#রিভিউ
বই : মেমসাহেব।
লেখক : নিমাই ভট্টাচার্য।
পৃষ্ঠাসংখ্যা : ১৪৪।
.
.
"অদৃষ্ট যে মানুষকে কোথায় নিয়ে যেতে পারে, কি আশ্চর্যভাবে দুটি অপরিচিত মানুষকে নিবিড় করে একসূত্রে বেঁধে দেয়, তা ভাবলে চমকে উঠি।"
~মেমসাহেব (নিমাই ভট্টাচার্য)।
.
.
আচ্ছা, আপনি কি 'অপূর্ণ প্রাপ্তিতে পরিপূর্ণ প্রণয়' কথাটা বিশ্বাস করেন? এর মানে হলো আপনার প্রেম, আপনার ভালোবাসায় হয়তো কোনো খাদ ছিল না, কোনো কমতি ছিলনা; তবু হয় ভাগ্যের পরিহাসে নাহয় নিজ কর্মদোষে সেই ভালোবাসার অফুরান প্রাপ্তি থেকে আপনি বঞ্চিত হতে বাধ্য। যদি আপনি এই নির্মমতা বিশ্বাস করেন তাহলে এই উপন্যাস খানা আপনার; হ্যাঁ,পুরোপুরি আপনার।
.
.
"মেমসাহেব" উপন্যাসকে বাঙালির প্রেমানুভূতির আদর্শ মানা হয়। এই লেখার মধ্য দিয়ে সহস্র পাঠক মনে অমর হয়েছেন লেখক "নিমাই ভট্টাচার্য"। গল্প কথকের বৌদিকে লেখা মোট ২০ টি পত্রের সংকলন এই পুরো উপন্যাস। একজন অতি সাধারণ সাংবাদিকের সফলতার দুর্গম পথ, সেই সাফল্যের পেছনে একমাত্র নারীর অসামান্য অবদান, তাদের সুন্দর ভালোবাসার স্মৃতি, একসাথে বাকিটা জীবন কাটাবার স্বপ্ন সবকিছুকে একসুতোয় বেঁধে দিয়েছেন লেখক। কি দারুণ সেই উপস্থাপন ভঙ্গি! আর এর মাঝে যুক্ত হয়েছে সেইসময়ের একজন শহুরে, সুশিক্ষিতা, বাঙালি নারীর, প্রেমিকার কালজয়ী রূপ; আর তিনিই হলেই রিপোর্টারের "মেমসাহেব", যার অন্য কোনো নাম উপন্যাসের কোথাও জানা যায় না। কিন্ত যেই মেমসাহেবকে নিয়ে রিপোর্টারের ভবিষ্যতের এতো জলপনা কল্পনা তাকে প্রাণ দিতে হয় ততকালীন কমিউনিস্ট দাঙ্গায়। পৃথিবী হয়তো হাজারো মানুষ প্রতিনিয়ত না ফেরার দেশে পাড়ি জমায়। কিন্তু প্রিয়জনকে হারানোর কষ্ট সামলানোর ক্ষমতা সৃষ্টিকর্তা খুব কম মানুষকে দেন। সেই দুঃখ নিয়ে কাটে রিপোর্টারের বাকি জীবনটুকু। এই পুরো উপন্যাসে লেখনীর এক বিশেষ আকর্ষণ ক্ষমতা একজন পাঠককে এর সমাপ্তি অবদি নিয়ে যাবে।
.
.
ব্যক্তিগত ভাবে উপন্যাস খানা আমার খুব যে ভালো লেগেছে তা নয়। হয়তো আমার রুচিবোধ আর দশজনের থেকে অনেকটা আলাদা বলে এর গভীরতা আমাকে পুরোপুরি স্পর্শ করতে পারেনি। মেমসাহেবের নিস্বার্থ ভালোবাসাকে সম্মানের চোখে দেখলেও, সত্তরের দশকে বিয়ের আগে live together করার মতো এক আধুনিকার মুখে বিয়ের পরে চাকরি কেন করবো; সন্তান পালনই তো প্রধান কাজ...এই জাতীয় মন্তব্য কিছুটা অসংগত ঠেকেছে৷ তবে সব মিলিয়ে উপন্যাসটিকে অনায়াসে বাঙালি প্রেমের আদর্শ সৃষ্টি বলা যেতে পারে।
.
.
" নিদ আয়ে,তো খোয়াব আয়ে
খোয়াব আয়ে,তো তুম আয়ে
পার তুমহারি ইয়াদ মে
ন নিদ আয়ে,ন খোয়ান আয়ে!"
(ঘুম এলেই স্বপ্ন আসে, স্বপ্ন এলেই তুমি আসো। কিন্তু যেই তুমি আসো তখন না আসে ঘুম, না আসে স্বপ্ন)।
এই লাইনগুলোকে খুব মনে ধরেছে। আর মনে মনে ঠাউরেছি কখনো সুযোগ এলে কলকাতার অলিতে-গলিতে, পার্কস্ট্রিটে, লিন্ডসে মোড়ে, ময়দানে, দিল্লির গ্রীন রোডে নিশ্চয়ই যাবো। কে জানে! হয়তো মেমসাহেব রা এখনো বেঁচে আছেন তাদের শহরে!
কথা গুলো ভালো লেগেছে