সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আমাদের বর্তমান সময়ের সবচে বেশী আলোচিত শব্দ গুলোর মধ্যে একটা।
২০০৬ সালের পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের একটা গতি শুরু হয় যা বর্তমান সময়ে পর্যন্ত চলে এসেছে তবে এই সময়ে এসে দেখা যাচ্ছে যে আমরা অনেক ক্ষেত্রেই এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের উপর এমন ভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি যে আমাদের উপকার থেকে অপকার টুকুই বেশী করছে।
বিগত কয়েক বছরে,অনেক রকমের এবং অনেক ধরনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সৃষ্টি হয়েছে এবং এদের আকর্ষণীয় সব ফিচারের কারণে এইগুলো খুব সহজে লক্ষ লক্ষ ব্যবহার কারী টেনে নিয়েছে।
মানুষের সাথে মানুষের দূরত্ব বৃদ্ধি করা,মানুষের সাথে প্রতারনা বাড়িয়ে দেওয়া,আর্থিক ক্ষয় ক্ষতি সহ এমন কিছু নেই যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে করা হচ্ছে না।
আমরা উপকার থেকে যেনো অপকার টুকুই বেশী বেছে নিয়েছি।আমরা যখন কথা বলি তখন বেশীর ভাগ সময়ই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের উপকার বা ভালো দিক গুলো নিয়েই কথা বলি কিন্তু কখনো খুজে দেখি না এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কিরূপ ক্ষতি করে যাচ্ছে।
আমার এই আর্টিকেলে আমি এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোর ক্ষতিকর দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করবো এবং কিভাবে ক্ষতি এড়িয়ে উত্তম কাজে ব্যবহার করা যায় তাই নিয়ে চিন্তা করবো।
১)সাইবার বুলিং:
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে একজন যেমন খুব সহজেই অন্যকে সাইবার বুলিং করতে পারে একই ভাবে সাইবার বুলিং এর স্বীকার হয়ে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়তে পারে।
সাইবার বুলিং এর স্বীকার হয়ে কেউ কেউ আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারে নি।আর এই সাইবার বুলিং করার অন্যতম একটি মাধ্যম হয়ে গেছে এই সামাজিক যোগাযোগ সাইট গুলো।এতে করে নিজের পরিচয় কেউ গোপন রেখেই অন্যকে হেনস্তা করতে পারে।
কেউ হয় তো শুধু মাত্র মজা করার জন্যেই এটা করছে কিন্তু যিনি বা যে এই বুলিং এর স্বীকার হচ্ছেন তার মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল দেখা যায়।
শুধু মাত্র নিছক মজার করার ছলে আমরা অনলাইনে যা খুশি তাই বলে ফেলি কিন্তু কখনো ভেবে দেখি না যে এই কথাটা তাকে কষ্ট দিতে পারে।সেও আমাদের মতোই মানুষ তারও ভালো লাগা খারাপ লাগা আছে।
আমরা চাইলেই পারি পাশের মানুষটার প্রতি একটু সহনশীল আচরন করতে।এতে করে অনলাইনে যেমন সবার উপস্থিতি সহাবস্থান তৈরী হবে একই রকম ভাবে মানসিক ভাবে কেউ ভেঙে পড়বে না।
২)হ্যাকিং বা ব্যক্তিগত তথ্য চুরি হওয়া:
আমরা যখন আমাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সাইট গুলোতে লগইন করি তখন আমরা আমাদের বেশ কিছু ব্যক্তিগত তথ্য সেখানে দিয়ে থাকি।আমাদের ছবি থেকে শুরু করে নানান রকম তথ্য দিয়ে থাকি।
কখনো আমাদের নিজেদের সচেতনতার অভাব আবার কখনো সেই সাইট গুলোর সিকিউরিটি ব্যবস্থা দুর্বল থাকার দরুন আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি হয়ে যায়।
যেগুলো ব্যবহার করে খুব সহজেই ইউজারদের ক্ষতি করা হয়। সামাজিক মাধ্যম গুলো যতোটা না সামাজিক এইদিক গুলো বিবেচনায় নিলে দেখা যায় ঠিক ততোটাই যেনো ক্ষতিকর।
কেউ কেউ আর্থিক ভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন কারো,কারো নানান রকমের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি হয়ে যাচ্ছে।তাহলে এর সমাধান কি হতে পারে?
এক্ষেত্রে সবচে উত্তম কাজ হচ্ছে আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য অনলাইনে দেওয়ার আগেই তা চিন্তা করে নেওয়া।কোন কোন তথ্য অনলাইনে দেওয়া উচিত আর কোন কোন তথ্য দেওয়া উচিত নয়।
তার ব্যাক্তিগত প্রোফাইলের সুরক্ষায় যেনো সে একটুও ছেড়ে না দেয়।
৩) নেশা:
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোর রঙিন জগতে আমরা যখন ডুব দেই তখন আর এটা থেকে বের হতে চাই না কখনো চাইলেও পারি না।এতে করে আমাদের যে একটা আলাদা জগৎ আছে স্মার্টফোনের বাইরে সেটা একেবারেই ভুলে যাই।
আমরা বাস্তবতা থেকে একদম বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি এবং ব্যাক্তিগত জীবনে নানান রকমের ক্ষয় ক্ষতির স্বীকার হই বিশেষ করে ছাত্র ছাত্রীরা।
আমরা আমাদের পড়াশোনার সময়ের যে সময়টা পড়াশোনায় দেওয়ার কথা ছিলো আমরা সেটা দিয়ে দেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের রঙিন জগতে।
শিক্ষার্থীরা তাদের জীবনের মূল্যবান সময় হারাচ্ছে আর ফলাফল স্বরূপ তাদের জীবনে বিরূপ প্রভাব ফেলছে আর যতোদিনে আমরা বুঝতে পারি যে সামাজিক যোগাযোগ আমাদের ক্ষতি করছে ততোদিনে অনেক ক্ষতি হয়ে যায়।
শুধু আমাদের শিক্ষা জীবনেই এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে তাই কিন্তু নয়।স্মার্টফোনের কিংবা কম্পিউটারের অতিরিক্ত ব্যবহার,এক নাগাড়ে এক জায়গায় বসে থাকা আমাদের স্বাস্থ্য গত নানান অসুবিধার সৃষ্টি করছে।
পর্যাপ্ত না ঘুমানো,চোখের সমস্যা, ঘাড়ের সমস্যা সহ নানান রকম সমস্যার সৃষ্টি তে রয়েছে এই অতিরিক্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করার প্রবণতা।
৪)প্রতারনা করা এবং প্রতারণার স্বীকার হওয়া:
প্রতারনা যেনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোর একটি নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার।খুব সহজেই কেউ যেমন বিশ্বাস করে নিজের টাকা পয়সা হারিয়ে ফেলতে পারে সেই সাথে নিজের ব্যাক্তিগত তথ্যও হারিয়ে ফেলতে পারেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলো যেনো একেকটি প্রতারণার ফাঁদ।
যেমন আপনি একটি পণ্য দেখলেন,কোনো একটি ফেসবুক পেজ বিক্রি করছে,আপনি সেটার অর্ডার করলেন কিন্তু দেখা হলো আপনি টাকা দিলেন ঠিকই কিন্তু তারা পণ্য পৌঁছালো না আপনার কাছে আরো নাটকীয়ভাবে দেখা গেলো সেই ফেসবুক পেইজটি ও আর নেই।
এমন ঘটনা অহরহ ঘটছে প্রতিদিন।একবার কারো কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়ে অন্য নামে অন্য জায়গায় ফেসবুক পেজ খুলে বসছে প্রতারক চক্র রা।
শুধু তাই নয় বিভিন্ন ধরনের প্রতারণার ফাঁদ পেতে বসে থাকেন।
এই ধরনের প্রতারনা থেকে বাঁচতে বা এড়িয়ে যেতে অনলাইনে কোনো কিছু কেনা কাটার করার আগে সেই পেজ বা সাইট সম্পর্কে ভালো করে রিভিউ দেখে নেওয়া উচিত এবং যতোই লোভনীয় অফার থাকুক না সবসময় বিশ্বস্ত সাইট বা পেজ গুলো থেকেই কেনাকাটা করা উচিত।
৫) তরুণদের নিজেকে জাহির করার প্রবণতা
উঠতি বয়সের তরুনদের মধ্যে স্বাভাবিক ভাবেই নিজেকে প্রকাশ করার একটি প্রবণতা দেখা যায় আর এক্ষেত্রে সবচে সহজ লভ্য মাধ্যম টি হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলো।
এই সাইট গুলো ব্যবহার করে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিশোরেরা নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে কিভাবে নিজেকে জাহির করা যায়।
আর এটি করতে গিয়ে কিছু ক্ষেত্রে তারা নিজেদের জীবনের ঝুকি পর্যন্ত নিয়ে ফেলেন আর দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে কেউ কেউ অকালেই প্রাণ হারান।
যা একেবারেই মেনে নেওয়া যায় না।বিভিন্ন রকমের স্টান্ট করতে গিয়ে,বিভিন্ন জায়গায় ছবি তুলতে গিয়ে তারা বিপদের সম্মুখীন হন।
সম্প্রতি ভারতের মুম্বাই তে একজন ১৪ বছরের কিশোর ট্রেনে একটি স্টান্ট ভিডিও করতে গিয়ে প্রাণ হারান। কেউ কেউ আজীবনের জন্যে পঙ্গুত্ব বরণ করে নেন।
এতে করে যেমন নিজের জীবনের ক্ষতি হয়ে যায় অন্যদিকে পরিবারের ও ক্ষতি হয়ে যায়। একই সাথে কিশোর দের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে।
আমরা আমাদের চারপাশে এমন অনেক কিশোর দের দেখতে পাবো যারা এমন বিপদ জনক স্টান্ট গুলো করে বেড়ায়।
তাদের পরিবারের এই ব্যাপারে সবার আগে এগিয়ে আসা উচিত এবং তাদের বন্ধু যারা আছেন তাদের ও কাউন্সেলিং করতে হবে তাদের বুঝাতে হবে।
তাদের অন্য কোনো মাধ্যমে বিনোদনের ব্যবস্থা করতে হবে।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সাইট গুলোর বাইরেও যে একটি জগৎ আছে সে বিষয়ে তাদেরকে মানসিক দিক থেকে বুঝাতে হবে।
তবেই একটি সুস্থ সুন্দর কৈশোর তারা পার করতে পারবে এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোর রঙিন দুনিয়ার বাইরে থেকে।
এতক্ষণ আমরা আলোচনা করলাম কিভাবে এই মাধ্যম গুলো আমাদের ক্ষতি সাধন করছে।
আমাদের যতোটা না উপকার করছে তার থেকে ক্ষতি ই বেশি করছে।আমাদের উচিত সচেতন থাকা,এবং এর ক্ষতিকর দিক গুলো এড়িয়ে আমরা যেনো এর ভালো দিক গুলো গ্রহণ করতে পারি।তবেই আমরা একটি সুন্দর ইন্টারনেট জগৎ পাবো।
Wow nice article! Good job