সকালে উঠে জান্নাতকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।সরাসরি গেলাম ওর কলেজে।কলেজের সামনে গাড়ি রাখতেই সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।জান্নাত গাড়ি থেকে নেমে আমাকে বললো,,,,,।
জান্নাত:তুমি এখানেই থাকো আমি স্যারের রুমে গিয়ে কাজ শেষ করে আসছি,,আর হ্যা একটা মেয়ের দিকেও তাকাবে না বলে দিলাম।খুন করে ফেলবো তাহলে,,,,,,
আমি:আমি তাকাবো না কেউ তাকালে কিন্তু আমার দোষ নেই।
জান্নাত কিছু একটা চিন্তা করে আমার হাত ধরে গাড়িতে বসিয়ে বললো,,,,,,,
জান্নাত:তুমি এখানেই বসো,,বাইরে আসতে হবে না।
আমি:আরে পাগলি আমি তোমাকেই ভালোবাসি আর কেউ তোমার জায়গা নিতে পারবে না।
জান্নাত:সত্যি তো??আচ্ছা ওই পাশে যাও,,ওখানে কিছু দোকান আছে কিছু খাও গিয়ে।
আমি:না তুমি এলে একসাথে ফুচকা খাবো,,যাও তাড়াতাড়ি আসবে,,।
জান্নাত চলে গেলো আর আমি দাড়িয়ে আছি।তারপর অনেক সময় পর জান্নাত এলো ওর বান্ধবীদের সাথে করে,,সাথে সেই তিনজনও ছিলো যারা আমাকে ওর সাথে মিলে হেনস্তা করেছিলো।আমাকে দেখেই কিছুটা লজ্জা পেলো ওরা তিনজন।
জান্নাতের বান্ধবী:হাই দুলাভাই কেমন আছেন???
আমি:হুম ভালো কিন্তু দুলাভাইটা আবার কে,,?
জান্নাতের বান্ধবী:ইশশশ কতো ঢং দেখো।আমরা সব শুনেছি জান্নাতের কাছ থেকে,,এখন আমাদের সবাইকে ট্রিট দিতে হবে,,।
আমি:হুমম অবশ্যই দিবো,,চলো সবাই।
জান্নাতের বান্ধবী:সরি ভাইয়া সেদিন একটু বেশি দুষ্টামি করে ফেলছিলাম,,,।
আমি:আরে না একটু দুষ্টামি তো হবেই,,,।
জান্নাতের বান্ধবী:আচ্ছা ভাইয়া বিয়ে করবেন কবে,,,,?
আমি:এইতো জান্নাতের পরিক্ষা শেষ হলেই করবো,,,।
জান্নাতের আরেক বান্ধবী:জান্নাত ভালো বর পেয়েছিস রে,,হ্যান্ডসাম আছে।
জান্নাত:ওই শয়তান,,নজর দিবিনা একদম।
জান্নাতের আরেক বান্ধবী:উলে বাবালে কতো দরদ,,,
জান্নাত:চুপপপ একদম,,,,
তারপর সবাই মিলে ফুচকা খেয়ে ওদের বিদায় দিয়ে চলে এলাম জান্নাতদের বাসায়।
আন্টি:বাবা রাশেদ,,জান্নাত তোমাদের ওখানে থাকবে ব্যাপারটা কেমন জানি লাগেনা বলো!!!
আমি:আন্টি আসলে জান্নাত ওখানে থেকে পড়লে পড়াশোনাটাও ভালো হবে।আম্মু ওর যত্নের কোনো কমতি রাখবে না,,আপনি একটুও চিন্তা করবেন না।আপনাদের কোনো রকম অসম্মান হবেনা।আর আমি আছি তো,,ওর সব দায়িত্ব আমার।আপনি শুধু দোয়া করবেন আন্টি।
আন্টি:একটা মেয়ের কিছুদিন আগেই বিয়ে দিলাম ভাবলাম জান্নাতকে নিয়ে থাকবো,,,কিন্তু ওকেও বিদায় দিতে হবে।বাড়িটা একদম ফাকা হয়ে যাবে বাবা।
আমি:আন্টি আপনারা এতো টেনশন করবেন না তো।আমি কয়েকদিন পর পর ওকে নিয়ে আসবো,,আপনাকে দেখে যাবে।
আন্টি:আচ্ছা বাবা,,আমি তাহলে ওর কাপড়চোপড় গুছিয়ে দেই।
আন্টি সবকিছু গুছিয়ে দিলো।সবগুলো গাড়িতে উঠিয়ে উনাদের থেকে বিদায় নিয়ে চলে এলাম বাড়িতে।গাড়ি থেকে নেমে জান্নাত হনহনিয়ে চলে যেতে লাগলো,,,,।
আমি:এইযে ম্যাডাম আপনার ব্যাগগুলো কে নেবে শুনি???
জান্নাত:কেনো তুমি নেবে,,,
আমি:আমি কেনো নেবো তোমার ব্যাগ,,,?
জান্নাত:বিয়ের পরতো নিতেই হবে তাই এখন থেকেই প্রেকটিস করো,,,,,
আমি:তখনকার সময় তখন দেখা যাবে,,এখন নিজেরটা নিজে নাও,,,।এতো ভারি ব্যাগ আমি নিতে পারবো না।
জান্নাত:আচ্ছা দেখা যাক কে ব্যাগ নেয়,, আআআআনননননটি,,,,,,,
আমি:আরে দাড়াও দাড়াও এইতো নিচ্ছি,,এতো হালকা ব্যাগ তো আমি এক হাতেই নিতে পারি।
জান্নাত:এখনতো পারবেই,,নিয়ে এসো হবু বর মশাই,,,।
আমি:দেখে নিবো পরে,,,
জান্নাতের ভারি ব্যাগ দুটো সিড়ি দিয়ে বয়ে নিয়ে যাচ্ছি,,কষ্ট হচ্ছে কিছু বলতেও পারছি না।দরজার কাছে আসতেই জান্নাত বললো ওর কাছে দিতে।আমি একটু আরাম পাবো বলে সরল মনে দিয়েছিলাম।ও ব্যাগ দুটো টানতে টানতে ভেতরে নিয়ে গেলো একটু হাপানোর ভান করে।মনে হচ্ছে সবটুকু নিজেই নিয়ে এসেছে,,আম্মুতো এটা দেখেই রেগে আগুন হয়ে গেছে।
আম্মু:এ কি মা তুমি কষ্ট করে কেনো নিয়ে এলে?রাশেদ কই ওকে বলতে,,ও নিয়ে আসতো,,,।
জান্নাত:আর বলে কি হবে আম্মু,,তোমার ছেলে তো সারাদিন মোবাইল টিপতে বস্তু,,কতো করে বললাম একটা অন্তত নিতে কিন্তু সে আমাকে বলে যারটা সে নিবে,,,।
আম্মু:কোথায় সে বান্দরটা ডাকো ওকে,,,
জান্নাত:এই যে আসছে,,,
আমি আমার মতো মোবাইল হাতে নিয়ে দরজা দিয়ে ঢুকতেই আম্মু আমার গালে ঠাসসসসস করে একটা চর দিলো।আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,,,,,,
আমি:আম্মু মারলে কেনো,,কি করছি আমি,,?
আম্মু:তুই জান্নাতকে দিয়ে কেনো এতো ভারি জিনিস টেনে আনালি,,ও কি এখানে কাজ করতে এসেছে?তুই কোন আক্কেলে ওকে দিয়ে এসব করালি??দেখতো ওর ফরসা মুখটা কেমন লাল হয়ে গেছে,,,।
আমি শুধু জান্নাতের দিকে তাকিয়ে আছি,,ও হয়তো মজা করেছে কিন্তু আমার খারাপ লাগলো এটা।আম্মু আর জান্নাতকে সরি বলে আমি চলে এলাম,,দরজা আটকে শুয়ে পড়লাম।মনটা খারাপ তাই বাইরে যাই নি।জান্নাত ফ্রেস হয়ে আমার রুমে আসতেই দরজা বন্ধ দেখে বারবার ধাক্কা দিচ্ছে।
জান্নাত:রাশেদ প্লিজ দরজাটা খোলো,,আমি একটু বেশি মজা করে ফেলছি,,,ভুল হয়ে গেছে সরি।তুমি আমাকে শাস্তি দাও তবুও দরজা খুলে বাইরে আসো প্লিজ,,,,,,,।
আমি:আমার খিদে নেই খাবো না,,,
জান্নাত:রাশেদ প্লিজ আমার উপর রাগ করে নিজেকে কষ্ট দিও না।
অনেকবার ডাকাডাকি করলো কিন্তু আমি সারা দেইনি।একটু পর আম্মু এসে ধমক দেওয়াতে দরজা খুলতে বাধ্য হলাম।বকাঝকা দিয়ে খাওয়ালো,,আমি খাবার শেষ করে রুমে এসে শুয়ে পড়লাম।জান্নাত বারবার ফোন দিচ্ছে তাই আমি ফোন বন্ধ করে শুয়ে পড়লাম।পরদিন সকালে উঠে নাস্তার টেবিলে বসলাম,,জান্নাত এসে আমার পাশে বসলো,,,।
জান্নাত:রাশেদ I'm sry,,
আমি:সরি বলতে হবে না,,,
জান্নাত:ভুল হয়ে গেছে প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও,,,,
আমি:কালই ক্ষমা করে দিয়েছি,,।
আমার কথা বলতে বলতে সবাই চলে এলো তাই আর কথা হলো না।নাস্তা শেষ করে রুমে গেলাম জান্নাতও পিছে পিছে এলো।তারপর দরজা আটকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করলো।ওর চোখের পানি সহ্য করতে পারলাম না,,একটা চুমু দিলাম ওর কপালে,,,।
আমি:হইছে যাও এখন পড়তে বসো,,,
জান্নাত:হুমম যাচ্ছি আর বিকেলে একটা সারপ্রাইজ আছে তোমার জন্য,,,।
আমি:কি সারপ্রাইজ???
জান্নাত:যখন দেবো তখনই দেখো,,এখন বলা যাবেনা,,,।
কি সারপ্রাইজ দিতে পারে সেটা নিয়ে ভাবলাম কিছুসময়।থাক যখন দিবে তখন দেখা যাবে।তারপর জান্নাত পড়তে চলে গেলো,,,।
ঘন্টা খানেক পর জান্নাতের দরজার কাছে দাড়িয়ে দেখি ও পড়ছে।আমি চুপি চুপি ওর পিছনে গিয়ে দাড়িয়ে আছি।তারপর হঠাৎ করে ওর গালে কিস করাতে ও আচমকা ভয় পেয়ে লাফিয়ে উঠলো। আমি হাসছি ওর কান্ড দেখে,,,,।
জান্নাত:শান্তিমতো কি পড়তেও দেবেনা,,,?
আমি:আমি কি করছি হুমম,,নিজে পড়ছো না আবার আমার দোষ দিচ্ছো তাইনা,,,।
জান্নাত:পড়ছিলামই তো তুমিই তো এসে বিরক্ত করছো,,যাও তো যাও সারাক্ষন বউয়ের কাছে থাকতে নেই,,,।
আমি:আচ্ছা যাচ্ছি,,,একটা পাপ্পি দাও,,,।
জান্নাত:না ভাগো তো এখন,,,
আমি:আচ্ছা মনে রেখো,,।
তারপর আমি জান্নাতের রুম থেকে চলে আসলাম।বিকেলে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে রুম থেকে বাইরে এসেই চমকে গেলাম,,,।
একটা পরীর মতো মেয়ে,,ভাবলাম এটা আবার কে??এটা তো জান্নাত নয়,,,।কিছুক্ষন ভালো করে তাকিয়ে থাকার পর বুঝলাম এটা জান্নাত।আজ আমার আম্মু জান্নাতকে সুন্দর করে সাজিয়েছে।জান্নাতের এমন লুক দেখে আমি হা করে তাকিয়ে আছি,,,। বুঝলাম জান্নাত ম্যাডাম এটাই ছিলো তাহলে তোমার সারপ্রাইজ,,। তারপর আম্মু জান্নাতকে নিয়ে সোফায় বসলো।হঠাৎ আম্মু আমাকে বললো,,,,,
আম্মু:জান্নাতকে কেমন লাগছে সেটা বলতে কি মুখে কষ্ট হচ্ছে,,,?
আমি:মাশাল্লাহ,,একদম পরীর মতো লাগছে,,।
বলেই লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম।আম্মুর সামনে বসে এভাবে বলাটা মনে হয় ঠিক হয় নি।এসবের মাঝেও জান্নাত আমার দিকে তাকিয়ে চোখ মারলো,,।আমিতো তখন কি করবো বুঝতে পারছি না,,।হারামিটা সবসময় আমাকে বেকায়দায় ফেলে দেয়।একবার সবাই চলে যাক তারপর বোঝাবো মজা।সবাই মিলে একটা সেলফি তুললাম।তারপর সবার সাথে জান্নাতকে বসিয়ে বেশ কিছু ছবি তুললাম।সবার শেষে আম্মুকে বললাম,,,,,,,,,,।
আমি:আম্মু জান্নাতের সাথে কয়েকটা ছবি তুলবো??
আম্মু:ছবি তুলবি তার জন্য আবার পারমিশনের কি আছে,,?তোল এখানে,,,।
আমি:এখানে না,,আমার লজ্জা লাগে সবার সামনে,,।
আম্মু:শয়তান ছেলে যা ভাগ,,,,,।
জান্নাতকে ঠেলে আমার কাছে দিলো চলে যাবার জন্য।আমি বোকাসোকা সেজে জান্নাতের আগেই আমার রুমে চলে এলাম৷জান্নাত পিছনে এলো,,পা টিপে টিপে হাটছে।এতো সাজগোজ মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগবে।জান্নাত রুমে এলে আমি অপলকে তাকিয়ে দেখছি।কিছু সময় হারিয়ে গেলাম জান্নাতের সৌন্দর্যে।একটু পর জান্নাতের কথায় স্বাভাবিক হলাম।
জান্নাত:এই যে এভাবে দেখলে কিন্তু নজর লাগবে আমার,,
আমি:আপন মানুষ দেখলে নজর লাগে না,,,।
জান্নাত:তবুও দরকার নেই,,আমার টসটসে গালগুলো শুকিয়ে যাবে,,।
আমি:ইশশশ লাগছে তো পেত্নীর মতো,,আবার কতো ঢং,,।
জান্নাত:কি বললে??আআআআআমমমমমু,,,,
আমি:এই না না পরীর মতো লাগছে সত্যি,,,
জান্নাত:পেত্নি বললে কেনো আমাকে,,কান ধরো,,।
আমি:পরে ধরবো এখন ছবি তুলি,,,,
জান্নাত:না আগে ধরো,,,,,
আমি:উফফ পাগলি একটা,,এইযে ধরছি হলো তো,,?
জান্নাত:হুমমমমম এখন চোখটা বন্ধ করো তো,,
আমি:কেনো কেনো,,???
জান্নাত:উফফফ এতো প্রশ্ন করো কেনো,,বন্ধ করো,,।
আমি:আচ্ছা করলাম,,,,,
জান্নাত আমার গালে আলতো করে একটা চুমু দিলো এর রাঙা ঠোটগুলো দিয়ে।আমি চোখ খুলে একটা মুচকি হাসি দিয়ে ওর গালে কিস করতে গেলাম আর সাথে সাথে জান্নাত বললো,,,,
জান্নাত:নননননননাহহহহহহ,,,,,,
আমি:কি হলো,,?
জান্নাত:আম্মু কতো সুন্দর কষ্ট করে সাজিয়েছে আর তুমি নষ্ট করবে তাইনা??সেটা হবে না,,এখন কোনো আদর চাই না।
আমি:আচ্ছা ঠিক আছে করবো না,,ছবি তুলি।
দুজনে ছবি তুললাম জান্নাত আর আমি,,তারপর যখন রুম থেকে বের হবো তখন জান্নাত আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,,,,,,,
জান্নাত:রাশেদ সারাজীবন এভাবে ভালোবেসো আমাকে,,আমার সবটুকু ভালোবাসা শুধু তোমার জন্য,,খুব ভালোবাসি তোমাকে,,,।
আমি:আমি জানি আমার পাগলিটা শুধু আমাকেই ভালোবাসে।আমিও যে পাগলিটাকে খুব ভালোবাসি।
জান্নাত:চলো সবাই অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য,,,,।
আমরা আসছি দেখে ভাবি একটু কেশে উঠলো মুচকি হাসি দিয়ে।আমি লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে আছি।এরই মধ্যে আম্মু কতোকি খাবার এনে টেবিলে রাখলো।আমি বললাম,,,,,,,,
আমি:একটু আগেই তো খেয়ে এলে দুজনে,,আবার খাবে???
আম্মু:আমার বৌমার সাজতে সাজতে কষ্ট হয়ে গেছে না,,তুই কি বুঝবি,,???
আমি:হুমমমম শুধু বৌমাকে নিয়েই নাচো,,,
আম্মু নিজ হাতে খাইয়ে দিচ্ছে জান্নাতকে যাতে ওর মেকাপ নষ্ট না হয়,নেলপালিশ উঠে না যায়। বাপরে আরো কতো কি দেখবো কে জানে,,?জান্নাত খাচ্ছে আর আমার দিকে তাকিয়ে ভেংচি দিচ্ছে।একটু পর জান্নাতের আম্মুর ফোন এলো।আম্মু কথা বলে জানালো জান্নাতের জন্য মন খারাপ ওদের তাই কাল দেখতে আসবে উনারা।হঠাৎ আমার মাথায় একটু দুষ্টু বুদ্ধি এলো,,,,,,,।
,
,