ইন্টারনেটের মালিক কে?

0 22
Avatar for Mujahidul904
4 years ago
Sponsors of Mujahidul904
empty
empty
empty

বর্তমান যুগে আমরা দুই তিন ঘণ্টা না খেয়ে থাকতে পারি অথবা সারারাত না ঘুমিয়ে থাকতে পারি কিন্তু ইন্টারনেট ছাড়া আমরা একটা মুহূর্তও কল্পনা করতে পারি না। আপনার মনে কি কখনো এই প্রশ্নটা আসে নি যে এই ইন্টারনেট কিভাবে কাজ করে? কিভাবে এটি আমাদের ডিভাইজ পর্যন্ত আসে অথবা এই ইন্টারনেটের মালিক কে? কে পরিচালনা করে এই ইন্টারনেট? 

আজকের আলোচনায় থাকছে এইরকমই রোমাঞ্চকর কিছু অজানা প্রশ্নের উত্তর। 

আমরা জানি বাংলাদেশসহ পৃথিবীর প্রত্যেকটি দেশেই ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত। সাধারণত আমরা সকলেই মনে করি যে ইন্টারনেট স্যাটেলাইটের মাধ্যমে কাজ করে। কিন্তু বাস্তব একেবারে ভিন্ন। শতকরা ৯৯ ভাগ ইন্টারনেট কাজ করে অপটিক্যাল ফাইবারের সাহায্যে। এই অপটিক্যাল ফাইবার হচ্ছে অতান্ত সরু একটি জিনিস যেটা মানুষের চুলের থেকেও সরু। এখন আপনাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে মোবাইল ব্যবহারের সময় তো আমাদের সঙ্গে কেন ক্যাবল যুক্ত থাকে না? তাহলে কেনই বা ক্যাবল এর কথা বলা হয়। 

আসলে বিষয়টা হচ্ছে যেই টাওয়ার থেকে আপনার মোবাইলে নেটওয়ার্ক আসে সেই টাওয়ার থেকে আপনি যে ওয়েবসাইট ব্রাউজ করছেন সেখানকার সার্ভার পর্যন্ত ক্যাবল বিছানো থাকে। এবার আমি বিষয়টা একটু বিস্তারিতভাবে আপনাদের বলবো যে  ঠিক কিভাবে এবং কোন কোন ধাপে ইন্টারনেট কাজ করে। ইন্টারনেট আমাদের কাছে পর্যন্ত আসে মূলত ভিন্ন ভিন্ন স্তরে। এই তিনটি স্তরকে বলা হয় টিআর ওয়ান, টিআর টু এবং টিআর থ্রি। টিআর ওয়ানের মধ্যে যেসব কোম্পানি রয়েছে তারা নিজেদের অর্থায়নে সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে এক দেশ থেকে আরেক দেশে জালের মত অপটিক্যাল ফাইবার বিছিয়ে রেখেছে। এভাবেই একটি দেশ বাকি অন্য সব দেশগুলোর সঙ্গে ক্যাবলের সাহায্যে যুক্ত হয়ে যায়। তারপর দেশ থেকে বিভিন্ন প্রদেশে বা জেলায় এই অপটিক্যাল ফাইবারগুলো বিভক্ত হয়ে যায়। তারপর সবশেষে আপনার এলাকার টাওয়ার এসে সেই সংযোগ পৌঁছায় এবং সেখান থেকেই আপনি কেবলবিহীন ইন্টারনেট সংযোগ পেয়ে থাকেন। 

এবার বিষয়টা আমরা আরেকটু প্র্যাকটিক্যালি বোঝার চেষ্টা করবো। সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে ফাইবার অপটিক্যাল ক্যাবলগুলো বিছানো হয়। এই ফাইবার অপটিক্যাল ক্যাবলগুলো চুলের মত সরু হলেও এগুলোর ডাটা ট্র্যান্সফারের ক্ষমতা ছয় গিগাবাইট পার সেকেন্ড। আগেই বলেছিলাম যারা এই কাজ করে তারা টিআর ওয়ান কোম্পানি এবং তারা নিজেদের খরচ করে এমন কাজ করে বাংলাদেশে এমন একটি কোম্পানি টিআর ওয়ান কোম্পানি হলো বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড। 

এবার আমরা একটি ওয়েব সাইটের ব্যাপারে জানবো যেখানে সারা দুনিয়া জুড়ে কিভাবে তারগুলো বিছানো রয়েছে তা এখানে আপনি দেখতে পারবেন। এই ক্যাবলগুলো দিয়ে যারা পুরো পৃথিবীকে কানেক্ট করেছে তারাই হচ্ছে টিআর ওয়ান কোম্পানি। বাংলাদেশের দুইটি ল্যান্ডিং পয়েন্ট রয়েছে। একটি হচ্ছে কুয়াকাটায় এবং আরেকটি হচ্ছে কক্সবাজারে। এখন আপনি যদি কোনো ওয়েবসাইট ভিজিট করেন আর সেটির সার্ভার যদি অন্য কোনো দেশে হয়ে থাকে তাহলে আপনার ব্রাউজ করা সমস্ত ডাটা পুনরায় এসে এই ল্যান্ডিং পয়েন্টের মধ্য দিয়ে সেই নির্দিষ্ট সার্ভারে গিয়ে পৌঁছাবে এবং পুনরায় সেই সার্ভার থেকে আপনার ডিভাইসে ডাটা রিসিভ হবে। 

এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই ল্যান্ডিং পয়েন্ট থেকে কিভাবে ইন্টারনেট আপনার হাত পর্যন্ত আসে। এমনকি এর জন্য আসলে কতই বা টাকা খরচ হয়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যদি আমরা ধরি তাহলে দেশের ভিতরের বিভিন্ন অপারেটর যেমন গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক এরা ল্যান্ডিং পয়েন্ট থেকে পরবর্তী ধাপে তারের মাধ্যমে নিজেদের কানেকশন পুরো বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেয়। এরা হচ্ছে টিআর টু কোম্পানি। এই টি আর টু কোম্পানিগুলো প্রতি গিগাবাইট একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা টিআর ওয়ান কোম্পানিকে হিসেব করে দেয়। 

এছাড়াও লোকাল পর্যায়ে বিভিন্ন ইন্টাএনেট সার্ভিস প্রোভাইডার বা আইএপিস রয়েছে যারা মূলত টিআর থ্রি কোম্পানি। মূলত টিআর ওয়ান, টিআর টু ও টিআর থ্রি এই তিনটি স্তরেই ইন্টারনেট আমাদের হাত পর্যন্ত আসে। ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলে জানা যায় যে, ইন্টারনেটের জন্য আসলে কোনো খরচ নেই। যা আমরা দেই তা শুধুমাত্র কেবল বিছানো ও মেরামত করার জন্য। আর এতকিছুর মধ্যেই আমরা সহজেই বুঝতে পারছি যে, এখানে স্যাটেলাইটের কাজ নেই। ইন্টারনেট প্রায় পুরোটাই এই ক্যাবলের মাধ্যমেই আপনাদের হাতে এসে পৌছায়। তাই ইন্টারনেটের আসলে কোনো মালিক নেই। 

2
$ 0.00
Avatar for Mujahidul904
4 years ago

Comments