- আমি জানি না অন্য কোন মেয়ে হলে এতকিছুর পরও তোমার সাথে এতদিন থাকতো কি না। তবে আমি আর পারছি না তোমার সাথে সংসার করতে।
- আমাকে কি মাফ করে দেয়া যায় না?
- মাফ? হাহাহা৷ ভুল করলে মাফ করা যায় কিন্তু তুমি কি ভুল করেছো? তুমি অপরাধ করেছো আসিফ, অপরাধ।
- আর কখনও এমন কিচ্ছু হবে না, কথা দিচ্ছি তোমাকে তবুও শেষ বারের মতো থেকে যাও প্লিজ।
- আমি পারবো না। আর সবচে বড় কথা হলো আমার বাবা-মা ও আর চায় না আমি তোমার সাথে সংসার করি।
- তাই বলে প্রায় চার বছরের সংসার জীবনের শেষ করে দেবে?
- যেখানে বিশ্বাসই নেই সেখানে সংসার কেমন করে হয় বলবে একটু?
- শেষ বারের মতো না হয় মাফ করে দাও।
- মাফ করলেও আমি আর তোমাকে জীবনেও বিশ্বাস করতে পারবো না বুঝলে? কেমন করে বিশ্বাস করবো বলবে একটু? রাতের পর রাত লুকিয়ে লুকিয়ে বেলকনিতে গিয়ে অন্য একটা মেয়ের সাথে প্রেম করবে আর আমি তোমার বউ হয়ে মেনে নেবো? সব কিছুরই ভাগ হয় তবে স্বামীর কোন ভাগ হয় না জানো এটা?
- শেষ বারের মতো না হয় মাফ করে দাও। আমি কথা দিচ্ছি আর কোনদিনও এমন হবে না।
- তুমি কখনোই আর আমার চোখে ভাল হতে পারবে না। আমি এতদিন কিছুই বলি নি। ভাবতাম তুমি নিজ থেকেই শুধরে যাবে। কিন্তু না, তুমি দিনদিন আমাকে দূরে ঠেলে দিয়ে অন্য কারও নেশায় মেতে উঠলে। কি ভেবেছিলে , আমি কিছুই জানবো না? বুঝবো না কিছুই? বিয়ের আগে খুব বলেছিলে, সারাজীবন তোমাকে খুব যত্ন করে আগলে রাখবো। কখনোই তোমাকে কষ্ট দেবো না৷ আর এই তোমার সেসব কথার জবাব? এই তোমার ভালোবাসা?
দেখো আসিফ, আমি আর একটা কথাও বলতে চাই না তোমার সাথে। তোমাকে দেখলেই আমার ঘৃণা হয় বুঝলে?
মায়া ব্যাগ থেকে একটা ফাইল বের করে সামনে রেখে কলমটা হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
আমি সাইন করে দিয়েছি এবার তুমি সাইন করে আমাকে এই জাহান্নাম থেকে মুক্তি দাও দয়া করে।
- মায়া! শেষ বারের মতোও কি আমাকে মাফ করা যায় না?
- বিশ্বাস ঘাতককে মাফ করা যায় না, সাইন টা করে দাও প্লিজ।
প্রচণ্ড হাত কাঁপছিল আমার। তবুও সাইনটা করে দিলাম৷ কখনোই ভাবি নি যে, একটা সাইন আমাদের বিচ্ছেদ ঘটাতে পারবে।
মায়া হাত থেকে ফাইলটা নিয়ে বলল,
আমাদের মাঝে যা ছিল সব শেষ বুঝলে? সবই অতীত। আমি চাই না আমার জঘন্য অতীত আমার বর্তমানে এসে আমার ভবিষ্যৎকে নষ্ট করুক। তাই আর কোনদিন আমার সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ করারও চেষ্টা করবে না দয়া করে। আমিও করবো না৷ আমাদের সব আজ, এখানে, এখন থেকে শেষ।
ভালো থেকো।
- মায়া!
মায়া দাঁড়াল না আর। খুব দ্রুত পায়ে পাশ কাটিয়ে এক'পা এক'পা করে দৃষ্টি সীমার বাইরে চলে গেল।
সম্পর্ক গুলো বড্ড অদ্ভুত। তৃতীয় কেউ ঢুকে গেলেই সব শেষ হয়ে যায়। আমাদের বেলাতেও হয়েছে ঠিক তাই। আমার সাথে এতকিছুর পরও এতদিন একসাথে থাকতে অনেক বেশিই কষ্ট হয়েছে ওর।
কষ্ট যে আমার হয় নি সেটা না হয় নাই-বা বলি। শুধু এতটুকু বলবো,
যে, কারও বউ যদি বিয়ের তিন বছর পর কোন পর পুরুষকে ভালোবাসতে পারে, তার সাথে গোপনে দেখা করতে পারে, কথা বলা এমনকি বিয়ে করার প্ল্যান অবধি করতে পারে তবে সেই পুরুষের কেমন লাগে আমার জানা নেই।
. ভালোবেসে আর পরিবারের সম্মতিতেই বিয়ে হয়েছিল আমাদের। বিয়ের পরপরই মায়া বাচ্চা নেয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিল। ওর ছোট্ট বাবু খুবই পছন্দ ছিল তো তাই আমিও আর না করি নি। বছর দেড়েক পার হলেও যখন বাচ্চা হচ্ছিল না তখন দু'জনেই খানিকটা ভয় পেতে শুরু করি। এত সুখের সংসার আমাদের। একটা বাচ্চা থাকলেই যে সব পূর্ণ। তবে ঠিক কি হয়েছিল তা কেউ ই বুঝতেছিলাম না৷ পরে আলোচনা করে দুজনই ডাক্তার দেখাই। আমার সব কিছু ঠিক থাকলেও সমস্যা ছিল মায়ার নিজেরই। আমি ডাক্তারকে মানা করেছিলাম মায়াকে এসব বলতে৷ কারণ এসব শুনলে ও নিজেকে ঠিক রাখতে পারতো না একদম৷
আমারও বাচ্চার শখ খুব। একটা বাচ্চা কে না চায়? তবুও আমি মায়াকে বড্ড বেশিই ভালোবাসতাম। আমার বাবা মা- বা যে কেউ আমাদের বিষয়টা জানলে আমাকে ঠিক আরেকটা বিয়ে করতে বলতো। এসব শুনলে মায়া খুবই কষ্ট পেতো তাই প্রথমেই আমি এসব গোপন করে ফেলি। মায়া জানতে চাইলেও এটা সেটা বলে চুপ করিয়ে রাখতাম। পরে যখন কিছুতেই আর মানছিল না তখন ওকে বুঝানোর জন্যই বলি যে, আমারই সমস্যা। তাই আমাদের বেবী নেয়া হবে না৷ তাতে কী? আমরা না হয় একটা গুলুগুলু বাবু এডপ্ট করবো৷
এসব বলে আমি হাসলেও আর হাসে নি মায়া। কেমন যেন চুপ হয়ে থাকতো এরপর থেকেই। আমার সাথে ঠিকঠাক কথা বলতো না, কিছু বললে শুনতো না। অনেক বুঝানোর চেষ্টা করলেও পারি নি।
এরপর থেকেই ও কেমন যেন হয়ে গেছিল। মাঝে মাঝেই খেয়াল করতাম রাতে ওয়াশরুমে গিয়ে কারও সাথে ফোনে কথা বলে। পাত্তা দিতাম না প্রথমে। আস্তে আস্তে এমন হয়ে গেল, যে রোজই ও কথা বলতো বেলকনিতে দাঁড়িয়ে বা আমি না থাকলে শুয়ে শুয়েই। এত কিছুর পরও মনকে বুঝাতে চেষ্টা করছিলাম যে, না। ওর মন ভালো না। হয়তো নিজেকে কোথাও বিজি রাখতে চাইছে। থাকুক একটু, ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু কিছুই আর ঠিক হয় নি। আমি কাজে গেলে মাঝে মাঝেই ও কোথাও বের হতো৷ প্রথমে নজরে না নিলেও পরে আমারই এক বন্ধুর থেকে বিষয়টা নজরে নিতে শুরু করি৷ মাঝে মাঝেই ও বাইরে দেখা করতে যেত।
এসবের মাঝেও আমি যে সব বুঝে গেছি সেটা ওকে বুঝতে দেই নি মোটেও। এমনকি আমার বাবা-মা কিছু বুঝলেও আমি তাদের বুঝিয়ে চুপ করিয়ে দিয়েছিলাম। এর মাঝেই আবার একদিন ওর ফোনে কিছু মেসেজের কথোপকথন দেখি। ও চাইছিলো না আর আমার সাথে সংসার করতে এমনটাই লেখা। ছেলেটাকে কিছু একটা করার জন্য বলতেছিল।
সেদিন ওদের মেসেজ পড়ে খুবই কষ্ট পেয়েছিলাম৷ যাকে এতটা ভালোবাসি সে সামান্য ভুলের জন্য অন্য কারও সাথে জীবন কাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে সেটা মানতে কষ্ট হচ্ছিল খুব। তাই একদিন রাতে ওকে সব খুলে বলি। বলি যে, সমস্যা আমার না সমস্যা তোমার নিজের। তাই আমাদের বেবী নেয়া পসিবল না। এও বলি যে তোমার কষ্ট লাগবে বলে আমি মিথ্যা বলেছিলাম।
তবে কে জানতো যে এসব বলা আমার জন্য আরেকটা ভুল হবে।
আমি নাকি ওর উপর জোর করে মিথ্যাচার করছি এসব বলতে শুরু করে ও। সমস্যা নাকি আমারই।
তারপরও আমি চেষ্টা করেছিলাম যে ও আমারই থাকুক। তবে পারি নি। ও কোন ভাবেই চাচ্ছিল না আমার সাথে থাকতে। কারণ ছাড়াই আমার সাথে ঝগড়া করা ওর নেশা হয়ে গেছিল।
তাই বন্ধুকে সব খুলে বলে ঠিক করি যে রাতে ও শুধু ফোন দিলে রিসিভ করে রাখবে। আর মাঝে মাঝে মেসেজ করবে।
সবকিছুই এভাবে হুটহাট হয়ে গেল।
মাঝখানে সবার কাছে দুশ্চরিত্রের স্বামী হিসেবে সমাজে নামডাক ছড়িয়ে গেল আমার। তবুও আমি চেয়েছি, মায়া ভাল থাকুক। বড্ড ভালোবাসি তো। হাহাহা।
.
বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যে হয়ে এসেছে।
পকেট থেকে লাইটার আর সিগারেট বের করলাম। জীবনে কখনও সিগারেটে ঠোঁট ছোঁয়াই নি তবুও আজ আসার সময় কেন যেন মনে হলো একটা খেয়ে দেখবো কেমন লাগে।
সিগারেটে লম্বা এক টান দিয়ে বসে বসে ভাবতেছি,
হয়তো মায়ার ছেলেটার সাথে বিয়ে হবে। ছেলেটা কি আমার থেকেও বেশি ভালোবাসবে মায়াকে?
খুব ভাবতে ইচ্ছে করছে,
মায়ার আবারও যদি বাবু না হয় তখন কি মায়া ওই ছেলেটাকেও ছেড়ে যাবে?
না-কি ছেলেটা আমার মতো মায়াকে ভালো রাখতে নিজেকে শেষ করে দেবে।
চোখ দিয়ে পানি পড়ছে খুব। তবে মায়ার চলে যাওয়া নাহ, সিগারেটের ধোঁয়া সহ্য হয় না তো, তাই।