অভয়

0 2
Avatar for Najmul1234
3 years ago

ইন্টারমিডিয়েট পড়ুয়া এক ছাত্রী ক্লাসে আমাকে জিজ্ঞেস করলো, স্যার, ইংরেজি আমার কাছে এতো কঠিন লাগে কেনো?

আমি মাথা চুলকে জিজ্ঞেস করলাম, কারণটা জানতে চাও সত্যিই?

তখন কেবল সেই ছাত্রীই নয়, আরো কয়েকজন কারণ জানার জন্যে ব্যাকুল হয়ে উঠলো।

আমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললাম, তাহলে চলো আগে একটা গল্প শোনা যাক। কারণটা তোমরা এমনিই বুঝতে পারবে।

আমি তখন বাচ্চা একটা ছেলে। গ্রামের সাধারণ স্কুলে ক্লাস ফাইভে পড়ি। সামনে সমাপনী আর বৃত্তির পরীক্ষার প্রচুর চাপ। বাড়ির সবাই স্বপ্ন দেখে আমি এ-প্লাস পাবো, বৃত্তি পাবো। তাই আমার উপর অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করা হতো। প্রতিদিন স্কুল-কোচিং ছাড়াও তিন চারটে প্রাইভেট থাকতো।

একটা প্রাইভেট ছিলো ভোর ছ’টায়। তখন শীতকাল। ভোরবেলায় প্রচণ্ড কুয়াশা পড়তো। পাঁচ হাত সামনেই সবকিছু ঝাপসা দেখা যেতো। অবশ্য সেই প্রাইভেটে আমি একা যেতাম না। সাথে আমার এক চাচাতো ভাইও পড়তো।

একদিন ভোরবেলা উঠে শুনি চাচাতো ভাইয়ের জ্বর এসেছে। তারমানে প্রাইভেটে আমাকে একা যেতে হবে। কী আর করার! একাই রওনা হলাম। বাড়ি থেকে বিশ মিনিট হাঁটতে হয়। তো আমি বইপত্র নিয়ে বের হয়ে পড়লাম। বাড়ি থেকে কিছুদূর আগানোর পর হঠাৎ আমি থমকে দাঁড়ালাম। রাস্তায় একটা ভূত দাঁড়িয়ে আছে। আশেপাশে কেউ নেই। আমার গাঁ কাঁটা দিয়ে উঠলো। উঠাও স্বাভাবিক ছিলো। সাদা কাপর পরা একটা ভূত। কুয়াশার জন্যে ভূতটাকে আরো ভয়ংকর দেখাচ্ছে। সে তার তিনটা হাত তিনদিকে প্রসারিত করে মৃদু বাতাসের তালে তালে নাচাচ্ছে। আমি মিনিট খানেক সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তারপর আব্বাগো বলে এক চিৎকার দিয়ে বাড়ির দিকে ছুটলাম।

বাড়ি গিয়ে আব্বার কাছে বললাম, আব্বা, আমি আর প্রাইভেটে যাবো না।

আব্বা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো, কেনো রে? কী হয়েছে বাবা?

রাস্তায় ভূত আমাকে ভয় দেখায়। তার তিনটা হাত। হাতগুলো কেমন করে যেন নাচায়। কথাগুলো আমি একদমে বললাম। আমার গলাটা শুকিয়ে এসেছে।

তখন আব্বা বললো, চল তো দেখি, কোথায় ভূত তোকে ভয় দেখায়।

আমি আব্বার কোলে উঠে ভূত দেখতে রওনা করলাম। মনে মনে ভাবছি, এখন যদি ভূতটা না থাকে তাহলে নিশ্চয়ই আব্বা আমার কথা বিশ্বাস করবে না। আল্লাহ্, ভূতটা যেন আগের জায়গাতেই থাকে।

আমার দোয়া কবুল হলো। ভূতের বাচ্চা ভূত আগের জায়গাতেই দাঁড়িয়ে হাত নাড়াচ্ছে। আমি আঙুল দিয়ে দেখালাম আব্বাকে। আব্বা তখন ভূত দেখে কেনো হাসলো আমি বুঝতে পারিনি। বললো, চল আমরা ভূতটার কাছে যাই। গল্পগুজব করে আসি। এটা ভালো ভূত, কারো ক্ষতি করে না। আব্বা আমাকে অভয় দিলেও আমার খুব ভয় করছিলো। শক্ত করে আব্বার গলা জড়িয়ে ধরে রেখেছিলাম।

ভূতটার দিকে যতো এগুচ্ছি ততো দমবন্ধ লাগছে আমার। কিন্তু একদম কাছে যাওয়ার পরে আমি অবাক হয়ে বললাম, ওমা! এটা তো কলাগাছ। কলাগাছের তিনটা পাতা। শিশির জমে আছে। আর শিরশিরে বাতাসে পাতাগুলো দুলছে।

মানে কুয়াশার মধ্যে দূর থেকে আমি কলাগাছটাকেই ভূত ভেবে বসলাম। ভয় পেলাম। দৌড়ে পালালাম। ব্যাপারটাকে অনেক জটিল করে ফেললাম।

কিন্তু তখন যদি ভয় না পেয়ে কাছে যেতাম? তাহলে? তাহলে নিশ্চয়ই বুঝতে পারতাম, এটা ভূত নয়। কলাগাছ মাত্র।

তো তোমরাও ইংরেজিটাকে ভূত ভেবে দূর থেকে ভয় পাচ্ছো। কাছে আসছো না। তাই এতো জটিল মনে হচ্ছে এটাকে। সাহস করে মন থেকে কাছে আসলে, ঘাঁটাঘাঁটি করলে ঠিকই এটা কলাগাছের মতোই নরম এবং সহজ হয়ে উঠবে।

ব্যাপারটা কেবল ইংরেজির ক্ষেত্রে নয়। যেকোনো বিষয় বা কাজেই আমরা আগেভাগেই দূর থেকে সেটাকে ভূত ভাবি, ভয়ে মরে যাই। জেদ করে কাছে গিয়ে ছুঁয়ে দেখি না।

উদাহরণটা কেবল ছাত্রছাত্রীদেরই দেই না। নিজেও স্মরণ করি। সেটা মনে করে কাজের প্রতি ভয় কাটাই। সাহস করে কাছে যাই, ছুঁয়ে দেখি। হয়তো সফল হই, নয়তো ব্যর্থ হই। তবে ভয়টা কেটে যায়। না হয় লেখালিখি শুরু করার সাহসটাও করতে পারতাম না।

1
$ 0.00
Avatar for Najmul1234
3 years ago

Comments