ইতিহাসের কালপঞ্জী

0 10
Avatar for Montasin11
3 years ago

সুধী পাঠক – আপনারা অবগত আছেন এই পেইজে আমি ’৩৭ সালের ঘটনাপঞ্জী থেকে বাংলাদেশের ইতিহাস ধাপে ধাপে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। একজন মানুশের পক্ষে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থাকা কঠিন – এরপরও চেষ্টা করছি ঘটনাগুলো রাজনৈতিক দৃষ্টিতে নয়, বরং ইতিহাসের দিক থেকে তুলে ধরার। আপনারা যারা মাত্র আট মাসে চল্লিশ হাজারেরও বেশি “লাইক” দিয়ে এবং পোস্টগুলো "শেয়ার" করে পেইজটিকে জীবন্ত রেখেছেন তাঁদের প্রতি রইল আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।

মহান বিজয় দিবসের প্রাক্কালে ’৪০ থেকে ’৭১ পর্যন্ত ঘটনাগুলোর কালপঞ্জী দিয়ে একটি বিশেষ পোস্ট দিলাম – আশাকরি আপনাদের ভাল লাগবে। সময়ের অভাবে ইংরেজি অনুবাদ দিতে পারলাম না বলে দুঃখিত।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের বিনম্র স্রদ্ধা – সবার প্রতি রইল বিজয় দিবসের আগাম শুভেচ্ছা)

১৯৪০- মুসলিম লীগের অধিবেশনে “লাহোর প্রস্তাব” উত্থাপন করলেন অবিভক্ত বাংলার মুখ্য মন্ত্রী শের এ বাংলা এ কে ফজলুল হক; সেখানে ভারতবর্ষের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে “Independent Muslim States” প্রস্তাব করা হল।

১৯৪৫/৪৬ – আইনসভার নির্বাচনে বিশেষ করে পূর্ব বাংলার জনগণ ব্যাপকভাবে ভোট দিল হোসেন শহীদ সোহরোওয়ারদির নেতৃত্বাধীন মুসলিম লীগকে – পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার দাবী প্রতিষ্ঠিত। নির্বাচনের স্লোগান – “হাতে বিড়ি মুখে পান, লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান” (যদিও পাকিস্তানের সীমারেখা কি হবে তার কোন নির্দিষ্ট সঙ্গা ছিল না)।

১৯৪৭ – খাজা নাজিম উদ্দিন – মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর কুটচালে সোহরোওয়ারদি পরাজিত ; মুসলিম লীগের নির্বাচিত সদস্যদের (এম পি দের) ভোটে সোহরোওয়ারদি হারলেন। Parliamentary Party’র নেতা হলেন খাজা নাজিম উদ্দিন - তার মানে তিনি দেশ ভাগের পর পূর্ব বাংলার মুখ্য মন্ত্রী হবেন । পূর্ব বাংলার স্বার্থের জলাঞ্জলি – আমরা আসাম, কলকাতা, দার্জিলিং পেলাম না, এমনকি সিলেটের পুরোটা পেলাম না – করিমগঞ্জ হাত ছাড়া হল – মাত্র ৫৫,০০০ বর্গ মাইল নিয়ে আমরা খুশি। সোহরোওয়ারদির যুক্ত বাংলার প্রস্তাব - শের এ বাংলা এ কে ফজলুল হকের “কলকাতা রক্ষা আন্দোলন” ব্যর্থ ।

১৯৪৮ – যেই বাংলার মানুশের ভোটে পাকিস্তান আসল, স্বাধীনতার আট মাসেও “জাতির পিতা” মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ তার ৫৫% জনগনের কোন খোঁজই রাখলেন না। যখন আট মাস পরে তাঁর সময় হল ঢাকায় পদধুলি দেবার, তিনি বললেন -- “উর্দু এবং একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা”। রাষ্ট্র ভাষা আন্দোলনের শুরু।

১৯৪৯ -- ঢাকায় মুসলিম লীগের সোহরোওয়ারদি গ্রুপের “পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম” গঠন। মুল সংগঠক মাওলানা আব্দুল খান ভাসানি, টাঙ্গাইলের শামসুল হক এবং (পুরান) ঢাকার ইয়ার মোহাম্মদ খান।

১৯৫১ – সোহরোওয়ারদির নেত্রিত্বে “নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম” গঠন।

১৯৫২ – মহান ভাষা আন্দোলন

১৯৫৩ - পূর্ব বাংলার “Advocate General” এর পদ থেকে শের এ বাংলা এ কে ফজলুল হকের ইস্তফা। নতুন দল গঠন – নাম “কৃষক স্রমিক পার্টি” (K.S.P.)।

১৯৫৪ – ঐতিহাসিক নির্বাচন। হক-ভাসানি – সোহরোওয়ারদি গঠন করলেন “যুক্ত ফ্রন্ট” – মুসলিম লীগের ভরাডুবি। ২৩৭ টি মুসলিম আসনের মধ্যে যুক্তফ্রন্ট ২২৩ আসনে জয়লাভ করে। মুসলিম লীগ পায় মাত্র ৯ টি আসন। চট্টগ্রামের ফজলুল কাদের চৌধুরী (সা কা চৌ এর পিতা) মুসলিম লীগে যোগদান করে তাদের আসন সংখ্যা ১০ এ উন্নীত করেন। শের এ বাংলা এ কে ফজলুল হক পূর্ব বাংলার মুখ্য মন্ত্রী।

১৯৫৪-৫৮ – অকথিত চার বছর। বাংলাদেশের ইতিহাস নিয়ে যারা কথা বলেন, তাঁরা এই চার বছরের কথা সাবধানে এড়িয়ে যান। একদিকে পশ্চিম পাকিস্তানের প্রাসাদ ষড়যন্ত্র, অপরদিকে পূর্ব পাকিস্তানের নেতৃত্বের কোন্দল – সব মিলিয়ে জটিল অবস্থা। ১৯৫৮ সালের ২৩শে সেপ্টেম্বর পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে বিরোধী দলীয় সদস্যদের আক্রমণ/মারামারি – ফলশ্রুতিতে আওয়ামী লীগ দলীয় সাংসদ ও ডেপুটি স্পীকার শাহেদ আলীর মৃত্যু। পাকিস্তানীরা ঠিক এই সুযোগটিই খুঁজছিল। অবশেষে সামরিক শাসন। প্রথমে জেনারেল (অবঃ) ইস্কান্দার মীর্জা ও পরে আইয়ুব খান পাকিস্তানের প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক। প্রায় সমস্ত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ কারাগারে বন্দী।

১৯৬২ - শের এ বাংলা এ কে ফজলুল হকের মৃত্যু। “শরীফ শিক্ষা কমিশনের” বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক ছাত্র আন্দোলন।

১৯৬৩ – বৈরুতে হোসেন শহীদ সোহরোওয়ারদির রহস্যজনক মৃত্যু।

১৯৬৫ – প্রেসিডেন্ট “নির্বাচনে” মিসেস ফাতেমা জিন্নাহকে পরাজিত করে আইয়ুব খান পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট “নির্বাচিত”।

১৯৬৫ – পাক ভারত যুদ্ধ। পূর্ব পাকিস্তান অরক্ষিত। তাসখন্দ চুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধের সমাপ্তি। আইয়ুব খানের “রাজনৈতিক পরাজয়”।

১৯৬৬ -- আইয়ুব খান “তাসখন্দ চুক্তি” জায়েজ করার জন্য এক গোল টেবিল বৈঠক ডাকলেন। সেখানে শেখ মুজিবুর রহমান (তখনও “বঙ্গবন্ধু” হননি) “ছয় দফা” প্রস্তাব উত্থাপন। গোল টেবিল বৈঠক ব্যার্থ। আইয়ুব খানের চোখ রাঙ্গানি – “অস্ত্রের ভাষায় ছয় দফার জবাব দেওয়া হবে”।

১৯৬৬-৬৭ - ছয় দফা পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক জনপ্রিয়। শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেপ্তার।

১৯৬৭-৬৮ – পাকিস্তান সরকারের মামলা – “State vs. Sheikh Mujibur Rahman and others” -- আমরা বলি “আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা”। অভিযোগ – পূর্ব পাকিস্তানের কিছু সামরিক সদস্য ও রাজনিতিবিদ ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা ও বিভিন্নস্থানে গোপন বৈঠক করেছেন “বাংলাদেশ” নামের এক দেশ প্রতিষ্ঠার জন্য। প্রায় পনের শত গ্রেপ্তার।

১৯৬৮-৬৯ – মাওলানা ভাসানির নেত্রিত্বে পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক আন্দোলন। ১৯৬৯ সালের ২০শে জানুয়ারি পুলিশের গুলিতে ছাত্র নেতা আসাদের মৃত্যু (পুরো নাম - আমানুল্লাহ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান)। ১৫-ই ফেব্রুয়ারি এই মামলার আসামি সার্জেন্ট জহুরুল হক এক পাকিস্তানী হাবিলদারেরে গুলিতে বন্দী অবস্থায় নিহত। পূর্ব পাকিস্তান উত্তাল। অবশেষে ২২শে বেব্রুয়ারি মামলা প্রত্যাহার। ২৩ তারিখে এক বিশাল জনসভায় শেখ মুজিবুর রহমানকে “বঙ্গবন্ধু” উপাধি প্রদান। Time Magazine-এ আইয়ুব পতনের কৃতিত্ব দিয়ে মাওলানা ভাসানিকে নিয়ে প্রচ্ছদ প্রতিবেদন – তাঁকে উপাধি দেওয়া হল “ Prophet of Violence”। আইয়ুবের পতন - ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা নিলেন।

১৯৭০ – ইয়াহিয়া খান অবশেষে পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথমবারের মত দেশ ব্যাপী নির্বাচন দিলেন – “এক মাথা এক ভোট”। ৩০০ আসনের কেন্দ্রীও পরিষদে জনসংখ্যার ভিত্তিতে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য ১৬২ টি ও পশ্চিম পাকিস্তানের ১৩৮ টি আসন বরাদ্দ।

১৯৭০/৭১ – ডিসেম্বরে নির্বাচন। মাওলানা ভাসানির নির্বাচন বর্জন। পূর্ব পাকিস্তানের ১৬২ টি আসনে আওয়ামী লীগের ১৬০ টি আসনে বিজয় !!!!!!!!!!!!!!!!!!

- ইয়াহিয়া খান ’৭১ এর জানুয়ারিতে ঢাকায় এসে বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের ভাবী প্রধান মন্ত্রী বলে গেলেন।

- ৮৮ টি আসনে বিজয়ী দলের নেতা জুলফিকার আলী ভুটটোর ঘোষণা “বিরোধী দলে বসার জন্য আমরা নির্বাচনে যাইনি”।

- ভুটটোর সাথে তাল মিলিয়ে পাকিস্তানি জেনারেলদের ক্ষমতা হস্তান্তরে অহেতুক দেরী।

- পূর্ব পাকিস্তান উত্তাল। ৭’ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ। ৯-এ মার্চ মাওলানা ভাসানি – আতাউর রহমান খানের স্বাধীন বাংলাদেশের ডাক।

- ১৫-ই মার্চ ইয়াহিয়া খানের ঢাকা আগমন।

- মুজিব – ইয়াহিয়া বৈঠক ব্যার্থ। আর তার আড়ালে পাকিস্তানীদের ব্যাপক যুদ্ধ প্রস্ততি।

- ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ বৃহস্পতিবার কাল রাত্রিতে সকল নিয়ম ভংগ করে – সভ্য পৃথিবীর কোন নীতিকে তোয়াক্কা না করে নিরস্ত্র বাঙ্গালীদের উপর পাকিস্তানীদের অতর্কিত আক্রমণ।

- অবশেষে নয় মাসের সংগ্রাম, ৩০ লক্ষ প্রান আর ২৬৯,০০০ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনময়ে ১৯৭১ সালের ১৬-ই ডিসেম্বর পৃথিবীর বুকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে “বাংলাদেশের” জন্ম।

Sponsors of Montasin11
empty
empty
empty

1
$ 0.08
$ 0.08 from @TheRandomRewarder
Sponsors of Montasin11
empty
empty
empty
Avatar for Montasin11
3 years ago

Comments