ভার্চুয়াল মুদ্রা বিটকয়েনের মূল্য বেড়েই চলছে। প্রতি বিটকয়েনের মূল্য রেকর্ড ১৫ হাজার ডলার ছাড়িয়েছে। গত বুধবার লুক্সেমবার্গভিত্তিক ভার্চুয়াল মুদ্রা বিনিময়ের প্লাটফর্ম বিটস্ট্যাম্পসহ সব সূচকে বিটকয়েনের এ নতুন মূল্য পরিলক্ষিত হয়েছে। খবর বিবিসি, এএফপি, রয়টার্স।
কয়েনডেস্ক ডটকম জানায়, অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে বুধবার প্রতি বিটকয়েনের মূল্যে ১৫ হাজার সাত দশমিক ৭০ ডলার বা ১১ হাজার ২৫২ দশমিক ৬২ পাউন্ডে পৌঁছেছে। বিশ্ব পুঁজিবাজারের বৃহৎ দুটি স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকায় যুক্ত হওয়ার দু-একদিন আগেই এ রেকর্ড দাম বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানায় সিএমই।
আগামী ১০ ডিসেম্বর পুঁজিবাজারে আসছে বিটকয়েন। আর ১৮ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম স্টক মার্কেট নাসডাকে তালিকাভুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, ডিজিটাল এ মুদ্রাটি বৃহৎ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তি হওয়ার এর দাম বেড়ে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, পুঁজিবাজরে প্রবেশ করলে এর মূল্যমান আরও বেড়ে যাবে। ব্ল–মবার্গ জানায়, একদিনে দুবার রেকর্ড বেড়েছে বিটকয়েনের দাম। এদিন সকালে ১৪ হাজার ৪৭৫ ডলার পৌঁছার পর একটু কমে ফের ১৫ হাজার ডলারে পৌঁছে।
লেনদেনে বিভিন্ন সুবিধার কারণে গত এক বছরে বিটকয়েনের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে ৯০০ শতাংশ। তারপরও অনেকে একে পুরোপুরি সমর্থন করেন না। মার্কিন বহুজাতিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান জেপি মর্গান প্রধান জেমি ডিমোন বিটকয়েনকে ‘ভুয়া’ বলে মনে করেন। প্রথমবারের মতো ১০ হাজার ডলার অতিক্রম করার পর ব্রিটিশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক গতকাল বুধবার জানায়, বিশ্ব অর্থনীতিতে বিটকয়েন হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের একজন জ্যেষ্ঠ নির্বাহী বলেন, চলতি বছরের মধ্যে বিটকয়েনের দাম ১০ গুণ বাড়তে পারে। জিম্বাবুয়েতে গত সোমবার বিটকয়েন লেনদেন হয়েছে প্রতিটি ১৭ হাজার ৮৭৫ ডলারে, আর দক্ষিণ কোরিয়াতে এটি লেনদেন হচ্ছিল ১১ হাজার ডলারের বেশি মূল্যে।
এর আগে গত সোমবার বিটকয়েনের দাম বেড়ে ৯ হাজার ৭২১ ডলারে পৌঁছে, যা এক আউন্স স্বর্ণের সাত গুণের বেশি। বিটকয়েনের বাজার এখন আইবিএম, ম্যাকডোনাল্ডস ও ডিজনিকে ছাড়িয়ে গেছে। মোট এক কোটি ৬৭ লাখ বিটকয়েনের মূল্য এখন ১৬ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আগামী ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জ (সিএমএ) বিটকয়েন ফিচার চালু করবে, এমন ঘোষণায় ডিজিটাল মুদ্রার মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে।
গত ৩১ অক্টোবর সিএমএর ঘোষণার পর বিটকয়েনের দাম দ্বিগুণ বেড়েছে। গত বছরের শেষ দিকে এর দর ছিল মাত্র এক হাজার ডলারের কাছাকাছি। প্রসঙ্গত, বিটকয়েন হলো ওপেন সোর্স ক্রিপ্টোগ্রাফিক প্রোটকলের মাধ্যমে লেনদেন হওয়া সাংকেতিক মুদ্রা। বিটকয়েন লেনদেনের জন্য কোনো ধরনের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান, নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বা নিকাশ ঘরের প্রয়োজন হয় না। এক্ষেত্রে বিটকয়েন এনক্রিপশন ও ব্লকচেইন ডেটাবেইস ব্যবহার করায় তহবিল স্থানান্তর করা সম্ভব হয় অনেক কম সময়ে মধ্যে। ২০০৮ সালে জাপানের সাতোশি নাকামোতো এ মুদ্রাব্যবস্থার প্রচলন করেন।
যেহেতু বিটকয়েনের লেনদেন সম্পন্ন করতে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন পরে না এবং এর লেনদেনের গতিবিধি কোনোভাবেই অনুসরণ করা যায় না, তাই বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় বিটকয়েন ক্রমান্বয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বৈধ পণ্য লেনদেন ছাড়াও মাদক চোরাচালান এবং অর্থপাচার কাজেও বিটকয়েনের ব্যবহার আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও বিটকয়েন ডিজিটাল কারেন্সি হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মুদ্রার বিপরীতে এর দর মারাত্মক ওঠানামা, দুষ্প্রাপ্যতা এবং ব্যবসায় এর সীমিত ব্যবহারের কারণে অনেকেই এর সমালোচনা করেন।