একলা সময় কাটানোর জন্য নির্জন জায়গায় বসলাম মাত্র হঠাৎ আমার পিছন থেকে অপরিচিত একটা মেয়ে চিৎকার মেরে বলে উঠল..
এই আপনার সাহস তো কম না আমার জায়গাই বসেছেন (অপরিচিত মেয়ে)
মেয়েটার কথা শুনে আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বলতে লাগলাম..
এইটা আপনার জায়গায়...? (আমি)
হ্যা অবশ্য আমার জায়গা (অপরিচিত মেয়ে)
এইটা তো ক্যাম্পাস আর জায়গা তো সবার জন্যই সমান অধিকার আছে তাহলে আপনার একান্ত জায়গা হলো কীভাবে..? (আমি)
আমি এত কিছু জানি না এই জায়গায় আমার আর সুজনের এটাই আমি জানি (অপরিচিত মেয়ে)
অপরিচিত মেয়ের এমন কথাই কেমন জানি ঘোরের মধ্যে পড়ে গেলাম এই জায়গায়টা নাকি তার সুজনের আর সুজনটাই বা কে কিছুই বুঝতে পারছি না এসব আনমনে ভেবে আবার বললাম
আচ্ছা সুজনটা কে বলুন তো (অপরিচিত মেয়েকে উদ্দেশ্য করে বললাম)
আপনাকে কেন বলবো..? (অপরিচিত মেয়ে)
মেয়েটার হাপ ভাব দেখে কিছুটা অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে..! মেয়েটা মানষিক রোগী নাকি দেখে তো তাই মনে হয় আবার এই জায়গায়টা আমাকে থাকতে দিচ্ছে না কথাও তো ভালোই বলতে পারে সে এসব ভাবতেই পিছন থেকে এক ভদ্রলোক সেই অপরিচিত মেয়েকে বলতে লাগল
মিথিলা মা তোকে মানা করছি না এই ক্যাম্পাসে আসতে (ভদ্রলোক)
বাবা দেখো না এই জায়গায় আমি আর সুজন বসে থাকতাম সে জায়গায় এই ছেলেটা বসতে চাইলো আমি থাকতে কি অন্য কাউকে বসতে দিতাম বলো বাবা (অপরিচিত মেয়ে তার বাবাকে বলল)
নারে মা সেটা কি আর হয় আমার মিথিলা মা সেটা হতেই দিবে না।আমিও বরং তাকে মানা করে দেই (ভদ্রলোক)
বাবা তুমিও বরং এই ছেলেটাকে বকে দাও যেন আর এখানে বসতে না চায় (মিথিলা)
আচ্ছা মা তাই করবো কিন্তু তুমি যে বাড়ি থেকে এই ক্যাম্পাসে চলে আসছো তোমার মা টেনশন করছে সেটা কি তুমি ভুলে যাচ্ছো (ভদ্রলোক)
হ্যা তাই তো মা আমার জন্য টেনশন করছে আর কেন যে আমি এখানে আসতে গেলাম। হ্যা পেয়েছি বাবা এই ছেলেটাকে এখানে বসতে চেয়েছিলো তাকে আটকানোর জন্য এখানে আসছি (মিথিলা)
মা তুমি বাসায় যাও আমি বরং এই ছেলেকে ভালোভাবে বলে দেই যেনো এখানে আর বসতে না পারে (ভদ্রলোক)
আচ্ছা বাবা তুমি এনাকে ভালোভাবে বলো বলে দাও..! আমি বরং মার সাথে দেখা করে আসি মা আমার জন্য টেনশন করছে (এই বলে মিথিলা চলে গেলো আর সেই ভদ্রলোক আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল..
বাবা তুমি কিছু মনে করো নিতো (ভদ্রলোক)
না আঙ্কেল আমি কিছু মনে করিনি। কিন্তু.. (আমি)
বুঝতে পেরেছি তুমি কি বলতে চাচ্ছো..? (ভদ্রলোক)
হ্যা আঙ্কেল বলুন (বিষয়টা জানার আগ্রহ
বেরে গেলো বিদায় তাই আগ বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলাম )
আজ থেকে ৩ বছর আগের ঘটনা..!
আমার মেয়ে এই ক্যাম্পাসে যখন অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী। আর এই ক্যাম্পাস থেকে আমাদের বাড়ি কিন্তু বেশি একটা দুরে না। তো এই ক্যাম্পাসে এডমিশন করিয়ে দিই। আমাদের অজান্তেই আমার মেয়ে একটা ছেলেকে পছন্দ করে ফেলে।
সেটা আমরা জানতাম না। আস্তে আস্তে তাদের এই পছন্দ থেকে ভালোবাসায় রুপ নেই। আমার মেয়ে দিনরাত কথা বলত আমাদের কে না জানিয়ে। একদিন তোমার আন্টি মিথিলার ফোনে কথা বলা দেখে ফেলে যার দরুন বিষয়টি আমাকে রাতারাতি জানাই
প্রথমে তোমার আন্টির কাছ থেকে শুনে বেশি একটা গুরুত্ব দেইনি। ভেবেছিলাম বর্তমান যুগে এটা কোনো বিষয় না। কিন্তু পযায়ক্রমে তাদের ভালোবাসাটা আরও ভালোভাবে শক্তি শালী হয়ে যার দারুন হঠাৎ আমার মেয়ে আমাকে সরাসরি আমাকে বলতে লাগল
বাবা আমি সুজন কে বিয়ে করতে চাই..? (মিথিলা)
আমার মেয়ের এমন কথা শুনে অনেকটাই অবাক হয়েছিলাম তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বলেছিলাম
কোন সুজন মা আমাদের এলাকায় থাকে নাকি (মিথিলার বাবা)
না বাবা আমাদের ক্যাম্পাসে এবার অনার্সে last year মানে বিদায় এর ছাত্র (মিথিলা)
হুম বুঝলাম কিন্তু তার বাসা কোথাও (মিথিলার বাবা)
ওর বাসা সিলেট (মিথিলা)
তার বাসা সিলেট আর তুমি তার সাথে রিলেশনে জড়িয়েছো কিন্তু একবার ও কি ভেবেছো সে তোমাকে তার জীবন সাথী হিসেবে নিবে কিনা (মিথিলার বাবা)
হ্যা বাবা আমি তার কাছ থেকে ভালোভাবেই শুনেই তোমাকে বলছি (মিথিলা)
আচ্ছা তুমি যখন সবকিছু আমাদের কে না জানিয়ে করেছো তাহলে বিয়েটাও সেরে আসতে আমার কাছে কেন আসছো জিজ্ঞেস করতে (মিথিলার বাবা)
বাবা এভাবে বলো না প্লিজ তাছাড়া আমি ওকে খুব ভালোবেসে ফেলছি। তুমি কি চাও না তোমার মেয়ে সুখে থাকুক (মিথিলা)
আমার মেয়ের এমন কথা শুনে না করতে পারিনি তাই আমিও আমার মেয়ের ভালোর জন্য বলেছিলাম
আচ্ছা তুমি যখন বলছো তাহলে ছেলেটাকে আমাদের কে দেখাও তারপর কি করা যায় সেটা ভালো মন্দ করব নে (মিথিলার বাবা)
তারপর আমার মেয়ে এক সপ্তাহ পর আমাকে জানায় সেই ছেলেটি আমার সাথে মিট করবে তো তারিখ অনুযায়ী আমরা সেই ছেলেকে দেখার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম
সেইদিন হঠাৎ আমার মেয়ে চিৎকার মেরে কান্না করতে লাগল তারপর সেখানে গিয়ে আমার মেয়েকে জিজ্ঞেস করলাম
মিথিলা মা আমার কান্না করছিস কেন (মিথিলার বাবা)
বাবা ও আমাকে ধোকা দিয়েছে (মিথিলা)
ধোকা দিয়েছে মানে (মিথিলার বাবা)
এই দেখো বাবা কি মেসেজ সেন্ট করছে ও (মিথিলা)
তার পর সেই মেসেজ পরতে লাগলাম
মিথিলা তুমি আমাকে ভুলে যাও। আমি তোমার সত্যিকারের ভালোবাসায় আজ হেরে গেলাম। তুমি হইত জানো না আমি গত ৬ মাস আগেই বিয়ে করে ফেলছি যদিও বাবা মার চাপেই কিন্তু তোমাকে ভয়ে এসব কিছু জানাতে পারি নি । যখন তোমার বাবার সাথে মিট করানোর কথা বললে তখন তোমাকে বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু আমার তো সেই সাহস নেই তোমার বাবার সামনে গিয়ে মিথ্যা আশাস দিবো। তাই তোমার জীবন থেকে চলে গেলাম ভালো থেকো আর ভালো ছেলে দেখে বিয়েটা করে নিও আল্লাহ হাফেজ
বেস আমার মেয়েটা তখন থেকেই মানষিক ভারসাম্য হারিয়ে উল্টো পাল্টা কথা বলে তবে এখন কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে কিন্তু মাঝেমধ্যে এই ক্যাম্পাসে এসে তোমাকে যা বলেছে অন্যরাও বসলে সেম কথাটাই বলে (ভদ্রলোক)
এত ক্ষন শুধু নিরব শ্রোতাদের মতো শুনলাম। তারপর আংকেল বলল..
আংকেল আপনাকে যে কি বলে শান্তনা দিবো সে ভাষা আমার জানা নেই তবে আশা করা যায় আপনার মেয়ে খুব শীঘ্রই সুস্থ এবং স্বাভাবিক হবে ইনশাআল্লাহ (আমি)
হ্যা বাবা দোয়া করো যাতে আমার মেয়ে খুব শীঘ্রই ভালোই হয় (ভদ্রলোক)
হ্যা অবশ্যই (আমি)
বাবা তোমার নাম টা কি জানাই তো হলো না (ভদ্রলোক)
আংকেল আমার শামীম মাহমুদ এবার
অনার্স প্রথম বর্ষ পড়ছি (আমি)
আচ্ছা ভালো। আর হ্যা সময় পেলে আমাদের বাসায় অবশ্যই এসো..! তোমাদের ক্যাম্পাস থেকে আমাদের বাসা কিন্তু বেশি একটা দুরে না (ভদ্রলোক)
হ্যা সময় পেলে অবশ্যই যাবো একদিন (আমি)
ভালো থাকো বাবা (এই বলে সেই ভদ্রলোক চলে গেলো)
তারপর ঘড়ির দিকে তাকাতেই আমার চোখ কপালে উঠে গেলো..! আমার তো ১০ঃ ০০টায় ক্লাস ছিলো কিন্ত গল্পের মাঝে যে সময়টা চলে যাবে সেটা বুঝতে পারিনি তারপর তরিঘরি করে চলে গেলাম ক্লাস রুমে লক্ষ্য করলাম ক্লাসে ম্যাম লেকচার দিচ্ছেন এমন সময় ম্যামকে বললাম...
ম্যাম আমি কি ভিতরে আসতে পারি..? (আমি)
ক্লাসের করার মাঝে হঠাৎ করে কথাটা বলায় ক্লাসে কেমন জানি নিরবতা বিরাজ করল আর সকলের দৃষ্টি আমার দিকে পড়ল
তারপর ম্যাম বলল
এই ছেলে তুমি এত লেট করে আসলে কেন..? (ম্যাম)
সরি ম্যাম (আমি)
আচ্ছা ঠিক আছে আজ যেহেতু প্রথম দিন কিন্তু এর পরের বার থেকে লেট করে আসলে বাহিরে দাড়া করিয়ে রাখবো (ম্যাম)
নিশ্চুপ (আমি)
তোমার সিটে গিয়ে বসো ( ম্যাম)
তারপর পিছনের দিকে একটা সিট খালি রয়েছে সেখানে বসতেই লক্ষ্য করলাম আমার পাশের সিটে মেঘলা আর নেহা তারা বসছে যেই আমাকে দেখলো যে তাদের পাসে সিটে বসছি তখনই মেঘলা চোখ রাঙিয়ে বলল
এই ছোটলোক কোথাকার আর জায়গা পেলে না শেষ মেশ আমাদের পাশেই তোকে বসতে