সেই ছেলেটা

33 38
Avatar for Moumitaaa
3 years ago

১.

ক্লাস সিক্সের প্রথম ক্লাস আজকে। এখনো ক্লাস টিচার আসেনি, ক্লাস রুমের ভিতরটা গমগম করছে। নতুন করে শাখা ভাগ করা হয়েছে, কারো রোল নাম্বার কেউ এখনো জানেনা, তাই বন্ধু-বান্ধব সবাই একসাথে বসেছে। সবাই সবার সাথে কথা বলছে, হাসা হাসি করছে।

শুধু একটা ছেলে ক্লাসের সবচেয়ে পিছনের বেঞ্চে একা বসে আছে পিঠ সোজা করে। তার চোখ দুটো বড় বড় করে খোলা। কিন্তু সে কিছু দেখছে বলে মনে হয় না। সে যেন দূরে কোথাও কিছু ভাবছে, এই ক্লাসে সে নেই।

হঠাৎ দুইজন স্বাস্থ্যবান ছেলে এসে তার দুই পাশে বসলো।তারা জানে, এই ছেলেটা ক্লাসে নতুন, অন্য কোন স্কুল থেকে ট্রান্সফার হয়ে তাদের স্কুলে এসেছে। শুরুতেই চিন পরিচয় করে নেওয়া ভালো।

নতুন ছেলেটার ডান পাশে যে ছেলেটা বসেছে তার নাম তন্ময়। স্কুলে একনামে সবাই যে তূর্য গ্যাংকে চিনে সেই তূর্যের আপন ছোট ভাই। তূর্য পড়ে ক্লাস টেনে। বালির চেয়ে সূর্য গরম থাকে, তূর্যের চেয়ে তন্ময়ের ঠাঁটবাট বেশি। সে দাঁত বের করে ভালোমানুষি একটা হাসি দিয়ে নতুন ছেলেটার কাঁধে একটা থাবা দিয়ে বললো- “কিরে তোর নাম কি?”

ছেলেটা এক চুল নড়লো না। শুধু ঘাড় ঘুরিয়ে তন্ময়ের দিকে তাকালো। ছেলেটার চোখে কিচ্ছু নাই। কিচ্ছু না। রাগ ক্ষোভ খুশি দুঃখ কিচ্ছু নাই। মরা মাছের মত চোখে তাকিয়ে ছেলেটা খুব মিহি গলায় টেনে টেনে বললো- “আমার গায়ে কখনও টাচ করবে না। আমার পছন্দ না ব্যাপারটা”

তন্ময় হকচকিয়ে গেছে। পুরো ব্যাপারটা, ছেলেটার কথা বলার ভংগি, তাকানো এতটাই অস্বাভাবিক যে কিছুক্ষণ কোন কথাই বলতে পারলো না। তারপর হঠাৎ তার চোখ দুটো ধ্বক করে জ্বলে উঠলো, সে হুংকার ছেড়ে উঠলো “কি বললি তুই?”

ক্লাসের ভেতর হঠাৎ নীরবতা নেমে এলো। সব কয়টা মাথা ঘুরে পিছনের বেঞ্চের দিকে তাকিয়ে আছে। তন্ময় আবার গর্জালো, “শুয়োরের বাচ্চা কি বললি তুই? তোকে টাচ করবো না?”

অদ্ভুত ছেলেটার চোখে একটা পলক পর্যন্ত পড়লো না। সে আগের মতই নিষ্প্রান যান্ত্রিক গলায় বললো- “বলেছি আমাকে স্পর্শ করবে না। ব্যাপারটা আমার পছন্দ না”

তন্ময়ের মাথার ভেতর মনে হলো ছোটখাটো বিস্ফোরণ হলো। এটা কার্টুনের কোন দৃশ্য হলে তার কান দিয়ে ধোয়া বের হতো নিশ্চয়ই। কিন্তু সেটা হলো না। তার বদলে তন্ময় তার সুগঠিত হাত দিয়ে সজোরে নতুন ছেলেটার ঘাড়ে চাপাতির মত কোপ দিলো।

অন্তত সবাই তাই দেখলো। কিন্তু প্রায় অমানুষিক গতিতে ছেলেটে সরে গেছে, আর তন্ময়ও ব্যালেন্স হারিয়ে সেকেন্ডের ভগ্নাংশ সময়ের জন্য সামনে ঝুঁকে গিয়েছে। আর এর ভেতর ছেলেটা তন্ময়ের বুকের ঠিক মাঝখানে খুব আলতো ভাবে একটা ধাক্কা দিলো। ব্যাপারটা এত দ্রুত ঘটলো যে কারো চোখেই পড়লো না।

সবাই শুধু দেখলো তন্ময় নতুন ছেলেটাকে মারতে গেলো তারপরের মূহুর্তে কিভাবে যেন নিজেই উড়ে গিয়ে দুই সারি বেঞ্চের মাঝের যায়গায় গিয়ে পড়লো! আর অন্য ছেলেটাও ছিটকে বেঞ্চ থেকে সরে এসেছে, যেভাবে কেঁচো সরে যায় লবণ থেকে।

নতুন ছেলেটা অবশ্য ভাবলেশহীন। যেন কিছুই ঘটে নি। তন্ময়কে দুইজন ধরে তুললো। তার কানের একপাশে হালকা ছড়ে গেছে, কুনুই এর চামড়া উঠে গেছে। সে মাথা ঝাড়তে ঝাড়তে তার বেঞ্চের দিকে গেলো। পিছনে ফিরে তাকালো না পর্যন্ত। তখনই স্যার ঢুকলেন ক্লাসে, যে যার জায়গায় সোজা হয়ে বসলো। তবে মাথা ঘুরিয়ে কেউ কেউ একদম পিছনের বেঞ্চের দিকে তাকাচ্ছিলো, যেন অদ্ভুত কিছু একটা বসে আছে!

প্রতি বেঞ্চে দুইজন করে বসবে। নতুন ছেলের রোল হলো ৬২, যে ছেলেটার রোল ৬১, নাম আদনান। সেও তার ক্লাসে কিছুটা বিচ্ছিন্ন, চুপচাপ টাইপ। বড়লোকের খেয়ালি ছেলে, পড়াশুনা ইচ্ছে করেই করে না সম্ভবত। এধরণের ছেলেদের নিজেদের ভালো একটা ফ্রেন্ড সার্কেল থাকে- টাকা-পয়সাওয়ালা ড্যাম কেয়ার টাইপের ব্যাকব্যাঞ্চার সব। কিন্তু সে কারো সাথে বেশি ঘনিষ্ঠ হয় না। নিজের রোল জানার পর সে তার ব্যাগ নিয়ে নীরবে নতুন ছেলেটার পাশে এসে বসলো। টু শব্দটা পর্যন্ত কেউ করলো না।

টানা তিনটা ক্লাস পড়ে টিফিন হলো। ক্লাসে কেমন একটা শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি। তন্ময় কি কিছু করবে? খারাপ কিছু নিশ্চয়ই ঘটবে আজ! তন্ময়ের গায়ে হাত তুলেছে, তাও একদম নতুন ছেলে! তন্ময় অবশ্য কিছুক্ষণ তার চ্যালা বাহিনীর সাথে কি একটা আলোচনা করলো, তারপর ক্লাসের বাইরে চলে গেলো। টিফিন পিরিয়ড শেষ হবার আগেই তারা ফিরে এলো, তাদের ঠোঁটের কোনায় নিষ্ঠুর একটা হাসি। সেটাকে আরও অন্য মাত্রা দেওয়ার জন্য তন্ময়ের এক চ্যালা, শুকনা পাটকাঠির মত, ঐ নতুন ছেলের সাথে চোখাচোখি হতেই গলায় পোজ দেওয়ার মত ভঙ্গি করলো!

পাশে থেকে আদনান দাঁতের ফাক দিয়ে শিষের মত শব্দ করে বললো “শিট”। নতুন ছেলেটা তার দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে খুব মৃদু গলায় প্রথম বারের মত কিছু বললো “কি হয়েছে?”

সে একটু হকচকিয়ে গেলো। ভাবেনি ছেলেটা আদৌ নিজ থেকে কথা বলে উঠবে। শ্রাগ করে বললো, “তন্ময় নিশ্চয়ই তার ভাইয়ের সাথে কথা বলে এসেছে। ছুটির পর তোমার সাথে ঝামেলা হবে আরকি!”

“তন্ময় কে?”

“যাকে তুমে বেঞ্চ থেকে ফেলে দিসো”

“অ”

“তার বড় ভাই এই স্কুলেই ক্লাস টেনে পড়ে। উগ্র গুন্ডা টাইপের। গ্যাং আছে তার। সাথে ছুড়ি টুড়িও থাকে”

“আচ্ছা”

“আমি আদনান, বাই দা ওয়ে”

চোখের কোণা দিয়ে কোণা দিয়ে ছেলেটাকে লক্ষ করলো আদনান। ভদ্রতা করেও প্রতুত্তরে নিজের নামটা বললো না ছেলেটা। যেন লাস্ট লাইনটা শুনতেই পায় নি। আদনান একবার ভাবলো না ঘাটাই আর। তারপর তার আবার জেদ চাপলো। হালকা গলা খাঁকাড়ি দিয়ে সে আবার বললো, “তোমার নাম?”

ছেলেটা ঘুরে আবার তার দিকে তাকালো। নিষ্প্রাণ চোখে সে বললো “আমার নাম জানাটা জরুরী নয়”

আদনান মনে মনে এমন কিছু শোনারই প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। সে বললো, “আমরা কমপক্ষে বছরখানেক একসাথে বসবো। নাম জানাটা জরুরিই আসলে”

“অ” নতুন ছেলেটা কি যেন ভাবলো কয়েক মূহুর্ত। তারপর ঠোঁটের কোণায় একটা রহস্যময় হাসি নিয়ে বললো, “আমার নাম আফনান।”

আদনানের মনে হলো নামটা ভুয়া। সে অবশ্য মুখে কিছু না বলে মেনে নেওয়ার ভংগি করে বললো, “নাইস টু মিট ইউ, আফনান।” তারপর হ্যান্ডশেকের ভংগিতে হাতটা এগিয়ে দিলো।

যথারীতি অদ্ভুত ছেলেটা সেটা না দেখার ভান করে সামনে শূণ্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। আদনান নিজ মনেই হেসে হাত সরিয়ে নিলো, কি ভাবছিলো সে, হ্যান্ডসেক পাবে? এতক্ষণে তার অনুমান করা উচিৎ ছিলো।

২.

ছুটির আগে টানা দুটো ক্লাস করে আদনান বেশ বোরড, পাশে বসে থাকা ছেলেটাও জড় পদার্থের মত নিশ্চুপ। ছুটির ঘন্টা অবশেষে বাজতে সে কিছুটা হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো, আর ভালো লাগছিলো না। বাসায় ফিরে কি কি করবে সেটা নিয়ে ভাবতে ভাবতে একটু আত্মমগ্ন হয়ে গিয়েছিলো সে, খেয়াল করে নি, নতুন ছেলেটা, যে নিজের নাম আফনান বলেছে, যেটা আদনান মোটামুটি নিশ্চিত তার নামের সাথে মিল রেখে বানিয়ে বলা, সে যে তার পাশাপাশিই হেঁটে ক্লাস থেকে বের হচ্ছে। তাই হঠাৎ চারপাঁচটা ছেলে লাফিয়ে এসে সেই ছেলেটার উপর পরায় আদনান ভালই চমকে উঠলো। প্রায় চ্যাং দোলা করে উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ছেলেটাকে, চারপাশে সবাই মূর্তির মত তাকিয়ে আছে। মজার ব্যাপার হলো- ছেলেটা তেমন বাঁধাই দিচ্ছে না, যেন হাল ছেড়ে দিয়ে উপভোগই করছে ব্যাপারটা। ছেলেগুলো তূর্য গ্যাং এর, মোটামুটি মার্কামারা গুন্ডা সব কয়টা। নতুন ছেলেটাকে নিয়ে স্কুলের পিছন দিকে চলে গেলো তারা। চারপাশের সবাই কয়েক মূহুর্ত পরই যে যার মত আবার বের হয়ে যেতে শুরু করে- কয়েক সেকেন্ড আগে ঘটে যাওয়া ব্যাপারটা যেন কেউ দেখেই নি!

আদনান কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ইতস্তত করে। সে আগ বাড়িয়ে ঝামেলায় জড়ানোর মত সাহসী কখনই ছিলো না, অদ্ভুত ছেলেটার ভাগ্যে কি ঘটছে সেটা জানার জন্য অদম্য কৌতূহলে মারা যাচ্ছে- ব্যাপারটা এমনও না। কিন্তু কেন যেন তার মনে হচ্ছে, নতুন ছেলেটার কপালে ঠিক যা ভাবা হচ্ছে, তা ঘটবে না। কিছু একটা ভয়ানক রকম সমস্যা আছে ছেলেটার ভেতর। আদনান ধীরে ধীরে তূর্য গ্যাংএর ছেলেগুলো যেদিকে গেছে সেদিকে এগুতে থাকলো।

স্কুলের পিছন দিকটায় জংলা মত আছে, তার ভেতরই একটু ফাঁকা জায়গা। সেখানে শীতকালে কোর্ট কেটে টেনিস খেলা হয়। দুইজন “আফনান” নামে পরিচয় দেওয়া ছেলেটাকে দুই হাতে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। সামনে তূর্য, তন্ময় সহ আরও কয়েকজন। পেছনেও বেশ কয়েকজন আছে। মোটামুটি ভয়ংকর একটা দৃশ্য, বেশ কয়েকজনের হাতে স্টিলের রড, গাছের ডাল। তূর্য উগ্র স্বরে কি যেন বলছে, গালাগালিই করছে হয়তো। দূর থেকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে না। আদনান দেয়ালের বাঁকে দাঁড়িয়ে আছে, বুকের ভেতর এত জোরে হার্ট ধুকপুক করছে যেন ছিঁড়ে বের হয়ে আসবে। একই সাথে তার মনটা অসম্ভব খারাপও লাগছে, ছেলেটা সম্ভবত আজ আস্ত শরীরে বাড়ি ফিরতে পারবে না। কোন আক্কেলের স্কুলের প্রথম দিন ঝামেলায় জড়াতে গেলো বোকা ছেলেটা?

হঠাৎ রোদে কিছু একটা চকমক করে উঠতে আদনান চমকে ভালোমত তাকালো। তূর্যের হাতে ঐটা নিশ্চয়ই ছুড়ি! শিট! কি করবে এখন আদনান? সে একা কিছুই করতে পারবে না এতগুলো ছেলের সাথে। চিৎকার করলেও লাভ হবে না। কেউ ছুটে আসবে না এদিকে। সে গিয়ে স্কুলের অথরিটি কাউকে গিয়ে ডেকে আনতে আনতে খারাপ কিছু যা ঘটার ঘটে যেতে পারে। তাহলে?

কয়েক মূহুর্তের জন্য আদনানের মাথা জ্যাম হয়ে যায়। তূর্য গালির তুবড়ি ছুটিয়ে ছেলেটার দিকে আগাতে দেখে সে প্রায় চিৎকার করেই উঠেছিলো কিন্তু তার চিৎকার গলাতেই আটকে রইলো। কারণ ঠিক তখনই তার চোখের সামনে একটা ঘটনা ঘটছে যেটা নিজ চোখে দেখেও বিশ্বাস করতে পারলো না- এতক্ষণ প্রায় আত্মসমর্পণ করার ভংগিতে গা ঢিল দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটা তার দুই হাত তালি দেওয়ার ভংগিতে সামনে এনে বাড়ি দিয়েছে এবং তার দুইহাত ধরে রাখা দশাসই ছেলে দুইটা দুইটুকরো তুলার মত ধ্যাচ করে প্রায় একে অপরের ভেতর ঢুকে গেলো। আদনান এত দূর থেকেও তাদের হাড্ডি-মাংস থেঁতলে যাবার শব্দ শুনতে পায়।

দৃশ্যটা এতটাই অবিশ্বাস্য যে তূর্য ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা চোয়াল ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, একচুল নড়ার কথাও মনে হয় না কারো। ছেলেটার সামনে দুইজন স্তুপের মত পড়ে আছে, সে শার্টের হাতা দুইটা তার সরু সরু হাতের কুনুই পর্যন্ত গুটায়। তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা রড হাতে ছেলেটা চিৎকার করে ছেলেটার মাথায় গায়ের জোরে একটা বাড়ি দেয়, সে নিশ্চিত ছিলো রডটা চামড়া হাড্ডি ভেদ করে মাথার খুলিতে বসে যাচ্ছে, কিন্তু না। সেটা থামিয়ে দেওয়া হয়েছে এক হাতে, আরেক হাতে ছেলেটা সেই রডধারীর গালে একটা থাপ্পড় দিলো।

কি একটা থাপ্পড়! যেন দিনে দুপুড়ে বাজ পড়লো, কয়েক কাক উড়ে গেলো কা কা করতে করতে। টু শব্দটা না করে সে ঘুরে ঠাস করে পড়ে গেলো কাটা লাশের মত। রডটা এখন সেই ছেলেটার হাতে!

তাদের থেকে প্রায় আধফুট খাটো, শুকনা একটা ছেলেকে চোখের সামনে কয়েক সেকেন্ডের ভেতর তিনটা তিনটা ছেলেকে এভাবে মাটিতে ফেলে দিতে দেখেও তূর্য বা তার বাহিনীর কারো মাথায় এলো না- এখানে বিশাল কিছু একটা ঘাপলা হচ্ছে। অবশ্য মাথায় এতটা ঘিলু থাকলে তো আর স্কুলে গুন্ডামি করে বেড়ায় না। কিন্তু বেসিক ইন্সটিংক্ট বলে তো কিছু থাকে, বিপদ তো টের পাওয়া যায়। এদের ক্ষেত্রে দেখা গেলো এসব অনুভূতি একদমই ভোঁতা, তূর্য গর্জন করে ছুড়ি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে গেলো ছেলেটার উপর। ছেলেটা প্রায় অনায়াসে একপাশে সরে গিয়ে তাকে এড়ালো, তূর্য ব্যালেন্স হারিয়ে সামনে খাবি খেতে খেতে উপর হয়ে পড়েই যাচ্ছিলো, ছেলেটা পিছনে না তাকিয়েই তার হাতের উল্টোপাশ দিয়ে তার পিঠে একটা ঠেলার মত দিলো। তূর্য প্রায় ফুট ছয়েক দূরে গিয়ে উপুড় হয়ে পড়লো। পড়ার সময় মাথাটা নিচে দিয়ে পড়েছে, তূর্যের শরীর মাটি স্পর্শ করা মাত্র নিথর হয়ে গেছে।

হাতের রড টা খুব মজার কিছু হচ্ছে এমন ভংগিতে ঘুরাতে ঘুরাতে ছেলেটা এবার তন্ময় আর বাকি ছেলেদের দিক আগায়। তাদের কারোরই হাত খালি নেই, কিন্তু তারা পেছাচ্ছে এখন। চোখের সামনে নিজের মহাশক্তিধর বড় ভাইয়ের এই করুন দশা দেখে তন্ময় নিজেই অনেকটা দুর্বল হয়ে গেছে। সে ইতস্তত করছিলো, কি করবে ভেবে। এখনও প্রায় ৫-৬ জন তারা, আর সে একলা একটাই ছেলে- তারপরও কিছু একটার হিসেব মিলছে না এখানে। কিন্তু রাতুল, তন্ময়ের পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা কালো মুশকো করে তূর্যের ডান হাত হিসেবে পরিচিত ছেলেটির মনে কোন দ্বিধা নেই। তার থামের মত মোটা মোটা হাত আর ট্যাংকের মত বিশাল শরীরের শক্তির উপর তার আস্থার কোন কমতি ছিলো না কখনই। সে তন্ময়ের পিছন থেকে দুইহাত সামনে বাড়িয়ে ছুটে এসে ছেলেটাকে ধরে ফেলে। তারপর শরীর সাথে জড়িয়ে প্রচন্ড শক্তিতে পিষে ফেলতে থাকে। তার এই পদ্ধতিটা খুবই কার্যকর- স্কুলে এটা “ভীমের বুল্ডেজার” নামে কুখ্যাত। এই পিষানী খেয়ে এখন পর্যন্ত কেউ দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনি। রাতুল তার সর্বশক্তি দিয়ে পিষছে দাঁত মুখ খেঁচিয়ে, আর অদ্ভুত ছেলেটা হাসি হাসি মুখে তার কাজ কর্ম দেখছে। সে আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলো, তারপর বললো, “এবার আমার পালা” আর সাথে সাথে তার কপাল দিয়ে রাতুলের নাক মুখে প্রচন্ড গততে ঢুঁস দিলো। দূর থেকে এই দৃশ্য দেখে এবার আদনানের এবার উল্টো দুশ্চিন্তা হতে শুরু করলো- এদের কয়জন আজ বাড়িতে আস্ত শরীর নিয়ে ফিরতে পারবে তা নিয়ে!

বিশালদেহী রাতুল সাথে সাথে নতুন ছেলেটাকে ছেড়ে দিয়ে নাক-মুখ চেপে শুয়ে পড়ে, আংগুলের ফাঁক দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে ফিনকি দিয়ে। এবার আর তন্ময়রা গাধামি করলো না- হাতের সব ছাই পাশ ফেলে ছুটে পালিয়ে গেলো, আদনানের সামনে দিয়েই। আদনানকে খেয়াল করলো বলেও মনে হলো না। আদনান অবাক হয়ে তাদের চলে যাওয়া দেখতে দেখতে আবার সেই ছেলেটার দিকে তাকালো। তিনটা নিথর আর একটা ছটফট করতে থাকা দেহের মাঝে দাঁড়িয়ে ছেলেটা পকেট থেকে একটা রুমালের মত কিছু বের করে ধীরে সুস্থে হাত আর মুখ মুছে। তারপর কিছুদুরে পরে থাকা ব্যাগটা তুলে নিয়ে ধীরে ধীরে আদনানের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। আদনানের হঠাৎ মনে হতে থাকে- এই ছেলেটার সাথে তার খুব ঘনিষ্ঠ হওয়া দরকার! সে মানুষ বা যাই হোক না কেন, অন্তত তার সাথে ঝামেলা না করলে ভয় পাওয়ার কিছু নাই- এটা নিয়ে সে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায় কিভাবে যেন!

৩.

“তোমার আসল নাম আফনান না, রাইট?” বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ পাশাপাশি হেঁটে মেইন রোডে উঠার পর আদনান প্রথম মুখ খুলে। কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া অবিশ্বাস্য ঘটনা গুলো মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে, কিন্তু সে যতটা সম্ভব শান্ত থাকার চেষ্টা করছে।

ছেলেটা হাসলো। তারপর কিছুক্ষণ মাথা চুলকে বললো “আমার যে নাম সেটা তোমাদের দ্বারা উচ্চারণ করাটা প্রায় অসম্ভব”

আদনান থমকে দাঁড়ালো। তার বুকে ধ্বক করে লেগেছে, “আমাদের, তোমাদের... মানে কি? তুমি মানুষ নও?”

“তুমি পুরো ব্যাপারটা দেখেছো। তোমার কাছে এখনও মনে হচ্ছে আমি তোমাদের মত কেউ?”

আদনান ঢোক গিলে। “তুমি তাহলে কি? এলিয়েন?”

কথা বলতে বলতে কখন যে তারা মেইন রোড ছেড়ে শহরতলীর দিকে চলে এসেছে টেরই পায়নি। এদিকটায় রেললাইন চলে গেছে, দূরে কিছু বস্তির মত আছে, একটা বড় ডোবার মত আছে। আগে কোন এক কালে হয়তো খাল টাইপের কিছু ছিলো। মাটি ভরাট করে, আবর্জনা ফেলে সেটাকে মেরে ফেলা হয়েছে।

ডোবার ঠিক সামনে এসে দাঁড়ালো তারা। আদনানের শেষ প্রশ্নটার কোন উত্তর না দিয়ে ছেলেটা হাতের কিসে জানি চাপ দিলো, বিজাতীয় যান্ত্রিক শব্দ হলো একটা। শীতকাল শুরু হয়ে গেছে, হুট করে দিনের আলো নিভে যায় আজকাল। এদিকটায় মানুষজন তেমন আসে না। আদনানের শরীর হঠাৎ ছমছম করতে শুরু করে।

ডোবার ভেতর একটা আলোড়ন তৈরী হচ্ছে। ঘন কালো পানির নিচে কিছু একটা নড়ছে, গুমগুম শব্দ করছে। আদনানের ভিতরে কোথাও ভয়ংকর আতংক তৈরী হচ্ছে, ইচ্ছে করছে ছুটে পালিয়ে যায়। কিন্তু তার পা দুইটা অনড়। সে মন্ত্রমুগ্ধের মত তাকিয়ে থাকে- পুর ব্যাপারটা কি ঘটে তা না দেখে সে যেন মুক্তি পাবে না!

ধীরে ধীরে ডোবার ময়লা আবর্জনা ভেদ করে একটা গম্বুজের মত মহাজাগতিক যান ভেসে উঠলো। আদনান তার জীবনে সায়েন্স ফিকশন মুভি, টিভি সিরিয়াল কম দেখেনি তার বড় ভাইয়ের কল্যাণে। কিন্তু সে এরকম কিছুর কথা কখনও কল্পনাও করেনি। যদিও গম্বুজ আকৃতির বলা হচ্ছে আসলে আক্ষরিক অর্থে তা না, অনেকটা ড্রামের মত সিলিন্ড্রিকাল। উপরে গম্বুজের মত উত্তল ছাদ পুরোপুরি ড্রাম হতে দেয় নি। আর জিনিসটা ঠিক কি দিয়ে বানানো সেটা আদনান বুঝতে পারলো না, ধতব একটা আভা আছে কিন্তু কেন যেন ধাতু মনে হচ্ছে না। রংটা কালচে আর ধাতবের মাঝামাঝি, স্থির নয়। মনে হচ্ছে, জিনিসটা জীবন্ত, হাত দিয়ে স্পর্শ করলে সরসর শব্দ করে সরে যাবে! পুরো জিনিসটায় কোথাও কোন লাইট জ্বলছে না কিন্তু খুবই সুক্ষ্ম একটা আলোর আভা আছে, তাই ঘন কালো অন্ধকারেও দেখা যাচ্ছে।

আদনান নিজেকে সামলিয়ে নেয়। সে যতটা সম্ভব গলা শান্ত রাখার চেষ্টা করতে করতে বলে, “তু-তুমি একজন এলিয়েন, এইটা তোমার স্পেস-শিপ আর তুমি মানুষের চেহারা নিয়ে আছো, রাইট?”

“সঠিক অনুমান” ছেলেটা... থুড়ি, এলিয়েনটা হাতের ঘড়িতে কি যেন টেপাটেপি করছে।

এদিকে আদনানকে যেন প্রশ্নের নেশায় পেয়েছে, “কোন নক্ষত্রের সোলার সিস্টেম থেকে এসেছো তুমি? তোমাদের গ্রহের নাম কি? কয়টা সূর্য তোমাদের সিস্টেমে? আরো কতগুলো গ্রহে প্রাণ আছে? তুমি কি কোন মিশন নিয়ে পৃথিবীতে এসেছো নাকি পালিয়ে এসেছো আত্মগোপন করতে?”

ছেলে রূপী প্রাণিটা মুখ তুলে তাকালো। “ইম্প্রেসিভ!” তার চোখে প্রশ্রয়ের হাসি, “খুবই সুচিন্তিত তোমার প্রশ্নগুলো। আমি ভাবিনি এগ্রহের কারো কাছে আমার পরিচয় প্রকাশ করলে এত তাড়াতাড়ি এতগুলো গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করতে পারবে পরপর!”

আদনান হাসলো। সে যে পরিমাণ সায়েন্স ফিকশন বই পড়েছে, এরকম প্রশ্ন করাটাই স্বাভাবিক। যদিও সে মোটামুটি নিশ্চিত সে স্বপ্ন দেখছে, এক্ষুণি ঘুম ভেংগে উঠে দেখবে ছুটির পর বাসায় ফিরে ক্লান্ত শরীরে ঘুমিয়ে গিয়েছিলো, তার বাবা মাগরীবের আজানের সময় ঘুমানোর জন্য বকাবকি করছেন!

চাপা শব্দ করে হঠাৎ মহাকাশ যানটার একপাশ সরে যেতে থাকে। দরজা হবে নিশ্চয়ই! ভেতরে কেমন নরম একটা আলো। প্রানিটা এবার আদনানের দিকে ফিরলো। “তোমার কৌতূহল মিটাতে আমার কোন সমস্যা নেই, হে মানব সন্তান!” কন্ঠ কেমন যেন বদলে যাচ্ছে, ক্লাস সিক্সে পড়ুয়া কিশোর আর মনে হচ্ছে না। “কিন্তু সেটা হবে অর্থহীন। আমরা তোমাদের গ্রহতে এসেছি তথ্য সংগ্রহ করতে। নানা রূপে আমরা মিশে যাচ্ছি তোমাদের ভেতর, বিভিন্ন ক্ষেত্রে। আমরা কোন ক্ষতি করবো না তোমাদের, প্রাণের এত বিস্তৃত বিকাশ হয়েছে ও সভ্যতার প্রাথমিক পর্যায় শুরু হয়েছে, এমন একটা গ্রহের উপর নিতান্তই বৈজ্ঞানিক গবেষণা চালানোই আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য। কিন্তু আমাদের কভারও নষ্ট করা যাবে না। তাই এখান থেকে যাওয়ার আগে তোমার কিছু স্মৃতি অপসারিত করতে হবে। আমি নিরুপায়”।

“ওহ!” আদনান চুপ হয়ে গেলো। তাই তো! এতদিনের এত জল্পনা কল্পনা মানুষের এলিয়েনকে নিয়ে, সেটা যদি সত্যি প্রামণিত হয় তাহলে কি ভয়ংকর হৈচৈ পড়ে যাবে কল্পনা করা যায়? তাদের এগ্রহে আসার উদ্দেশ্য যাই হোক না কেন, সেটা নিশ্চয়ই তাদের উপকারে আসবে না। আর আদনানের কিছু করারও নাই। এখন যাস্ট স্মৃতি মুছে দিবে বলছে, সে কথা না শুনলে মেরে ফেললেও বা কে এসে বাঁধা দিচ্ছে?

“আমি কি তোমার আসল চেহারাটা দেখতে পারি?” আদনান অনুনয়ের গলায় বললো “আসলে তোমাদের চেহারা নিয়ে এত বেশি সব অনুমান করা হয়েছে...”

প্রাণিটা হাসার মত শব্দ করলো, “হ্যাঁ আমরাও সেটা খেয়াল করেছি। অন্য গ্রহের প্রাণিদের নিয়ে তোমাদের বেশ ভালো একটা ফ্যাসিনিজম আছে।” হাতে একটা দণ্ডের মত কিছু একটা চলে এসেছে তার হাতে এখন, “কিন্তু আমাদের আকৃতি তোমাদের জন্য একটু বেশিই দৃষ্টিকটু হয়ে যায়, তোমারা যেটাকে ভয় বলো। কি দরকার সব মুছে ফেলার আগে ভয় পাওয়ার?”

আদনান বুঝতে পারার ভঙ্গিতে মাথা নাড়ে। “এখন কাছে এসে এখানে দাঁড়াও” প্রাণিটা আদনানকে একটা জায়গা আংগুল দিয়ে দেখায়। “আমার ধারণা ঠিক হলে তোমার বাসায় ফিরতে দেরি হয়ে যাচ্ছে। জটিলতা যত কম তৈরী করা যায় তত ভালো”

আদনান কিছু না বলে গভীর একটা নিঃশ্বাস নিয়ে দাঁড়ায় সেখানে। কিশোর একটা ছেলের নির্বিকার চেহারা নিয়ে প্রাণিটা হাতের দন্ডটিতে কি কি যেন টিপতে টিপতে তার দিকে এগিয়ে এসে হঠাৎ থেমে গিয়ে বলে উঠে, “আজ স্কুলে যা ঘটলো, তোমার কি মনে হয় এটা সামনে আমার জন্য কোন ঝামেলা করবে নাকি স্মৃতি মুছতে হবে আরও কয়েকজনের?”

আদনান শ্রাগ করে, “ক্লাস সিক্সের একটা ছেলের কাছে সদলবলে মার খেয়েছে- এটা না বলে বেড়াবার জিনিস, না বললেও কেউ বিশ্বাস করবে। আর আমি ছাড়া বাইরের কেউ ছিলো না সেখানে। আমার মনে হয় না তেমন কোন সমস্যা হবে”।

“ধন্যবাদ” প্রাণিটি ছোট করে জবাব দেয়।

“তবে তুমি যদি সত্যিই মিশতে চাও আমাদের ভেতর তোমার উচিৎ আরও বেশি হাসিখুশি হওয়া, উইয়ার্ড আচরণ না করা। কথা বলা, বন্ধুত্ব করা। তোমার আচার আচরণ যে অন্যরকম তা খুব অল্পেই চোখে পড়ে।” আদনান যোগ করে।

প্রাণিটি কিছুক্ষণ কি যেন ভাবে, তারপর মাথা নেড়ে সায় দিয়ে হাসিখুশি গলায় বলে উঠে“আমার মনে থাকবে ব্যাপারটা”। তারপর প্রাণিটা তার হাতের দন্ডটা আদনানের মাথার কাছে নিয়ে আসতে থাকে। আদনান তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে, “ওয়েট! আমি জানি অর্থহীন, তাও একটা প্রশ্ন না করে পারছি না, তুমি যে ছেলেটার রূপ ধরে আছো, যার কন্ঠে কথা বলছো সে কি আদৌ আছে না তোমরা বানিয়ে নিয়েছো?”

প্রাণিটা আবার হাসার মত ভংগি করে। “নতুন একটা জৈবিক দেহ বানাতে সময় লাগে প্রচুর, তোমাদের এখানে এটা এত বেশি এভেইলেবল যে সেই যন্ত্রণায় কে যেতে চায়? আমাদের যেরকম ডিকয় দরকার হয় সেরকম খুঁজে পেতে খুব একটা সমস্যা হয়নি, প্রচুর ছিন্নমূল মানুষ তোমাদের গ্রহে। কোন কেন্দ্রিয় তথ্যকেন্দ্র নেই, কোন পার্মানেন্ট ইন্সটলমেন্ট নেই তোমাদের শরীরে যে কেউ নিঁখোজ হলে অথরিটি টের পাবে। আমি যার শরীরে বাস করছি, বিশ্বাস করো, তার শহরে সে যে জায়গায় কাজ করতো তারা বাদে কেউ জানেইনি যে উধাও হয়ে গেছে, তার জৈবিক মাতা পিতা কেউই তার কোন খবর রাখে না। এরকম মানুষ হাজারে হাজারে তোমাদের গ্রহে যারা উধাও হয়ে গেলে কোথাও কোন কিছুই সমস্যা হয় না। জীবিত অবস্থায় এই প্রাণগুলোর কোন অর্থ ছিলো না। অন্তত তার শরীরটা এখন কোন ভালো উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে”।

আদনান চমকে উঠে। মানে! তারা মানুষ মেরে মেরে তাদের শরীর দখল করছে! তাহলে যে বললো কোন ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে আসেনি! তাহলে কি পুরোটাই মিথ্যে ছিলো এতক্ষণ যা বলেছে? এত অবলীলায় যারা মানুষ মেরে তাদের শরীর দখল করে নিচ্ছে তাদের উদ্দেশ্য খুব মহৎ হতে যাবে কেন?

আদনান তাকিয়ে দেখে ছেলেটার মুখ থেকে কিছুক্ষণ আগের মেকি হাসিখুশি ভাবটা সরে গেছে। তারা কি তবে মনে কথাও বুঝতে পারে? সে প্রানপনে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে যায় কিন্তু তার আগেই তার জগৎ অন্ধকার হয়ে আসে।

৪.

আদনান নিজেকে তার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় আবিষ্কার করলো। ততক্ষণে সন্ধ্যা শেষে রাত নেমে গেছে। স্কুল ছুটির পর এতক্ষণ সে কই ছিলো- বাবা মায়ের উপর্যুপরি প্রশ্নবানের জবাবে সে কিছুই বলতে পারলো না। তার মাথা ঝিম ঝিম করছে। সে তার রুমে গিয়ে চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়ে।

আদনানের বাবা, অর্কেস্ট্রা গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজের এমডি, সাদমান সাহেব তার একমাত্র ছেলেটা এই অল্প বয়সেই গোল্লায় যাচ্ছে বলে মাথা চাপড়াতে থাকেন।

পরদিন স্কুলে গিয়ে আদনান তার বেঞ্চে বসেই অস্বস্তি বোধ করতে থাকে। কি জানি একটা ঠিক নেই। খুব খারাপ কি জানি ঘটেছে অথচ সে ধরতে পারছে না। তার পাশে বসা ছেলেটা স্কুলে নতুন ভর্তি হয়েছে, নাম আফনান, কাকতালীয় ভাবে তার নামের সাথে মিল আছে, খুব হাসিখুশি আর মিশুক টাইপের। সবার সাথে বেশ ভাব জমিয়ে ফেলেছে।

ছেলেটা তার সাথেও অনেক কথা বলছে, সুযোগ পেলেই। এই শহরে সে নতুন এসেছে তার ফ্যামিলির সাথে, সব কিছু খুঁটিয়ে জেনে নিচ্ছে। টিফিনে সেধে আদনান কে একটা বার্গারও খাওয়ালো। এরকম একটা ছেলেকে পছন্দ না করার কোনো মানে নেই। তাও প্রতিবার ছেলেটার দিকে তাকানো মাত্র কি যেন অশুভ একটা ব্যাপার তার মনের খুব গহীনে মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে চায়।

আদনান প্রাণপনে চেষ্টা করে, কিন্তু কিছুতেই তার নাগাল পায় না।

28
$ 0.00
Avatar for Moumitaaa
3 years ago

Comments

Nice, subscribe back koren

$ 0.00
3 years ago

Nice article, please support me

$ 0.00
3 years ago

Sure 😊

$ 0.00
3 years ago

Great

$ 0.00
3 years ago

Thanks

$ 0.00
3 years ago

Nice

$ 0.00
3 years ago

Wow! Well written, carry on

$ 0.00
3 years ago

Bah nice gossip

$ 0.00
3 years ago

Thanks

$ 0.00
3 years ago

Valo likhsen..

Apnake subscribe korechi, back korben plz..

$ 0.00
3 years ago

Obbosoi

$ 0.00
3 years ago

good story

$ 0.00
3 years ago

Thanks

$ 0.00
3 years ago

Long story but gd story

$ 0.00
3 years ago

😅😅

$ 0.00
3 years ago

huge story😴😴😴😴

$ 0.00
3 years ago

Yes 😅

$ 0.00
3 years ago

Long story

$ 0.00
3 years ago

Yes

$ 0.00
3 years ago

Valo lagche

$ 0.00
3 years ago

Dhonnobad

$ 0.00
3 years ago

অনেক সুন্দর গল্প

$ 0.00
3 years ago

ধন্যবাদ

$ 0.00
3 years ago