একটি সকাল

1 9
Avatar for Nishi
Written by
3 years ago

"একটি সকাল" কথাটি একটু কাব্যিক কাব্যিক মনে হলেও সবার জন্য মোটেও ব্যাপারটা কতটা কবিতার মত নয়।

নাটক সিনেমাতে যেমন দেখা যায় সকালে নায়িকা ঘুম থেকে উঠলে নায়ক-নায়িকাকে জড়িয়ে ধরে আদর করে কত রোমান্টিক সব দৃশ্য আহারে দেখতে কতইনা ভালো লাগে।দিনে দিনে যেন তাদের ভালোবাসা বেড়েই চলে ।ইস, এই ভালোবাসা আর কমান নয় দেখতে মাঝে মাঝে অনেক সময় হিংসা লাগে আবার অনেক সময় অনেক হাসিও পায়।

কতবার তো নিজেকে সেই সিনেমার নায়িকা ভেবে কী আনন্দই না পেতাম মনে মনে ,কিন্তু বাস্তবতা কি তাই ?কার জীবন কেমন ভাবে অতিবাহিত করছেন জানিনা,কারো কারো সকালটা শুরু হয় ঝড়ের বেগে যেন টর্নেডো এসে হানা দিয়েছে ঘরের ভেতর।

যেমন আমাদের মিনা ভাবির কথাই ধরুন না কেন, আমার মিনা ভাবি খুব সহজ-সরল গ্রামের মেয়ে ছিল। কিন্তু বিয়ের পর গ্রাম ছেড়ে চলে আসে স্বামীর হাত ধরে এই ব্যস্ত শহরে একটা ছোট্ট ঘর বাঁধার আশায় ।ঢাকা, ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী সবাই জানি ।এই যান্ত্রিক শহরে যে একবার এসেছে সেও যন্ত্রে পরিণত হয়েছে।আর মিনা ভাবিত তাদের থেকে আলাদা কেউ নয় ।তার সকাল শুরু হয় ভোরে যখন মসজিদে আজান শুরু হয় ।ঘুম থেকে জেগেই চোখ দুটো কচলাতে কচলাতে চায়ের পানি চুলায় বসান আর নিজে ফ্রেশ হন অজু করে নামাজ পরেন।

নামাজ শেষে চা বানিয়ে চা খেতে খেতে রুটি বানানোর প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায় তার।ও বলতে ভুলে গেছি, মিনা ভাবি আবার টোস্ট বিস্কিট খুবই পছন্দ করেন ।এক কাপ চায়ের সাথে একটা টোস্ট বিস্কুট সকালে না হলে তার তো দিনই শুরু হয় না!

যদিও বা কোন কোন সকালে ওই এক কাপ চা আর টোস্ট বিস্কিটের উনার কপালে জোটে ।না না এটা ভাববেন না যে সকালের নাস্তা দেয়না ।নাস্তা ঠিকই থাকে কিন্তু তিনি এতই ব্যস্ত থাকেন নাস্তা করার সময় পান না।তাহলে তিনি কি করেন সারা সকাল জুড়ে যে নাস্তাটা করার সময় পান না। আসুন তাহলে জেনে নেই সকালের রুটিন টা ,কি কেনইবা তিনি এত ব্যস্ত থাকেন।

মিনা ভাবির দুটো ছেলেমেয়ে ।একটা মেয়ে, একটা ছেলে ।মেয়েটা বড় আর ছেলেটা ছোট ,মেয়েটা চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে আর ছেলেটা পরে দ্বিতীয় শ্রেণীতে।

সকালে শুরু হয় নাস্তা বানানোর যুদ্ধ ।নাস্তা বলতে রুটি তার সাথে একটা সবজি ভাজি সাথে ডিম ভাজি, চা ,তার সাথে আছে বাচ্চাদের টিফিন বানানোর ঝামেলা আজ লুডুস খাব তো কাল রোল খাব। একেক দিন একেক বায়না।

তারপর বাচ্চাদের ঘুম থেকে জাগিয়ে ব্রাশ করিয়ে নাস্তার টেবিলে বসান । নাস্তা খাওয়াতে খাওয়াতে তার স্বামীকে ডেকে তুলতে জান অফিসের জন্য ।বাচ্চাদের সকালে ঘুম থেকে জাগানোর নাস্তা করে রেডি করে স্কুল পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া মিনা ভাবির কাজের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে।তার স্বামী নাস্তা করে সোজা তৈরি হয় অফিসের জন্য রওনা দিয়ে বেরিয়ে যান কারণ উনি বাচ্চাদের স্কুলে নিয়ে যেতে পারেন না ।অফিসটা স্কুল এর বিপরীতে তাই স্কুলে যেয়ে আবার উল্টো ঘুরে অফিসে যাওয়া ঝামেলা তার জন্য।তাই এই ঝামেলা থেকে মুক্তি দেওয়ার দায়িত্ব ও মিলা ভাবিরে কাঁধে এসে পড়ে।

আর যেহেতু মিনা কোন কর্মজীবী মহিলা নন তাহলে তার এত তাড়া কিসের বলুন ,এসব দায়িত্ব একটার পর একটা নেওয়াটাই ওনার জন্য ঠিক তাই না।একটা মেয়ে যখন বিয়ে হয়ে নতুন একটা সংসারে প্রবেশ করে তখন তার মনে অনেক স্বপ্ন থাকে সেই সংসার কে নিয়ে।

আর এই সংসারের কাজের দাবা কলে পরে নিজের স্বপ্ন গুলো কখন যে নাই হয়ে যায় তা কেউই জানেনা। হ্যাঁ আমি বলব না যে সংসারের কাজ মহিলাদের করা উচিত নয়, সব কাজই করা উচিত তবে একটু সাহায্য প্রত্যাশা করা যায় তাই না।এই হল একজন মিনার গল্প এমন হাজারো লক্ষ কোটি মিনা প্রতিনিয়ত আমাদের সমাজে এভাবে অবহেলিত হয়ে আসছেন।

4
$ 0.00
Avatar for Nishi
Written by
3 years ago

Comments

😞😞😞😞😔😔😔😔😔😔😔😔😔😔😔😔 সত্যি খুব কষ্টদায়ক পোস্ট ছিলো। মেয়েদের কে সৃষ্টি করেছে ধৈর্যশীলতা দিয়ে একটা নারী জীবনে অনেক বাধা অনেক কষ্ট অনেক বেদনা আসবে। একটা মেয়ে নতুন সংসারে যে নতুন সংসার কে সুন্দর করে বন্ধনে আটকে রাখে যে কত কঠিন তা একমাত্র একটি মেয়ে ভালো বলতে পারে।সে মেয়েটির করতে গিয়ে তার হাজারো স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল তা বাস্তবে পরিণত হলো না।এ ধন জীবন সঙ্গী যদি সঠিকভাবে তার জীবন সঙ্গীকে পরিচালনা করে সেই সঙ্গে কখনো আপস কষ্টের মধ্যে জীবন কাটাবে নারী-পুরুষ উভয়ই সমান তারা চলা উচিত।একটু সংসার টিকিয়ে রাখা এত সহজ নয়।মা বাবার ভূমিকা আছে সংসারের।দুজনে ভাগাভাগি করে কোনো কাজ শেষ করলে সেটা সম্মান বৃদ্ধি পাই। ধন্যবাদ আপনাকে এমন একটি পোস্ট আমাদের সাথে ভাগাভাগি

$ 0.00
3 years ago