হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে এক অপরিচিত পুরুষ মিহিকে। ধমক দিয়ে বারবার মিহিকে চিল্লাতে বারণ করছে, আর একটাই কথা বলছে জোরে জোরে, 'আজ আমি তোমাকে বিয়ে করেই ছাড়বো...!'
মিহির কান্না যেন আরো বেড়ে যাচ্ছে, এই পড়ন্ত বিকেলে, এত বৃষ্টির মাঝে শুধুমাত্র ভেজার জন্যই, মায়ের অগোচরে নেমেছিলো রাস্তায়। তার দশা এমন হবে জেনে থাকলে, জীবনেও হয়ত বাহিরে বের হতো না। এভাবে মানুষদের সামনে দিয়ে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়াতে লোকেরা কানে ফিসফিস করে কথা বলাও শুরু করে দিয়েছে।
মিহি এবার কান্নার বেগ বাড়িয়ে দিয়ে বলে ওঠে, 'আল্লাহর ওয়াস্তে, দয়া করে আমায় ছেড়ে দিন। আমার ভুল হয়েছে বৃষ্টিতে ভেজা। আমি ক্ষমাপ্রার্থী, তাও আমার এতবড় সর্বনাশ করবেন না। আমায় ছেড়ে দিন।'
কিন্তু না লোকটি কিচ্ছু শুনলো না, পাড়ার শেষের দিক এসে পড়েছে মিহিকে নিয়ে। এবার শুধু একটা বিল্ডিং এর দোতলায় ওঠে, কাজী অফিসে ঢোকা।
মিহি যখন দেখলো কাজী অফিস এসে গেছে। তখন নিজের সর্বশক্তি দিয়ে, পা দিয়ে লোকটির পায়ে আঘাত করে। হাত আলগা হতেই সাথে সাথে মিহি দৌড়াতে আরম্ভ করে। কিন্তু বেশি পারেনি, আবারও হাতে নাতে ধরে ফেলে লোকটি মিহিকে। আর এবার কোলে তুলে নেয় এবং দোতলায় উঠে পড়ে।
এবার মিহি যেন কান্না করতে করতে অজ্ঞান হয়ে যাবে। এমন পরিস্থিতিতে জীবনেও সে পড়েনি। তাদের বাসাটা একতলা এবং একটা ফ্ল্যাটে তৈরী বলে, ব্যালকনি সহ ছাঁদ নেই। তাই সে বের হয়েছিলো, নয়ত ছাঁদেই ভিজতো। যেহেতু আষাঢ় এর শেষ সময় কিছুদিন পরই শ্রাবণ মাস পড়বে তাই আষাঢ় মাসের বৃষ্টির আনন্দ নিতে চেয়েছিলো। হয়ত এটাই কাল হয়ে যাবে।
কাজী অফিসে ঢুকে, কাজী সহ দুইজন স্বামী স্ত্রী সহ কিছু অল্প বয়সের ছেলেদের দেখে চুপসে যায় মিহি। এখন কোলে নিয়ে রাখেনি লোকটি, এখন দুইহাত একহাত দিয়েই ধরে রেখেছে। ভেতরে প্রবেশ করতেই। স্বামী স্ত্রী কাছে এসে মিহির মুখটা তুলে "মাশাল্লাহ" বলে ওঠে। ফর্সা হাতে লোকটির এত জোরে ধরে রাখার কারণে আঙুলের ছাপ পড়তে সময় লাগেনি। রক্ত জমাট বেঁধে গেছে। মিহি এবার নিঃশব্দে কাঁদতে থাকে। মহিলাটি বলে ওঠে,
-'বাহ, আমার বউ দেখি লাখে এক। অর্ক তোর পছন্দ আছে বলতে হবে!'
এবার মিহি বলে ওঠে,
-'আন্টি আমি যেতে চাই, এক লোকটা আমায় টেনে হিচড়ে, জোর করে নিয়ে এসেছে। আমি চাইনা তাকে বিয়ে করতে!'
মহিলাটি কথা শুনে বলে,
-'দেখো মা, আমার ছেলের যেহেতু তোমায় পছন্দ হয়েছে তাহলে তোমাকে তার হতেই হবে। আর তোমার বাসায়, ইতিমধ্যে চারবার গিয়েছি তোমার বিয়ে আমার ছেলের সাথে পাঁকা করতে। কিন্তু তোমার বাবা যেহেতু মানেনি তাই এই কাজটা করলো।'
মিহি যেন আরো একটা বড় ধাক্কা খেলো। মিহি এবার অর্কের দিক তাকায়। সে এবার আস্তেই হাত ধরে রেখেছে, চুল গুলো কপালে লেপ্টে আছে সেখান থেকে পানি টুপ টুপ করে পড়ে, মুখ থেকে চিবুক থেকে নিচে পড়ছে। অমায়িক সুন্দর লাগছে তাকে। এতক্ষণ সে, কঠোর দৃষ্টি বজায় রেখে মিহির সাথে কথা বলেছে, এবার সে নরম দৃষ্টিতে তাকায় মিহির দিকে।
এতটা সুন্দর দৃষ্টি হয়ত কারো দেখেনি মিহি। এই অল্পক্ষণেই কী হয়ে গেলো তার? এতক্ষণের চেচামেচি সব ভুলে এবার যেন তাকে হিপনোটাইজ করা হয়েছে এমন ব্যবহার করছে মিহি।
সবাই একটু জায়গায় দিয়ে তাদের কাজীর কাছে যেতে দেয়। অর্কের মা একটা চাদর দিয়ে মিহিকে ঢেকে দেয়।
কাজী সাহেব মিহির পরিচয় জানতে চাইলে, মিহি কিছু বলতে পারেনা। কারণ সে স্তব্ধ হয়ে রয়েছে।
এবার অর্ক তার বাহু চেপে ধরলে, মিহি এবার অর্কের দিক তাকায়। মিহির চোখ জোড়া লাল টকটকে হয়ে গেছে।
-"পুরো নাম মিহিকা জামান, এবার অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে, বাবা পেশায় ডাক্তার। আর মা শিক্ষক।"
-"পরিবারে আর কে কে আছেন?"
-"ছোট ভাই।"
-"হুম, এখানে সাইন করে দাও।"
মিহির হাত কাঁপছে দেখে, কাজী সাহেব বলেন, 'মেয়ের পক্ষ থেকে কে আছেন?
মিহি তাকায় অর্কের দিকে। পেছন থেকে দুইজন বলে ওঠে,
-"আমরা আছি।"
-"কে আপনারা?"
কাজী এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলে, তারা বলে..
-"তার ফ্রেন্ডস।"
কাজী সাহেব একটু ভ্রু কুচকায়।
মিহি তার দুটো হাত টেবিলের উপর রেখেছে। নখ দিয়ে খোঁচাচ্ছে টেবিলটা। সেটা লক্ষ্য করলে, এবার কাজী ভালো ভাবে তাকায় মিহির দিকে। বেশি ভালোই বয়স হয়েছে কাজীর। তাই সে চিনতে পারছেনা, নইলে এক দেখাতে চিনতো কারণ মিহি এখানে অনেক বার এসেছে। তার বান্ধবীদের বিয়ের জন্য আবার মামা মামীদেরও।
কাজী সাহেব চিনতে পারলে, কিছু বলতে নিবে তখনি অর্ক বলে ওঠে,
-"দ্রুত কাজ সারুন।"
তিনি মিহিকে সাইন করতে বললে আবার, মিহি এবার সাইন করে দেয়, তারপর অর্ক করে।
ফুলের মালা পড়ানোর পর, সবাই ছবি তুলছে তাদের। এখনো মিহি ফুপিয়ে কেঁদেই যাচ্ছে। সবাই বলাতে নকল হাসি দেয়।
আস্তে আস্তে সবাই বের হয়ে যায়, সবার শেষে বের হয় মিহি এবং অর্ক।
এবার অর্ক আর তাকে ধরে রাখেনি। মিহির পা চলছেই না। তাও কোনো ভাবে সিড়ি থেকে নেমে আসলো।
অর্ক একটা সুপারশপে গিয়ে ঢুকলো, মিহি নিজের মত নিজেদের বাসার গলির দিয়ে হাটতে লাগলো। ভাবছে, কিছুক্ষণেই পুরো জীবনটা কীভাবে পাল্টে গেল তার!! একটু আগে সে স্বাধীন পাখি ছিলো, আর এখন খাঁচায় বন্দি থাকা পাখি।
মিহি এবার ডুকরে কেঁদে ওঠে। সে ভেবে পাচ্ছেনা, মা বাবাকে কীভাবে ফেইস করবে, কীভাবে দাড়াবে সে তাদের সামনে। কি মুখ নিয়ে? সামনে থেকে জোরে ছোট্ট একটা ট্রাক আসলে, মিহির সেদিকে তাকায়। আশে পাশে সবাই তাকে দেখছে। একটু মাঝখানে গেলেই তার জীবন শেষ করে দিবে এই ট্রাক। এখন যদি এটাই শ্রেয় হয় তাহলে মিহি এটাই করবে।
কাঁপা কাঁপা পায়ে, ট্রাক বরাবর দাড়াতে নিলে, অর্ক এসে টান দিয়ে পাশে নিয়ে এসে পড়ে এবং থাপ্পড় লাগিয়ে দেয়।
মিহি স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে থাকে।
-"পাগল হয়ে গেছো তুমি? নিজের জীবন নেওয়ার আগে মা বাবার কথা মনে করবেনা? তুমি একটা মাত্র মেয়ে তাদের ভুলে যেও না।"
মিহি চেঁচিয়ে বলে ওঠে,
-"তো কি রাস্তা রেখেছেন আমার জন্য? একটু আগে কল্পনাও করিনি আমার সাথে এসব ঘটবে। আপনি জানেন, আপনি আমার পুরো জীবনকে এক মিনিটে বদলিয়ে দিয়েছেন? আমি এই জীবন রাখতে চাইনা!"
অর্ক এবার আবারও জোরে টেনে বাসা অবধি নিয়ে আসে, তারপর বলে ওঠে,
-"এরপর থেকে আমার মত না চললে আমি তোমার বাবা মাকে বলে দিবো আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে। এর চেয়ে বরং আমার মত চল, তাহলে আর কিছুটা দিন স্বাধীন ভাবে চলতে পারবে।কোনো তামাশা চাই না। আজ থেকে এখন থেকে তুমি আমার বউ, হাসি মুখে রাখতেই হবে আর, আমাকেই স্বামী মানতে হবে।"
মিহি অন্যদিকে তাকিয়েই থাকে, অর্ক আবার বলে ওঠে,
-"রাতে কল দিবো, তুলবে।"
এই বলে অর্ক চলে যেতে নিলেও, আবার ফিরে এসে মিহির কপালে চুমু দিয়ে চলে যায়। মিহি সাথে সাথে মুছে ফেলে যেভাবে পারছে।
দরজার কলিংবেল বাজালে, সাথে সাথেই বিলকিস বেগম দরজা খুলেন। মেয়েকে এমন অবস্থায় দেখে, রেগে তো যান কিন্তু কিছু বলেন না।
মিহি বাসায় ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়, রুমে যেতে যেতে বিলকিস বেগম তয়েলা নিয়ে এসে মেয়ের মাথায় চুল মুছতে আরম্ভ করে।
মিহি গিয়ে চেয়ারে বসলে বিলকিস বেগম বলা শুরু করে,
-"বারবার বলি, বৃষ্টিতে ভিজতে না। কাশি জ্বর লেগেই যাবে। এখন দেখ কীভাবে নাক টানছিস, আর এই দেখ লাল হয়ে গেছে সব। না ভিজলে হতো না?"
মিহি কান্না করে দেয়, আর মাকে জড়িয়ে ধরে।
বিলকিস বেগম মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে, 'কি হয়েছে?'
মিহি বলতে গেলেও কেশে উঠে, বিলকিস বেগম দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে বলে ওঠে, 'গলা ব্যথা করছে তাইতো? দাড়া আঁদা চা নিয়ে এসে দেই, আর মধু খা আপাতত। ঠিক হয়ে যাবি, যা গিয়ে শাওয়ার ছেড়ে গোসল কর। আমি আসছি।'
বিলকিস বেগম গেলে, মিহি তখনো কাঁদতে থাকে।
আস্তে আস্তে নিজেকে বোঝায় সব, কাপড় নয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে বেশকিছুক্ষণ গোসল করে বের হয়।
হেয়ার ডায়ার নিয়ে চুল শোকাতে শোকাতে বিছানায় বসে, বিলকিস বেগম চা নিয়ে আসে আর কিছু খাবার। মিহি স্মিত হাসে।
তিনি চলে যেতেই, মিহি গা এলিয়ে দেয় বিছানায়। চোখ বন্ধ করে আবারও সেসব স্মৃতি ভেসে ওঠে। চোখ খুলে ফেলে আবারও।
মিহিকার ত্বক দুধে আলতা নয়, তার থেকে একটু কম। কিন্তু মারাত্মক সুন্দর বলা যেতে পারে, তাইতো ইন্টারে উঠতে না উঠতে বিয়ের ঘর সমানে আসতে থাকে, আর মিনার জামান মানা করতে থাকেন। এমনও হয়েছে মেয়েকে নিয়ে যেতে দল বদ্ধ করে এসেছিলো। তখন চাইতেও স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে আরেক জায়গায় চলে আসে। কিন্তু এখানেও শান্তি নেই। অর্ক শেইখ এই পাড়ায় রাজনীতির দল হিসেবে পরিচিত। যেহেতু মিনার জামান এসব জিনিস পছন্দ করেনা তাই তিনি বারবার মানা করেন। কিন্তু, অর্ক এরকমই এক বৃষ্টির সময় মিহিকে দেখে, তার বান্ধবীদের সাথে ভিজতে। তখন সবেই অনার্সে ভর্তি হয়েছে মিহি।
যেহেতু রূপে গুণে সবদিক দিয়ে সবাই মিহির উপর বেশিই দুর্বল হয়ে পড়তো তাই অর্কেরও হয়। সে প্রেমে পড়ে যায়। কিন্তু রাজনীতি দিয়ে কিছু করেনা। বাবা মা কে পাঠায়। কিন্তু বারংবার, মা বাবাকে পাঠিয়ে দেয়াতে এক রাগ এসে যায় মনে। অর্কের মোবাইলে, ল্যাপটপে হাজার হাজার ফটো আছে মিহির। সব তার অগোচরে তোলা। সেগুলো দেখেই রাত পার করা।
আজ মিহিকে দেখে যেন অপ্সরাদের থেকে কম লাগছিলো না, তাই উঠিয়ে নিয়ে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়!!
মেয়েটাকে এত কষ্ট দিয়ে নিজেরই আফসোস লাগছিলো তাই বাসায় দিয়ে আসে।
রাত ২ টার দিকে ঘুম ভাঙলো মিহির ফোনের রিংটোনের আওয়াজে। কল কে করেছে সেটা দেখতে নিলেই দেখে আননোন নাম্বার।
ফোন কেটে দেয়, আবারও আসলে একটু ভ্রু কুচকায়। দরজা বন্ধ আছে কিন্তু মা জেগেও থাকতে পারে। ফোন তুলতেই, অপরপাশ থেকে অর্ক বলে ওঠে, 'বলেছি না কল করব তাহলে উঠাও না কেন?'
মিহি কিছু বলেনা, এত রুঢ় মানুষ কমই দেখেছে।
-"আচ্ছা, মিহি বলোতো তোমার কি কি পছন্দ? কাল যেহেতু তোমার কোচিং আছে, টিচারকে বলে দিবো সে কাউকে কিছু বলবেনা। আমরা দু'জন শপিং যাবো আর তোমার পছন্দের সব কিনবো কেমন!"
-"আমি পণ্য?"
মিহির এই দুটো শব্দ যেন রাগিয়ে তুলতে ইনাফ ছিলো অর্ককে। তাও নিজেকে দমিয়ে রেখে বলে ওঠে।
-"এমন কেন লাগছে তোমার?"
-"তাহলে কোন সাহসে আমাকে পণ্য ভেবে পণ্যের লোভ দেখাচ্ছেন? আমি চাইলে, পুলিশ কেইসও করতে পারি। পুরো তুলকালাম শুরু করতে পারি। আমার বাবার তেমন অর্থ আছে যে নিজের মেয়েকে বাঁচাতে যত ইচ্ছা এমাউন্ট খরচ করতে পারবে। আমার বাবাই ইনাফ আমাকে রাজকন্যাদের মত পালতে!"
-"পুলিশ? কেইস? অর্থ?"
অর্ক হেসে ওঠে, মিহির সব যেন বাজে লাগছে। অর্ক হেসে নেয় তারপর বলে ওঠে,
-"রাজনীতি শেখাও আমায়? এটা আমার এলাকা, আমার শহর। এখানে আমার আঙুলে সবাই ওঠে, সবাই বসে। কেইস করতে গেলেও এক আঙুল দেখালেই সব বন্ধ। আর দেখো, তোমার বাবা মা অনেকবার আমাদের ফিরিয়ে দিয়েছেন তাও কিছু বলিনি। আমি ভালোবাসি তোমায়, রূপে মোহিত হয়ে করছিনা। প্রেমে পড়িনি, ভালোবেসেছি। আর ভালোবাসার মর্যাদা কীভাবে দিতে হয় তাও জানি। গত দেড় বছর ধরে আমি এটার মর্যাদা দিয়ে আসছি। নইলে তোমার দেহের স্বাদ নিতে একটা রুমে নিয়ে গিয়ে....."
মিহি কেটে দেয় ফোন। বালিশে মুখ গুঁজে কেঁদে ওঠে।
পারছেনা কিছু মেলাতে, মিহি ভেঙে পড়েছে। বাজে ভাবে ভেঙে পড়েছে। যেই মেয়েকে তার পুরো পরিবার শান্তশিষ্ট, বুদ্ধিমান হিসেবে জানতো আর সেই মেয়ে ভেঙে পড়েছে।
অর্ক সাথে সাথে মনে পড়ে কি বলেছে সে!! এতবাজে ভাবে না বলতেও পারতো। মেয়েটা কী না কী ভাবছে। এই ভেবে অর্ক তার বাসায় যাবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। বের হয়ে যায়...
আর এদিকে মিহি দরজা খুলে, সদর দরকার কাছে যায়। আস্তে করে খুলে বাহিরে পা বাড়ায়। পাশেই একটা চার তলার বিল্ডিং আছে। যেটায় কেউ থাকেনা। আর সবসময় খোলা থাকে। সেদিকে পা বাড়ায়। না চাইতেও ফাঁসি অথবা নিজেকে কাটতে পারবেনা। তাই সে ঝাপ দিবে বলে চিন্তা করে।
দোতলায় উঠে কিছু মানুষকে দেখলে ভয় পেয়ে যায়। নেশা করছে তারা এখন। মিহি নিচে নামতে যাবে তখনি তারা মিহিকে দেখে ফেললে, একজন এসে মিহিকে ধরতে চায়। কিন্তু মিহি দ্রুত নেমে পড়ে। আর নিজের বাসা অবধি যেতে যেতে অর্ককে দেখে। সাতহে সাথে তার পেছনে এসে লুকায়। ছেলে তিনটা তাকে দেখে পিছু সরে যায়।
অর্ক মিহির হাত ধরে পাশের এক পুকুর পাড়ে যায়।
পুকুর পাড়ের বসার জায়গায় গিয়ে মিহিকে বসায় পাশেই অর্ক বসে। মিহিকে কাঁপতে দেখে নিজের পড়া জ্যাকেট তাকে দেয়। মিহি সেটা না নিতে চাইলেও জড়িয়ে ধরে।
এবার অর্ক বলে ওঠে,
-"রাগতেই পারো স্বাভাবিক তাই বলে অভিমানের পাহাড় জমিয়ে রাখা।"
মিহি অর্কের চোখের দিক তাকায়,
-"আমি ভালোবাসা বলতে শুধু মা বাবার স্নেহ, আর ছোট ভাইয়ের বন্ডিং টাকেই বুঝি। আমাকে ভালোবাসার মর্ম বোঝাতে আসবেন না দয়া করে। আমি স্বাধীনচেতা মেয়ে। আমায় কখনো কোনো ব্যক্তি সম্পর্কের নামে জড়াতে পারেনি। আমি মানিনা এই বিয়ে। অভিমান তো দূরের কথা, আমি নিজেকে মেরে ফেলতে চাই কারণ আমার সাথে অন্যায় হয়েছে।"
-"অন্যায় কি আমার সাথে হয়নি মিহি?ভালোবাসা কি অন্যায়? তাহলে আমি অন্যায়ই করলাম, তোমার সাথেও। আমাকে বুঝতে পারলেই ভালোবাসতে পারবে। আমার চোখের দিক কিছুক্ষণ তাকালে নেশা হবে তোমার। মায়া না এই আষাঢ়ের মাসে বৃষ্টি আলাপন হবে চোখের নেশায়। কথা হবে দুজনের মাঝে চোখের নেশায়। হারিয়ে যাবে এই চোখের গভীরতায়।
এই আলাপনটা না হয় আমাদের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকুক! আমাদের মাঝেই না হয় এই আষাঢ়ের মাস এক সুন্দর স্মৃতি হয়ে থাকুক!"
মিহি চোখ সরিয়ে ফেলে আর বলে,
-"হাহ্ ফিল্মি ডায়লগ।"
অর্ক এবার মিহির কোমড় জড়িয়ে ধরে। মিহির পুরো শরীরে বিদ্যুৎ বয়ে গেলো। আরেকটু কাছে টেনে নিয়ে অর্ক বলল,
-"আনইজি ফিল হবে, বমি বমি পাবে, কাটতে মন চাবে এই সেই যা তা। কিন্তু পরে এই স্পর্শই হৃদয়ে গেঁথে যাবে।"
মিহি চোখ বন্ধ করে ফেলে, অর্ক আরেকহাত দিয়ে মিহির মুখে আসা চুলগুলো সরিয়ে কানের পাশে গুঁজে দেয়।মিহির মাথাটা নিজের কাঁধে রেখে বলে ওঠে,
-"মিহি একটা কবিতা শোনাই?"
মিহি কিছু বলেনা, তার এখন একটু শান্তি দরকার!
অর্ক নিশ্চুপ থাকতে দেখে কবিতা আবৃত্তি করা শুরু করে,
সেদিন ও আকাশে চাঁদ ছিলো।
তুমি পাশে ছিলেনা বলে চাঁদের আলোতেও আমবশ্যার মত অন্ধকার লাগছিলো সবকিছু।
অথচ দেখো, আজকে আকাশে চাঁদ নেই।
তারাগুলিও মেঘের আড়ালে ডুবে গেছে।
তবুও পৃথিবীটা চমকিত হচ্ছে আলোয় আলোয়।
শুধু তুমি পাশে আছো বলে।
তোমার গালের টোলে আটকে থাকে প্রাণ।
তোমার ঠোঁটের কোনের মুচকি হাসিতে কেঁপে উঠে হৃদয়ের আসমান।
তোমার চোখের ভেতর লুকিয়ে থাকা মায়া।
লেপ্টে যাওয়া কাজল যেন মুগ্ধতার কায়া।
তুমি হাটলেও মনে হয় যেন হাসছে তোমার ছাঁয়া।
তোমার হাসিতেই মেতে উঠে পুরা দুনিয়া।
তুমি আনন্দ, তুমি উচ্ছ্বাস, তোমাতেই আমি ভাসি ডুবি, তোমার নামেই লিখে দিয়েছি বুকের বাঁ পাশ।
তোমাকে চেয়েছি শয়নে স্বপনে, তোমাকে পেয়েছি এতটা কাছে।
এ যেন স্বর্গ পাওয়ার সুখ।
তোমাকে না পেলে হতো সর্বনাশ।
তুমি থাকো সন্ধ্যা রাতে প্রদীপ হয়ে আমার পাশে।
তোমার নামেই কেঁপে উঠুক নিঃশ্বাসেরা এই বুকেতে।
তুমি সুন্দর, স্নিগ্ধ, মায়াবতী বনহরিণী।
এমন কখনো হয়নি, তোমার কথা ভাবিনি।
তুমি এভাবেই থেকো জড়িয়ে আমার কাধ।
তোমার পানে চেয়ে চেয়েই কাটুক হাজার রাত।
তোমার পানে চেয়েই আমি সুখ খুঁজে পাই।
তোমার স্পর্শে আমি লজ্জায় ডুবে যাই।
তোমার হাসিতেই আমি প্রাণ খুঁজে পাই।
তোমার চাহনিতেই আমি মায়ায় ডুবে যাই।
তুমি পাশে থাকলেই আমি পৃথিবীর কিছু পাওয়ার আনন্দে ডুবে যাই।
চামড়ায় ভাজ পরে যাওয়া দিনেও,
এক সেকেন্ড ও না কাটুক তুমি বিনে।
যেখানেই থাকি, যতদুরেই যাই, জেনো তোমার মায়ার টানেই বার-বার ফিরে আসি।
পৃথিবীর সবাই জেনে যাক।
তোমাকেই শতরুপে আজীবন ভালোবাসি।
পুরো কবিতা অর্ক শোনানোর পরে মিহিকে ডাক দিলে, মিহি দ্রুত কাঁধ থেকে মাথা সরায়। এতক্ষণ সে এক ঘোরে ছিলো। যেই ঘোরটা যেন বড়ই অদ্ভুত। এই অদ্ভুত মায়া যেন বুকের মধ্যে হামলে পড়ছিলো। নেশা ধরানোর মত কবিতা, যেন কত মায়া মমতা দিয়ে নিজের মনের প্রতিটা ভালোবাসা তুলে ধরা হয়েছে। মিহি বলে ওঠে,
-"আমি চলি।"
কিন্তু অর্ক যেতে দেয়না, হাত ধরে বলে ওঠে, 'ভালোবাসা না ভালো লাগতে আরম্ভ করেছো অর্ককে, এই লাজুকলতাই তার সাক্ষী।
মিহি এক প্রকার ছুটে আসে সেখান থেকে সোজা বাসায় গিয়ে ঢুকে। আর দরজা বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে পড়ে। আর বড় বড় নিশ্বাস নেয়।
চারটা দিন বের হয়নি বাসা থেকে। কারণটা অর্কের কারণেই। সে অন্য শহরে চলে যায় কিছু কারণে আর আদেশ দিয়ে যায় বাসা থেকে না বেরোনোর। পালন করে মিহি। আজ চারটা দিন একেধারে ঝুম বৃষ্টি হয় আজও হয়েছে। আজ আষাঢ় এর শেষ দিন। দু'জন বৃষ্টিতে এবার তো ভিজে কিন্তু দুরত্ব থেকে যায়। কিন্তু অর্ক তার মনে ভালোবাসা আনবেই তার জন্য।
আর সেইদিনটি আসে, এক বছর পর আষাঢ় এর শেষ দিনে। অর্ক এসে বিয়ের কথা বলে মিহির বাবা মা কে। তারা খুব কষ্ট পেয়েছে দেখাই যাচ্ছে। কিন্তু মেয়ের মুখে কষ্টের বদলে খুশির ছোঁয়া দেখতে পেলে তারা না করেনা।
...
মিহি আজ মন খুলে ছাঁদে ভিজছে। পাশে ক্যামেরায় সেটা ভিডিও করে স্মৃতি হিসেবে বন্দি করছে অর্ক। সেও ভিজতে থাকা মায়াময়ী কে দেখছে মন ভরে। আজ মিহি সেদিনের মত কোনো জামা পরেনি। আজ সে লাল টকটকে শাড়ি এবং নব বধূ হিসেবেই ভিজছে, মিহিকা জামান হয়ে নয় মিহিকা অর্ক শেইখ হয়ে।
আজ আবারও বৃষ্টির এই পড়ন্ত বিকেলে, বৃষ্টির আলাপনে হয়ে গেলো মিল!
আজ মিহি নিজ স্বেচ্ছায় অর্কের হাত ধরেছে। আর তারপর?
-"তোমাকেই শতরূপে আজীবন ভালোবাসি!"
"সমাপ্ত"
গল্প পড়তে যে ভিশন ভালোবাসি।আমার সারাটা দিন রাত যেত এই গল্পের মাঝে।ভালোবাসা এমনে এমনে অর্জন করা যাই না।যা অর্ক কে দেখে বুঝা যাই।দীর্ঘ দেড় বছর ধরে সে ভালোবাসা বিন্দু বিন্দু জমিয়ে বৃত্ত সৃষ্টি করেছে মিহির জন্য।আর আমরা না চাইতেও মনের বিরুদ্ধে অজানতে সামনে থাকা মানুষ ঠিকে ভালো ভেসে ফেলি তার মহত গুনা বলি দেখে।সে ভালোবাসা উজার করে ভালোবাসতে পারে সে কখনো জীবনে ভালোবাসাহীন থাকে না।