--ঠাসস ঠাসসস তোর মতো ছোটলোকের সাহস কি করে হয় আমার শরীর স্পর্শ করার?(মেয়েটা আমার দু গালে থাপ্পড় দিয়ে বলল)
আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না।থাপ্পড় টা এতো জোরে দিছে আমার মনে হচ্ছে পাঁচ আঙ্গুল পুরাপুরি গেঁথে গেছে।পাশে একটা লোক দাড়িয়ে আছে।তখন চলে এলো মেয়েটার সামনে হিরোগিরি দেখাতে।লোকটা বলল,"আপু কি হয়েছে?"
মেয়েটাঃ এই অসভ্য ছেলেটা ইচ্ছে করে আমার হাত টেনে ধরেছে।
আমিঃভাইয়া বিশ্বাস করুন আমি ইচ্ছে করে হাত ধরিনি।
লোকটাঃতোর মতো ছেলেদের ভালো করে চেনা আছে।তোরা রাস্তায় মেয়েদের একা পেলেই টিজ করিস।আজকে তোর টিজ করার মজা বের করবো বলে আমাকে আরও দুটা থাপ্পড় মেরে দিলো।
আরও দুটা থাপ্পড় খেয়ে আমার চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগলো।
মেয়েটা বলল,"দেখ আমাকে ছোঁয়ার মজা।নেক্সট টাইম আমার আশেপাশে দেখলে পায়ের জুতা খুলে তোর মুখে মারবো।"
মেয়েটা আর লোকটা চলে গেল।তখনও আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।আসলে যে অসহায় তার উপর সবাই নির্যাতন চালায়।
কিছুক্ষণ আগে দেখলাম মেয়েটা কানে হেডফোন গুঁজে রাস্তা পার হচ্ছে।কিন্তু দূর থেকে একটা গাড়ি ওর দিকে হর্ণ দিতে দিতে আসছে।এটা মেয়েটা খেয়াল করেনি।সে গানের তালে তালে রাস্তা পার হচ্ছে। এমন ভাবে রাস্তা পার হতে লাগলে শিওর এক্সিডেন্ট করবে।এজন্য আমি দৌড়ে গিয়ে মেয়েটার হাত ধরে টান দেই।আর তখনি শাঁই করে একটা ট্রাক মেয়েটার পাশ দিয়ে চলে যায়।তারপর মেয়েটার জীবন বাচানোর জন্য উপহারস্বরূপ কয়েকটা থাপ্পড় দেয়।
ফুটপাত দিয়ে আনমনে হাঁটতে লাগলাম।আসলে যার মা বাবা নাই তার এই দুনিয়ায় কেউ নাই।ওহ আপনাদের তো আমার পরিচয় দেওয়া হয়নি।আমি অনিক হাসান।পড়াশোনা অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে।আমার বয়স যখন সাত বছর বাবা মা দুজনেই রোড এক্সিডেন্টে মারা যায়।কিন্তু সেদিন আমি বেঁচে যাই।এরপর নানু আমাকে উনার কাছে নিয়ে যায়।কয়েকবছর পর নানু ও মারা যায়।এরপর থেকে মামার বাসায় থাকি।মামার বাসায় যে শান্তি তে থাকি তা না।উঠতে বসতে মামি খোঁটা দিবে।রান্না বাদে প্রায় সব কাজই আমাকে করতে হয়।তারপরও কেন জানি আমাকে দেখতে পারে না।মনে হয় আমি উনার দুই চোখের বিষ।
একটু পর বাসায় আসি।আমাকে দেখে মামি বলল,"নবাবজাদার এতোক্ষণে বাসায় আসার সময় হলো। তোরে না বলছি পাশের দোকান থেকে এক বস্তা চাউল আনতে।চাউল না নিয়ে এসে খালি হাতে আসলি ক্যান?এ বাসা কি তোর বাপের যে যখন যা হচ্ছে হবে তাই করবি?তোরে বসিয়ে বসিয়ে ভাত দিতে পারবো না। মনে রাখিস কথাটা।"
এমন কথা প্রতিদিন ই শুনতে হয়।এসবে অভ্যাস হয়ে গেছে।তাই কোনো কথা না বলে পাশের দোকান থেকে এক বস্তা চাউল নিয়ে আসলাম।
রাতে পড়ছি,তখন শুনলাম মামি মামাকে বলছে তোমার ভাগ্নের কান্ড শুনেছো কি?
মামাঃ অনিক আবার কি করলো?
মামিঃপাশের বাসার কাজের মেয়েরে কু প্রস্তাব দিছে।মেয়েটা আমার কাছে সে কি কান্না করা।
মামাঃঅনিক মোটেও এমন ছেলে না।
মামিঃতুমি কি বাসায় থাকো যে ওর এসব কাজকর্ম সম্পর্কে জানবে।বলছি কি আমাদের ও তো মেয়ে আছে।যদি ওর দিকে খারাপ নজর দেয় তাহলে কি হবে?
মামাঃধুর,অনিক তো আমাদের রিয়াকে নিজের বোনের মতো ভালোবাসে।
মামিঃ দেখো তেমার আবেগ দিয়ে কথা বলবে না।এখন একটু ভাবো।মেয়েটা তো বড় হয়েছে।কিছু হয়ে গেলে মুখ দেখাতে পারবো না।
আমি আর উনাদের কথা শুনলাম না।ভাবতেই খারাপ লাগছে যাকে নিজের বোনের চোখে দেখি তাকে নিয়ে মামি কি সব ভাবছে।আর মামাকে কিসব উল্টাপাল্টা মিথ্যা বলে আমার সম্পর্কে বিরূপ ধারণা তৈরী করছে।
যাক এটা নতুন কিছু না।এসব নিয়ে আমাকে না ভাবলেও চলবে।এখন অনেক পড়া বাকি আছে।বই নিয়ে পড়তে বসলাম।
পরেরদিন মামি বলল উনার বোনের মেয়ে আসবে।মেয়েটাকে স্টেশন থেকে নিয়ে আসতে বলল।
এই মেয়েটাকে আমার একটুও সহ্য হয় না।সবসময় অহংকার নিয়ে কথা বলে।আর কথায় আমাকে অপমান।করে।
আজকে বাবা মা বেঁচে নেই বলে এসব সহ্য করতে হয়।
স্টেশনে গিয়ে দেখি অহংকারী মেয়েটা বসে আছে।ওহ ওর নাম সিমা।আমাকে দেখেই বলল,"ওই চাকরের বাচ্চা চাকর এতোক্ষণ পরে আসলি ক্যান?"
আমিঃ দেখুন আমাকে যা ইচ্ছে বলেন।কিন্তু আমার বাবা মা কে নিয়ে কোনো বাজে কথা বলবেন না।
সিমাঃ ঠাস, তোর এতো বড় সাহস!! চাকর হয়ে মুখে মুখে তর্ক করিস।দেখ আজকে বাসায় গিয়ে তোর কি হাল করি।
আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।আজকে এতিম বলে সবাই আমাকে মারে বকা দেয়।নিজের বাবা মা থাকলে হয়তো এমন দিন দেখতে হতো না।কেন যে সেই দিন বেঁচে গেছিলাম।সেদিন বাবা মা র সাথে আমিও কেন মরলাম না।
সিমাঃ ওই ফকিন্নির বাচ্চা দাঁড়িয়ে না থেকে আমার ব্যাগগুলো নিয়ে আয়।
এই মেয়ে যতদিন থাকবে ততদিন আমার উপর অত্যাচার করবে।এতিম বলে সব সহ্য করতে হবে।
বাসায় আসার পর সিমা আমার নামে অনেক বাজে কথা মামিকে বলল।রাতে আবার মামি সেগুলো মামাকে বলল।
সকালে ছাদে দাঁড়িয়ে আছি।এমন সময় দেখি রিয়া আসলো।
রিয়াঃভাইয়া কি করিস?
আমিঃ দেখছিস দাঁড়িয়ে আছি।
রিয়াঃ মনে হচ্ছে তোর মন খারাপ। কি হয়েছে তোর?
আমিঃকিছু হয়নি।
জানি রিয়া আমাকে বড় ভাই মানে।কিন্তু ওর মা আমাকে দেখতে পারে না।সাথে আরেকটা যোগ হইছে।এই আপদ কবে যে যাবে আল্লাহ জানে।
ভার্সিটি যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে রুমের বাইরে বের হতে লাগছি অমন সময় সিমার সাথে ধাক্কা লেগে গেল।অমনি সিমা ঠাস করে থাপ্পড় মেরে দিলো।
সিমাঃ শয়তান লুচ্চা কোথাকার।মেয়ে দেখলেই জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করে তাই না।আজকে খালু আসুক।তারপর তোর লুচ্চামি বের করবো।
মামি সিমার কথা শুনে এসে সিমাকে বলল,"কি হয়েছে?"
সিমা ন্যাকা কান্না করে বলল,"দেখো খালামনি এই লুচ্চা অনিক আমার হাত ধরে ওর রুমে টান দিছিলো।আমি থাপ্পড় মারছি দেখে ছেড়ে দিছে।
মামি এসে ঠাস ঠাস করে আরও কয়েকটা থাপ্পড় মেরে দিলো।আমি গাল ধরে বসে পড়লাম।মামি বলল,"এতোদিন দুধ খাইয়ে কালসাপ পুষেছি। আজকে তোর মামা আসলে তারপর তোর বিচার হবে।ততক্ষনে তোর রুমের বাইরে যাওয়া বন্ধ। "
বলে মামি দরজা বাহিরে থেকে আটকে দিলো।
আমি ফ্লোরে বসে কান্না করতে লাগলাম।আমার সাথে কেন এমন হয়!দুনিয়া টা বড়ই নিষ্ঠুর।যার আছে সবকিছু আছে।আর যার নেই কিছুই নেই।কান্না করতে করতে ফ্লোরে ঘুমিয়ে পরি।দুপুরের দিকে ঘুম ভেঙ্গে যায়। খুধায় পেটটা জ্বলে যাচ্ছে। বাহিরে থেকে আটকে দিছে।খুলতেও পারছি না।
মামিকে ডেকে বললাম,"সকালেও কিছু খাই নি।অনেক ক্ষুধা লাগছে।কিছু খেতে দেন।"
মামিঃ তোর মতো ফকিন্নির বাচ্চা রা দু একদিন না খেয়ে থাকলে মরবে না।"
এই বলে মামি চলে গেল।
এখন আম্মুর কথা অনেক মনে পড়ছে।ছোটবেলায় নিজ হাতে আমাকে খাইয়ে দিতো।আজ আম্মু থাকলে আমার সাথে কি এমন হতো!
টেবিলে পানির বোতলে পানি আছে।ঢকঢক করে ওগুলো খেয়ে নিলাম।