত্যােককেনিজ গন্তব্যে পৌছে দেওয়া হলো।

-

-

বাসায় আসতে আসতে প্রায়রাত ১২ টা বেজে গেল।

এসে দেখি বাবা, মা, বোন সবাই আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।

-

কেউ এখনো পর্যন্ত ডিনার করেনি।

প্রচুর ক্লান্ত হয়ে গেলাম।

তাদেরকে বেশিক্ষণ বসিয়ে না রেখে দ্রুত

হাতমুখ ধোয়ে টেবিলে বসলাম।

লিমা খাচ্ছে না,,,

কেবলপ্লেটের ওপর হাত রেখে নাড়াচাড়া

করছে আর মুচকি হাসছে।

লিমার চেহারায় ভাবনার ছাপ স্পষ্টভাবেই দেখতে পাচ্ছি।

-

-

মাঃ কি বেপার বউমা! খাচ্ছ না যে?

-

লিমাঃ ও, কিছুনা মা।

-

বাবাঃ কোনো সমস্যা থাকলে বল বউমা।

-

লিমাঃ না বাবা, কোনো সমস্যা না।

আপনারা শুধু শুধুই চিন্তা করছেন।

-

-

ডিনার শেষে রুমে লিমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।

লিমা দরজায় টোকা দিল।

-

-

লিমাঃ আসতে পারি জনাব..?

-

আমিঃ হ্যা আসুন বেগম সাহেবা।

আপনার জন্যই যে অপেক্ষা করছিলাম।

-

লিমাঃ ও আচ্ছা! তো আমার দুষ্ট বরটার মুখ ভার কেন?

-

আমিঃ রোমান্টিক বউটার অবস্থা উপলব্ধি করতে করতে।

-

লিমাঃ আপনার রোমান্টিক বউটা আবার

কি করল শুনি?

-

আমিঃ তুমি টেবিলে বসে কিছু ভাবছিলে।

আর মা, বাবাকে বলনি কেন,,,?

-

লিমাঃ ও এজন্য! তা সেটা মা, বাবাকে

কিভাবে বলব,,, সেটা যে টপ সিক্রেট ভাবনা ছিল।

-

আমিঃ আমার জন্যেও কি টপ সিক্রেট?

-

লিমাঃ আরে কি যে বলো। তুমাকে না বললে আর কাকে বলব।

-

লিমাঃ তখন আমার কল্পনায় আমাদের বাচ্চা এসেছিল।

-

আমিঃ আমাদের বাচ্চা? ছেলে নাকি মেয়ে?

-

লিমাঃ মেয়ে এসেছিল। সে কি বলছিল জান?

-

আমিঃ কি বলছিল?

-

লিমাঃ বলছিল " আম্মু, আম্মু, তোমাদের সিঙ্গাপুরের ছবিগুলো দেখাওনা!

-

আমিঃ তারপর তুমি কি করলে?

-

লিমাঃ ক্যামেরা ওর হাতে দিয়ে দিলাম।

আর ও একটা একটা করে ছবি দেখতে লাগল।

হঠাৎ....

-

আমিঃ হঠাৎ কি?

-

লিমাঃ হঠাৎ একটা ছবি আমাকে দেখিয়ে ভীষণ হাসতে শুরু করল।

-

আমিঃ কেমন ছিল সেই ছবিটা?

-

লিমাঃ বলতে পারবনা।

-

আমিঃ কেন?

-

লিমাঃ লজ্জা লাগেতো। আচ্ছা ছবিটা কেমন ছিল বলছি,,,, একটু অপেক্ষা করো।

কথাটা বলেই লিমা লাইট

অফ করে দিল।

আমার ঠোঁট কেউ আমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে চাচ্ছে মনে হলো।

এবার লিমা আমাকে ছেড়ে বলল...

-

-

এবার বুঝলেনতো মশাই কেমন ছিল ছবিটা?

-

আমিঃ হুম,,বুঝলাম।

-

লিমাঃ কি বুঝলেন?

-

আমিঃ আমাদের ঘর আলোকিত করে হয়তো একটা দুষ্ট মামনি আসবে। আর...

-

লিমাঃ আর কি?

-

আমিঃ আর আমার বউটা অনেক রোমান্টিক।

বলেই লিমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।

কপালে আদর দিলাম।

-

-

লিমাঃ আচ্ছা তুমি কখনো সিনেমায় দেখেছ বাচ্চা জন্ম দিতে গিয়ে মায়ের মৃত্যু ?

-

আমিঃ হ্যা দেখেছি।

বাস্তবেও এমন অনেক ঘটনার কথা শুনেছি।

-

লিমাঃ আমার যদি এমন কিছু হয়ে...

-

আমিঃ প্লিজ এমন কিছু বলোনা যা কখনো ভাবতেই আমার কষ্টে কলিজা ফেটে যাবে।

-

-

লিমা আমাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে।

নিজের অজান্তেই কথাটা ভাবতে ভাবতে চোখ থেকে দুই ফোটা পানি ঝরে পড়ল।

মনে মনে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকলাম।

"ইয়া আল্লাহ, যে কোন কিছুর বিনিময়ে হলেও আমার লিমাকে কেড়ে নিও না।

আমিন।"

পাগলীটাকে বুকে আগলে রেখে ঘুমিয়ে পড়লাম।

সকালে সূর্যের আলো এসে চোখে পড়ায় ঘুমটা ভেঙ্গে গেল।

তাকিয়ে দেখি লিমা জানালার পর্দা সরিয়ে দিয়েছে।

-

-

লিমাঃ এই ওঠো, অফিস যাবেনা?

-

আমিঃ হুম যাব। আর একটু ঘুমিয়ে নিই।

-

লিমাঃ ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখো কয়টা বাজে।

ঘড়ির দিকে তাকিয়ে টাসকি খেলাম।

অফিসের সময় শুরু হতেমাত্র আধ ঘন্টা বাকি।

না গেলেও বসের কথা শুনতে হবে।

দ্রুত দাঁত ব্রাশ করে হাত মুখ ধুয়ে রুমে এসে দেখি।

লিমা আমার নাস্তা রেডি করে বসে আছে।

-

লিমাঃ তুমি রেডি হও আর আমি তুমাকে বাচ্চাদের মতো খাইয়ে দিচ্ছি।

-

আমিঃ লক্ষী বউটা আমার।

কপালে চুমু দিয়ে রেডি হতেশুরু করলাম।

খেয়ে গাড়ি ধরে অফিসে পৌছে গেলাম।

পাঁচ মিনিট লেট হলো।

-

-

বসঃ রাশেদ সাহেব, আপনিতো কখনো লেট করে আফিসে আসেননি।

আজ পাঁচ মিনিট লেট হলো যে..

-

কলিগঃ স্যার, ওনি নতুন বিয়ে করেছেন তো

তাই মনে হয় ভাবির আচল ছেড়ে আসতে ইচ্ছা হয়না।

-

বসঃ ওহ! আমিতো ভুলেই গিয়েছিলাম আপনার বিয়ের কথা।

এইসব বলে সবাই হাসাহাসি করছিল।

বস আমাকে আর দেরি না করার শতর্কবাণী দিয়ে বিদায় জানালেন।

আমি তাড়াতাড়ি কেবিনে গিয়ে কাজে মনযোগ দিলাম।

কিছুক্ষণের মধ্যেই লিমারফোন আসল....

-

-

আমিঃ হ্যালো!

-

লিমাঃ ঠিকমতো পৌঁছাতে পারছতো?

-

আমিঃ হুম। পাঁচ মিনিট লেটে আসছি।

-

লিমাঃ কিছু বলেনিতো তুমার বস?

-

আমিঃ তেমন কিছু বলেনি, শতর্ক করে দিছে যেন আর লেট না করি।

-

লিমাঃ আপনার লেট হবেই। কারন আপনিতো ঘুমরাজ।

-

আমিঃ না, আমি পরিশ্রমী।

-

লিমাঃ কি এমন পরিশ্রম করো তুমি?

-

আমিঃ তুমার জন্য প্রতি রা....😍

-

লিমাঃ যাহ দুষ্ট কোথাকার। আচ্ছা

রাখি এখন I love you.

-

আমিঃ হুম,,,love you too.

-

-

ফোনটা রেখে আবার কাজেমনযোগ দিলাম।

কাজ করতে করতে লাঞ্চের সময় হলে খেয়ে আবার কাজ শুরু করলাম।

দুপুরের পর আবার লিমা ফোন করল।

-

-

লিমাঃ হ্যালো

-

আমিঃ হুম বলো।

-

লিমাঃ দুপুরের খাবার খেয়েছতো?

-

আমিঃ হ্যা, এইমাত্র খেয়েছি। তুমি খেয়েছ?

-

লিমাঃ হুম।

বউটা আমার এত কেয়ার করছে।

তার প্রতিও তো আমার কিছু ভালবাসা দেখানো প্রয়োজন।

-

-

আমিঃ আচ্ছা, তোমার কি কিছু লাগবে?

-

লিমাঃ কি লাগবে?

-

আমিঃ কিছু প্রয়োজন হলে বলো আসার সময় নিয়ে আসব।

-

লিমাঃ আমার কিছু লাগবেনা।

-

আমিঃ ঠিক আছে।

রাত আটটায় বাসার উদ্দেশ্যেরওনা হলাম।

না, কিছুতো লিমার জন্য নিতে হবে।

লিমার জন্য কিছু নীল চুড়ি,,,,

কিছু কালো টিপ,,,,

আর একটা গোলাপ কিনলাম।

কলিং বেল বাজাতেই দরজাখোলে গেল।

মনে হচ্ছে দরজার পাশেই কেউ দাড়িয়ে অপেক্ষা করছিল।

তাকিয়ে দেখি লিমাই দরজা খোলেছে।

চলে গেলাম আমাদের রুমে।

-

-

লিমাঃ আমার জন্য কিছু এনেছ?

-

আমিঃ তুমাকেতো জিজ্ঞেস করেছিলাম কিছু লাগবে কিনা।

তুমিতো কিছু আনতে বলনি।

-

লিমাঃ আমি বলিনি তাতে কি?

তাই বলে নিজে থেকে কিছু আনবেনা ?

-

আমিঃ এত ভালবাসা নাই আমার।

-

লিমাঃ ওহ আচ্ছা। ( অভীমান করে বললো)

-

আমিঃ হুম।

আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

তুমি খাবার রেডি কর।

-

............(দেখি পিছন ফিরে চুপ করে আছে)

পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম।

-

লিমাঃ এই ধরবানা আমায়।

-

আমিঃ এই দেখো কি এনেছি।

তাকিয়ে খুশিতে আমাকে জড়িয়ে ধরল।

-

-

আমিঃ ড্যাপ ড্যাপ করে তাকিয়ে আছ কেন?

লিমাঃ আমাকেও জড়িয়ে ধরো।

-

আমিঃ তুমিতো ধরতে মানা করেছ।

-

লিমাঃ এখনতো ধরতে বলছি।

-

আমিঃ পারবনা।

-

লিমাঃ আচ্ছা ফ্রেশ হয়ে এসো।

হাতমুখ ধুয়ে এসে দেখি একটা নীলপরী আমার সামনে দাড়িয়ে আছে।

নীল শাড়ি,,,,

হাতে নীল চুড়ি,,,,

কপালে কালো টিপ।।।

সব মিলিয়ে একদম পরীদেরমতো লাগছে।

কাছে গেলাম।

টেবিলের ওপরে রাখা গোলাপটা লিমার চুলে গেথে দিলাম।

এবার পরীটাকে আরো ভাল লাগছে।

লিমার লাজুক চোখের চাহনিআমাকে পাগল করে দিচ্ছে।

আমি নিজেকে সামলাতে পারলামনা।

পরীটাকে কোলে তুলে নিলাম।

-

-

লিমাঃ এই ছাড়, পড়ে যাব।

-

আমিঃ পড়ে গেলে কি হবে?

-

লিমাঃ ব্যাথা পাব।

-

আমিঃ ব্যাথা পেলে আমার বউ পাবে।

তাতে আপনার কি?

-

লিমাঃ কারণ! আপনার বউয়ের কষ্ট হলে

আমার বরেরও যে কষ্ট হয়।

-

ছোট বোন লিজাঃ হয়েছে হয়েছে, তোমাদের জন্য সবাই কষ্ট করে টেবিলে অপেক্ষা করছে সেদিকে কি খেয়াল আছে?

-

চমকে গিয়ে লিমাকে নামিয়ে দিলাম।

-

-

আমিঃ এই লিজা,,,,,, তুই এখানে কি করছিলি এতক্ষন।

-

লিজাঃ দাড়িয়ে ছিলাম।

-

আমিঃ এখানে দাড়িয়ে ছিলি কেন?

-

লিজাঃ আমার ভাই আর ভাবির রুমের

সামনে দাড়িয়ে ছিলাম তাতে আপনার কি?

কথাটা বলেই হেসে দৌড়ে পালাল। লিমাও হাসছে।

খাবার খেয়ে চলে আসলাম রুমে।

একটু পর লিমাও চলে এলো।

আজ কেন জানি খাওয়ার পর খুব ক্লান্ত লাগছে,,,

তাই শুয়ে পড়লাম।

লিমা রোজ এর মতোই আমার বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে ।

কিন্তু ঘুম আসছেনা কারো।

-

-

লিমাঃ চলো ছাদে যাই।

-

আমিঃ আজ যাবনা।

এতটাই ক্লান্ত লাগছে যে হাটতেই মনে হয় পারবনা।

-

লিমাঃ তুমি যদি ছাদে এখন আমাকে নিয়ে না

যাও

তাহলে....

-

আমিঃ তাহলে কি।

-

লিমাঃ তাহলে তুমার সাথে আর কথা নাই।

-

আমিঃ আচ্ছা চলো।

কি আর করব।

বাধ্য হয়েই গেলাম ছাদে।

বাইরে থেকে দরজা লক করে দিলাম যেন চাবি ছাড়া কেউ খুলতেনা পারে।

সারা রাত জোছনার আলো গায়ে মাখলাম।

কখন যেন ছাদেই ঘুমিয়ে পড়লাম

কে জানে।

সকাল বেলায় লিজার ডাকে ঘুম ভাঙল।

লিমাকে আমার বুকের মধ্যে শুয়ে

থাকতে দেখলাম।

#__চলবে......!

6
$ 0.00

Comments

Golpo ta khub e sundhor. Pore onk valo laglo.Sironam ta khub romantic. Golpo ta o besh. Asa Kori amn sundhor golpo aro Porte parbo. Donnobad.

$ 0.00
3 years ago

Very Nice and romantic story. I read your all article. You wrote many nice story.

$ 0.00
3 years ago

This post is about romantic and love story. A man without love cannot live. This article is very good.thanks a lot.

$ 0.00
3 years ago

গল্পের শিরোনাম টা খুবই সুন্দর। তবে বর্তমান সমাজে এরকম বউ সচরাচর দেখতে পাওয়া যায়।আরএদের মন জুগিয়ে চলা আমার কাছে সবচেয়ে ভাল মনে হয়।

$ 0.00
3 years ago

গল্পগুলোর সিরিয়াল অনুযায়ী পড়তে বেশ ভালোই লাগছে। খুবই রোমান্টিক একটা গল্প।আর গল্পের শিরোনাম টা করলেই তো একটা নেশা ধরে গেছে। যাইহোক লেখককে অনেক ধন্যবাদ আমরা খুব শীঘ্রই পরের পর্বটি দেখতে চাই।।

$ 0.00
3 years ago