দশ মিনিটের রাস্তায় হয়তো মোট পাঁচটা কথাও বলি নাই এই লোকটার সাথে। উনার রিকশার প্রতিটা প্যাডেল চালাতে রিতীমত হাল অবস্থা খারাপ হচ্ছিলো। কিন্তু তাও রিক্সা এক সেকেন্ডের জন্যেও থামায় নি,আর স্বস্তিতে নিঃশ্বাস নেয় নি। এক পর্যায়ে উনার হাল অবস্থা দেখে মনে মনে চিন্তা আসে এত যে কষ্ট করে আয় করে, উনার পরিবার চলে তো? তাই হুট উনাকে জিগ্যেস করেই ফেলি,"যে উনার এই আয়ে উনি সন্তুষ্ট কিনা"। হয়তো উনি প্রস্তুত ছিলো না এই প্রশ্নের জন্য,কিন্তু উনার উত্তর গুলো এখনো ভাবছি আমি। উনি বলেছিলো,খোদা আমার কপালে যা লেইখা দিসে সেইটা তো আমার হবেই, শুধু আমারে খাটতে হইবো, উপরের খোদা তো আর আমার পা বাদ দিয়া তো আর পাঠায় নাই, যদি পা না থাকতো আমিতো এই রিশকাও(রিক্সা) চালাইতে পারতাম না, ওই কারণডার লাইগা আমার সন্তুষ্টির থেইকাও, আমার কামে কাজে আমার খোদা সন্তুষ্টি থাকে কিনা হেইটাই কথা"।
উনার কথা শেষ হওয়ার ২ মিনিটের মাথায়ই আমি আমার গন্তব্যে পৌঁছে যাই, আর নামার সময় ভাড়া বলছিলো যদিও ত্রিশ টাকা, কিন্তু ভাংতি ছিলোনা দেখে দিলাম বিশ টাকার দুইটা নোট দিলাম। দেখলাম উনার কাছে ভাংতি নাই আমার কাছেও নাই বললাম," আপনি রাখেন আংকেল আমার তাড়া আছে এই বলে নেমে গেলাম। পেছনে তাকাই নি দেখিও নি।
কিন্তু হ্যা, যা বুঝলাম উনার যে জ্ঞান আছে সেটা আমাদেরও নাই। কারণ আমরা আমাদের কাছে আজকাল সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি নিয়ে ভাবার সময় আছে নাকি? ১৯ থেকে ২০ হলেই আমরা খোদার উপরেই দোষ দিয়ে দেই। তাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলি। যেখানে আমাদের মাথায় কোনো চিন্তা থাকেনা, বাঁচার মতো জায়গা, খাবার মতো রুচিসম্মত খাবার সবই আছে কিংবা থাকে কিন্তু তাও আমাদের যে সৃষ্টি করেছেন তাকে নিয়ে ভাবার দুমিনিট আমাদের সময় হয় না। কারণ আমাদের আছে সব।
কিন্তু এই লোকটা কত কষ্ট করে উপার্জন করছে, কষ্ট করেই যাচ্ছে। তাতেও উনার কথায় বিন্দুমাত্র রাগ ক্ষোভ নেই বরং আছে সৃষ্টিকর্তার প্রতি অগাধ আস্হা,বিশ্বাস।
তাই আমরা যেটুকই পাই না কেনো, অথবা যেটুকই আছে তা নিয়ে একটি বার হলেও শুক্রিয়া করা উচিত। সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ দেয়া উচিত এতো সুখে রাখার জন্য।