লেখক::: আসিফ আহমদ আলভি।☺️☺️
--আকাশ ভাইয়া,তুমি যদি আমায় আদর করো,তাহলে কি আমার বাবু হবে?
--অবনীর এমন কথা শুনে কপালে হাত দিয়ে ফেললাম!দশ বছরের এই টুকু মেয়ে,যে কিনা আমাকে এমন প্রশ্ন করছে!এই পাগলি মেয়ে তুই এসব কি বলিস হা?আর তোকে কেনো আমি আদর করতে যাবো?
--তাহলে,তুমি যে আমার কেয়ার করো,আমি খেয়েছি কিনা সেসব জিগ্যেস করো,মাঝে মাঝে আমার কাপলে চুমু দাও,এমন কেয়ার করলে কি বাবু হয় না?
--অবনী,তুমি আসলেই পাগল একটা মেয়ে।
তুমি ছোট,তাই তোমার কেয়ার করি।আর তোমাকে তো সত্যি কারে কপালে চুমু দেই না।চুমু তো দেই মোবাইলে।
তাহলে বাবু কেনো হবে শুনি?
--তাহলে আমি তোমার কাছে চলে আসি।তুমি আমায় আদর করবে।তারপর আমার বাবু হলে সেটা নিয়ে আমি বাড়িতে চলে আসবো।আমার না বাবু অনেক ভালো লাগে!
--এই পাগলী,কি সব যা তা বলছো?তুমি কোথায় আর আমি কোথায়,সেই খেয়াল আছে তোমার?
আর তাছাড়া তুমি তো নিজেই একটা বাবু।তোমাকে বাবু দিলে তুমি সেটা সামলাবে কি করে?
--না আমি পাড়বো।আর তুমি বললেই আমি চলে আসবো সত্যি।
--না আসা লাগবে না।আর আমি কিন্তু তোমার ভাইয়া হই।আর ভাইয়া হয়ে কি ভাবে বাবু দিব তোমায় আমি?বাবুর জন্য তো বিয়ে করতে হয়।তারপর জামাইয়ের সাথে খাতির করে বাবু নিতে হয়।
--তাহলে তুমি আমায় বিয়ে করে নাও ভাইয়া।
তারপর তুমি আমার জামাই হবে,আর আমি তোমার সাথে খাতির করে একটা বাবু নিব।তারপর না হয় বিয়েটা বাদ করে দিব।
--অবনী,এবার কিন্তু রেগে যাবো আমি!
আর একটা উল্টা-পাল্টা বললে তোমার সাথে আর কোনোদিন আমি কথা বলবো না।
--না,না,ভাইয়া প্লিজ এমন করো না।আমি আর বাবু চাইবো না।
--মনে থাকে যেনো..
--হা,আচ্ছা ভাইয়া আমি এখন যাই।আম্মু বকাবকি করছে মোবাইল টিপছি যে সেই জন্য।আবার রাতে আসবো।
--আচ্ছা যাও,দুপুরে খেয়ে নিও।
--আচ্ছা..
--অবনী,চলে গেলো।আমি অবাক হয়ে অবনীর কথা গুলো ভাবছি!এই টুকু মেয়ে,সে কিনা বাবু চায়।আমাকে বলে আদর করতে।যে কিনা এখনো সম্পর্কের মারপেঁচ বুঝে না,কার কাছে কি চাইতে হয় সেটা জানেন না।সে আমার থেকে বাবু চাইছে।মনে হয় যেনো বাবু কিনতে পাওয়া যায়।
হাসিও পাচ্ছে,আবার কান্নাও পাচ্ছে।
কি রকম রিয়াকশন করবো অবনীর কথায়,সেটাই আমি বুঝে উঠতে পারছি না।তবে মেয়েটা খুব ভালো।
তার সাথে আমার পরিচয় ফেসবুক থেকে।আমি থাকি চিটাগাং,সে থাকে ঢাকাতে।তার বাবা তাকে গেম খেলার জন্য একটা ফোন কিনে দেয়।কিন্তু সে নাকি
কিছুদিন আগে ভুল বসত ফেসবুকটা খুলে ফেলে।তারপর আমার একটা পোস্ট তার সামনে আসে।যেটা দিয়েছিলাম আমি মেয়েদেরকে ডেডিকেট করে।সেখানে সে কি সব হযবরল একটা কমেন্ট করে।
পরে আমি কমেন্ট বুঝতে না পেরে তাকে ইনবক্স করি।
দুইদিন পর সেটার রিপ্লে আসে,যে সে নাকি কিছুই জানেনা ফেসবুকের আগামাথা।উল্টা-পাল্টা চাপ লেগে নাকি কিসব লেখা চলে গেছে মানুষের কাছে।সেভাবেই তার সাথে আমার পরিচয়।
এরপর থেকে রোজ আমাদের কথা হয়।আমি তাকে ফেসবুকের অনেক কিছুই শিখিয়ে দিয়েছি।সে এখন মোটামুটি অনেক কিছুই পারে।এরপর থেকে সে আমাকে মেসেজ করে,আমিও তাকে মেসেজ করি।
তবে কেনো জানি তার বাচ্চা বাচ্চা কথাবার্তা দেখে তার কথার মায়ায় পড়ে যাই।তার কাছেও নাকি আমার কথাগুলো খুব ভালো লাগে।এভাবেই আমরা দুজন দু'জনের প্রতি স্বাভাবিক হয়ে যাই।দুজন বললে ভুল হবে।আমি স্বাভাবিক হয়ে যাই।কারন আমার মধ্যে ম্যাচিউরিটি এসেছে।তার মধ্যে আসে নাই।না হয় তো উপরে কথা গুলো শুনে আপনারা বুঝতেই পারছেন,যে সে এখনো বাচ্চা একটা মেয়ে।সবে মাত্র ক্লাস ফাইভে পড়ে।এভাবেই দিনের পর দিন আমাদের কথা হতে থাকলো।
রাতের বেলায় অবনী লাইনে এসেছে।
খুব কান্না করছিলো লাইনে এসে!
--ভাইয়া আম্মু না আজ আমার খুব বকেছে খাওয়ার জন্য।আমি খেতে চাইনি,তাও জোর করে খাইয়ে দিয়েছে।
--তা তো একদম বেশ ভালো কাজ হয়েছে।না খেলে তো আম্মু বকবেই তাই না?
--ভাইয়া,তুমিও আম্মু পক্ষে কথা বলছো?
থাকবো না আমি একদম।দূরে কোথাও চলে যাবো,বলে ঠুস করে অফলাইনে চলে যায়।
--অবনীর এভাবে অফলাইনে যাওয়া দেখে ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো।কি এমন বললাম,যে সে রাগ করে চলে গেলো।এটুকু একটা বাচ্চা মেয়ে,তার ভিতরে কত রাগ বাপরে!সেই রাতে আর আমিও লাইনে থাকলাম না বেশিক্ষণ।কারন কথা বলার মতন কেউ নেই।অবনীই আমার লাইফে প্রথম মানুষ,যার সাথে আমি এতটা কথা বলি।ধুর,সব কিছুর ভিরে পরিচয় টাই দিতে ভুলে গেছি।
(আমি আকাশ,সেটা তো সবাই জানেন।পড়া লেখা অনার্স প্রথম বর্ষ।বাবা-মা,আর একটা ছোট বোন নিয়েই পরিবার আমার।বাকিটা গল্পের সাথে থাকলেই জেনে যাবেন)
আজ তিনদিন অবনী লাইনে আসে না।
ভিতরে একটা চাপা কষ্ট অনুভব করলাম।
মেয়েটার সাথে কথা না বললে কেমন যেনো একটা খারাপ কাগা কাজ করে ভিতরে।সেই খারাপ লাগাটা যেনো কখনোই আমি কাউকে বুঝাতে পারবো না।যদিও সে বাচ্চা একটা মেয়ে।তার উপরে বাজে কোনো ফিলিংস এই কাজ করে না আমার।আর প্রেম ভিত্তিক তো কোনো কিছু না এই।তবুও কেমন যেনো খারাপ লাগে নিজের ভিতরে।তিনদিন খাওয়া দাওয়া ঘুম,কোনোটাই আমার ঠিক মত হয়নি।
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই মেসেঞ্জারে গেলাম।গিয়ে দেখি অবনী মেসেজ করেছে।আত্মাটা যেনো ফিরে এসেছে আমার!সে লিখেছে...
--ভাইয়া কেমন আছো?
--খুব একটা ভালো নেই!খুব খারাপ সময় যাচ্ছে আমার।তুমিও সেদিন আমার উপরে রাগ করে চলে গেলে।এরপর পুরো একা হয়ে গেলাম আমি।
--ভাইয়া সরি,বিশ্বাস করো আমি ইচ্ছা করে এমন করিনি।রাগ করে চলে গিয়েছি ঠিক,কিন্তু পরে আসতে চেয়েছি।তবে আম্মু ফোন হাতে নিতে দেয়নি।কারন আমার না খুব পেটে ব্যথা হয়েছিলো।অনেক কান্নাও করেছি আমি।
--অবনীর কথা শুনে কষ্টের মান টা যেনো আরো দ্বিগুণ হয়ে গেলো।কিন্তু কেনো,সেটা আমি জানি না!তবে আমাকে যে কষ্ট পেলে চলবে না।কারন এটা মেয়েদের জন্মগত রোগ।এটা সব মেয়ের জীবনেই ঘটে।না হলে যে দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যাবে।জন্ম নিবেনা আর কোনো মানুষ।
--ভাইয়া,তুমি কথা বলছো না যে?
তুমি কি আমার উপরে খুব রাগ করেছো?
--আরেহ পাগলী মেয়ে,তোমার উপরে রাগ করবো কেনো!আর রাগ করার কি আছে।এটা তো মেয়েদের জন্মগত রোগ।এটাতে রাগ দেখালে নিজেকে মানুষ বলে দাবী করতে পারবো না।
--মেয়েদের জন্মগত রোগ মানে?
--সেটা তুমি এখন বুঝবে না।আরেকটু বড় হও।তখন বুঝতে পারবে।আচ্ছা,এখন বলো তোমার শরীর কেমন?
--হা,ভাইয়া একটু ভালো।তবে খানিক্ষন পর পর পেটে ব্যথা হয়।
--আচ্ছা,যাও রেস্ট করো।
--ভাইয়া আজ তিনদিন পর তোমার সাথে কথা বলতে এলাম,আর তুমি আমায় তাড়িয়ে দিচ্ছো?
--আরেহ পাগলী কি বলছো তুমি এসব!তোমায় তাড়িয়ে দিব কেনো?যেখানে তোমার সাথে কথা বলা আমার জীবনের একটা অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে,সেখানে তোমায় আমি তাড়িয়ে দিব?
--তাহলে যেতে বলছো যে?
--যেতে বলছি কারন এখন তোমার রেস্ট দরকার।
--না,আমি রেস্ট করবো না।আমি তোমার সাথে কথা বলবো।আমার খুব খারাপ লেগেছে তিনদিন কথা বলতে না পেরে।
--অবনীর কথা শুনে ভিতরটা কেমন যেনো আনন্দে ভরে উঠলো।যা মেয়েটাও আমাকে তাহলে মিস করেছে।আচ্ছা বলো,কিন্তু তোমার যদি পেটে ব্যথা আবার হয়?
--হলে হবে,তুমি আছো না,তুমি ঠিক করে দিবে সব।
--মেয়েটার কথা শুনে বুঝতে বাকি রইলো না যে,সে যদি দুনিয়ায় কাউকে বিশ্বাস করতে শুরু করে,সেটা হয়তো আমি।আচ্ছা আচ্ছা ঠিক করে দিব।তবে তোমায় একটা কথা বলবো?
--হা বলো ভাইয়া..
--এই তিনদিন না আমি তোমায় খুব মিস করেছি।তুমি কি আমায় মিস করেছো?
--নাহ একটুও মিস করিনি।
তবে কথা বলতে ইচ্ছে করেছিলো আমার খুব।
--অবনীর কথা শুনে হাসিটা থামাতে পারলাম না।কোনো রিয়াকশন না দিয়ে "ও বলে চুপ করে রইলাম।
কারন হাসি বা কান্না করি,সে তো আর বুঝবে না।
--আচ্ছা ভাইয়া আমি এখম আসি কেমন।দুপুরে আসবো আবার লাইনে।
--আচ্ছা যাও,কিন্তু নাস্তা করে নিও।
--আচ্ছা..
--অবনী সত্যিই এখনো বাচ্চা একটা মেয়ে।
বাচ্চা মেয়েটার প্রতি আমার যতটা টান কাজ করে,আমার বেস্ট ফ্রেন্ড কারোর প্রতিও মনে হয় এতটা টান কাজ করে না।কেমন যেনো হয়ে যাচ্ছি দিনদিন আমি।
রেডি হয়ে কলেজে চলে গেলাম।তিনদিন কলেজে যাইনি।কারনটা হয়তো অবনী।আজ মন একদম ফুরফুরা!একরাশ হাসি মুখে নিয়ে কলেজে চলে গেলাম।ভালোই ভালোই ক্লাস গুলো শেষ করলাম।
ক্লাস শেষ করে বাসায় আসতে যাবো,তখনি
পিছন থেকে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড মামুন ডাক দিলো..
--আকাশ দাঁড়া,তোর সাথে একটু কথা ছিলো।
--হা বল..
--তোকে সুমাইয়া ডাকছে ঐ দিকে,গিয়ে দেখ তো কেনো ডেকেছে সে।
--মামুনকে নিয়ে সুমাইয়ার কাছে গেলাম।সে উল্টো দিকে ঘুরে ছিলো।আমি ডাক দিতেই সে পিছন ফিরে গোলাপ ফুল দিয়ে আমায় প্রপোজ করে বসলো!
--আকাশ তোমায় আমি খুব ভালোবাসি!
--সুমাইয়ার কান্ড দেখে চরম পর্যায়ের রাগ উঠে গেলো!
সুমাইয়া আই এম সরি।আমি পারবো না তোমার সাথে এসবে জড়াতে।আমায় ক্ষমা করো তুমি।
--কিন্তু কেনো আকাশ?আমার মধ্যে কিসের কমতি আছে?
--কোনো কিছুর কমতি নেই।তবুও আমি তোমার সাথে এসবে জড়াবো না।
পাশ থেকে মামুন বলে উঠলো..
--আকাশ সুমাইয়া তোকে অনেক লাভ করে..
--মামুন,উকালতি বন্ধ কর।আমি ওর সাথে এসবে জড়াবোনা বলেছি তো জড়াবো না।
--হা,ওর সাথে এসবে জড়াবি কেনো,তোর তো কোচি শরীর চাই।সেটাতো তুই পেয়ে গেছিস।এখন আর স্লিম ফিগারের দরকার নাই তোর।
--কি বলছিস মামুন তুই এটা?মামুনকে অবনীর ব্যাপারে সবটা বলেছিলাম।কিন্তু সে এটা নিয়ে বাজে ইঙ্গিত করলো।মামুন মুখ সামলে কথা বল,না হয় কিন্তু....
--না হয় কিন্তু কি হা?যা সত্যি তাই বললাম।তোর কোচি শরীরের নেশা ধরেছে।না হয় সুমাইয়ার মতন মেয়েকে তুই রিজেক্ট করতি না।
--রাগটা মাথায় উঠে গেলো এবার!
সজোরে এক লাথি মারলাম মামুনের তলপেট বরাবর!
সে সোজা গিয়ে মাটিতে আছড়ে পড়লো।তখনি পিছন থেকে কয়েকজন ছেলে এসে আমায় মারতে শুরু করলো।মেরে আমার শারা শরীর ফাটিয়ে ফেলেছে।
আমি কিছুই বলিনি।চুপচাপ মার খেয়ে মাটিতে বসে রইলাম।চোখের সামনে শুধু অবনীর চেহারাটা ভেসে উঠছে।খালি মনে হচ্ছিলো,তার সাথে এখন কথা বলতে পারলে আমার সমস্ত ব্যথা চলে যাবে।আমার শরীর থেকে রক্ত পড়া এখনি বন্ধ হয়ে যাবে।এসব নিয়ে ভাতবে ভাবতে মাথা ঘুরে মাটির পডে গেলাম
খুবই চমৎকার লেখনি। তরুণ কবি, কথা সাহিত্যক আসিফ আহমদ আলভির প্রতিভা দেখে আমি শিহরিত, অনেক অনেক শুভ কামনা @montasin11