জীবনটা তেজপাতা

0 9
Avatar for Nikita11
4 years ago

"রম্য গল্প"

"প্যাড়াময় দিন'

পাশের বাসার একটা মেয়ের সাথে কথা বলতেছি। এমন সময় মা দেখে ফেলছে আমাদের। সে ভাবছে আমাদের মাঝে ইন্টু পিন্টু চলছে। সেই কারনে শাস্তি হিসেবে আজকে আমাকে রান্না করতে হবে। আমি মাকে অনেক রিকুয়েস্ট করলাম। বললাম।

-মা আমার তার সাথে কোন ধরনের সম্পর্ক নেই। ছাদে গিয়েছিলাম দেখি মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে তাই একটু কথা বলছিলাম। আর তুমি কি সব ভেবে ফেলছো।

কে শুনে কার কথা। মা যখন একবার বলেছে তখন আমাকে রান্না করতেই হবে। সেই ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি আমাদের পরিবারে মাই প্রধান। মা যা বলবে তাই করতে হবে সবার। বাবাও মায়ের মুখের সামনে উচু গলায় কথা বলতে ভয় পায়। কারন আমার মার বাবা পুলিশ। কিছু হলেই সে তার বাবার ভয় দেখাই।

একবার মা বাবাকে বলেছি তার জন্য কয়েকটা চুড়ি কিনে নিয়ে আসতে। আমার মা আবার প্রচন্ড চুড়ির পাগল। বাবা অফিসের কাজে ব্যাস্ত থাকায় বাড়ি ফিরার সময় মনে ছিলো না। আর সেই নিয়ে কত রম্য কাহিনি। মা তার বাবাকে তখনই ফোন করে কেঁদে কেঁদে বলল।

-বাবা আমি সংসার করবো না। যে কিনা একটা চুড়ি কিনে দিতে পারে না। একটা চুড়ি কিনে দেওয়ার সামর্থ্য যার নেই তুমি তার সাথে আমাকে বিয়ে দিলে কি করে বাবা। আমি তার ভাত খাবো না।

সেদিন রাতে বাবা, মার কাছে অনেকবার ক্ষমা চেয়েছে। কিন্তু মা এক কথার মেয়ে। যা বলবে তাই করবে। সারা রাত মাকে বুঝিয়েও লাভ হয়নি। তার এক কথা।

-আজ চুড়ি কিনতে ভুলে যাও তুমি। কালকে শাড়ি কিনতে ভুলে যাবে। পরশু গহনা। তারপরে তো আমাকেই ভুলে যাবে। আমি আর তোমার ভাত খাবো না।

পরেরদিন সকালে বাবার শশুর মানে আমার নানা এসে বাবাকে সোজা থানায় নিয়ে গিয়ে জেলে আটকে রাখলো। তিনদিন জেলে আটকে রাখছিলো বাবাকে। সেই থেকে বাবা আর কোনোদিন কিছু ভুল করেনি।

আমি বাবাকে বললাম।

-বাবা আমি জীবনেও রান্না করিনি, আমি কিভাবে রান্না করবো। রান্না করতে গেলে দেখা যাবে নুনের পরিবর্তে চিনি দিয়েছি। শেষে রান্না ভালো না হলে আবার আরেক শাস্তি। প্লিস বাবা তুমি একটা কিছু করো।

বাবা রেগে গিয়ে বলল,

-মেয়ে দেখলেই কথা বলতে ইচ্ছে করে। বলির পাঠা যখন হয়েছিস তখন তো রান্না করতেই হবে। কোনো বাহানা চলবে না।

শেষে বাধ্য হয়েই রান্না করতে হলো আমাকে। রান্না করছি। মাছ ভাজি করে আলাদা প্লেটে রেখে দিয়েছি। তরকারি বলোক উঠলেই মাছটা ছেড়ে দিবো। এমন সময় মনে হলো লবনটা দেখা দরকার। লবন দেখতে গিয়ে হাতে ছেঁকা খেলাম। লবন হয়নি। আরও লবন দিতে হবে।

লবন আনার জন্য রুমে আসলাম। কিছুক্ষন খোঁজাখুঁজির পর পেলাম। রান্না ঘরে গিয়ে দেখি প্লেটে একটাও মাছ নেই। শুধু একটা মাছের অর্ধেক পরে আছে।

পাশেই একটা সাদা বিড়াল খুব আরাম করে মাছ খাচ্ছে যেন তার বাপ দাদার সম্পত্যি।রাগ উঠে গেল আমার। বিড়ালকে মারার জন্য হাতে ইয়া বড় একটা লাঠি নিলাম। আজকে বিড়ালের একদিন আর আমার যে কয়দিন লাগে।

হাতে লাঠি নিয়ে বিড়ালকে তারা করছি। যেই বাড়ি দিবো অমনি পাশের বাসার আন্টি লাঠির নিচে চলে আসলো। লাঠির বাড়ি গিয়ে পরলো আন্টির মাথায়। মাথা একটু ফেটে গেছে সেখান থেকে রক্ত বের হচ্ছে।

আন্টি রাগে কটমট করে বলল,

-এই ছেলে আমাকে বাড়ি মারলে কেন?

-স্যরি আন্টি, আমি ভেবেছিলাম বিড়াল।

-জলজ্যান্ত মানুষকে তুমি বিড়াল বানিয়ে ফেলছো অসব্য ছেলে কোথাকার। তোমার আম্মুর কাছে আজকে আমি বিচার দিবো।

-আন্টি ভুল হয়ে গেছে আর হবে না, প্লিস আপনি আম্মুকে বলবেন না।

কে শোনে কার কথা। আন্টি রাগে গজগজ করে চলে গেল। সামনেই সাদা বিড়ালটা আরামচে চেয়ারে বসে আছে। আমি তাকাতেই একটা জোরে গা ঝাড়ি দিলো। যেন সে মনে বলছে, "আমাকে তারা করছিস মারতে চাস আমাকে, এবার দেখ কেমন লাগে।

আমি রাগে আবার বিড়ালকে তারা করলাম। পরক্ষনেই মনে হলো চুলোয় তরকারি রয়েছে। মনে হয় পুরে গেছে এতক্ষনে। দৌড় দিলাম চুলার দিকে। নিজের লাঠির সাথে পা পেঁচিয়ে ধপাশ করে পরে গেলাম।

উঠে আবার দৌড়। রান্না ঘরে গিয়ে দেখি তরকারির ঝোল একটুও নেই। শুকিয়ে কাট হয়ে গেছে। অল্প কিছু পানি ঢেলে দিলাম। কিছুক্ষন পর নিয়ে আসলাম রুমে। একটা স্বস্থির নিশ্বাস ফেললাম। যাক অনেক ধকলের পড়ে রান্নাটা শেষ হয়েছে।

আম্মুকে দুপুরে বাসায় আসলো। টেবিলে খাবার সাজিয়ে বললাম।

-আম্মু আমার জীবনের প্রথম রান্না। খেয়ে দেখ কত্ত মজা হয়ছে।

-দেখি কি রকম মজা হয়ছে।

আম্মু প্লেটে ভাত নিলো। আমি তরকারি বেরে দিলাম। ভাতের সাথে তরকারি নিয়ে মুখে দিতেই আম্মু পানি পানি বলে চিৎকার দিয়ে উঠলো। আমি পানি দিলাম।

-কি হলো আম্মু, তরকারিতে কি ঝাল বেশি হতেছে। আসলে ঝাল একটু বেশিই দিয়েছি। না হলে তরকারি টেষ্ট হবে না।

আম্মু দাঁতে দাঁত চেপে বলল।

-হারামজাদা তরকারিতে লবন দিয়েছিস কত কেজি?

-আসলে মা একটা বিড়ালের উপর রাগ করে এক মুঠ লবন কখন দিয়েছি টেরই পাইনি।

আম্মু তরকারির পাতিলটা ভালো করে দেখে বলল।

-হারামজাদা একটা মাছও তো নেই। মাছ কি করছিস।

-মা মাছ গুলো বিড়াল খেয়ে ফেলছে। সেই বিড়ালের উপর রাগ করে তরকারিতে লবন বেশি দিছি।

দরজা খুলে পাশের বাসার আন্টি প্রবেশ করলো রুমে। মাথায় তার ব্যান্ডেজ। মাকে দেখিয়ে বলল।

-আন্টি আপনার ছেলে আমার মাথা ফাটিয়ে দিছে। সে বলে আমি নাকি বিড়াল।

আম্মু আমার দিকে রাগি চোখে তাকালো। বলল,

-হারামজাদা আন্টির মাথা ফাটিয়েছিস কেন?

-আসলে মা, মাছ খাওয়ার অপরাধে বিড়ালকে তারা করছিলাম। যেই বাড়ি দিবো সেই সময় আন্টি চলে আসছে। আমার কোন দোষ নেই।

-দেখছেন আন্টি আপনার সামনে মিথ্যা কথা বলছে। আবার বলছে দোষ নেই।

আম্মু সব সহ্য করতে পারে কিন্তু নিজের অপমান সহ্য করতে পারে না। সাথে সাথেই নানার ফোনে ফোন চলে গেল।

এখন আমি জেলে। সকাল থেকে কিচ্ছুই খাই নি। নানাকে বললাম।

-এক প্লেট বিরিয়ানি এনে দাওয়া নানু। খুব ক্ষুধা লেগেছে।

নানা তার মোটা লাঠি দিয়ে পাছায় বাড়ি মারলো।

-দারা তোকে বিরিয়ানি খাওয়াচ্ছি।

অনেক্ষন হলো আমি জেলে আটকে আছি। বাবা মা কেউ ছাড়াতে আসেনি। ক্ষুধায় পেট জলছে। অনেক রিকুয়েস্ট করার পর নানুর দয়া হলো।

জেলের গ্রিলের ভিতর দিয়ে তিনটা রুটি দিলো। একটা রুটিও ভালো না। তিনটাই পোড়া। আমি রুটি ছিড়ে ছিড়ে খাচ্ছি আর গান গাচ্ছি।

"আমি বন্দি কারাগারে মা, আমি বন্দি কারাগারে"

"বাইরে যাওয়া আর হবে না মা, আমি বন্দি কারাগারে"

"দিন শেষে সন্ধায়, তিনটা রুটি পোড়া রুটি দেই। নানুর মনে দয়া হয় না মা।

"আমি বন্দি কারাগারে.....!

জীবনটা তেজপাতা🍁

1
$ 0.00
Avatar for Nikita11
4 years ago

Comments