স্মার্টফোন আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী।কিন্তু একটু অসতর্কতা থেকে এই স্মার্টফোন থেকে ঘটতে পারে মারাত্মক সব দুর্ঘটনা যা আমাদের একেবারেই কাম্য নয়।স্মার্টফোন ছাড়া আমাদের প্রাত্যহিক দিন একেবারেই অচল।তাই কিছু সাবধানতা মেনে চলেই আমরা বিপদ এড়িয়ে যেতে পারি।এখানে কিছু সাবধানতা তুলে ধরা হলো:
১) আপনি যখন নতুন ফোন কিনবেন,ফোনের সাথে দেওয়া সমস্ত সেফটি ইনফরমেশন( Safety information) গুলো অবশ্যই পড়ে নিবেন।
২) অননুমোদিত ব্যাটারি,চার্জার কিংবা চার্জিং ক্যাবল ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন কেননা একই সাথে যেমন এগুলো আপনার ফোনের ক্ষতি করতে পারে,ফোনের দীর্ঘ স্থায়িত্ব কমিয়ে দিতে পারে আবার যান্ত্রিক গোলযোগ সৃষ্টি করে বিপদ ঘটাতে পারে।
তাই এহেন পরিস্থিতি এড়াতে অবশ্যই ফোনের সাথে থাকা অনুমোদিত চার্জার,ক্যাবল কিংবা ব্যাটারি ব্যবহার করুন।
৩) আপনি যখন আপনার স্মার্টফোন ব্যবহার করবেন লক্ষ্য রাখবেন যেনো আপনার আশেপাশের পরিবেশের তাপমাত্রা ০ ডিগ্রী থেকে ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে।এর বেশী কিংবা কম তাপমাত্রা আপনার ফোনের স্থায়িত্ব কমিয়ে দিবে।
৪) আপনার ফোনের ব্যাটারি যদি বিল্ট ইন (Built in) হয় তাহলে আর যদি কখনো পরিবর্তন করার প্রয়োজন পড়ে তাহলে কখনোই নিজে নিজে ফোনের ব্যাটারি পরিবর্তন করার চেষ্টা করবেন না।
এতে করে যেমন আপনি আপনার স্মার্ট ফোনের সূক্ষ্ম যন্ত্রপাতির ক্ষতি হতে পারে আবার ফোনের ব্যাটারির ও ক্ষতি হতে পারে।আপনি যদি এসব ব্যপারে অভিজ্ঞ না হন তাহলে অবশ্যই এই কাজ গুলো অভিজ্ঞদের হাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত।
৫) আপনি যখন আপনার স্মার্টফোনটি চার্জে লাগাবেন,সবসময় অনুমোদিত চার্জারটি ব্যবহার করবেন।নিম্ন মানের চার্জার ব্যবহার কিংবা পাওয়ার ক্যাবলের ব্যবহার থেকে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট হতে পারে যা থেকে আগুন লাগতে পারে।
একটু সতর্কতা অবলম্বন করলেই অনেক বড় বড় দুর্ঘটনা সহজেই এড়িয়ে যাওয়া যায়।
৬) আমরা সাধারণত আমাদের স্মার্টফোনটি রাতে চার্জে দিয়ে থাকি।যেটা একেবারেই ভুল একটি কাজ।আমাদের স্মার্টফোনটি প্রায় সারা রাত পাওয়ার ক্যাবলের সাথে যুক্ত থাকে পূর্ণ চার্জ হওয়ার পরেও।
এতে করে ব্যাটারির আয়ু কমে আসে আর দীর্ঘক্ষণ বৈদ্যুতিক সংযোগ ( Electric line) এর সাথে সংযুক্ত থাকায় বিপদের সম্ভাবনাও বাড়ে।তাই অনাকাঙ্খিত বিপদ এড়াতে,আপনার স্মার্টফোনটি পূর্ণ চার্জ হওয়া মাত্রই পাওয়ার ক্যাবল (Power Cable) থেকে খুলে ফেলুন।অবশ্যই আপনার স্মার্টফোনটি ১২ ঘণ্টার বেশী চার্জে লাগিয়ে রাখবেন না।
৭) যদি আপনার পাওয়ার ক্যাবল বা চার্জার ক্যাবলে কোনো রূপ সমস্যা দেখা দেয় বা যদি ঠিকমতো কাজ না করে তাহলে কখনো নিজে নিজে ক্যাবল টি পরিবর্তন/ পরিবর্ধন করতে যাবেন না।
এতে করে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট হতে পারে এবং হতে পারে একটি বিপদের কারণ।অবশ্যই এমন হলে, যদি ওয়ারেন্টি সুবিধা প্রাপ্ত থাকে তাহলে আপনি সেই ব্র্যান্ডের আউটলেটে নিয়ে যাবেন।
আর সবসময় চার্জার ক্যাবল বা চার্জার পরিষ্কার করার আগে বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে নেবেন।
৮) আপনার স্মার্টফোনটি বা স্মার্টফোনের ব্যাটারি যদি নষ্ট হয়ে যায় বা অকার্যকর হয়ে যায় তাহলে আর দশটা বর্জ্যের মতো স্মার্টফোন বা ব্যাটারি যেখানে সেখানে ছুড়ে ফেলবেন না।
যদি ঠিক মতো এসব বর্জ্যের রক্ষণাবেক্ষণ না করা হয় তাহলে এগুলো থেকে ঘটতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনা।
আর পরিবেশ বিপর্যয়ের কথা তো আছেই।যত্র তত্র ইলেকট্রিক বর্জ্য(E- waste) ফেলা থেকে বিরত থাকুন এবং নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলুন( Dispose) করুন।
নষ্ট স্মার্টফোনের ব্যাটারি বাচ্চাদের কাছ থেকে দূরে রাখতে হবে।বাচ্চাদের মধ্যে কোনো কিছু পেলেই তা মুখে দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।
স্মার্টফোনের ব্যাটারি এসব ক্ষেত্রে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে।
৯) স্মার্টফোন ফোনের ব্যাটারি খোলা,নষ্ট করা,ভাঙ্গা কিংবা গুড়ো করা থেকে বিরত থাকা উচিত।কারণ এসব ব্যাটারি তে যে রাসায়নিক সমূহ ব্যবহার করা হয় তা স্বাস্থ্য হানী ঘটাতে পারে দীর্ঘ মেয়াদে।
কৌতূহলের বশবর্তী হয়ে কিংবা নিছক মজার ছলে ব্যাটারি জ্বালিয়ে দেওয়া বা জ্বলন্ত আগুনে পোড়ানো বা আগুনে নিক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকুন।
এই ধরনের কোনো এক্সপেরিমেন্ট ( Experiment) থেকে বিরত থাকুন।কারণ অতিরিক্ত তাপে ব্যাটারি বিস্ফোরিত হতে পারে খুব সহজেই যেখান থেকে মর্মান্তিক বিপদ ঘটতে পারে।
১০) আপনার স্মার্টফোনটি সবসময় শুকনো রাখার চেষ্টা করবেন।কখনো ভেজা হাতে স্মার্টফোন,চার্জার ক্যাবল ধরবেন না।আদ্রতা বা স্যাঁতস্যাতে ভাব স্মার্টফোনটি অকার্যকর করে দিতে পারে।
সুতরাং ভেজা পরিবেশে স্মার্টফোন ব্যবহার করবেন না।বর্তমানে কিছু ওয়াটার রেজিস্টেন্ট( Water resistant) স্মার্টফোন বাজারে পাওয়া গেলেও আপনি হয় তো জানেন না আপনার ফোনটি ওয়াটার রেজিস্টেন্ট কিনা।
একই ভাবে অতিরিক্ত তাপমাত্রায়,উষ্ণতায় কিংবা জ্বলন্ত আগুনের সামনে স্মার্টফোন ব্যবহার করবেন না।
১১) আপনার স্মার্টফোনের ওয়ারেন্টি সেবা পেতে,কখনো স্মার্টফোন নিজে নিজে খোলা (Modify) করার চেষ্টা করবেন না।
১২) দীর্ঘ সময় ধরে,হেডফোনের ব্যবহার আপনার শ্রবণ শক্তি হ্রাস করে দিতে পারে। তাই উচ্চ ভলিউমে আর দীর্ঘ সময় ধরে হেডফোন ব্যবহার করবেন না।
১৩) আপনার স্মার্টফোনটি পরিষ্কার করার পূর্বে অবশ্যই শুকনো ,পাতলা কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করবেন।পরিষ্কারের পূর্বে অবশ্যই পাওয়ার ক্যাবল খুলে রাখবেন বা বিচ্ছিন্ন করবেন।
১৪) কোনো কঠিন রাসায়নিক ব্যবহার করবেন না,আপনার স্মার্টফোন পরিষ্কার করার সময়।
১৫) আপনার স্মার্টফোনটি যদি ভিজে যায় কখনো তাহলে বাইরে থেকে এটি শুকাতে মাইক্রো ওয়েভ বা হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করবেন না।এতে করে আপনার ডিভাইসের আরো বেশী ক্ষতি হতে পারে।
উপরোক্ত ১৫ টি সতর্কতা অবলম্বন করে খুব সহজেই মারাত্বক সব বিপদ এড়িয়ে চলতে পারবেন।দুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে একটু সতর্কতা জরুরী।