★কেওক্রাডং বা কেওকাড়াডং বাংলাদেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ।একটা সময় বাংলাদেশের হাইয়েস্ট পীক বলা হতো এই পাহাড়কে(এখন তাজিং ডং)। এটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় জেলা বান্দরবানে অবস্থিত। এক সময় এটিকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ ধরা হত। তবে আধুনিক গবেষণায় এই তথ্য ভুল বলে পাওয়া যায়। বর্তমানে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ হল সাকা হাফং বা মদক তুং।
উচ্চতাঃ ৯৮৬ মিটার (৩,২৩৫ ফুট)
CEO:- Lalmunthan (lala) Hauheng...
★আমার জীবনের বেস্ট ট্রেকিং অভিযান। রাস্তায় হাঁটা আর পাহাড়ি রাস্তায় হাঁটা একরকম না। আর পাহাড়ি এরিয়াগুলোতে যখন তখন বৃষ্টি হয় যার কারণে পাহাড়ি রাস্তাগুলো ভয়ানক পিচ্ছিল হয়ে যায়। আমার কেওক্রাডং অভিযান এর ব্যতিক্রম ছিলো না। কেওক্রাডং যাওয়ার ইচ্ছা ছিলো ছোটবেলা থেকেই, যখন বইয়ে পড়েছিলাম বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচ্চু পাহাড় এটি। কাজেই নিজেকে ভালোভাবে নিজেকে তৈরি করে কোন প্রকার চিন্তা না করেই রওনা দিলাম কেওক্রাডংয়ের উদ্দেশ্যে।
★কেওক্রাডং শব্দটি মারমা ভাষা থেকে এসেছে। মারমা ভাষায় কেও মানে 'পাথর', কাড়া মানে 'পাহাড়' আর এবং ডং মানে 'সবচেয়ে উঁচু'। অর্থাৎ কেওক্রাডং মানে সবচেয়ে উঁচু পাথরের পাহাড়। মায়ানমার ও বাংলাদেশ সীমান্তে কেওক্রাডং-এর অবস্থান।
★ বান্দরবান বলতে অনেকেই নীলগিরি, নীলাচল, মেঘলা, সাঙ্গু নদী এসবই বোঝে। কিন্তু বান্দরবানের মূল সৌন্দর্য দেখতে হলে আপনাকে যেতে হবে বান্দরবানের ভেতরের দিকে। তরুণ বয়সে এসব জায়গা না ঘুরলে পরে আর পারবেন না। আপনি যদি পাহাড়ে উঠতে ভয় পান কিংবা পাহাড়ে ওঠার ইচ্ছা বা চেষ্টা না থাকে বা আপনি যদি প্রচুর হাঁটতে না পারেন, আর টানা চৌদ্দ-পনের ঘন্টা জার্নি করতে না পারেন তবে এ জায়গা আপনার জন্য নয়। বান্দরবানে বছরের যেকোনো সময়ই যাওয়া যায়। তবে হালকা বর্ষা আর শীতকালকেই বেশির ভাগ মানুষ বেছে নেন।
★০৮:২৬ মিনিটে বগালেক থেকে রওনা দিয়ে ৬ ঘন্টা হাঁটার পর কেওক্রাডংয়ের চূড়ায় দুপুর ০২:২০ মিনিটে যখন পৌছালাম তখন আমি বিমোহিত হয়ে গিয়েছিলাম আল্লাহ তায়ালার এই সুন্দর সৃষ্টি দেখে। চূড়ায় পৌঁছানোর সাথে সাথে বৃষ্টির দেখা মিলে। আমি হারিয়ে গিয়েছি পাহাড়ের বুকে মেঘের রাজ্যে। ক্লান্তি ও কষ্ট কিছুই গায়েই লাগেনি, যখনই অনেক ক্লান্ত হয়ে যাই, তখনই বাতাসের ভালোবাসায় হারিয়ে যাই। কেওক্রাডং থেকে নামতে বেশি সময় লাগে নি, কিছু কিছু জায়গায় অনেক বেশিই রিক্স আর পিচ্ছিল ছিল, সকাল ০৭:২০ মিনিটে কেওক্রাডং থেকে রওনা হই বগালেকের উদ্দেশ্যে ৩ ঘন্টায়ই নেমে গিয়েছিলাম খারাপ লাগছিলো অনেক, নামতে ইচ্ছে হচ্ছিলো না। বগালেকে পৌঁছাই সকাল ১০:২০ মিনিটে।
✅আমার পুরো ট্যুর প্ল্যানঃ
ঢাকা-বান্দরবন-রুমাবাজার-বগালেক- চিংড়ি র্ঝণা-দার্জিলিং পাড়া-কেওক্রাডং
✔যেখানে যেখানে গিয়েছিঃ
১। বগালেক,
২। চিংড়ি ঝর্না,
৩। কমলাবাজার,
৪। রুমাবাজার,
৫। দার্জিলিং পাড়া,
৬। কেওক্রাডং।
★বিশেষ কিছু মুহূর্ত যা ভুলতে চাই নাঃ
* বগা লেকে গোসল করা (তবে আপনার কিছু হলে সেটির জন্য কেউ দায়ী না। এবং এমন একটি ফ্রমে আমাদের সাইন করে জমা দিয়ে আসতে হয়েছে)
* বগালেকে অনেক রাতে অন্ধকারে হাটতে হাটতে অনেক দূর যাওয়ার পর ৫ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকার পর আকাশের মেঘ সরে গিয়ে তারার মেলা, এ এক আশ্চর্যজনক ব্যাপার। এতো কাছে তারাগুলি!! সুখ তারা ঝলমল করছিল।
* আমাদের কটেজের পাশেই বগালেক সারারাত একটু পর পর অনেক ধরনের পোঁকার মেলা।
* কেওক্রাডং এর উদ্দেশ্যে যখন হাঁটা শুরু করি, হাঁটার মধ্যে যখনই ক্লান্ত হই কোথার থেকে অবাক করা বাতাস এসে মন ঠান্ডা করে দেয়।
* আল্লাহর রহমতে আমাকে পুরো ট্রিপটাতে কোন জোক বা পোঁকা কামড় দেয় নি তাই কোন লবণ বা মেডিসিন লাগে নি।
* বিকালে কেওক্রাডং কটেজ থেকে ১০ মিনিটে পুরো পাহাড় মেঘে ডেকে যাওয়া, মনে হচ্ছিলো মেঘের বন্যা।
* কেওক্রাডংয়ের CEO লালা বম এবং ওনার ওয়াইপের সাথে কিছু সুন্দর মূর্হুত।
* কেওক্রাডং চূড়ায় পৌঁছানোর সাথে সাথে বৃষ্টি। আগে যদি হতো বিপদে পড়তাম, তাই প্রকৃতি কে ধন্যবাদ। সবসময় আমার সাথে থাকার জন্য।
* তাদের সরলতা দেখে খুব অবাক, অনেক কিছু একসাথে নিলে কতো টাকা হয়েছে সেটি বলতে পারে না। তাই আমি যাই নিয়েছি বেশি দেওয়ার চেষ্টা করেছি, এটা সবার করা উচিত
* বগালেকে একজন এর সাথে কথা হচ্ছিলো, কথায় কথায় জানতে পারলাম তারা সবাই শিক্ষিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এক এক জন পাশ করা
👉কিছু বিষয় লক্ষণীয় :
১. পাহাড়ের মানুষ অনেক পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। কাজেই, ঘুরতে যেয়ে দয়া করে পরিবেশ নষ্ট করবেন না।
২. পাহাড়ের মানুষের জীবনযাত্রা,পোশাক ভিন্ন। কাজেই, তাদেরকে দেখে এমন কোনো অশোভন আচরণ করবেন না যাতে তারা কষ্ট পায়। আর তারা অত্যন্ত সরল প্রকৃতির।কাজেই তাদের ঠকাবেন না কারন ওরা কিন্তু টাকার হিসাব ভালোমতো বুঝেনা।আর অযথাই দামাদামি করবেন না।ওরা অনেক কষ্ট করে।ওই জীবন কল্পনাও করা যায় না। পারলে বাড়িয়ে দিবেন।
৩. ট্রেকিংয়ের সময় কখনো নিচে খাদের দিকে তাকাবেন না।সমতল জায়গায় দাঁড়িয়ে লেভেল বরাবর তাকিয়ে ভিউ দেখবেন।
৪. অবশ্যই বগালেক থেকে লাঠি নিয়ে নিবেন ২ সাইডে চৌক্ষা করে, এক সাইড ব্যবহার করবেন যাওয়ার সময়, আরেক সাইড নামার সময়, কারণ কেওক্রাডং কোন বাঁশ পাবেন না। বাঁশ অনেক সাপোর্ট দিবে আপনাকে। যেসব সাইডে ঘাস বেশি, সেসব সাইডে তাড়াতাড়ি হাঁটবেন, তাহলে আর জোক বা পোঁকামাকড় কামার দিবে না। নিজের ধারা প্রমানিত।
৫. পানি, স্যালাইন, গ্লুকোজ, কলা, খেঁজুর এগুলো খাবেন।ইন্সট্যান্ট এনার্জি পাবেন।
৬. রুমা বাজার থেকে গ্রিপ জুতা অবশ্যই কিনে নিবেন। (এংকল গার্ড, নি গার্ড) কিনে নিবেন - (যদিও আমার লাগে নি)।
৭. জুতা স্লিপারি হয়ে গেলে লতাপাতার সাথে ঘষে নিবেন আর ঝর্ণা পেলে ধুয়ে নিবেন। পরে হাঁটতে সহজ হবে।
৮. কেওক্রাডং যাওয়ার আগে থেকেই গাইডের সাথে কথা বলে সব কিছু রেডি করে রাখবেন।
৯. উঠতে ৬ ঘন্টা লেগেছিল। নামতে ৪ ঘন্টা!
১০. সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পাহাড়গুলোতে মেঘ-বৃষ্টি-প্রকৃতির দারুণ কম্বিনেশন থাকে। লোভই লাগে যখন মেঘের ভিতর দিয়ে হাটবেন আর চারপাশে শুধু সবুজ আর সবুজ দেখবেন, সাথে আছে বাংলাদেশের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন গ্রাম দার্জিলিং পাড়া, অনেকগুলো ঝর্ণা, জুমচাষ দেখার ভাগ্য।
👉যদি কেউ এক্সট্রিম এডভেঞ্চার পছন্দ করেন তবে এধরনের ট্রেকিং ট্রিপ হতে পারে বেস্ট অপশন।পাহাড় হচ্ছে রোমাঞ্চকর অদ্ভুত সুন্দর জায়গা যেখানে প্রতি সেকেন্ডে প্রকৃতি তার রূপ বদলায়।
[Removed comment]