সিনিয়র বউ
#পর্ব_০৯
(৮ম পর্বের পর থেকে)
আম্মুর কথা শুনে মাথাটাই খারাপ হয়ে গেলো, নিজের ছেলের কোনো খবর নাই, তিনি ছেলের বউ নিয়ে পড়ে আছে।
আম্মুর সাথে রাগারাগি করে ছাদে চলে গেলাম। আসলে তামান্নার জন্য আমারও খারাপ লাগছে, কিন্তু কি করবো? ও যেগুলো আমার সাথে করেছে, সেগুলোর ফল ওকে পেতে হবে। কিন্তু মনে হচ্ছে ওর সাথে বেশি করে ফেলছি।
কি করবো বুঝতে পারছি না। সানিকে কল দিলাম....
আমিঃ কিরে কই তুই?
সানিঃ বাসায়, এ অসময় কল দিছস! কোনো সমস্যা?
আমিঃ হুম, সমস্যা একটা হয়েছে।
সানিঃ কি সমস্যা?
আমিঃ মোবাইলে বলা যাবেনা। তুই দিঘীর সামনে আয়। আমি আয়মানকে বলে দিচ্ছি।
সানিঃ আচ্ছা ঠিক আছে। তুই বলা লাগবে না, আমি বলে দিচ্ছি।
আমিঃ হুম দে।
সানিঃ কয়টায় আসবি?
আমিঃ আসরের নামাজ পড়ে আয়।
সানিঃ ওকে।
এরপর কল কেটে দিলাম। নিচে গিয়ে দেখি আম্মু না খেয়ে টেবিলের উপর খাবার রেখে চলে গেছে। আমি আম্মুর রুমে গেলাম....
আমিঃ খাবে না?
আম্মুঃ তোর খাওয়া তুই খা। আমি আমার মেয়েকে ছাড়া খাবো না।
এই মহা যন্ত্রণা, ধুর ভালো লাগে না। আমিও না খেয়ে চলে আসলাম।
রুমে এসে শুয়ে পড়লাম, ঘুমানোর চেষ্টা করলাম ঘুম আসছে না। পরে উঠে বাহিরে চলে গেলাম।
আসরের নামাজ পড়ে দিঘীর সামনে গেলাম। দেখলাম সানি আর আয়মান বসে আছে।
আমিঃ কিরে তোরা আসছিস?
আয়মানঃ হুম, তোর নাম্বার বন্ধ কেন?
মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি সুইচ অফ হয়ে আছে। সানি বললো...
সানিঃ বল কি সমস্যা?
আমি সব গুকী ঘটনা খুলে বললাম।
আয়মানঃ দোস্ত আমার মনে হয় তোর এখন তামান্নাদের বাসায় যাওয়া উচিত!
আমিঃ ধুর আমি ওখানে গিয়ে কি করবো?
আয়মানঃ কি করবি মানে? ওর খাছে ক্ষমা চেয়ে নিবি আর বলবি ডিভোর্স পেপারটা নকল।ছিলো।
আমিঃ আরে না, এটা হয় না।
সানিঃ না হলে তুমি বসে বসে আঙ্গুল চুষো।
আমিঃ তামান্না কি সব কিছু মেনে নিবে?
আয়মানঃ হুম নিবে। দেখলি না সে তোর সাথে অন্য কাওকে সহ্য করতে পারে না।
আমিঃ সেটাতো আগে ছিলো, কিন্তু কলেজে যা করলাম, আমার জন্য এখন ঘৃণা ছাড়া ওর মনে আর কিচ্ছু নাই।
সানিঃ চেষ্টা করতে তো আর কোনো সমস্যা নেই। তোকে তখনও বলেছিলাম সব কিছু চিন্তাভাবনা করে কর।
আমিঃ সালা মিথ্যুক, তোর জন্যই এসব কিছু হইছে। তোর বুদ্ধি না শুনলে কিছুই হতো না।
সানিঃ আরে আমি কি জানতাম নাকি যে তামান্না বাসা ছেড়ে চলে যাবে?
আয়মানঃ আচ্ছা বাদ দে তো, এখন কেমনে কি করবি সেটা চিন্তা কর।
সানিঃ আচ্ছা চল কিছু খেয়ে আসি।
আয়মানঃ তোর তো খাওয়া ছাড়া আর কোনো কাজ নাই।
সানিঃ এই তুই কি আজকে ওদের বাসায় যাবি।
আমিঃ নাহ! গেলেও কালকে।
ওদের সাথে আরো কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে বাসায় চলে গেলাম।
রাত প্রায় ১০.০০ টা। খেতে বসলাম, আম্মু আসলো না। একা খেতে বসেছি, এমন সময় তামান্নার আম্মু কল দিলো....
আমিঃ হে... (পুরোটা বলার আগেই)
তামান্নার আম্মা কল দিয়ে কান্নাকাটি শুরু করে দিলো।
শাশুড়িঃ বাবা তু তুমি কই?
আমিঃ আমি তো বাসায়, আপনি কাঁদছেন কেন? কোনো সমস্যা?
শাশুড়িঃ তামান্না...
কল কেটে দিলো, আমি আবার কল দিলাম কিন্তু ধরতেছে না।
নাহ আর বসে থাকা যায় না। তামান্নার কি হইছে আল্লাই জানে। সানি আর আয়মানকে কল দিয়ে বের হতে বললাম।
বাসা থেকে বের হয়ে একটা CNG নিলাম, মাঝপথে সানি আর আয়মানকে তুলে নিলাম।
সানিঃ কিরে এতো রাতে আবার কি হলো?
আমিঃ তামান্নার আম্মা কল দিয়ে কান্না করতে লাগলো।
আয়মানঃ কেন কি হইছে?
আমিঃ নিজেও জানি না, পুরোটা শুনার আগেই কল কেটে দিলো। তারপর আমি কল দিলাম কিন্তু ধরতেছে না। আল্লাই কি হইছে।
কথা বলতে বলতে ওদের বাসার সামনে চলে আসলাম। অনেকবার কলিং বেল বাজালাম কিন্তু ভিতর থেকে কোনো শব্দ নাই, দরজা ধাক্কা দিলাম তাও কোনো লাভ হলো না।
পরে সানি বললো দরজা ভেঙ্গে ফেলার জন্য ৩ জনে অনেক কষ্ট করে দরজাটা ভাঙ্গলাম।
ভিতরে গিয়েই তো আমার মাথা খারাপ হয়ে গেলো। তামান্নার বাম হাত টা কাটা। পিংকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে, রক্তে পুরো ফ্লোর লাল হয়ে গেছে। অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণের জন্য জ্ঞান হারিয়ে ফেলছে। ওর এই অবস্থা দেখে আমার শরীর কাঁপতে লাগলো।
কিন্তু ওর আম্মু কই গেলো? তামান্নার আম্মুর রুমে গিয়ে দেখি উনি উনার পা উলটে খাটের সাথে আঘাত খেয়ে পড়ে আছে।
মনে হয় তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে পা মোছড় খেয়ে পড়ে যায়, আর মাথা গিয়ে লাগে খাটের সাথে যার কারনে উনিও সেন্সল্যাস হয়ে আছে।
কি করবো কিছুই বুঝতেছি না। আমার শার্ট টা খুলে তামান্নার হাতে বেধে নিলাম যাতে আর রক্ত না বের হয়। পরে ওদের দুজকেই হাসপাতালে নিয়ে গেলাম। ইমার্জেন্সিতে দিয়ে আমি বাইরে অপেক্ষা করছি, নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে পানি বের হতে শুরু করলো।
আমার জন্যই আজকে এতো কিছু হলো, তামান্নার জ্ঞান ফিরলেই মাফ চেয়ে নিবো।
সানি আর আয়মানকে বললাম বাসায় চলে যেতে, কিন্তু ওরা গেলো না। একটু পর ডাক্তার বাইরে আসলো...
ডাক্তারঃ রুগি আপনার কি হয়?
আমিঃ জি আমার স্ত্রী।
ডাক্তারঃ দেখুন উনার অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণ হয়েছে, জরুরী রক্তের ব্যবস্থা করুন।
আমিঃ জ্বি আমরা ৩ জন আছি বলুন কি রক্তের গ্রুপ কি?
ডাক্তারঃ AB+
আমিঃ আমার A+
সানিঃ আমার O+
আয়মানঃ আমারও A+
ডাক্তারঃ আচ্ছা ৩ জনই আসুন।
এরপর ৩ জনে রক্ত দিলাম, শাশুড়ি আম্মার জ্ঞান ফিরেছে উনি ঘুমাচ্ছে আমি তামান্নার কেবিনে গিয়ে তামান্নার পাশে বসলাম, নিশ্চুপ হয়ে ওর চেহারার দিকে তাকিয়ে আছি
তামান্নার একটা হাত ধরে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি মনে নেই।
সকালে ঘুম ভাঙ্গলো কারো হাতের স্পর্শে, চোখ খুলে দেখি তামান্না আমার মাথায় হাত বুলাচ্ছে, আমার ঘুম ভেঙ্গে যাওয়া দেখে অন্য দিকে মুখ কালো করে শুয়ে রইলো।
আমিঃ কি ব্যাপার এমন করছিলেন কেন?
তামান্নাঃ সেটা কারো না জানলেও চলবে।
বুঝলাম সে এখনো রেগে আছে।
আমিঃ কেন এটা করলেন?
তামান্নাঃ কি করবো বলো, আমি তো তোমাকে অনেক কষ্ট দিছি, অপমান করছি। তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছি। তুমি তো আমার ক্ষমা করবে না।
আমিঃ তাই বলে সুইসাইড করবেন? আগেও এই একই কাজটা করেছেন।
তামান্নাঃ কেন বাঁচালে, আমি মরলে তোমার কি?
ঠাসসসস করে একটা ওর গালে বসিয়ে দিলাম।
তামান্নাঃ তুমি আমাকে মেরেছো?
আমিঃ হুম মেরেছি বেশ করেছি। আমার বউকে আমি মেরেছি তাতে আপনার কি?
তামান্নাঃ বউ! তাহলে সেদিন ডিভোর্স লেটার দিলে কেন?
আমিঃ ওটা ডিভোর্স লেটার ছিলো না। জন্মদিনের একটা কার্ড ছিলো, শুধু মিথ্যা চিঠিটা আমি লিখে ছিলাম।
তামান্নাঃ কালকে কলেজে এগুলো কেন করলে তাহলে?
আমিঃ আমার সাথে করেছিলেন। আপনাকে একটু বুঝাতে চেয়েছিলাম আপনার কেমন লাগে?
তামান্নাঃ অনেক হারামি তুই?
বলেই কান্না করতে করতে জড়িয়ে ধরলো। আমিও ধরলাম, এমন সময় আম্মু এসে কাশি দিতে লাগলো, ধুর শালা আম্মুকে কে খবর দিলো, আম্মু জানলে টেনশন করবে তাই কিছু জানাইনি আমি ভাবছি ওরা সুস্থ হলে তারপর জানাবো।
আম্মুঃ আমি এখানে একটু আসতে পারি?
তামান্নাঃ না, এখানে কারো আসা এখন যাবে না। (জড়িয়ে ধরে কথা গুলো বললো)
আমিঃ এই ছাড়েন, আম্মু দেখতেছে।
তামান্নাঃ দেখলে দেখুক। আমার স্বামীকে আমি জড়িয়ে ধরেছি, তাতে কার কি?
আমিঃ তাই বলে আম্মুর সামনে?
আম্মুঃ এই হাদারাম কিছু শিখ (আমাকে উদ্দেশ্য করে)
আম্মুঃ আচ্ছা তোমরা তাহলে থাকো।
আম্মু গিয়ে শাশুড়ির সাথে কথা বলতে লাগলো, বাইরে গিয়ে দেখি সানি আর আয়মান একটা টুলের উপর একজন অন্যজনের উপর উলটো হয়ে শুয়ে আছে। দেখেই আমার হাসি পাচ্ছে, একটু ভিডিও করে ওদের জাগালাম।
তারপর বাইরে থেকে কিছু খেয়ে আসলাম, তামান্নার জন্যও নিয়ে আসলাম। ডাক্তারের কাছে গেলাম,,,
আমিঃ আমরা কি ওদের বাসায় নিয়ে যেতে পারবো?
ডাক্তারঃ আপনার শাশুড়িকে নিয়ে যেতে পারবেন, উনি সুস্থ আছে। কিন্তু আপনার ওয়াইফকে আরো ২ দিন থাকতে হবে।
আমিঃ আচ্চা ঠিক আছে।
এরপর আম্মুর কাছে গেলাম।
আমিঃ আম্মু!
আম্মুঃ কিছু বলবি?
আমিঃ ডাক্তার বলেছে বাসায় যেতে।
আম্মুঃ তো চল, আর এখানে থেকে কি করবো?
আমিঃ না মানে, তামান্নাকে আরো ২ দিন থাকতে হবে। তাই বলছিলাম তুমি উনাকে (শাশুড়ি) নিয়ে আমাদের বাসায় চলে যাও। কয়েকদিন ওখানে থেকে রেষ্টে থাকুক।
আম্মুঃ তামান্নার কাছে কে থাকবে?
আমিঃ আমি আছি, তোমরা বাসায় চলে যায়। সময় পেলে আবার আসিও, আর নাহলে আসার দরকার নাই।
আম্মুঃ আচ্ছা ঠিক আছে, সব কিছু দেখেশুনে রাখবি।
এরপর সানিকে উনাদের সঙ্গে দিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দিলাম।
আমি তামান্নার কাছে গেলাম।
আমিঃ এখন কেমন লাগছে?
তামান্নাঃ আগে থেকে ভালো, এই শুনো।
আমিঃ হুম বলেন।
তামান্নাঃ আমি না একজনকে অনেক ভালোবাসি।
আমিঃ কাকে?
তামান্নাঃ আমার এই জুনিয়র বরটাকে (হাত ধরে)
আমি কিছু না বলে অন্যদিকে তাকিয়ে হাসতেছি, সে হঠ্যাৎ করে আমার মুখটা ওর কাছে নিয়ে গিয়ে একটা ভালোবাসার স্পর্শ এঁকে দিলো। তারপর বললো,,,
তামান্নাঃ এই আমাদের তো বাসর হয়নি চলো না, আজকে আমাদের বাসরটা করে ফেলি।
আমিঃ ডাক্তার আপনাকে আরো ২ দিন এখানে থাকতে বলেছে। আগে সুস্থ হোন, তারপর দেখা যাবে।
এইভাবে রোমান্টিক ভাবে ২ দিন চলে গেলো, আমি তামান্নাকে নিয়ে বাসায় আসলাম। গাড়ি থেকে নেমে তাকে বললাম বাসায় আসতে, কিন্তু সে না এসে দাঁড়িয়ে আছে।
আমিঃ কি ব্যাপার দাঁড়িয়ে আছেন কেন? আসুন,,,
তামান্নাঃ কেউ যদি কোলে করে নিয়ে যায় তাহলে যাবো।
বুঝলাম আমাকে বলছে, তাই আর দেরি না করে ওকে কোলে নিলাম, সে আমার গলা জড়িয়ে ধরে আছে। বাসায় নিয়ে গিয়ে রুমে শুয়ে দিলাম, তারপর....
চলবে....
To be Continue......
(শেষ পর্ব আগামী কাল দেওয়া হবে।)