গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে জোরে ঘুষি মেরে বাইরে বেরিয়ে এল মেয়েটা। এমন জায়গায় এসে গাড়ি নষ্ট হয়ে যাবে জানলে সে কী আজ ঘর থেকে বেরোয়! এখন আর কী? এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কারো কাছ থেকে লিফট্ চাইতে হবে। যদিও এই রাস্তায় এতরাতে গাড়ি না পাওয়াটাই স্বাভাবিক। রাস্তাটার দু-পাশে বড় বড় গাছ। সেগুলোর ছায়া রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের আলোয় এমনভাবে দেখাচ্ছে যেন কোনো অশরীরী দাঁড়িয়ে আছে। অশরীরী! কথাটা মাথায় আসতেই নড়েচড়ে উঠলো মেয়েটা। এতরাতে এখানে লিফট্ এর জন্য দাঁড়ানোর চেয়ে গাড়িতে বসে রবীন্দ্র-সংগীত শোনাটাই বুদ্ধিমানের কাজ মনে হলো ওর কাছে। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। গাড়িতে পুনরায় ঢুকতে দরজা খোলার চেষ্টা করলো সে।
কিন্তু একি! দরজা খুলছে না কেন? বোধহয় জ্যাম হয়ে গেছে। ভয়ে কেঁপে উঠল ফর্সা লম্বা মেয়েটা। আশেপাশে কাউকে দেখা যাচ্ছে না বলে ভয়টা মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
কেউ আশেপাশের কয়েক মাইলের ভেতরে নেই জেনেও মেয়েটি চেঁচিয়ে উঠল, “কেউ কী আছেন? আছেন কেউ? আমায় সাহায্য করুন।”
চেঁচিয়ে কোনো লাভ হলো না। খানিকটা দূরে কয়েকটা শেয়াল ডেকে উঠলো, ব্যস। শেয়ালের ডাকে মেয়েটির ভয় আরো বেড়ে গেল।
–“কেউ কী আছেন?” পুনরায় চেঁচিয়ে উঠলো মেয়েটি।
–“এই মেয়ে হাঁদারামের মতো এভাবে চেচাচ্ছো কেন? কী হয়েছে?”
পুরুষের কন্ঠ শুনে মেয়েটা পেছনে তাকালো। একটা কালো কাপড় পড়া লোক দাঁড়িয়ে আছে। গায়ের ওটাকে ঠিক কাপড় বলা যাবে না। আলখাল্লা টাইপের কিছু একটা। মাথাটাও ঐ কাপড়ের অংশ দিয়ে ঢেকে রাখা।
মেয়েটা মিনতি করে বলল, “আমাকে একটু সাহায্য করতে পারবেন? আমি এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ গাড়িটা খারাপ হয়ে গেছে। কী করবো বুঝতে পারছি না।”
–“তুমি এককাজ করো। রাস্তার বামদিকের জঙ্গলে ঢুকে পড়ো। খানিকটা এগোলেই একটা ছোট্ট কুটির দেখতে পাবে। ওখানেই আমি থাকি। তুমি চাইলে আজ রাতটা ওখানেই কাটিয়ে দিতে পারো।”
–“হোয়াট ননসেন্স! আমি ওরকম একটা জঙ্গলে যাবো? মাথা ঠিক আছে তোর? যত্তসব! আমাকে সাহায্য করতে বলেছি, রাতে বিছানায় ডাকতে নয়।”
মুখ ভেংচে পুনরায় সামনের দিকে তাকালো মেয়েটি। সামনের কালো অন্ধকার যেন আরো গাঢ় হয়ে এসেছে। পরিবেশটাও কেমন যেন ভৌতিক হয়ে এসেছে। আশেপাশের গাছগুলোর নড়াচড়াও কেমন যেন ভৌতিক লাগছে। নাহ্, আজরাত লোকটার আশ্রয়ে থাকলে তেমন কোনো সমস্যা হবে না। ভেবেই পেছনে তাকালো মেয়েটি। লোকটা নেই! এই মিনিট কয়েকে কোথায় গেল সে? একটা শীতল বাতাস মেয়েটির হাঁড় কাঁপিয়ে বয়ে গেল।
নাহ্, এখানে আর একমুহূর্তও নয়। মেয়েটা ধীর পায়ে রাস্তার বামপাশে এলো। এরপর চোখ বন্ধ করে ভৌ দৌড়। আচমকা সামনে কিছু একটার সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে নিচে পড়ে গেল মেয়েটি। নাকট বোধহয় ফুটো হয়েই গেল! কোনোক্রমে উঠে দাঁড়ালো সে। ভয়ার্ত দৃষ্টি নিয়ে ধীরে ধীরে চোখ খুললো। একটা প্রকান্ড গাছ। আশেপাশের গাছপালা দেখেই মেয়েটি বুঝে গেল দৌড়ে আর এগোনো যাবে না। ধীরে ধীরে না হাঁটলে গাছে আঘাত খেয়ে মরতে হবে।
কখনো চারিদিক থেকে শেয়ালের ডাক ভেসে আসছে। কখনো একঝাঁক বাদুড় উড়ে এসে ওর পথে বাধা দিচ্ছে। তবু একরকম মনের জোরে এগিয়ে চললো মেয়েটা। এভাবেই বেশ কিছুক্ষণ হাঁটার পর সেই কুটিরের সন্ধান পেল মেয়েটি। জঙ্গলের ভেতর খানিকটা জায়গাজুড়ে কোনো গাছপালা নেই। একদম ফাকা মাঠ। ওখানটায় ভুতুড়ে হানাবাড়ির মতো দাঁড়িয়ে আছে ছনের তৈরী বাড়িটা।
মেয়েটার চোখ চকচক করে উঠলো। একরকম দৌড়েই সে বাড়িটির কাছে চলে এল। দরজায় দাঁড়িয়ে দুইবার নক করার পরেও কেউ দরজা খুললো না। আরো একবার নক করবে ভেবেছিল, কিন্তু তার আগেই মৃদু শব্দে দরজাটা খুলে গেল। হাতে একটা হারিকেন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেই লোকটা। এখনো মাথায় ঘোমটার মতো করে কাপড় দেওয়া। কাপড়টা থুতনি পর্যন্ত ঝুলছে। এমনকি হারিকেনের আলোয়ও মুখটা দেখা যাচ্ছে না।
আলতো হেসে মেয়েটি বলল, “তখনকার ব্যবহারের জন্য দুঃখিত। আমি সত্যিই আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। আমি কী আজ রাতটা এখানে থাকতে পারি?”
লোকটা কিছু না বলে সামনে থেকে সরে দাঁড়ালো। তার মানে সে অনুমতি দিয়েছে। মেয়েটা খুশিমনে ভেতরে চলে এল। খট করে একটা আওয়াজ হতেই চমকে উঠে পেছন তাকালো সে। লোকটা দরজা আটকে দিয়েছে। ওটারই আওয়াজ। নিজের নির্বুদ্ধিতায় নিজেই বিরক্ত হলো মেয়েটি।
ঘরটা একরুমবিশিষ্ট। আসবাবপত্র বলতে একটা খাট আর একটা বুক শেলফ্। বুক শেলফটি মোটা মোটা বইয়ে ভরপুর। পুরোটা ঘরে আর কিছুই নেই। হারিকেনের আলো ছাপিয়ে অন্ধকার যেন পুরোটা ঘরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
–“আমি কোথায় শোব? এখানে তো মাত্র একটা বিছানা।” অনুনয় করে বলে উঠল মেয়েটি।
–“নিচে বসে পড়ো। খাটে আমি শোব।” গম্ভীর গলায় কথাটা বলেই লোকটা বিছানায় বসে পড়লো।
–“কিহ্! আমি নিচে মাটিতে বসে থাকবো? আপনার এ কেমন মানসিকতা?”
–“থাকতে হলে থাকো। নয়তো চলে যাও।”
মেয়েটা আর কিছু বলতে পারলো না। কেননা এতরাতে যাওয়ার জন্য তার আর কোনো জায়গা নেই। কিন্তু সে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ কোনোভাবেই মাটিতে বসবে না। প্রয়োজন হলে সারারাত দাঁড়িয়ে থাকবে এভাবে।
কথাটা মনে মনে বলল বটে কিন্তু কিছুক্ষণ পর পা দুটো যেন আর দাঁড়িয়ে থাকবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। হাটুটা ব্যথা করছে খুব। বিছানায় গিয়ে যে বসবে, সেই উপায়ও নেই। লোকটা হাত-পা ছড়িয়ে এমনভাবে শুয়ে আছে যে ওখানে একটা কাকপক্ষির জায়গাও হবে না। অগত্যা মেয়েটা ধীরে ধীরে নিচে মাটিতে বসলো। মাটিতে বসে থাকতে অতিরিক্ত ঠান্ডা লাগছে। তাও কিছুক্ষণের মধ্যেই তন্দ্রাভাব চলে এল দুই চোখে।
কাঁধে কারো নিঃশ্বাসের শব্দ পেয়ে ঘুম ভেঙ্গে যায় ওর। কতক্ষণ ঘুমিয়েছে বলতে পারবে না। তবে ঘন্টা দুয়েক হবে নিশ্চয়ই।
কাঁধের কাছের শীতল নিঃশ্বাসটা আরো বেড়ে গেছে। এবার ওর মাথায় ভয় চড়ে বসলো। কাঁপতে কাঁপতে উঠে দাঁড়িয়ে বিছানায় থাকা লোকটাকে ডাকলো বার কয়েক, “এই শুনছেন? এই, এই যে। শুনুন।”
লোকটার কাছ থেকে কোনো জবাব না পেয়ে ভীষণ রাগ হলো ওর। পা দুটো জমে গেছে যেন। বিছানায় গিয়ে যে লোকটাকে ডাকবে সেই উপায়ও নেই। কোমরে কারো শীতল হাত পড়তেই শিউরে ওঠে মেয়েটি। কাঁদতে কাঁদতেই বলল, “আপনি আমার কথা শুনতে পেলে দয়া করে উঠুন। আমার খুব ভয় লাগছে।”
চোখের জল চোখ থেকে গাল পর্যন্ত পড়ার সঙ্গে সঙ্গে গরম ছ্যাকা লাগল ওর। তখনই কাঁধে শীতল তরল টাইপের কিছু অনুভব করলো সে। ভয়ে ভয়ে ঘাড় নোয়াতেই মেয়েটি আঁতকে উঠল। রক্ত! তাও আবার মৃত মানুষের কালো রক্ত দেখে মেয়েটার প্রাণ যাওয়ার মতো অবস্থা। কাঁধে ওড়না থাকায় সবটুকু রক্ত এসে ওড়নায় পড়েছে। মেয়েটা দ্রুত গতিতে ওড়নাটা ফেলে দিল। ওড়নাটা দূরে পড়ে থাকতেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো সে। কিন্তু ঘাড়ের সেই অনুভূতি এখনো গেল না ওর। পুনরায় ঘাড়ের দিকে তাকাতেই আবারও সেই রক্ত চোখে পড়লো। এই রক্তের উৎস দেখার উদ্দেশ্যে উপরের দিকে তাকালো মেয়েটি। সঙ্গে সঙ্গে ওর চোখজোড়ায় ভয় ফুটে উঠল। একটা মেয়ের দেহ ঝুলছে সিলিংয়ে। ওরই মুখ বেয়ে রক্ত চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে। মাথার উপরে লাশটা দেখে মেয়েটি চেচিয়ে উঠলো। চেচানোর সঙ্গে সঙ্গে উপরে থাকা লাশটার দু-চোখ জ্বলজ্বল করে উঠলো। পুনরায় মেয়েটা ভয়ে চেঁচিয়ে উঠলো। জঙ্গলের একটা গাছে ঘুমন্ত অবস্থায় থাকা কিছু ঘুঘু চিৎকার শুনে ভয়ে ওড়াওড়ি করতে লাগলো।
.
.
.
–“মামা আবির্ভাব শব্দের ইংরেজি কী?”
শানের কথা শুনে ভ্রু কুচকালো সাইমুন। এরপর পুনরায় আগের মতো বইটাতে নজর বোলাতে লাগলো।
–“বল না দোস্ত।” মিনতি করে উঠলো শান।
একটা হাই চুল সাইমুন বলল, “তুই কোনো কচি খোকা নস যে তোকে আবির্ভাব এর ইংরেজি বলে দিতে হবে। যাইহোক, তবুও বলছি; আবির্ভাব এর ইংরেজি Advent.তা হঠাৎ এই কথা মাথায় এল কেন?”
“আসলে.....” কথাটা না বলেই শান মাথা চুলকাতে লাগলো।
“আসলে কী?” ধমকে উঠল সাইমুন।
“আসলে গতকাল খবরে দেখলাম গত কয়েক দিন ধরে বাংলাদেশে কোনো একটা জঙ্গলের পাশে মেয়েদের লাশ পাওয়া যাচ্ছে। তো খবরের রিপোর্টার বলল- এ এবার কী নতুন বিপদের আবির্ভাব ঘটলো।”
“ওঃ। যাইহোক, তোদের বলতে ভুলে গিয়েছিলাম। আমার আব্বুর বাংলাদেশে ট্রান্সফার হয়ে গেছে। তাই আগামীকাল আমরা দিল্লি থেকে সোজা ঢাকায় রওনা হবো।”
“দোস্ত, তাহলে তো ভালোই হলো। আমিও ভাবছি ইন্ডিয়া থেকে বাংলাদেশে আব্বুর কাছে গিয়ে থাকবো। এমনিতেই আমার পিতৃভূমি বাংলাদেশ।”
“তা না হয় বুঝলাম। কিন্তু তুই কী আর অনুকে ছাড়া থাকতে পারবি?”
“কী জানি!”
বেল বাজতেই ক্লাস রুম থেকে বেরিয়ে ওরা নিজেদের বাড়ির দিকে রওনা হলো। দুজনের বাড়ি একই পথে হলেও দুজন একসাথে যায় না। শান অনুর সঙ্গে রোমান্স করতে করতে বাড়ি যায়। আর সাইমুন বাড়ি ফেরত যায় রিদির সঙ্গে খুনসুটি করতে করতে। এখন অবশ্য রিদির সঙ্গে একসাথে বাড়ি যাওয়া হয় না। গতবার যখন আমেরিকাতে একটা মেয়েদের হত্যার রহস্য সমাধান করেছিল, সেখান থেকে ফেরত আসার পর থেকেই মেয়েটি কেমন যেন হয়ে গেছে। দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো সাইমুন। এই তো দিন দুয়েক আগেও সে রিদির খোঁজে ওদের বাড়ি গিয়েছিল। ওর বোন রিদিমা বলেছিল রিদি নেই। অথচ ভেতর থেকে স্পষ্ট রিদির হাসি শোনা যাচ্ছিল। সাইমুন অবশ্য কিছু বলে নি। কেননা সে সবার কাছ থেকে নিজেকে আড়াল করে নিতে চায়। কারণ ওর জীবন এখন প্রেতাত্মাদের সঙ্গে জুড়ে গেছে। ওর বাকিটা জীবন কাটবে প্রেতাত্মাদের সঙ্গে লড়াই করে। তাই ওর সঙ্গে সম্পর্কিত সবার জীবনের ঝুঁকি আছে। তাই এখন যতটা সম্ভব নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে সাইমুন।
এসব ভাবতে ভাবতে বাড়ি চলে এল সে। কলিংবেল বাজানোর সঙ্গে সঙ্গে দরজা খুলে দিল ওর মা। অন্যদিনের মতো মায়ের সঙ্গে খোশগল্প না করে একরাশ হতাশা নিয়ে নিজের ঘরে চলে গেল সাইমুন। খট করে দরজা আটকে ভেতরে বসে পড়লো সে। অন্যমনস্কভাবে বিছানাটা এলোমেলো করে চেয়ারে গিয়ে বসলো। এতদিনের বাসস্থান দিল্লি ছেড়ে চলে যেতে হবে ভেবেই ওর বোধহয় খানিকটা মন খারাপ।
আচমকা জানালায় টোকা পড়ল। আলস্যতা ভর করা স্বত্বেও কোনোক্রমে উঠে দাঁড়ালো সাইমুন। ধীর পায়ে জানালা পর্যন্ত এগিয়ে গিয়ে খুলে দিল। কেউ নেই! চমকে উঠল সে। জানালা দিয়ে মাথা গলিয়ে বাইরের দিকে দুইবার তাকিয়ে নিল সে। ততক্ষণে খানিকটা কালো ধোঁয়া প্রবেশ করেছে ঘরের মাঝে। কাউকে না দেখতে পেয়ে জানালা বন্ধ করে পুনরায় পেছন ফিরলো সাইমুন। ঘাড়ের কাছে কারো তপ্ত নিঃশ্বাস আসতেই আবার জানালার দিকে তাকালো। নাহ্ কেউ নেই। পুনরায় সামনে তাকানোর সঙ্গে সঙ্গে ওর সামনে গায়ের সঙ্গে লেপ্টে থাকা অবস্থায় দৃশ্যমান হলো জাহ্নবী। জাহ্নবীর দেহটা আজ খুব শীতল লাগছে। নাটকীয় ভঙ্গিতে হা করা মাত্রই ওর নিচের মাড়ি থেকে বেরিয়ে এল দুটো বড় দাঁত। ভ্যাম্পায়ার টিথ! ভয়ে দুই পা পিছিয়ে জানালায় ঠেক দিয়ে দাঁড়ালো সাইমুন। জাহ্নবীকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই সে জানে, তবুও একটা জলজ্যান্ত ভ্যাম্পায়ারকে সামনে দেখে কোনো মানুষ স্বাভাবিক থাকবে না নিশ্চয়ই।
দুই পা এগিয়ে এল জাহ্নবী। সাইমুনের ঘেমে যাওয়া কপালে আলতো করে আঙুল ছুইয়ে কয়েক ফোঁটা ঘাম আঙুলে নিয়ে মুখের ভেতর চালান করে দিল। জাহ্নবীকে নিজের ঘাম চুষতে দেখে ওয়াক করে উঠল সাইমুন। প্রায় বমি করে দিচ্ছিল। কোনোরকমে সামলে নিল সে।
কাঁপতে কাঁপতে সাইমুন বলল, “তোমার এইসব অঙ্গভঙ্গি আমার একদম ভালো লাগে না। দয়া করে আমার সঙ্গে এরকম করবে না আর কোনো দিন। এখন বলো হঠাৎ এখানে কেন এসেছো?”
–“অন্ধকারের রাজার পক্ষ থেকে তোমার জন্য কিছু তথ্য আছে।” ফিসফিস করে বলল জাহ্নবী।
–“তাড়াতাড়ি বলে বিদেয় হও।”
–“তোমার নতুন মিশনে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। প্রস্তুত হও।”
–“মানে কী? আগের মিশনটা সাকসেসফুল হলো এখনো একমাসও হয় নি। এর মাঝেই নতুন মিশন! তাছাড়া আমি স্ব-পরিবারে বাংলাদেশে যাচ্ছি। তাই আগামী কয়েক দিন ব্যস্ত থাকবো। তাই এখন কোনো মিশনে যেতে পারবো না।”
–“সমস্যা নেই। এতে সুবিধাই হলো। তোমার নেক্সট মিশন বাংলাদেশে।”
–“বাংলাদেশ! আমি যতদূর জানি ওটা শান্তিপ্রিয় একটা দেশ। ওখানে আবার কী ভুতুড়ে উপদ্রব শুরু হয়েছে?”
–“বাংলাদেশে একটা জঙ্গলের পাশে গত কয়েক দিন যাবত মেয়েদের লাশ পাওয়া যাচ্ছে। লাশগুলো দেখেই বোঝা যাচ্ছে ওগুলো কোনো সাধারণ মানুষের মাধ্যমে হত্যা হয় নি। কোনো শক্তিশালী প্রেতাত্মার কাজ ওটা। তাই অন্ধকারের রাজা বলেছেন তুমি প্রস্তুত হয়ে নাও।”
–“আচ্ছা। এবার তুমি যেতে পারো। আমাকে একা থাকতে দাও।”
সাইমুনকে ছেড়ে খানিকটা পিছিয়ে এল। এরপর এগিয়ে গেল জানালার দিকে। জানালার কাছে পৌছেই একদম পাথরের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে পড়ল সে। ওর দৃষ্টি লক্ষ্য করে বামদিকে তাকালো সাইমুন। ঘরের বাম কোণে থাকা একটা ইঁদুর। ওটা একদৃষ্টিতে থাকা আছে জাহ্নবীর দিকে। বোঝা-ই যাচ্ছে যে জাহ্নবী ইঁদুরটিকে হিপনোটাইজ করে ফেলেছে। এই কাজটা ভ্যাম্পায়াররা ভালোই পারে। ওদের নীল চোখের দিকে তাকালে মানুষসহ যেকোনো প্রাণী নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে।
হঠাৎ চোখের পলকে ইঁদুরটিকে হাতে নিয়ে ছোট্ট প্যাতপ্যাতে ঘাড়ে কামড় দিল জাহ্নবী। এরপর ঠোঁট জোড়া ঐভাবেই লাগিয়ে রাখলো কিছুক্ষণ। কয়েক সেকেন্ড ছটফট করলো ইঁদুরটা। এরপর নিথর হয়ে গেল। রক্তশূন্য দেহটা মেঝেতে ছুড়ে মেরে লাফিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে লাফ মারলো জাহ্নবী। সাইমুন ভয়ার্ত দৃষ্টিতে মৃত ইঁদুরটির দিকে তাকিয়ে আছে। দেহে খানিকটা রক্তের ছিটেফোঁটাও নেই। গায়ের লোমগুলো খাঁড়া হয়ে আছে। মৃত ইঁদুরের চেহারা সত্যিই ভয়ংকর!
–চলবে.......
Please visit Health Tips https://read.cash/@himu/health-tips-what-to-do-in-a-childs-dental-caries-cdfd338a