“তিন ভুবনের শিক্ষা” 

10 19
Avatar for Mrm
Written by
3 years ago

শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড” বাংলা ভাষার এই আপ্তবাক্যটি সবাই স্বীকার করেন। জাতির মেরুদণ্ড যা তার গঠন ও ব্যবহারপ্রক্রিয়া তিনটি ভিন্ন দেশে কীরকম তা এই বইয়ের প্রধান আলোচ্য।  জাপান, নেদারল্যান্ড ও বাংলাদেশের সমাজ শিক্ষাকে কীভাবে দেখে তা এই বই থেকে জানা যাবে। তবে শুধুমাত্র শিক্ষাকার্যক্রমের বিবরণ প্রদান এই বইয়ের উদ্দেশ্য নয়। তিনটি দেশের প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার একটি চিত্র উপস্থাপনের মাধ্যমে পরস্পরের সাথে তুলনার একটি সুযোগ রয়েছে। তিনজন লেখক নিজ নিজ সন্তানের স্কুল থেকে যা দেখেছেন ও শিখেছেন তাই বর্ণনা করেছেন। কোনরকম কল্পনা ছাড়াই, একেবারে বাস্তব অভিজ্ঞতাকে লিখিত রূপ দিয়েছেন। ফলে আমরা অর্থাৎ পাঠকরাও তিনটি দেশের শিক্ষা কাঠামোর বৈশিষ্ট্যকে স্পষ্টভাবে চিনে নিতে পারবো।

শিক্ষা কী, কেন ও কীভাবে তার তাত্ত্বিক আলোচনা এই বইয়ের উদ্দেশ্য নয়। শিক্ষার দার্শনিক ব্যাখ্যায় কোন চিন্তক কি তত্ত্ব দিয়েছেন, কোন দেশে তার প্রয়োগপদ্ধতি কীরূপ তা বিশ্লেষণ করে লেখকত্রয় নিজেদের পাণ্ডিত্য প্রকাশ করতে যান নি। তারা শুধুমাত্র যা দেখেছেন, তারই বিবরণ দিয়েছেন। তারা কেউই শিক্ষাবিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা করেন নি। তারা শুধু সাধারণ বাবা-মা হিসেবে সন্তানের শিক্ষাকে সুলভ, সহজ ও আনন্দময় করার প্রত্যাশা করেছেন। কিন্তু তিনটি দেশে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিজ্ঞতা ভিন্নরকম।

এই বইয়ের প্রধান উদ্যোক্তা রাখাল রাহা। তিনি বাংলাদেশেই থাকেন। অন্যান্য পিতামাতার মতো নিজ সন্তানকে প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার হাতে সঁপে দিয়েছেন। একজন সচেতন অভিভাবক সন্তানের শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে নিজেকে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িয়ে রাখেন। এর জন্য শিক্ষা বিজ্ঞান পড়তে হয় না। আগ্রহী অভিভাবক নিজে থেকেই সন্তানের শিক্ষাপ্রক্রিয়াকে সচেতনভাবে পর্যবেক্ষণ করে। রাখাল রাহা সেরকম সহজাত প্রবণতা থেকে সন্তানের শিক্ষা ব্যবস্থার অংশ হতে চেয়েছেন। তিনি যা দেখেছেন, অনুভব করেছেন, বুঝেছেন তাতে আঁতকে উঠেছেন। অপত্য স্নেহ প্রভাবিত পিতৃহৃদয় নানারকম আশংকায় কেঁপে উঠেছে। তিনি পাণ্ডিত্যগর্বী নন, তাই পরিচিত বর্গের কাছে অন্য দেশের শিক্ষার চিত্র জানতে চেয়েছেন। নিজে যা জেনেছেন, অন্যদেশের শিক্ষাচিত্র যা পেয়েছেন, তাই তুলে ধরেছেন পাঠকের সামনে।

বিশদ বিবরণে যাওয়ার আগে স্বল্পাকারের সূচিপত্রটি একবার দেখে নেয়া যেতে পারে।

  • মুখবন্ধ

  • জাপান: প্রতিটি শিশুই এক-একটি ফুল, প্রতিটি ফুলই স্বতন্ত্র – তানজীনা ইয়াসমিন

  • নেদারল্যান্ডস: পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী শিশুদের শিক্ষা - তানবীরা তালুকদার

  • বাংলাদেশ: পাথরে লেখা আছে অধঃপতন – রাখাল রাহা


এই তিনটি অধ্যায়ে লেখকত্রয় তিনটি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার নানাবিধ বৈশিষ্ট্য প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ানে বর্ণনা করেছেন। জানিয়েছেন দেশসমূহে সংশ্লিষ্ট সমাজ শিশুদের সাথে কিরকম আচরণ করে, কীরূপ শিক্ষার মুখোমুখি করে।

“তিন ভুবনের শিক্ষা” বইটি শিক্ষা বিজ্ঞানের বই নয়। কিন্তু তিন দেশের শিক্ষাচিত্র জানার সাথে সাথে পাঠক বুঝে যাবে শিক্ষা কি জিনিস; শিক্ষার রূপ কেমন হওয়া উচিত; কোন ধরনের শিক্ষা শিশুকে দেয়া উচিত বা কোনটা শিশুদের জন্য উপযুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা? লেখক মুখবন্ধে বলেন-

 একজন বাঙালী মা অথবা বাবা, যিনি বাংলাদেশে লেখাপড়া করেছেন, ভালো-মন্দ বহু ধরণের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন, তিনি যখন শিক্ষাদীক্ষায় উন্নত একটা দেশে গিয়ে নিজের সন্তানের শিক্ষাজীবনের অভিজ্ঞতার অংশী হচ্ছেন, তখন তাকে কিভাবে দেখছেন, বা নিজের অভিজ্ঞতার সাথে মিলিয়ে কিভাবে চমৎকৃত হচ্ছেন – এটা খুব সহজ-সরলভাবে তুলে ধরাই ছিল এই পাণ্ডুলিপি পরিকল্পনার প্রধান বিবেচ্য।…. সন্তানের মঙ্গল যেহেতু সব বাবা-মা অথবা শিক্ষক-অভিভাবক চান, সেহেতু এই তুলনার মাধ্যমে নিজের সন্তান বা শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন সুন্দর ও আনন্দময় করে তোলার জন্য যত্নবান হতে পারবেন। পাশাপাশি শিক্ষা-প্রশাসক বা ব্যবস্থাপকগণও তাঁদের পরিকল্পনা প্রণয়ন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে এই অভিজ্ঞতাগুলো থেকে কিছু করণীয়  থাকলে সে-বিষয়ে ভাবতে পারবেন।

শিশু জন্মের পর থেকেই শিক্ষা গ্রহণ করা শুরু করে। শৈশবের এক পর্যায়ে সামাজিক প্রয়োজন মেটাবার জন্য তাকে শিক্ষা কাঠামোর সাথে যুক্ত হতেই হয়। এই পর্যায়ে সে পরিপার্শ্ব থেকে যে ধরণের অভিজ্ঞতার মুখোমুখে হয় তা সারাজীবন স্মৃতিতে খোঁদাই হয়ে থাকে। তার মানসগঠন সেই অভিজ্ঞতার আলোকেই বিবর্তিত হয়।

বাংলাদেশের শিশুরা স্কুলে যে ধরনের পরিবেশের মুখোমুখি হয়, তার পাশাপাশি অন্য দেশের শিশুদের অভিজ্ঞতার তুলনামূলক চিত্র অভিভাবকদের জানা থাকা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে ‘তানজীনা ইয়াসমিন’, ‘তানবীরা তালুকদার’ ও ‘রাখাল রাহা’  রচিত “তিন ভুবনের শিক্ষা” বইটি সফল। লেখকের আশাবাদ প্রত্যেক অভিভাবকের হৃদয় ছুঁয়ে যাবে।

  … এসব অভিজ্ঞতার সারাৎসার নিয়ে আমরা এমন শিক্ষাব্যবস্থা নির্মাণ করতে পারবো যার মাধ্যমে একদিন এই ধ্বংসোন্মত্ত পৃথিবীর গতিমুখ ঘুরিয়ে দিতে পারবো। যে অগণিত শিশু প্রতিদিন কোন তারার জগৎ থেকে ছুটে আসে, আর আমাদের প্রিয় কবির ভাষায় যার গায়ে 'নক্ষত্রের শীত' লাগে, তার জন্য এক আলোকময় পৃথিবী নির্মাণ করতে পারবো।

আমরা মনে করি বাংলাদেশের প্রত্যেক অভিভাবকের এই বই পড়া উচিত। তাহলে তারা বুঝতে পারবে- একই শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলিত থাকা সত্ত্বেও জ্ঞানে বিজ্ঞানে মানবিকতায় অন্য দেশ কেন এগিয়ে গেল আর কার পাপে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও সমাজ এক অতল ঘুর্ণিপাকের তলায় তলিয়ে গেল।

বইয়ের শেষে বাংলাদেশের এক ঐতিহ্যময় স্কুলের (ওয়েস্ট এন্ড হাই স্কুল, আজিমপুর, ঢাকা, স্থাপিত: ১৯২০) বিভিন্ন অংশের- উপাদানের বেশ কিছু ছবি আছে। ছবিগুলো ছাপানোর মান ভাল হয় নি। সাদাকালোয় ছাপানো ছবিগুলোর কোন কোনটি অতিরিক্ত কাল কালিতে আচ্ছন্ন হয়ে গেছে। ফলে প্রায় বোঝাই যায় না সেটা কীসের ছবি। ক্যাপশনে ছবির বর্ণনামূলক কিছু না লিখে শুধুমাত্র ফটোগ্রাফ তোলার তারিখ রয়েছে। এই ছবিগুলো সংযোজনের কােন কারণ বইয়ের কোথাও লেখা নেই।

বইয়ের ছাপার মান উন্নত। শক্ত মলাটে মোড়ানো বইয়ের বাঁধাই ভাল। মোটা সাদা কাগজে ছাপানো ও শক্তপোক্তভাবে বাঁধানো বইটি দীর্ঘায়ু হবে। ‘রাখাল রাহা’র লেখা “তিন ভুবনের শিক্ষা” বইয়ের বহুল প্রচার এবং প্রত্যেক শিক্ষিত সচেতন অভিভাবকের পাঠ প্রত্যাশা করি। শিশুদের হাতের লেখা ও আঁকা ছবি দিয়ে সব্যসাচী মিস্ত্রীর তৈরি করা প্রচ্ছদটি সুন্দর হয়েছে। রঙের পরিমিত ব্যবহার প্রচ্ছদকে  যথাযথ নান্দনিকতা দিয়েছে।

15
$ 0.00
Avatar for Mrm
Written by
3 years ago

Comments

great writer

$ 0.00
3 years ago

Subcaribe me

$ 0.00
3 years ago

Done. Do back

$ 0.00
User's avatar Mrm
3 years ago

Awesome...

$ 0.00
3 years ago

Thanks

$ 0.00
User's avatar Mrm
3 years ago

education is the backbone of a nation. it helps to turn a people as a perfect man

$ 0.00
3 years ago

Right

$ 0.00
User's avatar Mrm
3 years ago

Kottheke copy marcho vaiya! Copy pest Sundor hoyse. Awsm. Carry on.

$ 0.00
3 years ago

দুদকে মামলা করবো তোমার নামে।

$ 0.00
User's avatar Mrm
3 years ago

Wonderful

$ 0.00
3 years ago